আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার রচনা লিখন ও সামুতে "সিন্দুক" ব্লগার ঘোষণা দেওয়ার নেপথ্যের কাহিনী!!!

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ব্লগিং হজমের জন্য ক্ষতিকর। ইহা পঞ্চম শ্রেণীর ঘটনা। সেই সময়কালে গ্রাম্য বিদ্যালয়েই নিয়মিত অধ্যাবসায় করিতাম। আজিকার দিনের মতই "বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা" নামক এক ঐতিহ্যের ধারা সেকালে সকল বিদ্যালয়ে সচল ছিল বিধায় আমাদের বিদ্যালয়েও তাহার প্রভাবটুকু সম্পূর্ণাঙ্গে বিদ্যমান ছিল বলা যাইতে পারে। শিক্ষাঙ্গনের অন্যান্য শিক্ষার্থী অপেক্ষা শারীরিক শক্তিতে দুর্বলতম ছিলাম বলিয়া ক্রীড়া ঘটিত বিষয়ে কোনকালেই আমার আশানুরুপ দখল ছিল না, ডাকও পাইতাম না বিশেষ।

ফুটবল খেলিবার মাঠে এককোণায় নিঃসঙ্গ দাঁড়ায় থাকিতে দেখিয়া, দয়াপরবেশ হইয়া কোন সুহৃদ যদি খেলোয়াড় সংকট হইতে মুক্তি পাইবার লক্ষ্যে কস্মিনকালে মোরে কুহু করিয়া ডাক দিতো তাহা হইলে বিনয়ে আমি মাখনের মতই গলিয়া পরিতাম। ভাবিতাম ফুটবল ক্রীড়ায় আমার রণনৈপুণ্য সকলের সম্মুখে আজিকেই আমি দেখাইয়া দিবো। কিন্তু হায়, অধিকাংশ সময়ে দেখা যাইতো অল্প কিছুক্ষণেই অর্ধেক মাঠ দৌড়াইয়া আমি হাঁপাইতেছি অথবা অন্য কোন বলশালী সুহৃদের কোমল স্পর্শে আমি গুটিকয়েক ডিগবাজী সহকারে মৃত্তিকায় গড়াগড়ি খাইতেছি। বলা বাহুল্য দুটি বিষয়ের কোনটিই আমার পক্ষে পুলকিত হওয়ার মত বিষয় ছিলো না। পাঠকসমাজ হইতো এতক্ষণে ভাবিতে বসিয়াছেন এই অকম্মার ঢেঁকিটি শুরু করিয়াছিল পঞ্চম শ্রেণী বলিয়া কিন্তু ধীরে ধীরে ফুটবল মাঠে কেন আমাদিগকে টানিয়া নামাইতেছে!! মোর ত্রুটি মার্জনা করিবেন, পূর্বেই জানিয়ে রাখা উচিত ছিল আমার লিখনির ডগাটি এরুপে প্রস্তুত যে লেখার মূল বিষয়টি সর্বদায় স্বদেশীয় রেলগাড়ির মতই কিছুক্ষণ বিলম্ব করিয়া প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত হইয়া থাকে।

অতএব ধৈর্য ধারণ করুন, গাড়ি আসিতেছে। যাহা হোক যেরুপে যাত্রা করিয়াছিলাম সেরুপেই ফিরিয়া আসি - বলিতেছিলাম ক্রীড়া প্রতিযোগিতার কথা। তথাপি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নাম হইলেও "রচনা লিখন" বিষয়টি যে সম্ভাব্য কোন রুপে এক প্রকারের ক্রীড়া হইতে পারে তাহা আদৌ অবধি আমার বোধগম্য হইতে পারে নাই। তাই যাহাই হোক না কেনো, উক্ত প্রতিযোগিতা উপলক্ষে জননী হইতে ক্রমাগত প্রাপ্ত ৭০০-৮০০ কিলো প্যাসকেলের সমপরিমাণ চাপ সহিতে না পারিয়া, নিতান্ত অসহায় হইয়া দুর্বল হস্তে ক্রীড়ার বিষয় স্বরূপ রচনা লিখনকেই বাছিয়া নিতে হইলো। শুধুমাত্র নাম দিতে বাধ্য করিয়াই ক্ষান্ত হননি আদরের জননী, বরং বিপুল উৎসাহ নিয়া ডজন খানেক রচনা নোট করিয়া তাহা আমাকে জোরপূর্বক গলাধঃকরণের মত পৌশাচিক নির্যাতনের আশ্রয় নিতেও তিনি কোনরূপ কার্পণ্য বোধ করেননি।

ক্ষণে ক্ষণে সেই শুভ মুহূর্ত আরম্ভ হইলো। জাতীয় সঙ্গীত শেষ করিয়া শিক্ষকগণ ব্যস্ত হইয়া পরিলেন প্রতিযোগীদের নানা দলে বিন্যস্ত করিবার মত জটিল কর্মে। ইত্যাবসরে আমার পালা আসিয়া পরিল। সারি করিয়া দাঁড়া করানো হইলো আমাদিগকে। ক্রীড়া সঞ্চালক নির্দেশ দিলেন উনার গলায় ঝুলানো লাল রঙের ঐ বাঁশিটিতে ফুঁ দান মাত্রই আমাদিগকে দৌড়াইয়া যাইতে হইবে কিছুদূরে রাখা আসনের উদ্দেশ্য।

অতঃপর আসন গ্রহণপূর্বক পূর্বেই নির্ধারণ করে রাখা শিক্ষকের মনপূত বিষয়ে আমাদিগকে লিখিতে হইবে ছোট্ট রচনা। প্রথমবারের মত কোন লিখন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়া যেরূপ ভীত অসহায় বোধ করিতে লাগিলাম তা আরো শতগুণ বাড়িয়া গেল রচনার বিষয়বস্তু দেখিয়া। আমাকে সরবরাহ দেওয়া সাদা পৃষ্টার উপরে লাল কালিতে পরিষ্কার করিয়া লিখে দেওয়া "আমার প্রিয় ঋতু - শরৎকাল। " কথা আর কাজে মিল নাই দেখিয়া হিতাহিত জ্ঞান হারানোর মতই অবস্থা!! বোধ হইতে লাগিল শিরোনাম হওয়া উচিত ছিল "শিক্ষকের প্রিয় ঋতু - শরৎকাল। " ব্যাপক ক্রোধ জমা হইতে লাগিল।

ভাবিলাম তাবত দুনিয়ায় প্রিয় ঋতু বলিয়া সকলে একবাক্যে বর্ষাকাল অথবা বসন্তকালকে নিয়াই কত সুন্দর মনোরম রচনা লিখিয়া আসিতেছে সর্বত্র। অথচ কি কুক্ষণে আমাকে লিখিতে হইতেছে শরৎকাল নামক এক অদৃশ্য ঋতু নিয়া। অকস্মাৎ বুদ্ধির বাত্তি হাজার ভোল্ট পাওয়ারে জ্বলিয়া উঠিল টং করিয়া!! মনে মনে ভাবিলাম, আরে বর্ষাকাল বসন্তকাল এই রচনা দুটি তো আমার কন্ঠস্থ, আর এখন চলে গ্রীষ্মকাল। অতএব এই তিনখানা ঋতুকে একত্র করিলেই তো শরৎকাল চলিয়া আসে!! আমাকে আর পায় কোনজনা। লিখিয়া যাইতে লাগিলাম মনের মাধুরি মিশাইয়া।

ক্ষণিকে ভাবিলাম সাথে শরৎবাবুর কিছু কবিতার লাইন জুড়িয়া দিবো কিনা, যেহেতু শরৎকালে তো শরৎবাবুর নামের আদ্যক্ষর আছেই!! পরে অবশ্য ভাবনাটিকে ছুটি দিয়া দিলাম আর নিজেকে ধিক দিয়া বলিলাম, ওহে অধম শরৎবাবু তো কবিতা রচয়িতা নন, তিনি তো বিধ্বস্ত প্রেমের উপন্যাস রচয়িতা। এই ফাঁকে সময় গড়াইল ঘন্টাখানেক, রচনা জমা পরিল, মাঝে কিছুক্ষণ খেলাধুলাও হইলো, বিচারকার্য সম্পন্ন হইলো, সময় আসিল পুরষ্কার বিতরণের। দেখিলাম সহপাঠিদের অনেকেই ইতিমধ্যে পুরস্কারের থালায় হস্ত ধীরে ধীরে ভরাইয়া ফেলিয়াছে, অথচ আমার হাতখানি এখনো বায়ুভর্তি। ভয় হইতে লাগিল অনেক। খানিক পরে রচনা লিখনে পুরষ্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা হইতে লাগিল।

ভাবিলাম একটু কাঁদিয়া নিতে পারিলে আরাম বোধ হইতো। চোখ বন্ধ করিয়া শুনিলাম একে একে। কিন্তু হায় ভাগ্যের এমন পরিহাস দেখিয়া বিহ্বল হইলাম। দ্বিতীয়, তৃতীয় কোন পুরষ্কারই জুটিলো না আমার কপালে, এমনকি শান্তনা পুরষ্কারটুকুও না, পাইলাম সরাসরি একদম প্রথম পুরষ্কারটি!!! আচমকা সত্যিই মনে হইলো শরতের কাশফুলের পালঙ্কে শুইয়া আমি নিদ্রা যাইতেছি। অত্যাধিক আনন্দে হৃদয় কাঁপিয়া উঠিল।

বুঝিতে পারিলাম প্রথম বোধহয় এজন্যই হইয়াছিলাম কারণ প্রতিযোগীদের অন্য সবাই হয়তো আনকমন পরিয়াছিল বলিয়া আমার চেয়েও কম জানিত শরৎকাল নিয়া!! তৎক্ষণাৎ অটল সিদ্ধান্ত নিয়া ফেলিলাম বাস্তবিকই আজ হইতে শরৎকালই হইবে আমার প্রিয় ঋতু আর আমিও চেষ্টা করিবো শরৎচন্দ্রের মতই বড় লেখক হইতে। ইত্যাবসরে ঝরে গেল বহু বৃক্ষপত্র, পুরনো কাপড়গুলো আকারে ক্ষুদ্র হইতে লাগিল, পৃথিবীও সূর্যকে একাদশবার প্রদক্ষিণ করিলো কিন্তু হায় উহাই ছিল লিখালিখি জনিত কারণে আমার প্রথম ও শেষ পাওয়া পুরষ্কার। বড় লেখক হইতে চাহিবার ইচ্ছার আগুনও ক্রমশ নিবুনিবু করিতে করিতে একসময় হয়তো নিবেই গিয়াছিল। কিন্তু না তা নহে, আচমকা "ব্লগ" নামক এক অদ্ভুত রাজ্যের সম্মুখীন হইয়াছিলাম বলিয়াই হয়তো আজিকে সেই ইচ্ছার ভশ্মস্থুপের মধ্যি হইতে পুনরায় উত্তাপ অনুভূত হইতে লাগিল। আশ্চর্য হইয়া বিচরণ করিতে লাগিলাম ব্লগীয় জগত, দেখিলাম কত শত মেধাবী তরুণ লেখক থরথর করিয়া লিখিয়া যাইতেছে অনন্য অসাধারণ সব রচনাসমগ্র।

একটি বছর অবাক হইয়া সেইসব লেখাগুলি খালি পড়িতাম আর মজিতাম, মনে মনে ভীষণ ভালোবাসিয়া ফেলিয়াছিলাম ব্লগের এই স্বাধীন রাজ্যটিকে। অতঃপর ভাবিয়া দেখিলাম বড় লেখক হইতে না পারি তাতে কি আসে যায়, নিদেনপক্ষে একখানা ক্ষুদ্র ব্লগ পোস্ট রচনা করিবার সামর্থ্য হয়তো এখনো আমাতে আছে, হয়তো ঐ লেখায় থাকিবে না কোন তথ্য, থাকিবে না কোন ভারী বাক্যের সমাহার, হয়তোবা আমার মনের বাক্যগুলোই অগোছালো হয়ে রুপ নিবে শরৎকাল নিয়ে লিখা সেই রচনার মত হ-য-ব-র-ল পর্যায়ে, পাঠকরা হয়তোবা নাক সিটকাবে ঐ লেখা পড়ে, কিন্তু তবুও আমি লিখার চেষ্টা করিবো, লিখিবো এই ব্যস্ত জীবনে সামান্য বিনোদনের জন্যি, লিখিবো ছন্নছাড়া ভাবনাগুলোকে একটি নীড় বুনে দেওয়ার তাগিদে, লিখিবো বিকালের আলস্যগুলোকে দূর করিবার আশায়, লিখিবো সকলকে আরেকটু বিরক্ত করিবার লোভে এবং পরিশেষে আমি লিখিবো আমারই ব্লগে। উল্লেখ্য; দীর্ঘ তিনটি মাস পর দিন কয়েক পূর্বে সামু আমার আইডিকে "সিন্দুক" বলিয়া ঘোষণা করিয়াছে। ইতিমধ্যে হয়তো ভাবিতে বসিয়াছেন "সিন্দুক" মানে কি বাহে!! তাহাদের উদ্দেশ্যে বলিয়া রাখি বঙ্গ অভিধান ঘাটিয়া ইংরেজী শব্দ "সেফ" এর বহু অর্থ হইতে বাছিয়া বাছিয়া "সিন্দুক" শব্দটিই আমার মনে ধরিয়াছে। অবশ্য এর অন্য আরেকটি কারণও রহিয়াছে।

ভাবিতেছিলাম কি হেতু সামু এত সময় নিয়া আমাকে সেফ ঘোষণা করিলো। অতএব গুগল মামুকে বিষয়টি জানাইলাম, প্রকারান্তরে উনি যাহা দেখাইলেন তাহাতে আমার চক্ষুস্থির হইয়া গেল। সেফ মানে হইলো শক্ত মজবুত সিন্দুক। এরুপ সিন্দুক তৈরি করিতে নিশ্চয় মাস তিনেক সময় লাগিতেই পারে। অতএব সামুকে পুনরায় ধন্যবাদ জানাই বিলম্বে হইলেও আমাকে মজবুত সিন্দুক রুপে ঘোষণা দেওয়ায়।

আর আপনাদিগের কাছ হইতে পূর্বেই চাহিয়া লইতেছি অনেক শুভাশীষ। লেখাটিতে প্রচুর গুরুচন্ডালি দোষ বর্তমান থাকাতে, বিষয়বস্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে একটু দীর্ঘায়িত হইয়া যাওয়াতে ও পরিশেষে আপনাদের মূল্যবান সময়ের ১২ টা বাজানোর কারণে সলজ্জ ক্ষমা চাহিয়া লইতেছি, মাফ করিয়া দিবেন স্বীয়মহিমায়। আজকের মত এখানেই বিদায়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।