একটি মেয়ে তাকে দূর থেকে ভালোবাসতো। ছেলে্টি পার্কে বসে যখন আড্ডা দিতো আর্টিস্ট কমিউনিটির লোকজনের সাথে, মেয়েটি দূর থেকে তার কথা বলার ভঙ্গি, হাসি – চলাফেরা, সবই লক্ষ্য করত। সব কিছই তার খুব পরিচিত এবং পছন্দের।
যার কথা বলছি তার নাম রিমি, চারুকলায় পড়ে সে। অনেক ছবি আঁকে, কিন্তু সে জানে এর কিছুই হয় না।
হাশিখুশি বন্ধুসুলভ মন তার। এই ছেলেটিকে সে প্রতিদিন পার্কে পায় না তাই যেদিন পায় সেদিন মন ভরে দেখতে থাকে। এমন কি আছে এই ছেলের মাঝে? সে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে এবং বিরক্ত হয়।
কিন্তু মন ভালো নেই আজ, অনেক দিন হয়ে গেলো সে আর আসছে না, কাউকে জিজ্ঞেসও করতে পারছে না। সবাইকেই কম বেশি চিনে রিমি, কিন্তু লজ্জা করছে তার।
এই ছেলের কথা মাথায় আসলেই সব উলটা পালটা হয়ে যায়। একেই বোধ হয় কবি গুরু গণ প্রেম বলে।
রিমি প্রতিদিন প্রেমের উপন্যাস পড়ে, আর নিজেকে সে উপন্যাস এর নায়িকার চরিত্রে বসানোর চেষ্টা করে। মাঝে মধ্যে চিন্তা করে, এখন ছেলেটা কি করছে? কেমন আছে সে? সে কি তার বান্ধবির সাথে......
সকালে ঘুম ভাংলো এক বিকট আওয়াজ শুনে। আফসোস আমার কবিতার প্রতি, আমার মনের ভাবনার প্রতি।
যেদিন প্রথম নিজের পায়ে চলা শুরু করি, যেদিন এই বাসায় প্রথমবার আসি, সব কিছুই ভালো লেগে গিয়েছিলো। সব কিছুতে নিজস্বতা অনুভব করেছিলাম। কবিতাও লিখেছিলাম, কিন্তু আজ নিজের কাছেই সব ছন্দ অগোছালো মনে হচ্ছে!
“ বারান্দার পাশে কারেন্টের তারে বসে থাকা কাক গুলো
বৃষ্টির দিনে ভিজে যাবে
সেদিন না হয় তোমরা উড়ে যেও”
আজ পার্কে আসেনি ছেলেটি, আজ ছেলেটির নাম জানবেই সে। কোনও কারন ছাড়াই একজন মানুষকে যখন এতো ভালো লেগে যায় তখন নাম না জানা ব্যাপার টা খুবই বোকামি। তবে রিমির ধারনা এটাও একধরনের ভালোবাসা।
কিছুক্ষণ বাদেই ছেলেটি পার্কে আসলো কিন্তু ৫ মিনিটের মধ্যেই আবার ফিরে গেলো, রিমি বুঝতে পারলো সে হয়ত কোথাও যাচ্ছে অথবা ব্যাস্ত। সেই ৫ মিনিট যেনো রিমির মন কে একযুগের জন্যে সুখী করে দিলো।
রিমি মাঝে মধ্যে বুঝতে পারে এই ছেলেটিকে সে কখনই তার জীবনে পাবে না। কিন্তু সে নিজেকে সান্তনা দেয়। একদিন হয়ত পাবেই, তাতে হয়ত রিমির জীবন পার হয়ে যেতে পারে কিন্তু তারা একদিন মিলবেই।
নাম জানার পালা, রিমি অনেক টেনশনে আছে, কি নাম হবে তার , রিমির নামের সাথে কি ছেলেটির নাম মিলে যাবে? আজ অনেক কথা বলবে রিমি সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু যেই কিনা ছেলেটি আসলো, সব ওলট পালট। কিছু নেই মাথায় , ব্ল্যাঙ্ক।
ছেলেটি গিটার হাতে, সিগারেটের ধোয়া ছাড়ছে আর টুং টাং করছে। রিমি তাই মনযোগ দিয়ে দেখছে আজ অনেক কাছ থেকে।
অনেক বেশি আপন লাগছে এই মুহূর্তগুলো রিমির কাছে।
অন্ধকার পার্ক, কাছাকাছি না থাকলে কারও চেহারাই ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছে না। সবাই আড্ডা দিচ্ছে, ছেলেটি চলে গেছে। রিমির চোখে পানি। আজও নাম জানে না সে!
“প্রতিদিন চাঁদ আকাশে আসবেই,
হয়তোবা মেঘের আড়ালে থাকবে
অথবা আঁধারের মাঝে লুকিয়ে,
কিন্তু সে আকাশেই থাকবে”
রিমি বাসায় ফিরে রিকশায়, তার বাসায় ফিরতে দেরী হলেও কিছু আসে যায় না।
সে একা থাকে, মা থাকে চিটাগং। বাবা সেপারেটেড। রিক্সায় ফিরার সময় সে কবিতা লেখে। আসলে লিখে না টাইপ করে, মোবাইলে গান শুনে আর মেসেজবক্স এ কবিতা লিখতে থাকে। এর মাঝে তার অন্যরকম ভালো লাগা অনুভূত হয়।
"শহরের কোলাহলের মধ্যে লুকায়ে থাকা
বৈচিত্র্যতা আমাকে ছুয়ে যায়
যখন আমি তিন চাকায়
বাড়ি ফিরে যাই। "
হঠাত সে দেখে ছেলেটিকে। তার স্বপ্নে। সে কাছে গিয়ে নাম জিজ্ঞেস করে, ছেলেটি কোনও কথা বলে না দাঁড়িয়ে থাকে। রিমি তার কাছে যায়, সে হাওয়ায় মিশে যায়।
রিমি বিছানায় দেয়ালের দিকে পাশ ফিরে তার কোলবালিশটি কে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে শুয়ে আছে। মাঝেমধ্যে তার পায়ের কাছে জানালার পর্দাটা তার পা ছুয়ে দিয়ে যাচ্ছে। বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। ঠান্ডা পানি তার পায়ে লাগছে, সে চুপচাপ শুয়ে কবিতা চিন্তা করছে।
রিমির যে কোনও বন্ধু বান্ধবি নেই তা নয়।
তবে সে একা থাকতেই বেশি ভালোবাসে। অতিরিক্ত কথা বলা তার স্বভাবে নেই। চুপচাপ সবার কথা শুনে হু হা করে, এই যা। এছাড়া রিমির কাছ থেকে কেউই অন্য কোনও কথা আশা করে না। তবে রিমির একজন বন্ধু সাকিব।
সে রিমিকে খুব পছন্দ করে বন্ধু হিসাবে। সে হঠাত বুঝতে পারে যে রিমি কোনও কারনে চিন্তিত। পরের দিন ক্লাস শেষে সে রিমিকে নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে যায়।
সাকিব- রিমি দোস্ত বল কি খাবি?
রিমি- কিছু না রে, পেট ভরা, খুধা নেই তবে একটা ঠান্ডা কোক খেতে পারি।
সাকিব- খালি পেটে কোক খাবি কেন?
রিমি- আরে বললাম তো পেট ভরা তুই কোক খাওয়া।
সাকিব- আচ্ছা ঠিকাছে।
কোক খেতে খেতে সাকিবের প্রশ্ন রিমিকে। কিরে দোস্ত তোকে ইদানিং প্রায়ই উদাস হয়ে থাকতে দেখি, সব ঠিক আছে তো?
রিমি বুঝতে পারে না কি বলবে, সে মাথা নাড়িয়ে বলে না তেমন কিছু না। আই এম ফাইন।
সাকিবের তবুও সন্দেহ হয় কিন্তু সে কিছু বলে না, চিন্তা করল এখন হয়ত মন ভালো নেই, অন্য সময় জিগেসা করা যাবে।
রিমি কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে সাকিব বাসায় চলে যায়।
খুব সহজ সরল ছেলে সাকিব, কিন্তু সে কিভাবে বুঝল আমার মন খারাপ? তার মানে ব্যাপার টা আমার চেহারায় ফুটে উঠছে দিনে দিনে। আসলে তেমন কিছুই হয় নি আমার। আমি প্রেম জ্বরে আক্রান্ত একজন মেয়ে। যে কিনা এখনও তার ভালোবাসার মানুষটির নাম জানতে পারেনি।
“ভালবাসার কোনও নাম না থাকতেই পারে
তাই বলে ভালোবাসা যাবে না এমন কোনও কথা নেই”
সাকিব পার্কে বসে তামাক খায় আর চিন্তা করে কিভাবে জানা যায় রিমির কি হয়েছে! কিন্তু সে হঠাত চিন্তা করে সে রিমি কে নিয়ে হঠাত ব্যাস্ত হয়ে পড়ছে কেনো? মনে মনে ভাবে রিমির কি অনেক বিপদ?
রিমি হঠাত পার্কে আসে, সাকিব কে ইশারা দেয় দূর থেকে সাকিব ওর পাশে গিয়ে বসে। রিমি দোকানে চা এর অর্ডার দিয়ে সাকিব কে তার মনের ভিতরের কিছু লুকানো কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু সে বার বার ব্যর্থ হয়। সাকিব তার দিকে তামাক বাড়িয়ে দিয়ে বলে নে কথা বলতে পারবি।
রিমি প্রথমে একটু হতভম্ভ বোধ করে, কিন্তু এই জিনিশ তার জন্যে নতুন কিছু নয়, তামাক সে আগেও খেয়েছে! সে তামাক খেতে খেতে কথা বলা শুরু করে।
সব কিছু বলে দেয় সে সাকিব কে।
সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত সাকিব রিমির সাথে থাকে, রিমিকে সময় দেয়। রিমির মন ও হাল্কা হতে থাকে। কিন্তু এবার সাকিবের চেহারায় ফুটে উঠে একধরনের বিশাদময় রেখা। বাসায় ফিরে যায় রিমি।
রিমি আজ অনেক খুশি কারন সে আজ অনেক কথা বলেছে, এবং তার মনের কষ্ট অনেকটাই কমে গেছে।
কিন্তু অন্য দিকে সাকিব যে হতাশায় ভুগছে কেউ জানে না। যাবতীয় কাজ ফেলে আজ সাকিব সারাদিন পার্কে বসে আছে, সে জানেনা সে কি করবে! সে রিমিকে চায় কিন্তু সে জানে রিমির এখন দরকার একজন ভালো বন্ধু।
অন্যদিকে রিমিও বুঝতে পারে সাকিব কে তার অনেক দরকার, সেই নাম না জানা ছেলেটির কাছে যেতে হলে সাকিব এর সাহায্য তার দরকার।
কিন্তু,
সাকিব হুটহাট করে একদিন চলে গেলো পঞ্চগড়, রিমিকে বলে গেলো না, কিন্তু রিমি সাকিবের বোন কে ফোন করে জানতে পারে।
রিমি কষ্ট পায়, কেনো বলে গেলো না সাকিব!
সাকিব সবকিছু কে ভুলে যাওয়ার জন্যে কিছুদিনের জন্যে ঘুরতে চলে যায়! কিন্তু সেই সাকিব আর কখনই রিমির কাছে ফিরে আসে নি। ঢাকায় ফিরে আসার পর সাকিব তাকে এড়িয়ে চলে, একটা সময় রিমিও বুঝতে পারে, সাকিব কারনে অকারনে তাকে ইগ্নোর করছে! সেও একসময় আর সাকিব কে বিরক্ত করে না। নাম না জানা ছেলেটি আজও নাম না জানাই রয়ে গেলো। আজ রিমির হাতে অন্য কারও হাত। কিন্তু তা সাকিবের হাত নয়, নয় নাম না জানা ছেলেটির হাত, আজ সে অন্য কারও।
কিন্তু আজও তার মনে দু’ টা প্রশ্নই ঘুরে বেড়ায়, এমন কেনো হলো! নাম কেনো জানা হলো না, সাকিব ই বা কেনো এতো দূরে চলে গেলো...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।