ঢাকা শহরে প্রায় ৩৭ ভাগ মানুষ হেঁটে কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। অবশিষ্টদের মধ্যে প্রায় সমপরিমাণ রিকশা ব্যবহার করেন। বাদবাকিরা নানা ধরনের মোটরযানে চলাচল করেন। মাত্র ৭ ভাগ প্রাইভেট কারে। এখন দেখার বিষয়, এই যে ৩৭ ভাগ মানুষ হাঁটেন, তাদের জন্য নগরীতে কী ব্যবস্থা রয়েছে? আমাদের অধিকাংশ রাস্তায় ফুটপাত নেই।
যেসব রাস্তায় আছে, সেসব ফুটপাতের অবস্থা একেবারেই হতাশাব্যঞ্জক। ৩৭ ভাগ পথচারীর জন্য ১০০ ফুট রাস্তায় ৩৭ ভাগ, অর্থাৎ দু’পাশ মিলিয়ে ৩৭ ফুট ফুটপাত থাকলে তবেই যুক্তিসিদ্ধ হতো। কিন্তু আমাদের বড় রাস্তাগুলোয়ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে দু’পাশ মিলিয়ে ১০-১৫ ফুটের বেশি ফুটপাত নেই। ঢাকার ফুটপাতগুলোর তদারকির আদৌ কোনো ব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না। পদে পদে উঁচু-নিচু, খানাখন্দক।
আবার বহু স্থানে পার্শ্ববর্তী দোকান বা বাড়ির মালিকরা নিজেদের মতো করে ফুটপাতের গঠন পাল্টে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে এসব ফুটপাত নিরাপদে এবং নিশ্চিন্ত মনে হাঁটার অযোগ্য। বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক শহরে ফুটপাতের দিকে অনেক বেশি নজর দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় রাস্তার চেয়ে ফুটপাত প্রশস্ত। ফুটপাত তৈরিও করা হয় নিখুঁতভাবে।
কড়া নজরদারি থাকে রক্ষণাবেক্ষণে। চোখ বন্ধ করে হাঁটা যায় একটানা দীর্ঘক্ষণ। সেই ফুটপাত দিয়ে চাকাযুক্ত লাগেজ দীর্ঘপথ টেনে নেয়া যায়। বাজার-সদাই করে বাস-ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা না করে মালামাল টানতে টানতে ফুটপাত দিয়ে অবলীলায় হেঁটে চলা যায়। বাসগুলোয় নির্দিষ্ট জায়গা থাকে মালামাল রাখার।
বাস সামনে পেলে উঠে পড়া। বাস থেকে নেমে আবার ফুটপাত ধরে এগিয়ে যাওয়া। এরকম ব্যবস্থা কি ঢাকা শহরের নাগরিকরাও আশা করতে পারেন না? অতএব ঢাকার ট্রান্সপোর্ট প্লানিংয়ে ফুটপাতের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া দরকার। এসাটপিতে (স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্লানিং) এ দিকটি যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। ওই প্রস্তাবনার বিস্তারিত জানার সুযোগ হয়নি।
তবে বিশ্বাস, নগরীর যানজট নিরসনের ক্ষেত্রে ফুটপাত উন্নয়ন, প্রশস্তকরণ ও আধুনিকায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
অনেকেই যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে অফিস আদালত, প্রাইভেটকার ও জনসংখ্যা। তাহলে ১৫ বছর আগে কেন যানজট ছিল? সেই সময় তো জনসংখ্যা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং গাড়ির পরিমাণও কম ছিল। বর্তমান এখনও এর ছোট্ট একটি প্রমাণ হলো শুক্রবার। এই দিনে সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত বন্ধ থাকে।
তারপরও যানজটের হাত থেকে রক্ষা নাই। এখানেই প্রমাণিত হয় যে জনসংখ্যা, গাড়ির চাপ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এগুলোই যানজটের প্রধান কারণ নয়। আরেকটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, মাত্র ২ লেনের সড়ক হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কিন্তু দৈনন্দিন অতিদ্রুত এবং অধিক গাড়ি ২৪ ঘণ্টা চলাচল করে এই মহাসড়কে। কোন প্রকার দুর্ঘটনা ছাড়া তীব্র যানজটের শিকার হতে হয় না। তার কারণ হচ্ছে ওইসব প্রধান সড়কে সংযোগ সড়ক খুবই অল্প যার কারণে প্রধান সড়কের গাড়িগুলো বাধাগ্রস্ত হয় না এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘণ্টায় ৬০/৮০/১০০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে।
অপরদিকে ঢাকার ভিতরে প্রতি ঘণ্টায় ১০/১৫ কিমি চলা যায় কিনা তারও নিশ্চয়তা নাই। ৫ মিনিটের রাস্তা কখনো ৩০ মিনিট কখনো ৪৫ মিনিট সময় লাগে। তার প্রধান কারণই হচ্ছে ঢাকার তিন রাস্তা/চার রাস্তার সংযোগ সড়ক বেশি। তেমনি এক নতুন সংযোগ সড়ক হচ্ছে বিজয় স্মরণী লিংক রোড। এর ফলে আগে এখানে এত তীব্র যানজট ছিল না কিন্তু বর্তমানে এই সংযোগ সড়কের কারণেই তীব্র যানজটের শিকার হচ্ছে সকল যানবাহন।
এর তীব্রতা মহাখালী ফ্লাইওভার পর্যন্ত ছড়িয়ে যাচ্ছে।
মূলত যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে নিরবচ্ছিন্নভাবে যানবাহন চলতে না পারা। আর রাজধানীতে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চলতে না পারার অন্যতম কারণ সিগন্যালের লালবাতি/তিন/চার রাস্তার মোড়। পর্যাপ্ত সড়ক থাকা সত্ত্বেও সিগন্যাল/লালবাতির আওতায় সকালের শুরু থেকে রাজধানীতে যানজটের উৎপত্তি। একটি তিন রাস্তা/চার রাস্তার সিগন্যালের কারণে প্রধান সড়কসহ সংযোগ সড়কগুলোর যানবাহন বার বার বাধাগ্রস্ত হয় এবং তীব্র যানজটের শিকার হয় এবং গাড়িগুলো ধীর গতির হয়ে স্থির হয়ে যায়।
ট্রাফিক পুলিশ এক পাশের গাড়িগুলোকে চলার সুযোগ করে দিতে গিয়ে আরও কয়েক লেনের গাড়িকে লাল সিগন্যালের আওতায় স্থগিত করে দিতে হয়। প্রযুক্তির অভাবেই বহু বছর যাবৎ এই যানজটের সমস্যা। যার কারনে কিছুক্ষণ এই লেন সচল করে ঐ লেন বন্ধ করে এবং ঐ লেন সচল করে এই লেন বন্ধ করে। পর্যাপ্ত সড়ক থাকা স্বত্ত্বেও চলমান গাড়িগুলো বাধাগ্রস্ত হয় এবং অপেক্ষা করতে হয়। এই অপেক্ষার কারনে ঐ গাড়ি গুলো যেখানে কয়েক কিলোমিটার চলে যেতে পারত এবং তার পিছনের গাড়ি গুলো অগ্রসর হয়ে চলে আসতে পারত।
সেখানে এই অপেক্ষার ফলে পিছনের গাড়ি সামনের গাড়ি এক সাথে জড়ো হয়ে যাচ্ছে এবং সিগ্যানাল ছাড়ার পর হুলস্থুল করে ছুটাছুটি করছে। এভাবে চলতে চলতে এক পর্যায়ে চারপাশের সড়ক বন্ধ হয়ে যায় এবং নগরীতে দুর্বিষহ যানজটের সৃষ্টি হয়। তখন ট্রাফিকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আশ্চর্যের বিষয় হলেও সত্য যে, এই পদ্ধতিতে ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন সড়কই বিভিন্ন সময়ে অব্যবহৃত থাকে সিগন্যাল/লালবাতির কারণে। এই চলমান গাড়িকে বাধা সৃষ্টি এবং অব্যবহৃত সড়ক প্রকৃতভাবে ব্যবহার না হওয়ার কারণেই প্রধান সড়ক এবং শাখা সড়ক গুলোতে যানজটে স্থির হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, কেবল স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে যানজট সমস্যার সমাধান হবে না। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে ।
সবুজ বাংলা ব্লগেও প্রকাশিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।