আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোমবারই আসছেন গুলতেকিন

বেকার ভাগ্যের নির্মম, নিষ্ঠুর পরিহাস। বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও তার সাবেক স্ত্রী গুলতেকিন দু’জন দু’ভুবনের বাসিন্দা। অনেক আগেই একে অপরের কাছ থেকে অনেক দূরে চলে গেলেও হুমায়ূন ও গুলতেকিন একই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরছেন। হুমায়ূন ফিরছেন লাশ হয়ে। আর গুলতেকিন সুস্থ।

তারা একই দিনে দেশে ফিরলেও কেউ কাউকে দেখার সুযোগ পাবেন না। হুমায়ূন আহমেদ এখন সকল অনুভূতির ঊর্ধ্বে। তবে তার দেয়া কষ্টগুলো আজও গুলতেকিনকে তাড়া করে বেড়ায়। হুমায়ূনবিহীন তাকে অনেক সংগ্রাম, কষ্ট, আর একাকী পথ চলতে হয়েছে। তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে।

ছেলেমেয়েদের বড় করতে হয়েছে। সবকিছুর পরও একটা জায়গায় হুমায়ূনের অবস্থান রয়েই গিয়েছিল। কিন্তু অভিমানী গুলতেকিন আর কোনদিন চিন্তা করেননি তার কাছে ফিরে যাওয়ার। তবে সূত্র জানায়, হুমায়ূনের মৃত্যুর খবরে গুলতেকিন চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। কেঁদেছেন এক সময়ের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির জন্য।

পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেছে। তিনি হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর খবর পান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মেয়ের বাসায়ই। তবে একই দিন দেশে ফিরলেও গুলতেকিন যাবেন না হুমায়ূনের লাশ দেখতে। এমনটাই জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। গুলতেকিন সবকিছুর মধ্য থেকেও ছিলেন একাকী।

প্রিয় মানুষ হুমায়ূনবিহীন থাকতে ও জীবনকে চালিয়ে নিতে অনেক কষ্ট ছিল তার। গুলতেকিন ও হুমায়ূনের ঘনিষ্ঠ একজন জানান, গুলতেকিন গত মাসে তার ছোট মেয়ের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে তার ছোট মেয়ে নোভা ও মেয়ের জামাই থাকেন। তারা দু’জনই পিএইচডি করছেন। সেখানেই তিনি অবস্থান করছেন।

তিনি সেখান থেকে পূর্ব সিডিউল অনুযায়ী সোমবার দেশে ফিরবেন- এমনটাই ঠিক করেন। হুমায়ূন আহমেদও ওই দিনই লাশ হিসেবে দেশে ফিরবেন। সূত্র জানায়, হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে গুলতেকিনের পরিচয়, পরিণয়, সংসার জীবন, সন্তানদের জন্ম, তাদের বেড়ে ওঠা কত স্মৃতি। হুমায়ূনকে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা চিঠি লিখতেন। তিনিও জবাব দিতেন।

বাঁধভাঙা প্রেম ছিল তাদের। গুলতেকিন হুমায়ূনের জন্য অনেক গল্পের প্লট দিতেন। তারা দু’জন একই পত্রিকায় গল্প লিখতেন। স্বামীকে সফল হওয়ার জন্য অনেক উৎসাহ দিতেন। এই সবই স্মৃতি।

আচমকা অনেক ঝড়েই তাদেরকে চলে যেতে হয় দুই ভুবনে। অনেক কষ্ট পান গুলতেকিন। তবে নিজের আত্মসম্মান, মান-মর্যাদার কারণে কোন ভাবেই আর সমঝোতা করতে পারেননি। এ কারণে তারা দু’জন আলাদাই রয়ে যান। সূত্র জানায়, গুলতেকিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও হুমায়ূন আহমেদকে সেখানেও দেখতে যাননি।

অভিমানই তাকে দূরে রেখেছে। তবে কাছে না গেলেও সব খবর নিয়েছেন। তাদের দুই জনেরই ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস আরা। তাদের পরিচয় কয়েক যুগের। হুমায়ূন আহমেদকে হাসপাতালে দেখতে যান ফেরদৌস আরা।

সেখানে হুমায়ূন আহমেদ তার সঙ্গে অনেক কথা বলেন। তিনি জানান, ভীষণ খারাপ লাগছে। আমি যখন তাকে দেখতে যাই তখন তিনি ভাল আছেন। চিকিৎসকের সঙ্গে যখন আমার কথা হলো তখন তিনি বললেন, অত্যন্ত সফল একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। তিনি ভাল হয়ে যাবেন।

কিন্তু তারপরও তিনি চলে গেলেন- এটাই কেমন লাগছে। তিনি জানান, গুলতেকিন আসছেন। তবে তাকে শেষ দেখা দেখতে যাবেন কিনা জানি না। ভীষণ আত্মসম্মানী এক নারী। এদিকে হুমায়ূন আহমেদের বড় ছেলে নূহাস, বড় মেয়ে বিপাশা ও মেজ মেয়ে শীলা দেশেই আছেন।

তারা আগে ধানমন্ডি থাকলেও এখন বনানী থাকেন। বাবার মরদেহ দেখতে নূহাস যাবেন বিমানবন্দরে ও দখিন হাওয়ায়। তবে মেয়েরা যাবেন কিনা তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই আহসান হাবীব জানান, নূহাস আমাদের বাসায় এসেছিল। পিতার জানাজাতেও আসার কথা।

তবে মেয়েরা আসবে কিনা তা জানি না। গুলতেকিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি দেশে ফিরে আসবেন কিনা দেখতে তা বলতে পারছি না। তার সঙ্গে কোন কথা হয়নি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।