আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজ : হিজাব পরার অনুমতি মিললেও নামাজঘরে এখনও তালা : বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা

আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজে আন্দোলনের মুখে হিজাব পরে ক্লাসের অনুমতি মিললেও এখনও মেলেনি ওয়ার্ডে প্র্যাকটিস করার অনুমতি। অন্যদিকে গতকালও খুলে দেয়া হয়নি হলের নামাজঘর। এ নিয়ে ছাত্রীদের মধ্যে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে।

গতকাল সারাদিন কোনো ক্লাস না হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষের ‘পছন্দের’ কিছু সাংবাদিক ডেকে দুপুরে ১৫ মিনিটের জন্য ক্লাসের আয়োজন করা হয়। এ সময় হিজাব পরিহিত ছাত্রীদের ছবি তুলে ক্লাস শেষ করে দেয়া হয়। ছাত্রীরা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখানোর জন্য এই ‘নাটক’র আয়োজন করেছিল কলেজ প্রশাসন। এদিকে পবিত্র শবেবরাতকে সামনে রেখে গতকাল হলের নামাজঘর খুলে দিতে সারাদিন ছাত্রীরা দাবি জানালেও এ বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি কর্তৃপক্ষ। ছাত্রীরা জানান, তারা দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা হলের একটি কক্ষ দুই মাস আগে কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নিজেদের সঞ্চিত টাকা দিয়ে নামাজের উপযোগী করে তোলেন।

কিন্তু হিজাব পরার দাবি জানানোর পর কলেজ কর্তৃপক্ষ নামাজঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়। বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা : চট্টগ্রামের বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ এবং ইসলামী আইন সংরক্ষণ কমিটি। ইসলামী আইন সংরক্ষণ কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, সম্প্রতি চট্টগ্রাম সরকারি নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষিকাদের ইসলাম বিদ্বেষী অপতত্পরতা ও অমার্জনীয় ধৃষ্টতা দেখে এ দেশের মানুষ স্তম্ভিত হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ছাত্রীদের হিজাব ও পর্দা করতে বাধাদান ও নামাজ আদায়ের কক্ষে জুতা নিয়ে প্রবেশসহ তালা ঝুলিয়ে দেয়ার ঘটনা চরম নিন্দনীয়।

চট্টগ্রাম শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক চিটাগাং ক্যাডেট একাডেমীর অধ্যক্ষ জেএম নুরশেদুল ইসলাম ও সদস্যসচিব হাসানুর রশিদ এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় মুসলিম প্রধান দেশ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিজাব ও হাতে তাসবিহ ধরে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছেন। অথচ এ দেশেই মুসলিম মহিলারা ইসলামের নির্দেশিত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ কাজ হিজাব পরতে বাধাগ্রস্ত হবে এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক ছাড়া আর কী হতে পারে? ছাত্রীদের হিজাব পরতে বাধাদান ও নামাজসহ অন্যান্য ধর্মীয় কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে নেতারা বলেন, তা না হলে এমন ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের প্রতিবাদ : স্টাফ রিপোর্টার জানান, চট্টগ্রাম সরকারি নার্সিং কলেজে ছাত্রীদের হিজাব পরিধানে নিষেধাজ্ঞা এবং নামাজের ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতারা। হিজাব ও নামাজে বাধাদানকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা। এ ঘটনার মাধ্যমে ৯০ ভাগ মুসলমানের ঈমানে চরম আঘাত বলে আখ্যায়িত করেছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।

গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকার ইসলামবিরোধী কোনো আইন পাস করবে না বলে ওয়াদা করে ক্ষমতায় এসে একের পর এক ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে যাচ্ছে। বৃহত্তর মুসলিমপ্রধান দেশে শরীয়তের অলঙ্ঘণীয় বিধান পর্দা উত্খাতের সরকারি চক্রান্তে দেশবাসী মর্মাহত না হয়ে পারে না। কেননা, হিজাব তুলে দিয়ে যারা মা-বোনদের নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তারা দেশকে জারজ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। যেদিন থেকে সরকার বোরকাবিরোধী আইন পাস করেছে সেদিন থেকে দেশময় ইভটিজিং, নারী অপহরণ ও ধর্ষণ আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আবার নতুন করে নার্সিং কলেজে হিজাব পরতে বিধিনিষেধ ও নামাজের ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়ে দেশকে তুরস্কের ন্যায় ভাগ্যবরণ করাতে একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে।

সরকার এই সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে দেশময় আন্দোলনের দাবানল জ্বলে উঠবে বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, বর্তমান সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য বারবার আঘাত করছে। সরকারে থাকা নাস্তিক মুরতাদ ও শয়তানের প্রেতাত্মারাই ইসলামকে আক্রান্ত করে ইহুদি, খ্রিস্টান ও ব্রাহ্মণ্যবাদীদের খুশি করে ক্ষমতায় থাকার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি ইসলামী বিধান পালনে বাধাদানকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। গতকাল দলের সাপ্তাহিক বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় ফতোয়া বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রফেসর মাওলানা মুফতি ইসহাক মাদানী, মুফতি মাওলানা নুর হুসাইন আল কাশেমী, মুফতি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, মুফতি মাওলানা আবুল বাশার, মুফতি এম আবদুল কাইয়ূম আল আযহারী, মুফতি মাওলানা রফীকুর রহমান মাদানী, মুফতি মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মুফতি মাওলানা ফয়জুল্লাহ, মুফতি মাওলানা আবদুর রহমান, মুফতি ড. সিকান্দার আলী মাদানী, মুফতি ড. তরিকুল ইসলাম মাদানী, মুফতি মাওলানা লুত্ফর রহমান আলমাদানী, মুফতি মাওলানা নুরুল্লাহ আলমাদানী প্রমুখ এক বিবৃতিতে হিজাব বিরোধীতাকারীদের শাস্তি দাবি করেন। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. দেলাওয়ার হোসেন ও সেক্রেটারি মো. আবদুল জব্বার এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় বলেন, হিজাব মুসলিম নারীর মৌলিক অধিকার। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে হিজাব পরার কারণে চট্টগ্রাম নার্সিং ইনস্টিটিউটে পরীক্ষার হল থেকে ছাত্রীকে বের করে দিয়ে ন্যাক্কারজনক অন্যায় করা হয়েছে। এই ঘটনার পর মঙ্গলবার কলেজ অধ্যক্ষের নেতৃত্বে একদল শিক্ষিকা নামাজ নিয়ে কটাক্ষ করেছে। আমরা কলেজ অধ্যক্ষসহ শিক্ষিকাদের এই আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সিলেটে ১০১ আলেমের বিবৃতি : সিলেট অফিস জানায়, চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজে ছাত্রীদের হিজাব পরা ও নামাজ পড়তে বাধা দেয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেটের ১০১ বিশিষ্ট আলেম। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, হিজাব পরা ও নামাজে বাধা দেয়া চরম ধৃষ্টতা এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একটি মুসলিম দেশে এমন আচরণ ইসলামের বিরুদ্ধে মারাত্মক ষড়যন্ত্রের অংশ। এ ধরনের আচরণ বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান বরদাশত করবে না। তারা বলেন, হিজাব পরা ইসলামের ফরজ বিধান, তাই এতে বাধা দেয়া অমার্জনীয় অপরাধ।

যারা এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান আলেমরা। বিবৃতিতে স্বাক্ষর দিয়েছেন জামেয়া মাহমুদিয়া ইসলামিয়া সোবহানীঘাটের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মাওলানা শফিকুল হক আমকুনী, শায়খুল হাদিস মাওলানা আবদুল মালিক মুবারকপুরী, মিরাবাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা সালিকুর রহমান, শাপলাবাগ জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা নাজমুল ইসলাম, মাওলানা আবদুল মুছাব্বির জামডহরী, মাওলানা আবুল হোসাইন চতুলী, কস্ফারি ফরিদ উদ্দিন শায়খে দৌলতপুরী, মাওলানা ইব্রাহীম সালুটিকরী, মাওলানা নুরুল ইসলাম নোমানী, মাওলানা আবদুল মালিক চিকনাগুলী, মুফতি মাওলানা আবদুল্লাহ, মুফতি মাওলানা নুরুল হুদা, মাওলানা জয়নুল আবেদীন সুনামগঞ্জী, মাওলানা আবদুল মুকিত জালালাবাদী, মাওলানা কামাল উদ্দীন বাদাঘাটী, মাওলানা ফয়ছল আহমদ জকিগঞ্জী, মাওলানা আবদুল মুকিত, মাওলানা জয়নাল আবেদীন, মাওলানা হাফিজ কয়েছ আহমদ, মাওলানা হাফিজ আবুল হাসান শাহীন, মাওলানা হাফিজ তাজুল ইসলাম, হাফিজ সোলায়মান আহমদ, মাওলানা আবদুল করিম, মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মাওলানা মনোয়ার হোসেন, মাওলানা জামিল আহমদ, মাওলানা বদরুল আলম, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা হাফিজ আবুল হোসেন, মাওলানা কবির আহমদ, মাওলানা তাহির উদ্দিন, মাওলানা মোবারক উল্লাহ, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা মিনহাজ উদ্দিন, মাওলানা হাফিজ আলী আহমদ, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা মুজিবুর রহমান প্রমুখ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিলেটের নিন্দা : চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজে হিজাব পরতে বাধা দেয়া ও মসজিদে তালা ঝুলিয়ে নামাজ পড়তে বাধাদানকারীকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট জেলা ও মহানগর নেতারা গতকাল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট জেলা ও মহানগরের যৌথ উদ্যোগে সংগঠনের কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় মহানগর সভাপতি মুফতি ফখরুদ্দীনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট মহানগর সেক্রেটারি ডা. রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ, জেলা সেক্রেটারি আলহাজ নযীর আহমদ, সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক, আলহাজ ইসহাক আহমদসহ জেলা ও মহানগর নেতারা। মহাজোট সরকারের ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানিয়ে মহানগর সেক্রেটারি রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ বলেন, পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর আগেই ১৫শ’ কোটি টাকার বেশিরভাগই দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট হওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণচুক্তি বাতিল এবং সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস বাতিল এবং মুসলিম নারীদের ইজ্জত-আব্রু রক্ষার পোশাক হিজাব পরতে বাধা দেয়াই সরকার পতনকে ত্বরান্বিত করবে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.