অসাধারণ সাক্ষাতকার
প্রশ্ন : দ্বিতীয় মেয়াদে ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর আপনি এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের র্যাংকিং বিশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যের কথা বলেছিলেন। এই লক্ষ্যে কি এগোচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবল?
কাজী সালাউদ্দিন : এই লক্ষ্যের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিছুদিন আগে আমরা নেপালে যে টুর্নামেন্টটা (এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ বাছাই) খেলেছি, সেখানে ফুটবল দলের পারফরম্যান্স সবাই দেখেছে। ভালো খেলে আমরা চূড়ান্ত পর্বে উন্নীত হয়েছি। এরপর টেকনিক্যালি আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে, সেটা আমাদের সমস্যা নয়।
কোন দেশ সাসপেন্ড হবে, সেটা তাদের (এএফসি) সমস্যা। এতে করে যেটা হয়েছে, আমরা বাছাই পর্ব উতরানোর পরও চূড়ান্ত পর্বে খেলতে পারছি না। কিন্তু আমাদের মাঠের পারফরম্যান্স এবং জয় তো আর এএফসি কেড়ে নিতে পারবে না। সুতরাং ওই লক্ষ্যে আমাদের পথচলা শুরু হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, বিশের নিচে র্যাংকিং নামিয়ে আনা অসম্ভব কিছু নয়।
সম্ভব করার জন্য শুধু টাকা দরকার।
প্রশ্ন : বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আপনি অর্থ সংকটের কথা বলেছেন। এমনকি বাংলাদেশ অলিম্পিকের কাছেও অর্থ চেয়েছেন...
সালাউদ্দিন : আসলে আধুনিক ফুটবলে অনেক অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়, তারপর ফল আসতে শুরু করলে সেই ফুটবলের টাকা দিয়েই আবার অন্য অনেক কিছু করা যায়। ইংলিশ ফুটবল, স্প্যানিশ ফুটবল কিংবা ইউরোপের অনান্য ফুটবলের দিকে তাকান, তাদের ফুটবল পণ্যে রূপান্তর হয়ে গেছে, তাই কারো কাছে হাত পাততে হয় না। আমার ফুটবলকে ওই জায়গায় নিয়ে যেতে বিনিয়োগ লাগবেই, মানের উন্নয়ন করতে হবে আগে।
উন্নতির জন্য কোচ, খেলোয়াড় সংগঠন, একাডেমী, ট্রেনিং ক্যাম্প, অফিস স্টাফ এবং ফুটবল সরঞ্জাম ইত্যাদির পেছনে অনেক অনেক খরচ করতে হবে। কিন্তু এসব কিছু করতে গেলে আগে আমাকে তাকাতে হয় ফেডারেশনের তহবিলের দিকে। এখন সরকার, স্পন্সর মিলিয়ে যদি ফুটবলের অর্থের সংস্থান করে দিতে পারে তাহলে লক্ষ্যে পৌঁছাতে কোনো সমস্যা দেখি না আমি।
প্রশ্ন : অর্থ সংকট থাকার পরও আপনি ভিশন-২০২২ কাতার বিশ্বকাপের ঘোষণা দিয়েছেন। সেটা কিভাবে সম্ভব কিংবা তার রোডম্যাপটা কিরকম হবে?
সালাউদ্দিন : আমি প্রথমে ভিশনের কথাটা জানিয়েছি।
সামনের এরকম কিছু থাকলে কাজ করার এবং ওই লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটা তাগিদ থাকে নিজেদের মধ্যে। ভিশন নিয়ে এখন পেপার-ওয়ার্ক চলছে, আগামী মে মাসে আমি রোডম্যাপটা প্রেসকে জানিয়ে দেব। তাতে কয়েকটা ধাপ থাকবে, কী করতে হবে সেটারই একটা ম্যাপ দেওয়া হবে। তবে প্ল্যানে কয়েক জায়গায় অর্থের ঘরটা খালি থাকবে, সরকার কিংবা স্পন্সর থেকে অর্থ পাওয়া সাপেক্ষে সেটার বাস্তবায়ন হবে। প্ল্যানটা আমি দিচ্ছি, কারণ আমি থাকি বা পরে অন্য কেউ এলেও যেন এটাকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে পারে।
বলতে পারেন, সব জায়গায় তো আপনি টাকার কথা বলছেন। আসলে ফুটবলে টাকাই হলো আসল জ্বালানি। একটু পেছনে ফিরি, এক সময় দক্ষিণ কোরিয়া-জাপানের সঙ্গে আমরা খেলতাম। প্ল্যানিং ও অর্থের জোরে তারা এখন কোথায় পৌঁছে গেছে, একবার ভাবুন। জাপানে পেশাদার লিগ চালু হয় ৯২ সালে, সেদিন আমি টোকিওতে মাঠে উপস্থিত ছিলাম।
দেখেছি তাদের ফুটবল নিয়ে কর্মকাণ্ডগুলো। একটা দেশ যদি ফুটবলের পেছনে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেখানে আপনি একশ টাকা খরচ করলে তো হবে না। তবে আপনার ১০০ কোটি টাকা হলে হবে। কারণ আমাদের চাহিদা কম, লোকজনের বেতন কম, জিনিসপত্রের দাম কম ইত্যাদি টেকনিক্যাল দিক বিবেচনা করলে সুবিধাজনক অবস্থায় আছি। যেমন ধরুন, আমার এখানে ভালোমানের একটা একাডেমী করতে ১০০ কোটি ইউরো লাগলে ইংল্যান্ডে লাগবে ২৫ মিলিয়ন ইউরো।
আরেকটা বড় সুবিধা হলো, আমার দেশের ১৬ কোটি মানুষ। সেপ ব্ল্যাটারও এই জনসংখ্যাকে ব্যবহারের কথাটা প্রায় বলেন।
প্রশ্ন : আপনার এই ভিশন নিয়ে নিশ্চয়ই এএফসি-ফিফার সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে, তাদের তরফ থেকে কোনোরকমের সাপোর্ট পাওয়া যেতে পারে?
সালাউদ্দিন : বাংলাদেশের ভিশন ঘোষণার খবর সবাই জানে, এটা নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ভিশন ঘোষণা করে কিন্তু আমি বসে নেই, কয়েকটা দেশের সঙ্গে আলাপ চলছে। কোথায় শেষ হবে আমি জানি না, তবে একটা ইতিবাচক জায়গায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন : ভিশনের বড় একটা উপাদান ফুটবল একাডেমী। একাডেমীর জন্য খুদে ফুটবলার বাছাইয়ের কাজ হয়ে গেছে, নতুন ডাচ কোচের সঙ্গে চুক্তিও একরকম পাকা। কিন্তু আপনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জুন-জুলাইয়ে কি একাডেমী শুরু করতে পারবেন?
সালাউদ্দিন : কিছু কাজ বাকি আছে একাডেমীতে। এ জন্য অনেক চেষ্টা-তদবিরের পর মাস তিনেক আগে প্রায় দুই কোটি টাকার মতো ছাড় করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সেই টাকা দেওয়া হয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে, তারপর কিছু হয়নি।
আমরা যত তাড়াতাড়ি করতে চাইছি সেটা অন্যরা বুঝতে চাইছে না। শেষ পর্যন্ত ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আজ (গত মঙ্গলবার) সব কিছু করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। দেখা যাক কী হয়।
প্রশ্ন : জেলা ফুটবল লিগ চালু করে আরেকটা ভালো কাজ করেছে ফুটবল ফেডারেশন। এটা অবশ্য আপনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ছিল।
স্রেফ প্রতিশ্রুতি পূরণ নাকি ওখান থেকে ভালো কিছু আশাও করেন ?
সালাউদ্দিন : জেলা ফুটবল চালু করার জন্য আমাকে টাকা দিতে হয়েছে জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে। বেশির ভাগ অ্যাসোসিয়েশনের অবস্থা এমন ছিল, টাকা না দিলে তারা কিছুই করতে পারবে না। এই অর্থ নিয়ে এগিয়ে এসেছে প্রাইম ব্যাংক, এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছি এ কথা ঠিক, পাশাপাশি ফুটবল ফেডারেশন অর্থ বিনিয়োগ করছে জেলার ফুটবলে সুতরাং আমি রিটার্ন চাইবই। তবে যেভাবে লিগ হচ্ছে, তা আমার টপ লেভেলের ফুটবলে উপকারে আসবে না।
রশ্ন : তাহলে এই মানের জেলা ফুটবল লিগের তো প্রয়োজন নেই। কোথাও কোথাও চার-পাঁচটা দল নিয়েও লিগ হচ্ছে।
সালাউদ্দিন : প্রয়োজন আছে। অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন আছে। ঢাকার বাইরের ফুটবল অবকাঠামো বলতে কিছু ছিল না, তাই জিনিসটা একরকম নতুন করেই শুরু হচ্ছে।
তারা খেলতে শুরু করেছে, তবে জেলার সংগঠক ও খেলোয়াড়দের মধ্যে ফুটবলের টিউনিং এখনো হয়নি। তারা খেলছে এখন ফুর্তির খেলা, আরো দেড়-দুই বছর লাগবে তাদের বুঝতে যে তারা যেটা খেলছে সেটা পাড়ার খেলা, হৈচৈয়ের খেলা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাফল্যের খেলা, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার খেলাটা আবার অন্য ফরম্যাটের। সেই মানের ফুটবলার সরবরাহ করতে পাঁচ-ছয় বছর লাগবে জেলা ফুটবলের। আমি চাইছি এখন তারা খেলুক, অভ্যাসটা তৈরি হোক।
দেখুন, আমরা যখন খেলতাম তখন লোকজনের মাঠে যাওয়ার একটা অভ্যাস ছিল। আমি ফেডারেশন সভাপতি হওয়ার ১০-১২ বছর আগে থেকেই মানুষের মাঠে যাওয়ার অভ্যাসটা হারিয়ে গেছে। তাই জেলা ফুটবল লিগ নিয়মিত আয়োজনের অভ্যাসটা আগে গড়ে উঠুক।
প্রশ্ন : আপনার বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ আছে, ফেডারেশন সভাপতি হয়েও মাঠে খুব কম যান আপনি।
সালাউদ্দিন : আমি ব্যস্ততার অজুহাত দেব না।
সত্যিটা হলো, মাঠে গিয়ে ওই দর্শকশূন্য গ্যালারি দেখতে আমার একটুও ভালো লাগে না। ওই দৃশ্য দেখতে খুব কষ্ট লাগে। আমার অন্য সব কিছু বাদ দিয়ে যে ফুটবলের জন্য রাত-দিন পরিশ্রম করছি মাঠে গিয়ে সেই শূন্য স্টেডিয়াম দেখলে খুব হতাশ হয়ে পড়ি। আমার মেয়ে ও মেয়ে-জামাই গিয়েছিল লিগের আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ দেখতে, তাদের মুখে যখন গ্যালারির অবস্থার কথা শুনি তখন কষ্টে বুকটা ফেটে যায়। যে আবাহনীর ১০ মিলিয়ন সমর্থক ছিল তা এখন ১০ জনে নেমেছে।
কেন এই হাল? মোহামেডান তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দলই গড়ে না।
প্রশ্ন : মাঠে দর্শক-সমর্থক ফেরানোর কাজটা হতে পারে আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়ে। প্রতি মৌসুমের শুরুতে কিংবা একটি মৌসুম পর পর ঢাকায় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ঘরোয়া ফুটবলে।
সালাউদ্দিন : হয়তো পড়বে, দর্শকও আসবে। কিন্তু আবার সেই একই জায়গায়_টুর্নামেন্টের টাকা দেবে কে ? দেশের ফুটবলটা চালাতে গিয়ে আমাকে সারা দিন ভিক্ষা করতে হয়।
এটা তো আমার একার ফুটবল নয়, দেশের ফুটবল; তাকে ভালোবেসে উন্নতির জন্য কেউ তো পাঁচশ টাকা দেয় না। এই যে দুই ডাচ কোচ এসেছে, তাঁদের সঙ্গে চুক্তি সই করতে হবে, উন্নতি করতে হলে এই মানের কোচ লাগবে। কিন্তু তাঁদের জন্য বছরে খরচ হবে চার কোটি টাকা। এখনো একশ টাকা জোগাড় হয়নি, সবই করে যাচ্ছি সাহসের জোরে। তারপর এই টেনশন নিয়ে চারদিকে দৌড়াঝাঁপ করব।
এশিয়ার দেশগুলোর ফুটবল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার কম-বেশি ব্যক্তিগত খাতির তৈরি হয়েছে। আমি বললে, নিজেদের সূচি এদিক-সেদিক করে হলেও তারা দল পাঠাবে। কিন্তু তাদের প্লেন ভাড়া দিতে হবে, থাকা-খাওয়া দিতে হবে। কোত্থেকে দেবো ?
প্রশ্ন : এশিয়ার ফুটবল কর্তাদের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলেছেন। গত পাঁচ বছর বাফুফে সভাপতিকে বিশ্লেষণ করলে একটা জিনিস পরিষ্কার ফিফা-এএফসির সঙ্গে আপনার ভালো একটা যোগাযোগ তৈরি হয়েছে।
সুবাদে বিশ্বফুটবল পলিটিকসের মধ্যেও আপনি খুব ভালভাবে আছেন। এই পলিটিকস দেশের ফুটবল উন্নয়নে কি কোনো ভূমিকা রাখে ?
সালাউদ্দিন : আমি ফুটবল পলিটিকসে আছি বা নেই, আমার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো এটা দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলের কী উপকার করা যায়। এটাকে পলিটিকসই বলুন কিংবা সম্পর্কই বলুন, ব্যক্তিগত সফরে জুরিখে গিয়ে আমি এক বসায় সেপ ব্ল্যটারের (ফিফা প্রেসিডেন্ট) কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা এবং ১২ হাজার ফুটবল নিয়ে এসেছি। খুব খোশ-মেজাজে ছিলেন ব্ল্যাটার, আমার সঙ্গে ১০ মিনিট কথা বলার পরই জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি চাও। আমি বললাম, আমার নিজের কিছু চাই না।
আমার দেশে ফুটবল একাডেমি করবো, ফিন্যান্স দরকার এবং ১২ হাজার ফুটবল চাই, এর দামও আছে চার কোটি। চাওয়া মাত্রই অনুমোদন, নিজেও আমি ভাবতে পারিনি! কমলাপুর স্টেডিয়ামে টার্ফ অনুমোদনও হয়ে যাচ্ছে। এটাই হলো আমার পলিটিকসে জড়ানোর উদ্দেশ্য। আরেকটা হালো তারা আমাকে পলিটিকসে জড়িত করে, আসলে আমাকে গুরুত্ব না দিয়ে তাদের উপায় নেই। কারণ আমি দক্ষিণ এশীয় ফুটবলের প্রেসিডেন্ট, এখানে আটটা দলের জোট মানে আটটা ভোট।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার তো কম-বেশি প্রভাব থাকবেই। এএফসির প্রেসিডেন্ট হতে লাগে ২৩ ভোট, সুতরাং আমাদের হেলাফেলা করার সুযোগ নাই। যত গুরুত্বই থাকুক, আমি কখনো এএফসির কোনো পদে নির্বাচন করব না।
প্রশ্ন : কিন্তু এই যে নিজের অবস্থান তৈরির কাজটা নিশ্চয়ই সহজ নয়। আছেন এএফসির অডিট কমিটির কো-চেয়ারম্যান পদে।
এভাবে একেকটা ধাপ পেরিয়ে কোনো একসময় কি ফিফার নির্বাহী কমিটিতে ঢোকার স্বপ্ন দেখেন?
সালাউদ্দিন : হ্যাঁ, স্বপ্ন আছে। তবে বিশ্ব-ফুটবলে 'স্টাইল অব ক্যাম্পেইন'র ধরনটাই অন্য রকম। ফিফায় নির্বাচন করতে গেলে অন্তত তিন থেকে পাঁচ মিলিয়ন ডলার লাগে। পাঁচ মিলিয়ন ডলার আগে আমার জোগাড় করতে হবে। আরেকটা হলো প্রত্যেকটা দেশ তাদের প্রার্থীকে টাকা দেয় প্রচারণার জন্য।
ফিফার নির্বাহী কমিটিতে নিজেদের প্রতিনিধি থাকাটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে দেশগুলো। কিন্তু আমাদের দেশ তো এই স্টাইলে চলে না।
প্রশ্ন : গত পাঁচ বছরে ফুটবলের পেছনে অনেক শ্রম-মেধা দিয়েছেন। অর্জন কী মনে হয়?
সালাউদ্দিন : আমি কেবল খেলাটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি, তবে এই ফুটবল দিয়ে দেশের চেহারা পাল্টে দেওয়া যায়। অর্জন বললে ঢাকার ফুটবল পাঁচটা বছর মাঠে রাখতে পেরেছি।
কাঠামোটা দাঁড়িয়ে গেছে, ফল পাব আরো কয়েকটা বছর পর।
প্রশ্ন : খেলার মানের উন্নতি কেমন হয়ছে? যখন আপনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন তার সঙ্গে আজকের তুলনা করলে...
সালাউদ্দিন : আমার মনে হয়, খেলার মানও বেড়েছে। এখন আর এলোমেলো ফুটবল হয় না, দেখতে খারাপ লাগে না। নেপালে (এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ বাছাইয়ে) বাংলাদেশের খেলা দেখার পর আমি খুব খুশি। ঢাকা মাঠে ২০-২৫ বছর আগে যেরকম দর্শক হতো সেরকম ঠাসা স্টেডিয়াম।
সব নেপালি দর্শক, ইট-পাথর-বোতল ছুড়ে মারছে মাঠে। এত চাপের মধ্যেও ছেলেরা দুর্দান্ত ফুটবল খেলে জিতে বেরিয়ে গেছে। এমন খেলা দেখলে বুকটা গর্বে ফুলে ওঠে। এর চেয়েও তারা ভালো ম্যাচ খেলেছে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে, ওটা দুর্ভাগ্যজনক হার। আমরা তো কোয়ালিফাই করেও ফালতু ব্রুনেইয়ের জন্য পারলাম না।
এটা নিয়ে ফিফায়ও সমালোচনা হয়েছে, অনেকেই এটাকে দেখছে এএফসির ব্যর্থতা হিসেবে। আমরা আপিল করলে এএফসি হয়তো নিয়ম-কানুন পালটাবে কিন্তু আমার যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে।
প্রশ্ন : এক জীবনে ফুটবল মাঠে কাটিয়েছেন বিভিন্নভাবে। খেলোয়াড়, কোচ আর এখন সংগঠক_দেশের ফুটবলের চালকের আসনে। কোনটা সহজ?
সালাউদ্দিন : অবশ্যই খেলোয়াড়।
ফুর্তির মধ্য দিয়ে খেলে গেছি। কারণ ওখানে সব কিছুই নিজের হাতে। মাঠে পারফরম করেছি, ম্যাচ সহজ হয়ে গেছে। কোচিংয়ের কাজটাও বেশ চাপের।
প্রশ্ন : আর সংগঠক জীবন?
সালাউদ্দিন : এখানেও চাপ আছে, নানা সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু এসব উতরে সফল হওয়ার মধ্যে দারুণ তৃপ্তি আছে।
এই অর্গানাইজিং ক্যারিয়ারটা আমার জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি সময় দেব না, আমার অভিজ্ঞতা নেই_ইত্যাদি নানা প্রচারণা ছিল প্রথম প্রথম। তারা জানত না, জাতির কাছে কমিটমেন্ট করেই আমি ফুটবলের দায়িত্ব নিয়েছি। তাই প্রতিটা দিন আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং এবং উপভোগেরও। সত্যি বললে, নানা টেনশনের পরও কাজটা আমি বেশ উপভোগ করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।