মনে প্রাণে ঘৃণা করি রাজাকার। পাকিস্তানের দালালি করার শখ থাকলে এখানে ল্যাদাতে না আসার জন্য বলা হচ্ছে। প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ স্যার, একশ ফানুশ ওড়ানোর এই ইচ্ছেটা আপনার পূরণ হয়েছিল কিনা জানা নেই তবে এইটুকু জানি যে আপনার অকাল প্রয়াণে মনের মাঝে তীব্র বেদনার পাহাড়সম যে ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছে বারংবার সেগুলোকে যদি একেকটি ফানুশ করে উড়িয়ে দিতে পারতাম আপনার কাছে তবে আপনি ঠিক বুঝে যেতেন আপনাকে কত ভালোবাসি।
স্যার, আমেরিকার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আপনি এক লেখাতে আপনার এক ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন। নিজের দেশের অনেক প্রতিভাবান চিকিৎসককে আমেরিকার নামকরা সব হাসপাতালে চাকরিরত দেখে আপনার আফসোস হয়েছিল কেন দেশমাতৃকার এই যোগ্যতর সন্তানগুলো নিজের দেশের জন্য ভাল কিছু করার পরিবেশ পায়না।
আপনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন বাংলাদেশেই প্রথম শ্রেণীর একটি ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরি করার। আপনি পারলেন না। আপনার কলমের সুনিপুণ পরশে আপনি যেমন 'কোথাও কেউ নেই' বা 'শঙ্খনীল কারাগার' এর শেষ দৃশ্য এঁকে কোটি হৃদয়কে কান্নার স্রোতে ভাসিয়ে ছিলেন, বোধ করি বিধাতা স্বয়ং সেই থেকে শিখেছিলেন কিভাবে কাঁদাতে হয়। তাইতো বড্ড অসময়ে তিনি আপনাকে নিয়ে গেলেন আমাদের মাঝ থেকে।
কৈশোর জীবনের শুরুতে আরও অনেকের মত এই নগণ্য আমাকেও হিমু নামক এক মহাপুরুষ হবার যে পাগলামো স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সেই স্বপ্নে বিভোর হয়ে জীবনে অনেক পাগলামো করা হয়ে গেছে ঠিকই, শুধু মহাপুরুষ হবার পথে একটা কদমও ফেলতে পারিনি।
আপনি চলে গেছেন, প্রতি বছর নতুন নতুন হিমু উপাখ্যান রচনা করে পাগলামোর সেই সাঁকোটাকে নাড়িয়ে দেবার জন্যে কেউ থাকল না আর। আপনার বিদায়ের এই বিষাদঘন সময়ে আরেকবার নতুন করে একটি পাগলামো করবো বলে ঠিক করেছি।
স্যার, আমি মহাপুরুষ হতে পারিনি। একজন নগণ্য চিকিৎসক হয়েছি। দেশের অনেক বড় সড় প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসকদের ন্যায় তথাকথিত কসাইগিরিও শুরু করতে পারিনি এখনো।
ভেবেছিলাম একজন প্রথিতযশা সার্জন হব। কসাইয়ের মত নয়, রোগীর শরীরে একজন শিল্পীর মত ছুরি কাঁচি চালাবো তার আরোগ্য কামনায়। এই ইচ্ছেটা আজ বিসর্জন দিলাম আপনার জন্য। ঠিক করেছি অনকোলজি পড়ব। পৃথিবীর সেরা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করব।
আল্লাহ্ যদি আমাকে যথেষ্ট সময় এই পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখেন তবে নিশ্চয়ই একদিন আপনার অপূর্ণ একটি সাধ পূরণ করবো আমি। প্রতিজ্ঞা করছি বাংলাদেশে বিশ্বমানের একটি ক্যান্সার ইন্সটিটিউট আমি অবশ্যই তৈরি করবো।
কৈশোরে, তারুণ্যে আপনার লেখার ঘোরে আবদ্ধ হয়ে অসংখ্য পাগলামো করা এই পাগলটাকে আপনি একবার আশীর্বাদ করে দিন স্যার। একজন হুমায়ূন আহমেদ হয়তো আর কোনোদিন এই মাটিতে জন্ম নেবেনা তবু শব্দ দিয়ে অপূর্ব সব ছবি আঁকা আপনার মত একজন সুনিপুণ চিত্রকারের বাঁধ ভাঙা জোছনাবিহীন, টিনের চালের টুপুর টাপুর শব্দহীন অযাচিত যে বিদায় দৃশ্য বিধাতা রচনা করেছেন সেরকম কোন বিদায় দৃশ্য তিনি যেন আর কখনো রচনার সুযোগ না পান! আমাকে আশীর্বাদ করুন; কষ্ট করার, নিজ লক্ষ্যে অবিচল সাধনা করার হিমালয়সম প্রচেষ্টা যেন আমৃত্যু করে যেতে পারি। আর তাই দেখে আপনার অবেলার এই বিদায়ের মত আর কোন করুন বিদায় দৃশ্য আঁকতে গিয়ে স্বয়ং বিধাতার যেন বুকটা কেঁপে ওঠে! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।