সকালের মিষ্টি রোদ পেরিয়ে আমি এখন মধ্যগগনে,
মুক্তিপণ দিয়ে সোমালি জলদস্যুদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে বাংলাদেশি নাবিকদের উদ্ধারের পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ঢাকাকে বলেছে, জলদস্যুরা এই সময় অল্প পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে নাবিকদের ছেড়ে দিতে পারে।
কারণ এই সময়টায় তারা সাধারণত আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র আরো বলেছে, জলদস্যুদের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে মুক্তিপণ আদায় করা। তারা বাংলাদেশি নাবিকদের সঙ্গে ভালো আচরণ করছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরো গত ১৫ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশনকে এই পরামর্শ দেয়।
ওয়াশিংটনে এক বৈঠকে বাংলাদেশ ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে এই বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) এম জে এইচ জাবেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এতে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী উপদেষ্টা এরিক পিয়ে, নৌবাহিনীর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন জেফ্রে ডি ফ্রেডরিক, জলদস্যুতা প্রতিরোধ বিভাগের কর্মকর্তা উইলিয়াম পি অ্যাস্টিলেরো।
সোমালি জলদস্যুরা গত ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ জাহান মণিকে ছিনতাই করে।
এতে বাংলাদেশের ২৫ নাবিকসহ ২৬ আরোহী রয়েছেন।
জাহাজটিকে ১১ ডিসেম্বর সোমালিয়ার জলসীমায় নিয়ে যায় দস্যুরা।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে ২২ টি ছিনতাই হওয়া জাহাজ সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি রয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঠানো মার্কিন কর্তৃপক্ষের এই পরামর্শ সংবলিত চিঠির একটি কপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসেছে।
নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা মার্কিন সরকারের মতামত চেয়েছিলাম।
তারা মতামত দিয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। "
মন্ত্রী বলেন, "সরকার ২৬ বাংলাদেশিকে মুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। "
মার্কিন দূতাবাসের প্রেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অফিসার প্যাট্রিসিয়া হিল শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ছিনতাই হওয়া জাহাজের নাবিকদের নিরাপদ মুক্তির জন্য বাংলাদেশ সরকার যে চেষ্টা করছে তাকে আমরা সমর্থন করি। "
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ মিশন মার্কিন কর্তৃপক্ষের এই পরামর্শের কথা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের কার্যালয়ে পাঠিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি যুক্তরাষ্ট্রের এই মতামত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে আসা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, জলদস্যুদের এখন অর্থনৈতিক দুরাবস্থা যাচ্ছে। জলদস্যুরা তাদের কাঙ্খিত অর্থের চেয়ে কম পরিমাণ অর্থ পেলেও বিষয়টির দ্রুত সুরাহা করতে আগ্রহী।
চিঠিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ হচ্ছে যে, এই সুযোগটি বাংলাদেশের নেওয়া এবং সর্বোচ্চ সমঝোতার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
চিঠিতে আরো বলা হয়, অর্থ আদায় ছাড়া জলদস্যুদের আরো কোন উদ্দেশ্যের কথা মার্কিন কর্মকর্তারা নাকচ করে দিয়েছেন।
জলদস্যুরা অর্থ আদায়ের লক্ষ্যেই জাহাজটি ছিনতাই করেছে।
অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, জলদস্যুরা সাধারণত তাদের জিম্মিদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে থাকে এবং আলোচনার পথ খোলা রাখে। রাষ্ট্রপক্ষ দস্যুদের স্বার্থ পরিপন্থী কোনো কাজ না করা পর্যন্ত তারা এটা বজায় রাখে।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সেমালি জলদস্যুরা সাধারণত জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে হাজার হাজার ডলার পণ নিয়ে থাকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের ঘটনায় কোনো রাষ্ট্রই মুক্তিপণ দিতে পারে না।
ছিনতাই হওয়া জাহাজ মালিক মুক্তিপণ না দিলে সোমালি জলদস্যুরা জিম্মিদের মেরে ফেলে- এমন নজির আছে।
উইকিপিডিয়ায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সোমালি জলদস্যুরা ২০০৭ সালে একটি চীনা জাহাজ ছিনতাই করে এবং এর মালিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাঙ্খিত মুক্তিপণ না পেয়ে এক চীনা নাবিককে হত্যা করে।
কেনিয়ার বন্দর নগরী মোম্বাসায় সোমালি জলদস্যুদের প্রতিনিধি রয়েছে। মুক্তিপণ পাওয়ার পর জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি তারাই নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশের কোনো দোষের কারণে জাহাজটি ছিনতাই হয়নি বলে মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
তারা সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো কিছু করা হলে জলদস্যুরাও অস্বাভাবিক মুক্তিপণ দাবি করতে পারে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, ২০০৬ সালে ভারতের একটি জাহাজ এভাবেই ছিনতাই হয়। নয়াদিল্লি সেই জাহাজ ও এর নাবিকদের ছাড়িয়ে আনে। নয়াদিল্লির মত কৌশল ঢাকা অবলম্বন করতে পারে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।