জীবনকে মূল্যায়ন করতে শিখতে হবে। বছর চারেক হয়ে গেল আমি আমার হোস্টেলে আছি। কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগছে এই ভেবে যে আমাকে আর মাত্র ৫টা মাস এখানে থাকা হবে। কি আর করা! আমার তো গ্রাজুয়েশন হয়ে গেলে আর এখানে থাকতে পারবো না। বরিশাল বি. এম. কলেজ আমার শিক্ষাজীবনে এক মহামূল্যবান অধ্যায়।
এখানে আমার জীবনের প্রতিটা পরতে পরতে খুব ভাল কিছু সময় পার করেছি। আর পরিচিত হয়েছি অনেক মানুষের সাথে। হোক তারা স্বল্প পরিচিত বা ঘনিষ্ট তারা তো আমার জীবনটাকে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। তাই যত দিন ঘনিয়ে আসছে, ততই আমার মনটা দুঃখের সাগরে যেন জোয়ারের পানিতে হারিয়ে যাচ্ছে অতণ কোন স্থানে। অনার্স জীবনের আর মাত্র ৫টা মাস।
তারপর আমাকে অবতীর্ণ হতে হবে জীবন যুদ্ধের এক কঠিন সংগ্রামে। যদিও ভয় লাগছে। তবুও আমাকে তে এখানে নিজের অস্তিত্বের সংগ্রামে টিকে থাকার লড়াই করে বাচতে হবে। আমার সংসার আর আমার নিজের জীবনের কাছে আমি অনেক দায়বদ্ধ। তাই আমাকে এই সংগ্রামে নামতেই হবে।
বাস্তব জীবন আসলে অনেক কঠিন।
যাই হোক ছিলাম হোস্টেলের কথায় চলে গেলাম কোথায়! গত ৪ বছরে এই কলেজের হোস্টেলে থাকাকালীন আমার যাবতীয় আনন্দ আর বেদনার স্মৃতিবিজরিত সব জায়গা আমি কখনোই ভুলবোনা, এটা ভুলে যাবার নয়। আমার প্রিয় রুমমেট আর হোস্টেলমেটদের কথা আমি কখনোই ভুলতেই পারবো না। তারা আমার সুখে আর দুঃখে সবসময় আমার পাশে থেকেছে। তাদের সাথে খুব ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে যেমন ঝগড়া করেছি।
আবার তাদের সাথে আনন্দঘন মূহুর্তও খুব কম না। তাই যখন আমি ওই সকল বিষয় নিয়ে চিন্তা করি তখন খুব ভাল লাগে, তখন ওই দুঃখময় দিনগুলোর কথা ভুলেই যাই। তাও জীবনে যদি কোনো দুঃখই না থাকে তাহলে আনন্দগুলোর কোনো মানেই থাকে না। তাই সব স্মৃতিই আমার কাছে খুব মূল্যবান। বাবা আর মায়ের সাথে বাসায় থাকলে সবসময় মনে হত ইশ যদি হোস্টেলে থাকার সুযোগ পেতাম! কত কি না মজা করেত পারতাম।
সেই ইচ্ছা পূরণ হল এই অনার্স জীবনে এসে। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হত না। খাবারের কষ্ট, বাবা মাকে ছেড়ে থাকার কষ্ট আরও কত কি.....। যখন ফোনে বাবা আর মায়ের সাথে কথা বলি, বিশেষ করে মায়ের সাথে, তখন মাকে এখানের সব সমস্যার কথা খুলে বলি। তখন মা আমাকে সান্ত্বনা দেয় এই বলে যে আর মাত্র কয়েকটা দিন আছে।
একটু ধৈর্য্য ধরে থাকতে বলে সে। কি আর করা, মায়ের আদেশ শিরোধার্য। তাই পালন করতেই হয়। অনেকদিন হোস্টেলে থাকার পর যখন বাড়িতে যাবার কথা মাথায় আসে তখন আমার এক সপ্তাহের সব কাজ যেন একদম থেমে যায়। কোনোকিছুতেই আমার যেন মন বসতে চায় না।
খালি বাড়িতে যাবার তাড়া মনের ভেতর কাজ করতে থাকে। খুব মিস করতে থাকি আমার বাসার সবাইকে। আবার যখন বাসায় যাই এই হোস্টেল এ ফিরে আসার জন্য আমার মনটা যেন আকুপাকু করতে থাকে। তখন আর একমুহূর্তও বাসায় আমার মন টেকে না। তখন মনে হয় কখন আমি আমার হোস্টেল এর রুমে যাব আর কখন এখানকার পরিবেশে থাকতে পারবো।
তখন খুব বেশী করে যেন হোস্টেলটাকে মিস করতে থাকি। আর মাত্র ৫টা মাস হাতে আছে। কি আর করা? চলে যেতেই হবে। জীবন তো আর থেমে থাকে না? জীবন তার নিজের নিয়মেই চলতে থাকে। আমারটাও খু্ব ব্যতিক্রম নয়।
তাই জীবনে অনেক কিছুর মতই আমার হোস্টেল লাইফটাকে ত্যাগ করতে হবে। তাই বলে এখানকার সকল স্মৃতি আমার মনের মণিকোটায় আজীবন থেকে যাবে। জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকবে আমার হৃদয়াকাশে। আমার প্রিয় ডিগ্রি হোস্টেল আমি তোমাকে কখনোই ভুলব না। কখ্খোনো না.............................. ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।