আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাথানিটোলা : ন্যায়ের গর্ভপাত

চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি ষোল বছর আগে মধ্য বিহারের ভোজপুর জেলার বাথানিটোলায় একুশজনকে – যাদের বেশিরভাগই ছিল নারী ও নাবালক, এমনকী দুধের শিশুও –দিনের আলোয় কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল। এই ঘটনার পরেই গোটা দেশ রণবীর সেণার মত সামন্তী শক্তির তৈরি এক জঘন্য বাহিনীর অস্তিত্ব সম্পর্কে সজাগ হয়, যারা উনিশশো নব্বই এর দশকের দ্বিতীয় পর্ব জুড়ে মধ্য বিহারে একের পর এক নারকীয় গণহত্যার মধ্য দিয়ে শয়ে শয়ে মানুষকে হত্যা করেছিল। এখন বিহার সেই শক্তির দ্বারা শাসিত যারা দাবি করছে তারা ‘ন্যায়ের সাথে উন্নয়ন’ উপহার দিচ্ছে। গণহত্যাগুলি বাহ্যত থেমেছে এবং আরার জেলা আদালত মে ২০১০ এ এক রায়ে বাথানিটোলা গণহত্যার জন্য ২৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের ৩ জনকে ফাঁসি ও বাকিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। বিগত সময়ের বীভৎসতার শিকার হওয়া মানুষগুলো অবশেষে ন্যায়বিচার পেয়েছে, এই দাবি নিয়ে নভেম্বর ২০১০ এ সরকার আরো বেশি সমর্থন সহ ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করে।

নিপীড়িত ও প্রান্তিক গ্রামীণ গরীব মানুষ, মহাদলিত, সমস্ত ‘পিছড়ে বর্গ’, পিছিয়ে থাকা মুসলিম সমাজ – এরা সবাই নতুন সরকারের প্রতি বিশ্বাস রেখেছিল। দু বছর পরে এপ্রিল ২০১২ তে পাটনা হাইকোর্ট তার রায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত ২৩ জনকেই মুক্তি দিয়ে ১৯৯৬ এর ১১ জুলাই এর সেই অভিশপ্ত বিকেলে বাথানিটোলায় ২১ জনকে তাহলে কারা হত্যা করেছিল, সেই জিজ্ঞাসায় সবাইকে বিমূঢ় করে তুলেছে। হাইকোর্ট এর এই রায়কে আমরা কিভাবে ব্যাখ্যা করব ? এটা কি বিচারব্যবস্থার মধ্যেকার একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা ? এই দৃষ্টিকোণের বিপরীতেই বরং স্বাক্ষ্য দিয়ে অতীত নথি আমাদের বলে বিহারে এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণভাবে গ্রামীণ গরীবদের হত্যাকারীরা সবাই এখানে বেকসুর মুক্তি পেয়ে যায়, এমনকী তারাও যারা বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীনই বেশ কয়েক বছর অন্তরীণ থেকেছে। তাহলে কি বিহারে অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় নি ? আর এটা কি কালাতিক্রমণ দোষে দুষ্ট হবে যদি বলা হয় যে নীতীশ কুমারের ‘পরিবর্তিত’ বিহারে সামন্ত পক্ষপাত আছে ? ১৯৯৬ এর জুলাইয়ে বাথানিটোলা গণহত্যা যেমন লালু জমানার সমাজ রাজনৈতিক চরিত্রকে উন্মোচিত করে দিয়েছিল, তেমনি এপ্রিল ২০১২ র হাইকোর্টের রায় – যাকে আমরা বলতেই পারি আইনী গণহত্যা বা বাথানিটোলা দুই – নীতীশ কুমারের বিহারের সমাজ রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রকট আয়না হয়ে উঠেছে।

বাথানিটোলার ক্ষতিগ্রস্থদের ন্যায়বিচারের স্বার্থে হাইকোর্টের রায়কে যেমন সুপ্রিম কোর্টের পুনর্বিচার করা দরকার, তেমনি আমাদের অবশ্যই বোঝা দরকার বাথানিটোলার প্রেক্ষাপট এবং ইঙ্গিৎগুলিকে। আর দরকার এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থদের সম্মান ও গণতন্ত্রের লড়াইয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো। বাথানিটোলা ঘটার সময় অনেকেই ভেবেছিলেন এটা বোধহয় বিহারের শিকড় গেঁড়ে থাকা জমি সংক্রান্ত বিবাদজাত জাতপাত সংক্রান্ত গণহত্যার ঘটনা। কিন্তু এই সাধারণ ধারণার বিপরীতে দাঁড়িয়ে বলতে হয় বাথানিটোলা ছিল একটা রাজনৈতিক গণহত্যা। এখানে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী লেনিনবাদী) লিবারেশনের সমর্থকদের একটা শিক্ষা দিতে চাওয়া হয়েছিল।

নারী ও শিশু, এমনকী গর্ভবতী নারী ও দুধের শিশুদেরও নিশানা করে দিনের আলোয় সংগঠিত এই আক্রমণে যে নৃশংস বর্বরতা দেখা গিয়েছিল তা জনজাতিদের নিকেশ করার উদ্দেশ্যে সংগঠিত গণহত্যাতেই সাধারণত দেখা যায়। নারীদের নিশানা করা হয়েছিল কারণ তারা ‘নকশালপন্থীর জন্ম দেবে’, শিশুদের নিশানা করা হয়েছিল কারণ তারা ‘নকশালপন্থী হয়ে যাবে’। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন জমি ও মজুরীর প্রশ্নে নকশালপন্থীদের আন্দোলনের বাড়াবাড়ির সামাজিক প্রতিক্রিয়াতেই নাকি বিহারে রণবীর সেনার মত ভাড়াটে সেনাবাহিনীর জন্ম হয়েছে। এটা জোরের সাথেই বলা দরকার ভোজপুর বা মধ্য বিহারের কোথাও সেরকম জমির প্রকাণ্ড কেন্দ্রীভবন নেই, যাকে সামন্ততন্ত্র আখ্যা দেওয়া যেতে পারে, আর তাই সি পি আই (এম এল) এর সামন্তবাদ বিরোধী লড়াইয়ের তত্ত্ব ও প্রয়োগের ব্যাপারটা এখানে কিছুটা ভুলভাবেই প্রযুক্ত হয়। সি পি আই (এম এল) এর ভোজপুর বা বিহারের অন্যত্র লড়াইয়ের ইতিহাস পরিস্কারভাবেই দেখিয়ে দেয় জমি বা মজুরীর প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ হলেও নির্ণায়ক লড়াইগুলো প্রায়ই লড়া হয়েছে মানুষের মর্যাদা এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব অর্জনের প্রশ্নে।

এটা বিস্ময়ের ব্যাপার মনে হবে না যদি আমরা মাথায় রাখি সামন্তী শক্তি প্রাথমিকভাবে অর্থনীতি বহির্ভূত শোষণের মধ্যে দিয়েই প্রকাশিত ও আবর্তিত হয়। আর সামাজিক নির্যাতন, বিভিন্ন মাত্রার দাসত্ব এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে বিচ্ছিন্নতাই ঐতিহাসিকভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় সামন্ততান্ত্রিক আধিপত্য স্থাপনের নির্ণায়ক বিষয় হয়ে থেকেছে। আমরা যদি ভোজপুরে সি পি আই (এম এল) এর ইতিহাসকে লক্ষ্য করি তো দেখব ভোটদানের অধিকার অর্জন এখানে একটা অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ লড়াইয়ের জায়গা হয়ে থেকেছে। বস্তুতপক্ষে ভোজপুরে সি পি আই (এম এল) এর বিকাশের সূচনায় রয়েছে ১৯৬৭র বিধানসভা নির্বাচন, যেখানে রাম নরেশ রাম ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। তাঁকে এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সাথীদের সামন্তীশক্তি ভীষণভাবেই মারধোর ও হেনস্থা করেছিল, কারণ নিপীড়িত ও দলিতদের এই ‘রাজনৈতিক ঔদ্ধত্য’ তারা হজম করতে পারে নি।

অনেক বছর পরে ১৯৮৯ এর লোকসভা নির্বাচনে যখন ব্যাপক সংখক দলিত প্রথম ভোটদানের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পায় এবং আরা থেকে রামেশ্বর প্রসাদকে প্রথমবারের জন্য লোকসভায় কোন নকশালপন্থী সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত করে পাঠায় তখনও দানোয়ার-বিহিটা গ্রাম রক্তস্নাত হয়েছিল। নির্বাচনের ঠিক পরেই ভোটদানের অধিকারের মূল্য হিসেবে ২২ জন মানুষকে জীবন দিতে হয়। বাথানিটোলার প্রেক্ষাপটটাও অনেকটা এরকমই। ১৯৭৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে সামন্তী মৌলবাদী শক্তিকে হতাশ করেই সাহার ব্লকের খারাওঁ পঞ্চায়েতের মুখিয়া হন মহম্মদ ইউনুস। এই জনপ্রিয় মুখিয়ার নেতৃত্বে খারাওঁ এবং কাছেপিঠের গরীব মুসলিমরা বিশাল সংখ্যায় সি পি আই (এম এল) এ যোগ দেন।

১৯৯৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সাহার (তপশিলী জাতির জন্য সংরক্ষিত) বিধানসভা ক্ষেত্র এবং পার্শ্ববর্তী সন্দেশ ক্ষেত্র থেকে প্রথববারের জন্য বিজয়ী হয় সি পি আই (এম এল)। বিজয়ী প্রার্থীরা ছিলেন ১৯৬৭ তে সি পি আই (এম) এর হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সেই রাম নরেশ রাম, যিনি এতদিনে বিহারে সি পি আই (এম এল) এর প্রবাদপ্রতিম নেতা এবং আরা থেকে নির্বাচিত আই পি এফ এর প্রাক্তন সাংসদ রামেশ্বর প্রসাদ। ভোজপুরের সামন্তী শক্তি এতে শঙ্কিত ও একরোখা হয়ে পড়ে। বিহারের মাটি থেকে সি পি আই (এম এল) কে মুছে ফেলার ঘোষিত লক্ষ্য নিয়ে তৈরি হয় রণবীর সেনা। মুসলিম জনগণের ইমামবাড়া এবং কারবালা জমির অধিকারকে অস্বীকার করে খারাওঁতে শুরু হয় মৌলবাদী জমায়েত।

জমি ও অধিকার রক্ষার লড়াই লড়তে গিয়ে বেশ কিছু মুসলিম পরিবারকে উচ্ছেদ হতে হয় এবং খারাওঁয়ের দলিত অধ্যুষিত বাথানিটোলায় তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়। দলিত ও মুসলিম সম্প্রদায়ের গ্রামীণ গরীব এই মানুষগুলিই ১৯৯৬ এর ১১ জুলাই মৃত্যুর প্রেতনৃত্য প্রত্যক্ষ করেছিল বাথানিটোলায়। এই ঘটনার পরে বিহার ব্যাপক প্রতিবাদ প্রত্যক্ষ করে। অনেকে আশা করেছিল গরীব, বিশেষত পিছড়ে বর্গ এবং মুসলিমদের নিজস্ব ধারার নায়ক লালুপ্রসাদ বোধহয় ঘটনার ন্যায় বিচার দেবেন। কিন্তু রামেশ্বর প্রসাদ এবং আশী পেরোনো প্রবীণ সি পি আই (এম এল) নেতা তাকি রহিম এর কয়েক সপ্তাহ ব্যাপী অনশনের পরেই লালু খানিকটা বাধ্য জেলাশাসককে নামমাত্র বদলি করেন মাত্র, যদিও ঘটনাস্থল থেকে মাত্র দু কিলোমিটার দূরে পুলিশ থাকা স্বত্ত্বেও কয়েক ঘন্টা ধরে চলা এই বিরাট আকারের গণহত্যাকে প্রতিরোধে তিনি উদ্যোগহীন ছিলেন।

কাগজে কলমে রণবীর সেনাকে নিষিদ্ধ করা হলেও কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি আর প্রতি বছরই গণহত্যায় মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ভোজপুরের এক জনসভার একটি আত্মউন্মোচনী বক্তব্যে লালুপ্রসাদ জানিয়ে দেন, সি পি আই (এম এল) কে শেষ করার জন্য তিনি শয়তানের সাথেও হাত মেলাতে রাজী আছেন। বাথানিটোলার পর যে লখিমপুর বাথের গণহত্যার ঘটনা ঘটল তাতে বিষ্ময়ের কিছু নেই। ১৯৯৭ এর শেষ রাতে গোটা দেশ যখন নতুন বছর পালনের প্রস্তুতিতে মাতোয়ারা, রণবীর সেনা জাহানাবাদ জেলার লখিমপুর বাথে গ্রামে প্রায় ষাট জনকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে। শোন নদীর দু ধারের দুই এলাকা, বাথানি এবং বাথে জাতীয় খবর হয়ে ওঠে।

তৎকালীন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণন বাথানিটোলার ঘটনাকে ‘জাতীয় লজ্জা’ বলে বর্ণনা করেন। লালু প্রসাদ বাধ্য হন রণবীর সেনার পেছনে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক মদতের অনুসন্ধানের জন্য আমীর দাস কমিশন তৈরি করতে। কমিশন অভিযোগ করে তার কাছে যথেষ্ট অর্থ, কর্মী বা ক্ষমতা নেই। এর মধ্যেই রণবীর সেনা যথেষ্ট পরিমাণ জনবিচ্ছিন্ন হয় এবং ২০০২ সালে ব্রহ্মেশ্বর সিং রাষ্ট্রের কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করেন। ২০০৫ সালে বিহারে রাজনৈতিক পরিবর্তন হয় এবং বিজেপির সমর্থন নিয়ে নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী হন।

সরকারের প্রথম সিদ্ধান্তগুলির অন্যতম ছিল আমীর দাস কমিশনকে বাতিল করা। জেডি ইউ, বিজেপি নেতাদের অনেকেই, এমনকী আরজেডি বা কংগ্রেসের অনেক নেতাও এতে গভীর স্বস্তি পান কারণ তদন্তের জন্য এই কমিশন তাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। সরকারের দ্বিতীয় দফার সূচনাতেই বেল পেলেন ব্রহ্মেশ্বর সিং। আর এখন বাথানি গণহত্যার অভিযুক্তদের হাইকোর্ট মুক্তি দিয়ে দিলেন আর অন্যদিকে বাথে গণহত্যার বিচারও মাঝখানে ঝুলছে। নীতীশ কুমার ‘ন্যায়ের সঙ্গে উন্নয়ন’ এর মধুমাখা বুলি আওড়াচ্ছেন এবং তার সময়কালে বিহার দেখছে ‘বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ঢেউ’।

অবশ্যই বিহার বদলেছে। অতীতের জগন্নাথ মিশ্র আর বিন্দেশ্বরী দুবেদের থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয়েছে লালুপ্রসাদ নীতীশ কুমার দের হাতে। কিন্তু বাথানি এক আর বাথানি দুই আমাদের দেখিয়ে দেয় ক্ষমতা একইভাবে সামন্তী শক্তির হাতে রয়ে গেছে। নীতীশ কুমার সেই বিজেপির সাথে জোট করেছেন যারা সামন্তী মৌলবাদী শক্তির সবচেয়ে সংগঠিত প্রতিনিধি। আর লালুপ্রসাদও উচ্চবর্গের আধিপত্যের বিরূদ্ধে তার সব আলঙ্কারিক কথাবার্তার পরেও গ্রামীণ গরীব তথা সি পি আই (এম এল) এর বিরূদ্ধে এবং সামন্তী শক্তিকে তোষণের রাস্তাতেই হাঁটেন।

এটা কোন ব্যতিক্রমী ঘটনা নয় যে ভূমি সংস্কার কমিশন এর রিপোর্ট কে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এগুলোও নয় যে রিপোর্ট দাখিলের আগেই আমীর দাস কমিশনকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে বা বাথানির অভিযুক্তদের ছাড় দেওয়া হয়েছে এবং ডজন ডজন গণহত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারীরা বেল এ মুক্ত হয়ে গিয়েছেন। বিহারের প্রকৃত পরিবর্তন শাসকদের রঙ বদলের ওপর নির্ভর করে নেই। নির্ভর করে নেই শাসকদের জনমোহিনী সব শ্লোগান – লালুপ্রসাদের ‘সামাজিক ন্যায়’ বা নীতীশ কুমারের ‘সুশাসন’ এর ওপরও। আধা সামন্ততান্ত্রিক রাজনৈতিক অর্থনীতির ওপর বিশ্বায়ন ও কর্পোরেটীকরণ এর চকচকে পালিশ লাগিয়ে কাগজে কলমে অসাধারণ পরিসংখ্যানগত বৃদ্ধি দেখানোর ওপরও তা নির্ভর করে নেই।

পরিবর্তনের সূত্র রয়েছে বাথে এবং বাথানি যে ধৈর্য, সাহস আর অধ্যাবসায় নিয়ে তাদের ন্যায়, সম্মান এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ে ফিরে এসেছে তার মধ্যে। এটা ঠিক যে ন্যায়, সম্মান ও গণতন্ত্র এগুলো কোন শ্রেণি নিরপেক্ষ শব্দ নয়, নয় ধনী এবং শক্তিমানদেরই একচেটিয়া কোন বিষয়। ১৯৮৬ র এপ্রিলে আরওয়াল গণহত্যার সময়, যখন কংগ্রেসী জমানায় আর একবার জালিয়ানওয়ালাবাগের পুনরাভিনয় দেখা গেল বিহারে, কমরেড বিনোদ মিশ্র লিখেছিলেন, “মেঠো পথের ছোট্ট জনপদ আরওয়ালের অজানা অশ্রুত কৃষকদের মধ্যে গরীবতমদের অনালোচিত মৃত্যু যখন বিহারের শাসকদের রাজনৈতিক সংকটকে রূপ দিতে শুরু করেছে, তখন নিশ্চিতভবেই দাবী করা যায় নায়কেরা অবশেষে মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছেন”। আদালতের রায় নিরপেক্ষভাবেই আরওয়াল, বাথানি বা বাথে মুছে যাচ্ছে না এবং বিহারের ন্যায় ও গণতন্ত্রের লড়াইয়ে নতুন বাতাস সঞ্চার করছে। ১৯৭৪ এ বিহার দিল্লির স্বৈরতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল যুবদের স্বপ্ন ও প্রতিজ্ঞার ওপর ভর করে।

যখন লালুপ্রসাদের ‘সামাজিক ন্যায়ের’ জমানা দুর্নীতি আর গণহত্যায় অধঃপতিত হল, বিহার বলে উঠেছিল সামাজিক ন্যায়ের জন্য সামাজিক পরিবর্তন জরুরী। আজ যখন নীতীশ কুমারের ‘ন্যায়ের সাথে উন্নয়ন’ এর শ্লোগান দ্রুত অন্যায় আর লুঠতরাজে বদলে যাচ্ছে আর ‘সুশাসন’ নিয়ে আসছে জুলুমবাজ পুলিশরাজ, সমস্ত গণতন্ত্র রক্ষাকারী ও গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখা মানুষের কর্তব্য বাথানিটোলার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ন্যায় ও প্রকৃত পরিবর্তন এর পতাকাকে উর্ধ্বে তুলে ধরে বিহারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। - ডি বি ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.