আমার বই পড়া শুরু ৬ বছর বয়সে রাশিয়ান বই দিয়ে। ঐ বইটার কথা এখনও মনে আছে, "“সিভকা বুরকা জাদুকা লেড়কা চেকনাই ঘোড়া সামনে এসে দাঁড়া”" বইটির নাম অবশ্য ভুলে গেছি। এরপরে একে একে পড়েছি আরও অনেক শিশুতোষ রাশিয়ান বই, ঠাকুরমার ঝুলি, বাংলাদেশি কিছু বই, বাংলা একাডেমীর প্রকাশিত “শিশু” পত্রিকা, “নবারুন” পত্রিকা। শিশু পত্রিকাতেই প্রথম পড়ি হুমায়ূন আহমেদের গল্প। নাম "বোতল ভুত"।
এখনও মনে আছে গল্পটির কাহিনী। একটা লাইন ছিল এরকম "বল নেই আছে পাম্পার, শার্ট নেই আছে জাম্পার"। তবে স্কুলে পড়া বইগুলোর ভিতর রাশিয়ান বইগুলি ছিল অসাধরন।
এভাবেই কেটে গেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ। হাইস্কুলে ওঠার পরে সঙ্গি হল সেবা প্রকাশনির বই, দুর্দান্ত সেই সব দিনগুলি।
তিন গোয়েন্দা পড়লাম কয়েক বছর, তারপরে সাথে যোগ হল মাসুদ রানা সিরিজ আর ওয়েস্টার্ন। এডভেঞ্চারের সাথে মাঝে মাঝে বোনাস হিসেবে পাওয়া যেত নায়ক নায়িকার রোমান্সের গল্প। রাশিয়ান বইয়ের বাংলা অনুবাদগুলো তখনও পড়ি; “ঈশকুল”, “মালাকাইটের ঝাঁপি” নামগুলো আমি আমৃত্যু মিনে রাখব। আমাদের খিলগাঁও রেল গেটের এক দোকান থেকে বই ভাড়া করে পড়তাম। প্রতি বইয়ের ভাড়া ১.৫০ টাকা, ১ দিনের জন্য।
বই তো শেষ করতে হবে ১ দিনেই। দেরি হলে ৫০ পয়সা জরিমানা। অতএব, সারাদিন বই পড়তাম। বাসায় পড়ার বইয়ের নিচে লুকিয়ে, বাথরুমে বসে, এমনকি জুমার নামাজে মসজিদে গিয়ে খুতবার সময়ও লুঙ্গির ভিতরে লুকিয়ে রেখে বই পড়েছি। বিকেলে বাসা থেকে বের হতাম বৈকালিক ভ্রমন বা খেলাধুলার কথা বলে।
কিসের খেলা, মার্কেটের ছাদে গাঁজাখোরদের আড্ডার পাশে বসে চলত আমার বই পড়া অবিরাম। ক্লাসে বসেও সারাদিন শুধু গল্পের বই পড়া। মাসুদ রানা পড়তাম বেশি। স্কুলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচীর মাধ্যমেও পড়েছিলাম বিশ্ব সাহিত্যের সেরা ২০ টি বই। হাইস্কুলেই ভারতীয় 3S (Sunil, Samaresh, Shirsendu) এর কিছু বই পড়লাম।
হুমায়ুন আহমেদের বই ব্যপক হারে পড়া শুরু করলাম এরপর থেকে। লেখা একদম আলাদা। আমাকে হাসায়, কাঁদায়। একবার হিমুর প্রেমে পরি তো পরের দিন রুপার। হুমায়ূন আহমেদের ১০০ এর বেশি বই পড়া শেষ করলাম ৪/৫ মাসে।
এরপরে ঐ লাইব্রেরীতে আর হুমায়ূন আহমেদের বই ছিল না।
আমি বলব না হুমায়ূন আহমেদ এর বইয়েই আমার পাঠক জীবন বা বই প্রেম শুরু। তবে তার বইগুলো পড়ে বাংলা বইয়ের প্রতি আগ্রহ বেড়েছিল অনেক নিঃসন্দেহে। আজকে যে আকবর আলি খানের “পরার্থপরতার অর্থনীতি” বা “অন্ধকারের উৎস থেকে” পড়বার সাহস করি, সেই ভিত্তির অন্যতম কারিগর হুমায়ূন আহমেদ এবং কাজি আনোয়ার হোসেন। সেই বইগুলো পড়ে বইয়ের ছাপা অক্ষরের আনন্দ না বুঝলে, পাঠক হিসেবে এতদূর আসা হতো না কোনোক্রমেই।
কারন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার গাঁথুনি খুব মজবুত না হলে কেঊ উচ্চতর শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারে না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।