টেরাকোটা প্যানেলের অঙ্গসজ্জা
নিচ থেকে উপর পর্যন্ত বিভিন্ন টেরাকোটা প্যানেলের মাধ্যমে মন্দিরের অলংকরণ সম্পন্ন হয়েছে। আনুভূমিক ও উল্লম্ব এ দু’ভাবেই প্যানেলগুলি সাজানো হয়েছে। মন্দিরে মোট ৬টি আনুভূমিক সারির উপস্থিতি ল্যণীয়। এর মধ্যে ৫টি সারি নিচের দিকে ও ১টি সারি উপরের দিকে অবস্থিত। উল্লম্ব প্যানেলগুলি উপর ও নিচ দিকের আনুভূমিক সারির মধ্যে স্থাপিত রয়েছে।
এত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম দেখা যায় উত্তর দিকের একটি প্যানেলের েেত্র। এখানে একেবারে নিচের আনুভূমিক প্যানেলে বিভিন্ন উদ্ভিদজাত ডিজাইন অংকিত হয়েছে। উত্তর দিকের মাঝখানে বিভিন্ন প্রেমমূলক, ধ্যানমগ্নযুক্ত চিত্র ফুটে উঠেছে। এই সারির উপরের দিকে একটি আনুভূমিক ব্যান্তে বিভিন্ন সামাজিক চিত্রাবলী প্রদর্শিত হয়েছে। এই ব্যাণ্ডের উপরের সারিতে রাম ও কৃষ্ণের বিভিন্ন কাহিনীর চিত্রায়ণ ঘটেছে।
মিথলজিকাল উপস্থাপনার এই প্যানেলগুলির উপরের দুটি আনুভূমিক প্যানেলে উদ্ভিদজাত বিভিন্ন নকঁশা অংকন করা হয়েছে। উল্লম্ব প্যানেলগুলো আনুভূমিক প্যানেলগুলির তুলনায় অপোকৃত সংিেপত। বিভিন্ন দেবতা দেবী ও ঋষীর প্রতিকৃতি এখানে মুদ্রিত করা হয়েছে। এ সমস্ত উল্লম্ব প্যানেলগুলোর মধ্যে উত্তর ও দণি পার্শ্বে বিষ্ণুর দশপ্রকার দৈবিক অবয়বের চিত্র অংকিত রয়েছে। টেরাকোটা প্যানেলগুলোর পাশাপাশি উন্নত প্লাষ্টার এবং বক্রাকৃতির সীমানা রেখার মাধ্যমে মন্দিরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্লাষ্টার অংশে জপমালার গুটিকাযুক্ত ব্যাণ্ডের মাধ্যমে অলংকৃত করা হয়েছে। আর এ ব্যাণ্ডের মধ্যকার অংশে বিভিন্ন উদ্ভিদজাত ডিজাইন উৎকীর্ণ করা হয়েছে। মন্দিরটির রয়েছে বক্রাকৃতির কার্নিশ। কার্নিশের উপরের দিকে প্যারাপেট। ২৯ কার্নিশের নিচের দিকে বিভিন্ন গাছপালার চিত্রায়ন ঘটেছে।
তাছাড়া মন্দিরের প্রত্যেক সম্মুখভাগে তিনটি করে খিলান রয়েছে।
একথা সুবিদিত যে, আনুভূমিক সারিতে অবস্থিত প্যানেলগুলির ব্যবস্থাপনা হলো পুরোপুরি থিমেটিক। আনুভূমিক সারির নিচের দিক থেকে তৃতীয় সারির প্যানেলগুলিতে রাম ও কৃষ্ণের কাহিনীসমূহ শৈল্পিক নান্দনিকতায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। রামের ঘটনাবলী দণি পাশের ডান কলাম থেকে আরম্ভ হয়ে পুর্বদিকের একেবারে ডান দিকের প্যানেলে গিয়ে শেষ হয়েছে। অন্য দিকে দণি দিকের ডান কলাম থেকে শুরু হয়ে মন্দিরের পশ্চিম ও উত্তর মুখে কৃষ্ণের পৌরাণিক কাহিনীসমূহ অংকিত হয়েছে।
মজার ব্যাপার হলো যে, শিল্পীরা মিথলজিকাল টেরাকোটা প্যানেলগুলোকে ধারাবাহিকভাবে স্বচ্ছ বিন্যাসের প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু কখনো কখনো তারা বাম ডান শৃংখলা স্থাপনে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে দেখা যায় যে, রামায়ণের চিত্র সমৃদ্ধ প্যানেলগুলোর সারিতে কৃষ্ণ ও বলরামের কাহিনীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
মন্দিরের প্রতিটি সম্মুখভাগে তিনটি করে বহু শিখরযুক্ত খিলানের অস্তিত্ব বিদ্যমান। পশ্চিম দিকের খিলান ছাড়া প্রতিটি আর্চের উপরে বিভিন্ন যুদ্ধের দৃশ্য অংকিত হয়েছে।
পশ্চিমভাগে রাধা কৃষ্ণ এবং গোপী (রাখাল বালিকা) দের নাচ ও বাশী বাজানোরত অবস্থার চিত্রের সমাহার ঘটেছে, যেখানে বীণ সহ আরো অনেক প্রকার সংগীত বাদ্য যন্ত্রের উপস্থিতি ল্য করা যায়। দেিণর সম্মুখভাগে কালিদেবী ও চমুণ্ড, অপদেবতা রক্তভেজা ও শম্ভ নিশ্চম্ভর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত এবং তাদের ধ্বংসসাধন করার দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পূর্ব দিকের সম্মুখ ভাগে মহাভারতে বর্ণিত কুরুেেত্রর যুদ্ধের দৃশ্যাবলী চিত্রিত রয়েছে। সেখানে বিশ্বের তীরপত্রে; পঞ্চপান্ডব যেমন- যুদিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল ও শহদেব অনেকের যেমন- দুরধন, করণ, দ্রুনচর ও অন্যান্যদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত- এ চিত্রগুলি উৎকীর্ণ করা হয়েছে। উত্তর দিকের সম্মুখভাগে রামায়ণে বর্ণিত যুদ্ধের দৃশ্যাবলী দেখা যায়।
এখানে রাম, লণ, সুগরিভ, হনুমান ও তাদের বানর সৈনিকদের লংকায় রাবণের আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো দৃশ্যাবলী উপস্থাপিত হয়েছে। রাবণ এবং আর্মীর বীর সৈনিক মেঘনদ, ইন্দ্রজিৎ, রাবনের পুত্র, কুম্ভকরণ ও রাবণের ভাইকে পরাজিত করার দৃশ্যাবলী এখানে সংযোজিত হয়েছে।
টেরাকোটা প্যানেলগুলির মাধ্যমে শুধুমাত্র মন্দিরের বাইরের উপরিভাগে অলংকৃত করা হয়নি। বরং ভেতরের দেয়ালের উপরিপৃষ্ঠে ও নানাভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। ভেতরের দেয়ালের বাইরের দিকে প্রতিটি বর্গাকার অংশে তিনটি করে দরজা বিদ্যমান।
এগুলির মধ্যে দুটি করে দরজা হলো বন্ধ এবং সেখানে বিভিন্ন চিত্রের মাধ্যমে সজ্জিত করা হয়েছে। ভেতরের খিলানগুলোর উপরের প্যানেলগুলোতে যুদ্ধের দৃশ্যাবলী চোখে পড়ে। দণি দিকের বদ্ধ দরজায় কৃষ্ণ ও গোপীদের প্রতিকৃতি রয়েছে। এখানে কৃষ্ণকে বাঁশী বাজাতে এবং গোপীদের নাচতে এবং জিপিস ও টম্বুর নামক সংগীত বাদ্যযন্ত্র বাজাতে দেখা যায়। পূর্বের বদ্ধ দরজায় সুগরিভের অবস্থান এবং বানর সৈনিকদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান দর্শনের চিত্র ফুটে উঠেছে।
ডানপাশের বদ্ধ দরজায় রাবণের প্রতিকৃতি উৎকীর্ণ রয়েছে, যেখানে সে বসা ও দাড়ানো অবস্থায় শিল্পীদের হাতে ধরা পড়েছে। উত্তর দিকে রাধা ও কৃষ্ণের বসা, দাঁড়ানো ও নৃত্যরত অবস্থায় তুলে ধরা হয়েছে। পশ্চিমে যোগীদের জপমালা হাতে ধ্যানমগ্ন অবস্থার রূপায়ণ ঘটেছে। রাম ধনুক ও তীরসহ এবং বলরাম লাঙ্গলসহ এখানকার চিত্রে উপস্থাপিত হয়েছে। তাছাড়া সীতাকে শিবলিঙ্গ পূজা করতেও দেখা যায় এ পাশের একটি প্যানেলে।
তথ্য নির্দেশনা:
২৯. রণেেত্র শত্র“র গোলাবর্ষণ হতে আত্মরার্থে সৈন্যবাহিনীর সম্মুখে আচ্ছাদিত অস্থায়ী প্রাচীর বিশেষ- এ সংক্রান্ত চিত্র এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ছবি: বর্তমান ও আদি কান্তজিউ মন্দির। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।