কান্তজিউ মন্দির : নির্মাণে মহিমান্বিত রাজ পরিবার
কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কান্তজিউ মন্দির নির্মাণের পেছনে দিনাজপুরের রাজ পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বাংলার দীর্ঘ দিনের শান্তি ও যুদ্ধকালীন ইতিহাসের সাথে দিনাজপুরের রাজ পরিবারের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। লিখিত উৎস, বিভিন্ন বংশ লতিকা, এপিগ্রাফ, শিলালিপি, স্মৃতিসৌধ, ভাস্কর্য, টেরাকোটা এবং অন্যান্য বিভিন্ন উৎস থেকে এ জেলার ইতিহাস পুনর্গঠিত করা যায়। প্রাচীনকালে এ জেলা পুণ্ড্রবর্ধন ভূক্তির আওতায় ছিল বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। ১০ ঔতরেয় ব্রাহ্মণ গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, পুণ্ড্রনগরের মানুষজন দস্যু নামে পরিচিত ছিল।
তারা ছিল আর্য বা বৈদিক সংস্কৃতির বহির্ভূত জাতিগোষ্ঠী। ঐতিহাসিক ও প্রতœতাত্ত্বিক উপাত্তের আলোকে বলা হয় যে, খ্রীষ্টপূর্ব ৪র্থ শতক থেকে শুরু করে ব্রিটিশ শাসন পর্যন্ত এ অঞ্চল মৌর্য, গুপ্ত, পাল, মুসলিম ও সর্বশেষে ব্রিটিশ কর্তৃপ কর্তৃক শাসিত হয়েছে। ১১ দীর্ঘদিনের এ রাজনৈতিক ইতিহাসে দিনাজপুর কখনো রাজধানীর মর্যাদায় আসীন হয়নি। তথাপি, কেন্দ্রীয় শক্তিবর্গ স্থানীয় অভিজাত বা জমিদার শ্রেনীর মাধ্যমে কর সংগ্রহ করতেন। কান্তজিউ মন্দির নির্মিত হয় স্থানীয় একটি জমিদার পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায়।
এই রাজ পরিবারটি উৎপত্তি ঘটে মুঘল যুগের শেষ দিকে। বাংলার ইতিহাসে এই পরিবারটি দিনাজপুর রাজ পরিবার নামে সুপরিচিত। রাজ উপাধি হলো মুঘল সম্রাট প্রদত্ত একটি উপাধি বিশেষ।
দিনাজপুর রাজ পরিবারের ইতিহাস সম্পর্কে স্বচ্ছ কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। Dr. F. Buchanan Hamilton (১৮৩৩) এবং Montgomary Martin (১৯৭৬) রাজ পরিবারের একটি অস্পষ্ট ধারণা প্রদান করেন।
সনাতন ধারণা ও স্থানীয় পৌরাণিক কাহিনীর ভিত্তিতে তারা এ প্রচেষ্টা চালান। অপর্যাপ্ত এ সকল তথ্যাবলীকে সংশোধন ও পরিবর্ধন করেন E. B. Westmacott (১৮৭২); যিনি ১৮৬৮ থেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত ৬ বছর প্রথমে ম্যাজিষ্ট্রেট ও পরবর্তীতে কালেক্টর হিসেবে দিনাজপুরে অবস্থান করেন। তাছাড়া উনিশ শতকের মাঝামাঝি W. W. Hunter (১৮৭৬) এর লিখিত বিবরণী, বিশ শতকের প্রথম দিকে F. W. Strong (১৯১২) এর পর্যালোচনা, আহমেদ (১৯৯০), আলী (১৯৯৮), বোস (১৯৩৬), করিম (১৯৯৬) ও তানিগুছির (১৯৭৮, ১৯৯৬) বিভিন্ন উপাত্তের আলোকে রাজ পরিবারের ইতিহাস মোটামুটিভাবে জানা যায়। দিনাজপুরের মহান জমিদার পরিবার মুঘল সম্রাট আকবরের সময় থেকে দুই শতক ধরে এ অঞ্চল শাসন করতে থাকে। ১৬০০ সালে সম্রাট আকবর প্রশাসনিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে মুঘল সাম্রাজ্যকে ১৫টি সুবায় বিভক্ত করেন এবং তার পুত্র যুবরাজ সেলিমকে বাংলার সুবাদার হিসেবে নিয়োগ দেন।
একটি সুবাকে পরবর্তী ২৪টি সরকারে বিভক্ত করা হয়। উল্লেখ্য যে, এ রকম ৬টি সরকার দিনাজপুর জেলায় অন্তর্ভূক্ত ছিল। আকবরের শাসনামলে, রাজা গণেশের পরিবারের এক ব্যক্তি দিনাজপুর ও মালদহ জেলার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অংশ নিজ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। অনেক গবেষক দিনাজপুর রাজ পরিবারের উৎপত্তি রাজা গনেশের পরিবার থেকে এ ধরাণা মানতে নারাজ। এেেত্র তারা দুটি কারণের ব্যাখ্যা করেছেন।
প্রথমত, দিনাজপুর রাজা গনেশের আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও এটি তার প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল না। দ্বিতীয়ত, দুই রাজ পরিবারের মধ্যে প্রায় ২০০ বছরের বময় ব্যবধান ছিল। এত লম্বা সময়ের পর উত্তরাধিকার থাকা সম্ভব ছিল না। ১২ তবে এ সমস্ত যুক্তি প্রধানত অনুমান নির্ভর। গবেষক ইঁপযধহধহ দিনাজপুর রাজ পরিবারের প্রাথমিক প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে একটি নাম কাজী (কধংর) কে চিহ্নিত করেছেন।
তবে তিনি (বুকানন) কথিত এ নামের কোন লিখিত উৎসের উল্লেখ করেননি। তাছাড়া স্থানীয় জনসাধারণ এ নামটি চিরতরে ভুলে গেছে। রাজবাড়ীর মন্দিরের দরজার নিকটে তার (রাজা) কবর দেখা যায়। আশপাশের মানুষ এ কবরে জামা-কাপড়, দুধ, ভাত প্রভৃতি আজো প্রদান করে চলেছে। স্থানীয় জনসাধারণের কাছে তিনি একজন পবিত্র মানুষ হিসেবে পরিচিত।
তাকে ব্রহ্মচারী ও মহাত্মা বা গোঁসাহ নামে অভিহিত করা হয়। স্থানীয় উপাখ্যান অনুসারে জানা যায় যে, তিনি তাঁর রাজ্যে একটি মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। এ ম্িন্দরে তিনি কালি বা কালিকার মূর্তি ও পরে কৃষ্ণ অবতারের একটি বিশেষ রূপ কালিমর্দান (Kaliyamardana) মূর্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন। এরপর কাজী (Kasi) তাঁর কায়স্থ শিষ্য শ্রীমন্ত দত্ত চৌধুরীর অনুকূলে রাজ্য ত্যাগ করেন। শ্রীমন্তের ছিল দুটি সন্তান: একজন পুত্র ও একজন কন্যা।
তাঁর পুত্র কোন উত্তরাধিকার না রেখেই মারা যান। অন্যদিকে কন্যার সুখদেব রায় নামে এক পুত্র সন্তান ছিল। পরবর্তীতে সুখদেব এস্টেটের উত্তরাধিকারী হন। গবেষক E. V. Westmacott (১৮৭২) সুখদেবের এস্টেটের একটি বিবরণ দিয়েছেন। বলা হয় যে, তাঁর সময়ে রাজ্য সীমা বর্তমান দিনাজপুর ও ঠাঁকুরগাও জেলা ব্যাপী বি¯তৃত ছিল।
এর অন্তর্ভূক্ত ছিল পশ্চিম দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও মালদহ জেলা। উল্লেখ্য যে, এ সময় জমিদারী সম্পত্তির ভাগাভাগি ল্য করা যায়। ১৬ ভাগের ৭ ভাগ পান সুখদেব এবং বাকী ৯ ভাগ পান অন্যান্য অফিসার বা দেওয়ানরা, যাদের জমিদারী ছিল বর্ধনকুটি বা ইদ্রাকপুরে। এ অবস্থায় সুখদেব তার জমিদারী স¤প্রসারণের চেষ্টা চালান। দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট ও নবাবগঞ্জ থানা, বগুড়া জেলার আদমদীঘি ও শিবগানি থানা, জয়পুরহাট জেলার তেলাল ও পঞ্চবিবি থানা, এবং নওগাঁ জেলার বাদলগাছি থানায় তাঁর সীমানা বর্ধিত করেন।
সুখদেব উত্তর বঙ্গ এলাকার এক বিশাল অঞ্চলের অধিকারী হিসেবে মুঘল সম্রাটের নিকট থেকে রাজা উপাধি লাভ করেন। তিনি ১৬৭৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। জানা যায় যে, তিনি প্রজাদের কল্যাণে সুখসাগর (Sea of Pleasure) খনন করেন। সুখদেবের তিনটি পুত্র ছিল: রামদেব, জয়দেব এবং প্রাণনাথ। ১৩ ল্যনীয় যে, তিন পুত্রের পারিবারিক উপাধি এক রকম নয়।
জানা যায় যে, বড় পুত্র ছোটবেলায় মারা যা। দ্বিতীয় পুত্র ১৬৭৯ সাল থেকে ১৬৮২ সাল পর্যন্ত ৫ বছর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর পরেই রাজা হিসেবে অভিষেক ঘটে তরুণ প্রাণনাথের। মুঘল সম্রাট আলমগীরের শাসনামলে, আজিমুদ্দিন মাহমদু ১৬৭৯ সালে একটি সনদ জারী করেন, যেখানে সুখদেবের অধিভুক্ত সম্পত্তিতে কতিপয় ব্যক্তির উত্তরাধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়। গবেষক F. W. Strong দিনাজপুর রাজ্যের ব্যাপারে মুঘল নীতির ব্যাখ্যায় বলেছেন:: “The ousting of the Afgans from Bengal appears to have brought that province little eluser to the throne of Delhi that it was under its former governors. The rule of the mughal viceroys was a repetition of that of their predecessors, so far as their relations with the Emperor were concerned. The constant bickering that went on with the central power distracted their attention from their Hindu subjects, and the Raja of Dinajpur was permitted to rule undisturbed over some three-quarters of a million of people, on condition of paying a contain portion of his revenues to the Subbadar of Bengal”১৪
প্রাণনাথ ১৬৮২ থেকে ১৭২২ সাল পর্যন্ত ৪০ বছর দিনাজপুর শাসন করেন।
সে সময়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী ও মতাধর জমিদার। গবেষক N. Ahmed তাকে আধা-স্বাধীন (Semi-independent) শাসক বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি পূর্বতন জমিদারী রার পাশাপাশি শক্তিমত্তার মাধ্যমে অনেক অঞ্চলে নিজ আধিপত্য বিস্তার করেন। স্থানীয় ধারণা মতে, তিনি অস্ত্রশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মালিগোয়ান পরগনা দখল করেন। তাছাড়া, তিনি আরো ১২টি ছোট ছোট এস্টেট অধিকার করেন।
রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজা তার নাম স্মরণীয় করে রাখতে প্রয়াসী হন। তিনি দিনাজপুর শহরের ১৮ কিলোমিটার দেিণ প্রাণসাগর নামে একটি দীঘি খনন করেন। দিনাজপুর শহরের ১৮ কিলোমিটার উত্তরে ঢেপা নদীর তীরে নির্মাণ করেন বিখ্যাত উপসনালয় কান্তিজিউ মন্দির। রাজার প্রিয় স্থানকে বলা হত প্রাণনগর, তা বর্তমানে প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত। আকবরের শাসনাধীনে টোডরমল জমি বন্দোবস্ত ও রাজস্ব সংগ্রহের নিয়মনীতি বেধে দেন।
মীর জাকির খান রাজা প্রাণনাথের আমলে বাংলার সুবাদার হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি টোডরমলের পদ্ধতিকে বদল করে বাংলা প্রদেশে নতুন নিয়ম চালু করেন। নতুন পদ্ধতিতে প্রদেশকে বিভিন্ন চাকলায় বিভক্ত করা হয় এবং মুঘল রাজপ্রতিনিধির অনুগত হিন্দু অভিজাতদের চাকলাদার হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। তারা মূলত রাজস্ব সংগ্রহকারী হিসেবে দায়িত্বপালনে প্রতিশ্র“তিবদ্ধ ছিল। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, এ সময়ে অধিকাংশ জমিদার রাজা উপাধি লাভ করে।
যা অনেকদিন পর্যন্ত টিকে ছিল।
রাজা প্রাণনাথের কোন পুত্র ও কন্যা ছিল না। তিনি রামনাথ নামক তাঁর এক তরুণ আত্মীয়কে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। প্রাণনাথের পরে এস্টেটের দায়িত্ব তার উপর বর্তায়। এজন্য উত্তরাধিকার ফিস হিসেবে মুঘল সুবাদারকে ৪, ২১, ৪৫০ টাকা প্রদান করতে হয়।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত মতাশালী ও সৎ । গবেষক F. W. Strong বলেছেন- he seems further to have been a persons grate with the Subadar of Bengal who granted his three sansds, conferring on him additional estates in thanas Patiram, Patnitala and Gangarampur. Ramnath conquered and dispossened the zamindar of Gobindnagar, near the present village of Thakurgaon, employing a Brahmin to steal his protecting deity or family idol Gobinda, and thus cursing his own downfall. The conqueror subjequently constructed a canal connecting Gobindragar on the Tangan with prannagar near the punarbhaba for the purpose of taking the idol back words and forwards between the tow places, This canal is still in existence and is called the Ramdanra,১৫ কথিত আছে যে, রাজা রামনাথের সময়কালে দিনাজপুরে প্রলয়ংকারী ভূমি কম্পন দেখা দেয়। এতে রাজবাড়ি, ও বিশেষত কান্তজিউ মন্দিরের ব্যাপক য়তি হয়। রামনাথ অতি দতার সাথে এ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেন। Strong, Stewart (tistory of Bengal, 1813) এর সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে বলেছেন যে, ভূমি কম্পের পরে রাজা তাঁর রাজ্য পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন।
তিনি অতি দ্রুত রাজবাড়ির পুননির্মাণ করেন। রামনাথ ছিলেন একজন মহান প্রশাসক, রাষ্ট্রনীতিক এবং সাহসী যোদ্ধা। তাঁর ছিল একটি সুসজ্জিত ও বৃহৎ সেনাবাহিনী। এ কথা প্রচলিত আছে যে, নবাব মুর্শিদ কুলী খান তাকে অসংখ্য মাস্কেট ও কামান উপহার দেন। Bose (১৯৩৬) উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর সামরিক সরঞ্জাম যেমন শার্ট, শিল্ড, মাস্কেট, স্পেয়ার প্রভৃতি এখনো অতি যতেœর সাথে সংরণ করা হচ্ছে।
রামনাথ দিনাজপুর শহরের ৬ কিলোমিটার দেিন বিখ্যাত রাম সাগর দীঘি খনন করেন। দীঘিটি উচ্চ বাঁধ দ্বারা এখনো পর্য়ন্ত সংরতি হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে যে, ১৯৩৬ সালে বাংলায় ব্রিটিশ গর্ভনর Sir John Anderson কৃত্রিম এ দীঘি দেখে চমৎকৃত হন। এটা এখন দিনাজপুর জেলার বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত। তিনি কালির মূর্তি সম্বলিত রাজারামপুর মন্দির নির্মাণ করেন।
তিনি প্রাণনাথের কান্তজিউ মন্দিরের অসমাপ্ত কাজ সমাধা করেন। এ সমস্ত কার্যাবলী রাজা রামনাথকে এ জেলার মানুষের নিকট জনপ্রিয় করে তুলেছে।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে কয়েকটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে উঠে। প্রথমত, রাজাদের বিশেষত প্রাণনাথ ও রামনাথের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জনকল্যাণ, যার প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন দীঘি নির্মাণ, মন্দির স্থাপন প্রভৃতির মাধ্যমে। কান্তনগরের আশেপাশের জনসংখ্যা বিশ্লেষণে দেখা যায় যে এখানকার অধিকাংশ মানুষ হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
ফলে সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে জনকল্যাণের অংশ হিসেবে রাজা প্রাণনাথ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। দ্বিতীয়ত, রাজার বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দী জমিদার ছিলেন। এ সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বিরা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারে চেষ্টা চালাতো। এদিক থেকে রাজা এ অঞ্চলের মানুষের রাজনৈতিকভাবে নিজ করতলগত রাখতে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করার প্রয়াস পান। এতে করে রাজ্যের অধিবাসীরা রাজার প্রতি অনুগত থাকবে এবং অন্য জমিদারের হস্তপেকে মেনে নেবে না।
তৃতীয়ত, সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রাচীন গ্রন্থ রামায়নকে নতুন করে হিন্দু জনগণের নিকট তুলে ধরতে রাজা প্রয়াস চালান। চতুর্থত, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ফলে মানুষের মনে শিল্পকলার আগ্রহ জন্মে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সমসাময়িক সময়ে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। বিশেষত দিনাজপুর অঞ্চলে সামগ্রিক নাগরিক জীবনে স্বচ্ছলতার ছাপ ফুটে উঠে। তাছাড়া জমিদারের কোষাগার ছিল যথেষ্ট সমৃদ্ধ। ফলে অপূর্ব সৌন্দর্যমণ্ডিত মন্দির নির্মাণে রাজার কোন বাধা ছিল না।
মূলত, সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি দিনাজপুরের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল কান্তজিউ মন্দিরের নির্মাণকে উৎসাহিত করেছিল এ কথা মোটামুটি বলা চলে।
তথ্য নির্দেশনাঃ
১০.হক, এম. এম, “দিনাজপুরের মানববসতির ধারা”, “দিনাজপুর: ইতিহাসও ঐতিহ্য”, প্রাগুক্ত; পৃ: ১০-১৭।
১১.যাকারিয়া, এ. কে. এম, “দিনাজপুরের প্রশাসনিক ইতিহাস: প্রাচীন ও মধ্যযুগ”, “দিনাজপুরঃ ইতিহাসও ঐতিহ্য”, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৩২-১৪৬।
১২.আলী, এম, “কান্তজিউ মন্দির”, ৩য় সংস্করণ ১৯৯৮, দিনাজপুর, সখিনা জোহরা (বি. এ অনার্স, এম. এ) পৃ: ৩৫-৩৬। উদ্ধৃত Hoque, M. M. et.al. “Kantajee Temple An Outstanding Monument of Late Madieval Bengal”, publication Dept. of Drik, Dkaha, 2005, P. 23.
১৩.Ahmed, N. "Epic stories in Terrawtta Depicted on Kantanagar Temple", Bangladesh, Dkaha University pross Limited, 1990, p-4. উদ্ধৃত Hoque, M. M. et.al. “Kantajee Temple An Outstanding Monument of Late Madieval Bengal”, publication Dept. of Drik, Dkaha, 2005, PP. 24-25.
১৪.Strong, F. W. "Eastern Bengal District Gazetteer"; Dinajpur, Allahabad, pioneer press, 1912, p.23. উদ্ধৃত Hoque, M. M. et.al. “Kantajee Temple An Outstanding Monument of Late Madieval Bengal”, publication Dept. of Drik, Dkaha, 2005, P. 25.
১৫.Ibid, p. 24. উদ্ধৃত Hoque, M. M. et.al. “Kantajee Temple An Outstanding Monument of Late Madieval Bengal”, publication Dept. of Drik, Dkaha, 2005, P. 26.
চিত্র: বরাহ অবতার (Varaha Avatar @ Ramayana), সৌজন্যে-সীজার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।