"বিবর্তনবাদ কেবল একটি থিয়োরী, এর কোন প্রমান বিবর্তনবাদীরা দিতে পারবে না। "-- এই কথাটিই সৃষ্টিবাদীরা অনবরত বলে যাচ্ছে।
প্রথমত, আমাদের বুঝতে হবে "বিবর্তন" বলতে কী বোঝায়। আরো বহু শব্দের মতই এরও একাধিক অর্থ আছে। জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে "কালানুক্রমে এলিল বীপ্সার পরিবর্তন" কেই বিবর্তন বলা হয় (a change in allele frequency over time)।
এই সংজ্ঞা অনুযায়ী বিবর্তন একটি অবিসংবাদিত সত্য। তবে অধিকাংশ মানুষই বিবর্তন বলতে কমন ডিসেন্ট বা একটি অভিন্ন পূর্বপুরুষ থেকে সকল জীবন উৎসারিত, এই তত্ত্বকেই বুঝে থাকেন। অনেকেই মনে করেন যে এই মতটিকে সত্য বলে গ্রহণ করবার মত যথেষ্ট প্রমাণাদি রয়েছে। তবে, অভিন্ন পূর্বপুরুষের তত্ত্বই বিবর্তনবাদ নয়, এটি বিবর্তনের একটি অংশমাত্র। বিবর্তনবাদ শুধু এটুকুই বলে না যে জীবন বিবর্তিত হয়েছে, বরং তা আরো বলে যে কীভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচন, জেনেটিক ড্রিফট, এবং মিউটেশন বিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
জীব বিবর্তনের ব্যাখ্যায় এসব বিষয়ের বিবেচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে তত্ত্ব বলতে বোঝায় "কোন প্রপঞ্চশ্রেণীর ব্যাখ্যায় ব্যবহৃত সুসংবদ্ধ সাধারণ প্রস্তাবনাসমূহ (a coherent group of general propositions used as principles of explanation for a class of phenomenon)। " এই শব্দের মধ্যে কোন অনিশ্চয়তার স্থান নেই। সাধারণভাবে বলতে গেলে, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আর বৈজ্ঞানিক সূত্রের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে যে, সূত্রগুলো সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশ করা সম্ভব। অন্যদিকে তত্ত্ব হবে, স্বত-সঙ্গতিপূর্ণ, পর্যবেক্ষনের সাথে সম্পর্কিত, এবং উপযোগিতাপূর্ণ।
(সৃষ্টিবাদের ব্যর্থতা এই শেষ গুণটিতে। সৃষ্টিবাদ পর্যবেক্ষণের সঠিক গন্তব্য নিয়ে কোন যথেষ্ট বা সুনির্দিষ্ট দাবী করতে পারে না; কাজেই শেষ পর্যন্ত এটি অব্যবহার্য।
প্রমাণের অভাব কোন দুর্বলতা নয়। বরং কোন সিদ্ধান্তকে অভ্রান্ত বলে দাবী করা ঔদ্ধত্য বই কিছু নয়। আমাদের দৃশ্যমান জগতের কোনকিছুই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত নয়, কোনদিন তা হবেও না।
যদি আমাদের চেনা বিশ্বের সর্বসম্মত সংজ্ঞা আমরা কোনদিন গ্রহণ করতে পারি তবেই কেবলমাত্র "আঙ্কিক প্রমান" দেয়া সম্ভব। আমাদের কাজ বাস্তব জগতের চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণের ফলে প্রাপ্ত প্রমাণাদি নিয়ে। তাই আমাদের কোন বিষয় নিয়ে নিশ্চয়তার প্রকারভেদ থাকবে। যত উতকৃষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে থাকবে আমরা ততই নিশ্চয়তা নিয়ে সেই পর্যবেক্ষণ ব্যবহার করতে পারবো। যখন আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ থাকবে তখন আমরা সেটিকে সত্য বলে গ্রহণ করতে পারবো যদি তা ১০০% নিশ্চয়তাপূর্ণ নাও হয়।
বিবর্তনের যথেষ্ট প্রমাণাদি আছে যা বিজ্ঞানসম্মত। বিবর্তনের সমর্থন পাওয়া গেছে জেনেটিক্স, শারীরবিদ্যা, পরিবেশবিদ্যা, প্রাণীআচরণ, আদিজীবনের পর্যবেক্ষণ এবং আরো বহু ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণের দ্বারা। আপনি যদি বিবর্তনবাদকে চ্যালেন্জ করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই এই প্রমাণাদি নিয়ে কাজ করতে হবে। আপনাকে অবশ্যই দেখাতে হবে যে এইসব প্রমাণাদি ভুল অথবা অবান্তর বা অন্য কোন তত্ত্বের সাথে এটি অধিকতর সঙ্গতিপূর্ণ। আর অতি অবশ্যই, এটি করতে হলে, আপনাকে তত্ত্ব আর প্রমাণ দুটো সম্পর্কেই জ্ঞান থাকতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।