বোবা আর বোকার কোনো শত্রু নাই
মাইনষে কয় পরথম পেরমের কাহিনী নাকি ভুলা যায় না। ইহা নাকি আজীবন অন্তরে গাঁথিয়া থাকে। একমাত্র সাচ্চা আবেগিত পেরেমই হইল পরথম পেরেম। হেরপর থেকে নাকি পেরমিক পেরমিকারা প্লেয়ার হইয়া যায়, আবেগ কইম্মা যায়। আমি কিন্তু আমার পরথম পেরমের কাহিনী বিলকুল ভুইল্লা গেছি।
দূর মিয়া ভুইল্লা গেলে লিখমু ক্যামতে। মিছা কতা কইলে না সামু আবার কান ধইরা লটকাইয়া (স্টিকি) থোয়। যাউগ্গা যা থায় কপালে হাঁচা কতাই কইয়া দিই, মিছা কওনের মানুষ অন্তত এ গণ্ডমূর্খ না।
কেলাচ ফোর ফাইভ থেইক্কাই আমার এক দূরসম্পর্কের কাজিন আমার লগে জানি কেমুন কেমুন কইরা কতা কয়। আগেই বইল্লা রাখি ইউনিভার্সিটিতে আসার আগ পর্যন্ত মাইয়া প্রজাতির লগে আমি ভালা কইরা হাইস্সা কতা কইতে পারতাম না।
তয় খালি ঐ ছলনাময়ী রমনীর লগেই ক্যামতে জানি কতা কইতে পারতাম। মনে হয় ইহাই গদ্গদ্ লুতুপুতু পেরমের ফল। হেরে দেখলেই ক্যান জানি আমার অন্তরাত্মা হুগাইয়া মরুভূমি হইয়া যাইতো। শুধু ক্যান জানি কাছে যাইয়া কইতে পারতাম না ঐ মাইয়া তোরে আমি ভালা পাই।
তয় হ্যায় যে আমারে ভালা পায় এর পরমাণ কেলাচ সেভেনে থাকনের সময় একবার রাখছিল।
ঘটনাটা সংক্ষেপেই শেষ করি। একদিন সন্ধ্যায় বাতাসে ধুপধাপ আম পড়তেছিল। আমি আর আমার মনোহরিণী বাইর হইলাম আম টোকাইতে। হঠাৎ বিধাতা ভালুবাসার সিম্বল হিসেবে তার আর আমার মাঝখানে বিশাল সাইজের একখান আম ফালাইলো। পাঠক আবার ভাইব্বেন না মাইয়া আমখানা পাইয়া আমার হাতে তুইল্লা দিছিল।
রবীন্দ্রনাথই কইছিল "ওরা ছলনাময়ী, ওদের অনেক লোভী মন"। বিশাল আমের লোভ সামলাতে না পাইরা মাইয়া দিল মারিয়ন জোন্স এর মত ছুট আর আমিও দিলাম উসাইন বোল্টের দৌড়। ফলাফল ধাক্কা অতঃপর বাংলা ছিঃনেমার মত চিৎপটাৎ। উইঠ্যা দেখি আমার গণ্ডারের চামড়ায় কিচ্ছু হয় নাই, কিন্তু আমার মনোহরিণী উডে না খালি কান্দে। একটু পরে দেখি হের হাত ঠ্যাং ছিঁড়া রক্ত বাইর হইতাছে।
মাইয়া মাইনষের চামড়া যে এত নরম ঐ দিন প্রথম বুঝলাম। আমারে আর পায় কেডা ভালুবাসারে থুইয়া দিলাম দৌড়। ভাইব্বেন না আবার আমটাও থুইয়া গেছি। তয় মনে মনে হের আম্মার চিল্লানি খাওনের প্রস্তুতি লইলাম।
পরদিন দেখি ব্যাণ্ডেজ লইয়া মাইয়া আর হের মা আইতাচে।
দৌড় দিমু না কান্দা শুরু করমু বুঝার আগেই শাশুড়ী আম্মা আইস্সা কয়, কিরে মূর্খ কাইল কি হইছিল? আমি আম না খাইয়াই আমতা আমতা শুরু কইরা দিছি। ঢোক গিলনের আগেই মাইয়া কয়, "না মা মূর্খ না থাইকলে অবস্থা আরো খারাপ হইয়া যাইতো"। কইয়াই আমার দিকে চোখ টিপ মারলো। ওরে আব্বারে এইডা কী হুনি, আমার হৃদয়ে ধুপধাপ কিল ঘুষি শুরু হইয়া গেল। বুইঝলাম আমিতো পেরমে পড়িনি পেরেম আমার উপ্রে পইড়ছে।
কেলাচ এইট গেল নাইন গেল মাইয়া দেহি কিচ্ছু কয় না। খালি আমারে দিকে তাকাইয়া তাকাইয়া হাসে। আমিও সাহস কইরা কইতে পারি না, ওরে তোরে আমি ভালুবাসি।
কেলাচ টেন, খালাতো ভাইয়ের বিয়া ঠিক হইল। বিয়ার আগের দিন মনোহরিণী দেখি খুব সাজগোজ কইরা আমার চারদিকে ঘুরঘুর করতাছে।
মনে সাহস লইলাম আইজ কইয়াই দিমু যা থায় কপালে। কিন্তু আমার সাহস হওনের আগেই মাইয়া কইত্তে জানি দৌড়ে আইস্সা আমার গলা ধইরা কয়, "মূর্খ তোমারে আমি ভালোবাসি, তোমারে ছাড়া আমি বাঁচুম না। " তুই থেইক্কা সরাসরি তুমি, তাও আবার গলা ধইরা। আমিতো পেরমের আগুনে, থুক্কু পেরমের গুতায় ভেঙ্গে চুরে, চুরে ভেঙ্গে, গুঁড়ো গুঁড়ো হইয়া গেলাম।
হেরপর থেইক্কা মাইয়া আর আমার সামনে আহে না।
আমি কিচ্ছু কইতে যাই তো মাইয়া ভাগে। এমনি কইরা তারে নিয়া ভাবতে ভাবতে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করলাম। নতুন ভাবীও ক্যামতে জানি আমার মনের অবস্থা বুইজ্জা ফালাইলো।
কলেজে ভর্তি হইলাম। মাইয়া ফেল মারাইলো।
হোস্টেলে উঠলাম। তার সাথে আর ছয় মাসেও একবার দেখা হয় না। কিন্তু ওর প্রতি আবেগ ভালোবাসা দিন দিন বেড়ে যেতে লাগলো। সত্যিকার অর্থেই ওকে নিয়ে তখন খুব ভাবতাম।
ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার।
একদিন দুপুর বেলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ খটখট আওয়াজ। পেছনে ফিরে দেখি আমার মনোহরিণী। আমার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য তুমুলভাবে মাইক্রোবাসের গ্লাস পিডাইতাছে। পাঠক ভাইব্বেন না আবার বাংলা ছিঃনেমার কাহিনী শুরু হইয়া গেছে।
আমার মনোহরিণীরে কেও উডাইয়া লইয়া যাইতাছে। কাছে যাইতে কইল ঐ তাড়াতাড়ি কমিউনিটি সেন্টারে আয় বড়দির বিয়া। কইতে না কইতে মাইক্রোবাস ছাইড়া দিল। হালার ডেরাইভার এতদিন পরে তারে পাইলাম! আমারে আর পায় কেডা it's my life গানের মত দিলাম ছুট। পাঁচ মিনিটে না পারি দশ মিনিটে কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছে গেলাম।
ওম্মা মনোহরিণী দেহি আর আগের মত নাই। পটপট কথা কয়। আবার তুইতাইও শুরু কইরা দিছে। আমার গায়ের লগে লাইগ্গা বইছে, কয়, কেমন আছিস? বাড়ি গেলে আমাদের বাসায় আসিছ। আমার মুখ দিয়া কথা বাইর হয় না আটকাইয়া যায়।
একলগে বইয়া পোলাও মুরগী খাইলাম। আহনের সময় আমারে একটা ফুলও ধরাইয়া দিছে। পেরমের ঠেলায় গদ্গদ্ হইয়া হোস্টেলে ফিরলাম। ঘুমাইলে ঘুম আহে না। এদিকে ফিরলেও গুতায় ঐদিকে ফিরলেও গুতায়।
ইন্টার পরীক্ষা শেষ করে ঢাকায় কোচিংয়ে ভর্তি হলাম। একদিন দেখি unknown নাম্বার থেকে ফোন। কইলো নাম্বার সেভ রাখিস। ক্যান জানি ফোন দেয়া হয় না। চিন্তা করলাম যা কমু সামনে যাইয়াই কমু।
ইউনিভার্সিটিতে আইস্সাই নতুন ভাবীরে হাত করলাম। দিনক্ষণ ঠিক কইরা হেগো বাসায় গেলাম। আইজ আমি পেরমের কতা কমুই। বাসায় গিয়া পরথমেই মূর্খীর(আমার লগে নাম মিলাইয়া দিলাম আরকি, আসল নামতো আর কয়া যায় না ) কতা জিগাইলাম। ভাবী দেহি খালি হাসে।
কয় এতো অস্থির হয়ো না, মাথা ঠাণ্ডা কর। দেখ কারবার। আমি কই কি আর আমার সারিন্দা কয় কি? ভাবী কইল তুমার মূর্খীর তো পরশু বিয়া হইয়া গেছে। শুইন্নাই আমার দুই কান বন্ধ হয়া গেছে। কয় চমকতো এইখানেই শেষ নারে মূর্খ।
মূর্খীতো পালাইয়া বিয়া করছে। আমি খালি কইলাম, পোলাটা কে?
।
।
।
।
।
কিছুদিন আগে ওর বড়দির বিয়া হইছিল না তার দেবর।
দেখ মাইয়া জাতির কারবার। ছয়মাসেই সব ঘটাইয়া ফালাইছে। এতবড় লুল ঘটনা গত ছয় বছরে কাউরে কই নাই, আইজ কয়া দিলাম তাও কত নিঃসংকোচে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।