কম্পিউটার বিশারদ পেশায়, নেশায় যুক্তিবাদী
বিবর্তনবাদ সম্পর্কে পুরনো কিছু লেখা পড়ে আমার মনে হল এ বিষয়ে আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া প্রয়োজন। তাই আরো একবার একই টপিকে লিখতে বসলাম।
প্রশ্ন – ব্যাক্টেরিয়া বা স্পঞ্জ কোটি কোটি বছর ধরে অপরিবর্তিত আছে। এটা কি প্রাকৃতিক নির্বাচনের পরিপন্থী?
একদমই না। এখানে বক্তব্য দুরকমের।
প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে সবসময় উন্নততর প্রজাতির সৃষ্টি হয় এটা সম্পূর্ণ ভুল। প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে সেই প্রজাতির উদ্ভব হয় যারা আগের প্রজাতির তুলনায় পরিবেশের সাথে বেশী ভাল করে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। উদাহরণ – ঈস্ট।
আর জীব যে পরিবেশে বাস করে তা যদি কোটি কোটি বছর ধরে অপরিবর্তিত থাকে তাহলে কেন তাদের মধ্যে বিবর্তন দেখা দেবে? শুধু তাই নয়, যদি পরিবর্তিত পরিবেশেও একি বৈশিষ্ট্য সমানভাবে কার্যকর হয়, তাহলে তাদের নির্বাচনের সম্মুখীন হতে হবেনা। যে ব্যাক্টেরিয়া বা স্পঞ্জ-এর প্রজাতির বিবর্তন হয়নি, খুব সহজেই বোঝা যায় যে তাদের হয় পারিপার্শ্বিক পরিবেশেরও পরিবর্তন ঘটেনি, বা তারা নতুন পরিবেশেও সমানভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছে।
প্রশ্ন – দাবানল, জলোচ্ছ্বাস বা অগ্নুৎপাতের ফলে শক্তিমান, দুর্বল সকলেই মারা পড়ে। এটা কি প্রাকৃতিক নির্বাচনের পরিপন্থী?
খুবই অদ্ভূত যুক্তি। সবাই মারা পড়েনি বলেই তো কিছু প্রাণী এখনো বেঁচে আছে ও বংশবিস্তার করেছে। আর উপরে বর্ণিত পদ্ধতি গুলো জীবের মৃত্যুর একমাত্র কারণ হতে পারেনা। খাবার নিয়ে মারামারি, আবহাওয়া পরিবর্তন এরাও একিভাবে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক নির্বাচন কাজ করবে। সব মিলিয়ে যারা বাঁচতে পারবে, তারাই বংশবিস্তার করতে পারবে। এটাই সহজ সত্য।
প্রশ্ন – বিজ্ঞানীরা প্রাকৃতিক নির্বাচন সমর্থন করেন না, শুধু নাস্তিকেরা নিজেদের সমর্থনে এই তত্ত্ব ব্যবহার করে। এটা কি সত্যি?
১৯৯১ গ্যালপ পোল অনুসারে, আমেরিকায় বিজ্ঞানীদের মধ্যে ৫% সৃষ্টিতত্ত্বে বিশ্বাস করেন।
কিন্তু এদের মধ্যে কম্পিউটার বা মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার-রাও সামিল। শুধু জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে ১৯৯৫ সালে হওয়া সমীক্ষায় ৪,৮০,০০০ জনের মধ্যে মাত্র ৭০০ জন সৃষ্টিতত্ত্বে বিশ্বাসী পাওয়া গেছে। ন্যাশনাল অ্যাকাডেমী অব সায়েন্স, (একটি সংগঠন ৭২ জন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী যার সদস্য) বিবর্তনের স্বপক্ষে একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট চালু করেছেন।
নাস্তিকেরা বিবর্তনবাদ নিজেদের সমর্থনে ব্যবহার করেন কারণ এই তত্ত্ব অনুসারে কোনো অতিপ্রাকৃতিক সৃষ্টিকর্তার অনুমান ব্যতিরেকে আমরা জীব তথা মানুষ সৃষ্টির ব্যাখ্যা দিতে পারি। তাছাড়াও, জীবদেহ ও আত্মার আলাদা অস্ত্বিত্ত্বও বিবর্তনবাদের বিরোধী।
নাস্তিকদের মতে মন ও আত্মা শরীরেরই অংশ।
প্রশ্ন - প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব কি সৃষ্টিকর্তার ধারণার বিরোধী?
কোনোভাবেই নয়। বিজ্ঞানের এক্তিয়ারে সেটুকুই পড়ে যাকে ভুল প্রমাণ করা যায়। যেমন ধরা যাক, প্রিক্যাম্বিয়ান যুগে যদি খরগোশের জীবাশ্ম পাওয়া যায় তাহলে প্রাকৃতিক নির্বাচন ভুল বলে প্রমাণিত হবে। সৃষ্টিকর্তার ধারণা ভুল প্রমাণ করার মত কোনো পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষা জানা নেই।
তাই এটা আদৌ বিজ্ঞানের এক্তিয়ারভুক্ত নয়। এমনকি, প্রাকৃতিক নির্বাচন সরাসরি সব ধর্মগ্রন্থের বক্তব্যের বিরুদ্ধে হলেও, ধার্মিকেরা ধারণা করতেই পারে সেগুলো গ্রন্থে রূপক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। যেহেতু রূপক থেকে আক্ষরিক সত্য আলাদা করাও বিজ্ঞানের এক্তিয়ারভুক্ত নয়, তাই, ধর্মগ্রন্থের বক্তব্য ভুল প্রমাণ করাও বিজ্ঞানীদের কাজ নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।