রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্বে থেকেই জ্বীনদের সাথে মানুষের উঠাবসা ছিল। তো আমি এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পর জীনদের সাথে মানুষের উঠাবসার কয়েকটি কাহিনী বলব। তাবেঈন হযরত মুয়ায বিন উবাইদুল্লাহ বিন আম্মার রহঃ বর্ণনা করেছেন আমি একবার হযরত উসমান রাঃ এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তাঁর কাছে একটা লোক এসে বলল, আমি আপনাকে এক বিস্ময়কর ঘটনা শুনাতে চাচ্ছি। আমি এক সফরে বিশাল মরুভূমির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম।
এমন সময় আমার সামনে দুটি ঘূর্ণি হাওয়া এল, একটি একদিকে আরেকটি আরেকদিক থেকে। উভয়ের মধ্যে টক্কর লাগল এবং মুকাবিলা হল। তারপর ঘূর্ণি হাওয়া দুইটি আলাদা হয়ে গেল। ঊভয় ঘূর্ণির মধ্যে একটি ছিল আরেকটির চেয়ে বেশী জোরালো। ঘূর্ণি দুইটি যেখানে মিলিত হয়েছিল সেখানে আমি যেয়ে দেখতে পাই ওখানে বহু সংখ্যক সাপ মরে পরে আছে।
এক সাথে এত সাপ আমার চোখে আগে কখনই দেখেনি। ঐ সাপ গুলির মধ্যে একটি সাপের শরীর থেকে মৃগনাভির খুশবু আসছিল। ঐ সাপটির রঙ ছিল হালকা সবুজাভ। আমার দৃড় বিশ্বাস হল যে এটা ঐ সাপের কোন সৎ কাজের কারণে হচ্ছে। সুতরাং আমি ঐ সাপটিকে নিজের পাগড়িতে জড়িয়ে দাফন করলাম।
এরপর আমি নিজের গন্তব্যে যাচ্ছিলাম। এমন সময় এক ঘোষকের কন্ঠস্বর শুনলাম। সে বলল ওহে আল্লাহর বান্দা! এই ঘূর্ণিঝর ছিল জ্বীনদের দুটি গোত্র বনু শাইয়ান ও বনু আকিয়াশ এর মধ্যে যুদ্ধ। বনু শাইয়ান ছিল মুসলামান জ্বীনেরা আর বনু আকিয়াশ ছিল কাফের জ্বীনেরা। ওদের উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষে বহু জ্বীন হতাহত হয়েছে।
আর তুমি যাকে দাফন করেছে উনি ছিলেন সেই সম্মানিত জ্বীনদের অন্তর্ভুক্ত যাদের সম্পর্কে সূরা জ্বীনে আলোচনা করা হয়েছে।
মুসলিম বিশ্বে ২য় উমর নামে পরিচিত উমাইয়া খলিফা হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয রহঃ এর সময় প্রধান সেনাপতি ছিলেন মূসা বিন নাসির। মূসা বিন নাসির মরক্কো, আলজেরিয়া থেকে আফ্রিকা মহাদেশের বহু দেশ জয় করেছিলেন। মূসা বিন নাসির একবার বলেন আলজেরিয়া অভিযান কালে এক পোড়া রাজপ্রাসাদ আমার চোখে পড়ে। আমি এই পোড়া বাড়িতে ১৭ টি সবুজ গড়া দেখতে পাই।
তো আমি সেই গড়াগুলির একটির মাঝে ছিদ্র করি। সাথে সাথে এক দমকা বাতাস জোরে বের হয়ে আসে। বের হয়েই বলতে থাকে আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর নবী। আগামীতে আমি আর কখন অন্যায় করবো না। মূসা বিন নাসির বুঝতে পারেন যে এই হল সেই জ্বিনদের অন্তর্ভুক্ত সূলায়মান আঃ যাদের কে কয়েদ করে রেখেছিলেন।
এরপর সেই জ্বীন টা এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল আল্লাহর কসম না আমি সুলায়মান কে দেখতে পাচ্ছি না তার সাম্রাজ্যকে। এরপর সেই জ্বীন টা অদৃশ্য হয়ে গেল।
ভারত বর্ষে ইলমে হাদীস চর্চ্চার যিনি অগ্রদূত উনি হলেন শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী রহঃ। যুবক বয়সে শাহ ওয়ালী মুহাদ্দেস দেহলভী রহঃ একবার একটি সাপকে মেরে ফেলেন। তো এর কিছু দিন পর কিছু লোক এসে উনাকে বলে, আসেন একটা জানাজা পড়তে হবে।
তো শাহ ওয়ালী মুহাদ্দেস দেহলভী রহঃ তাদের সাথে গেলেন। কিছুক্ষন হাটার পর উনি বুঝতে পারলেন যে উনি ভিন্ন একটা শহরে এসে উপস্থিত হয়েছেন। উনার আশপাশের এলাকার সাথে এই এলাকার কোন মিল নাই। তখন উনি বুঝতে পারেন উনি জ্বীনদের শহরে এসে উপস্থিত হয়েছেন। আর ঐ লোক গুলি হল জ্বীন।
তো এই জ্বীনেরা উনাকে একটি আদালতে উপস্থিত করল। সেখানে জ্বীনদের কাজী জিজ্ঞাস করল আপনি কেন ঐ সাপটিকে হত্যা করলেন ? ঐ সাপটি জ্বীন ছিল। সে আপনার কাছে হাদিস শ্রবন করতে আসতো। তো শাহ ওয়ালী মুহাদ্দেস দেহলভি রহঃ বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন কেউ যদি তার আকৃতি পরিবর্তন করে তাইলে তাকে হত্যা করা জায়েজ। তো জ্বীনদের সেই এজলাসে উপস্থিত কয়েকজন জ্বীন তাবেইনও হাদিসটারস সত্যতার পক্ষে কথা বলে।
এরপর জ্বীনেরা আবার উনাকে ভারত বর্ষে দিয়ে আসে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নব্যুয়তের খবর প্রথম মদীনায় পৌছেছিল জ্বীনদের মাধ্যমে। বায়হাকী শরীফে বর্ণিত আছে মদীনায় এক মহিলা থাকত। জাহেলিয়াতের যুগে ঐ মহিলার একজন জ্বীন প্রেমিক ছিল। সেই জ্বীন একবার পাখির রুপ ধরে ঐ মহিলার বাড়ির দেয়ালের সামনে এসে বসে।
মহিলাটি তখন পাখিটিকে বলে তুমি নেমে এসো। আমি তোমাকে কিছু শোনাব আর তুমি আমাকে কিছু শোনাবে। পাখিরুপি জ্বীন টি বলে তা আর হবে না। কেননা মক্কায় শেষ নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আবির্ভাব হয়েছে। উনি আমার ও তোমার মাঝে ব্যভিচারকে চিরতরে হারাম ঘোষনা করে দিয়েছেন।
তথ্য সূত্রঃ তাফসিরে জালালাইনের এর সম্মানিত লেখক আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহঃ প্রনীত লাক্বতুল মারজ্বানি ফী আহকামিল জান্ন গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ জ্বী জাতির বিস্ময়কর ইতিহাস, মদীনা পাবলিকেশন্স, ৩৮/২, বাংলাবাজার, ঢাকা থেকে প্রকাশিত। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।