আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যান-জট নিরসনে কোন সৃজনশীলতার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন শুধু সাহসী সিদ্ধান্তের

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!! বাজারে একটা কথা প্রবাদের মতো প্রচলিত ছিল যে, আমাদের পূর্বতন বাণিজ্য মন্ত্রী ‘খান সাহেব’ বাজার নিয়ে কোন মন্তব্য করলেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ত। বাণিজ্যমন্ত্রীর দপ্তর পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রীর আমলে এ অবধি এমন ধরণের ঘটনার দেখা না মিললেও গেল সপ্তাহে সরকারের এক তড়িৎকর্মা মন্ত্রীর কল্যাণে জনগণের ভাগ্যে প্রায় একই ধরণের দুর্ভোগ জুটল। গেল বৃহস্পতিবার আমাদের মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী রাজধানীর যান-জট সমস্যা দেখার জন্য এক ঝটিকা পরিদর্শনে নামেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সেদিনই রাজধানীর পুর্বাংশের মানুষ স্মরণকালের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী যান-জটে নাকাল হয়।

বিকেল ৫টায় কর্মস্থল ত্যাগের পর যে ব্যক্তির ৬টার মধ্যে বাড়ি ফেরার কথা যান-জটের কারণে সেই ব্যক্তি রাত্র এগার-বারোটায় বাড়ি ফেরেন। মাননীয় মন্ত্রী যানজট নিরসনের জন্য ঝটিকা পরিদর্শনে গিয়েছেন এটা খুবই আশার খবর। তবে আমি ঠিক জানিনা এ পরিদর্শনের মাধ্যমে যানজট নিরসনের জন্য মাননীয় মন্ত্রী কি কি উপাত্ত সংগ্রহ করলেন। এক্ষেত্রে একজন ভুক্তভোগী হিসেবে আমি বলব ঢাকার যানজটের কারণ বা এটা নিরসনের জন্য কোন উপাত্ত সংগ্রহ বা পরিদর্শন বা সৃষ্টিশীলতার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন সাহসী সিদ্ধান্তের।

মাননীয় মন্ত্রী যদি কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত নেয়ার সামর্থ্য রাখেন তাহলেই এসব পরিদর্শন কাজে আসবে। নচেৎ এগুলো লোকদেখানো বলেই বিবেচিত হবে। রাজধানীর পুর্বাংশে আমার বাস। এ অংশের জনগণের যাতায়াত ব্যবস্থায় স্বাচ্ছন্দ্য আনার জন্য সরকার যাত্রাবাড়ী-গুলিস্থান ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে। এ ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে আবহমানকাল ধরে চলমান এ অঞ্চলের যানজটটা নতুন মাত্রা পেয়েছে।

তবে কেবলমাত্র ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে তেমন ধারণাটা সঠিক নয়। যে বিশেষ কারণগুলোর কারণে রাজধানীর এ অংশে যানজটের সৃষ্টি হতো সেই বিশেষ কারণগুলোর কারণেই এখন যানজট সৃষ্টি হচ্ছে এবং নিশ্চিতভাবে বলা যায় ফ্লাইওভার নির্মাণ শেষ হলেও যদি ঐ কারণগুলো বিদ্যমান থাকে তাহলে যানজটও বিদ্যমান থাকবে। যাত্রাবাড়ীকে বলা যেতে পারে রাজধানীর পুর্বাংশের প্রবেশদ্বার। এখানেই এসে মিলেছে দেশের অন্যতম দুটো সড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট সড়ক। এ সড়ক দুটোতে দেশের অন্তত সিকি ভাগ স্থল-যান চলে।

কিন্তু দুঃখের বিষয় এই প্রবেশদ্বারের সম্মুখে ঠিক রাস্তার উপরেই অবস্থিত একটি বিশাল মাছ-বাজার। ভোরবেলা মাছের বিকি-কিনির কারণে যে যান-জটের সৃষ্টি হয় তার রেশ সারাদিন চলে। কখনও কখনও এ যান-জট কাঁচপুর ব্রীজ পর্যন্তও গিয়েও ঠেকে। অথচ এই মাছবাজারের ঠিক সামনেই আছে যাত্রবাড়ী থানা। রাজপথের উপর বসা এ বাজারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা আজ অবধি থানা প্রশাসন নিয়েছে বলে শুনিনি।

যাত্রবাড়ী থেকে একটু আগালেই সায়েদাবাদ বাস ষ্ট্যান্ড। চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, চাঁদপুর, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া সহ আরো অনেক জেলার বাস এখান থেকে ছাড়ে। যাত্রী ওঠানোর ছলে বাসগুলোকে বেশিরভাগ সময়ে স্ট্যান্ডের বাইরে রাজপথে দাড় করিয়ে রাখা হয়। এভাবে মহাসড়ক সংকুচিত হওয়ার কারণে যে যান-জটের সৃষ্টি হয় তা বেশিরভাগ সময়ে টিকাটুলি-রাজধানী সুপার মার্কেট পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। ঠিক এসব কারণেই বলতে দ্বিধা নেই যে, রাজধানীর পুর্বাংশে দীর্ঘস্থায়ী যানজটের কারণ মূলত যাত্রাবাড়ী মাছবাজার এবং সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড।

এর সাথে সাপ্লিমেন্টরি হিসেবে যুক্ত হতে পারে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ, ফুটপাথ দখল, সড়কের জরাজীর্ণতা, ট্রাফিক পুলিশের গাফিলতি। তবে এসব সাপ্লিমেন্টরি কারণগুলো দুর হলেও যতদিন পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী মাছবাজার এবং সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড বিদ্যমান থাকবে ততদিন পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকবে। এমনকি ফ্লাইওভার চালু হলেও যানজট সমস্যার সমাধান হবেনা। যানজট নিরসনে তাই অবিলম্বে মাছবাজার এবং বাসস্ট্যান্ডটি রাজধানীর বাইরে নিকটবর্তী কোন স্থানে স্থানান্তর করা জরুরী। তবে কাজটি অতো সহজ নয়।

বছরের পর বছর এ বাজার ও বাসস্ট্যান্ডকে কেন্দ্র করে একটি চাঁদাবাজ ও সুবিধাভোগী চক্র গড়ে ওঠেছে। সরকার বদলের সাথে সাথেই এর হাতবদল হয় এবং বলাবাহুল্য ক্ষমতাসীন দলের পান্ডারাই চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করে। কাজেই যানজটের এ প্রধান নিয়ামক দুটোকে সরাতে গেলে সুবিধাভোগী চক্রটি নিশ্চিতভাবেই প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে। কর্তৃপক্ষকে সততা এবং সাহসিকতার সাথে এ প্রতিবন্ধকতাকে নির্মুল করতে হবে। মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রীর নিজ জেলা নোয়াখালী।

নিজ জেলাতে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বুঝতে পারবেন রাজধানীর পুর্বাংশে যান-জট সৃষ্টিতে যাত্রাবাড়ি মাছবাজার এবং সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড কতোটা নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। কাজেই এ বিষয়ে তার বা তাকে নতুন করে কোন তথ্য, উপাত্ত, পরিসংখ্যান সংগ্রহ/সরবরাহের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই কোন ঝটিকা পরিদর্শনেরও। প্রয়োজন শুধু সাহসী সিদ্ধান্তের। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.