আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত শ’চারেক ‘বিতর্কিত’ ইউক্যালিপটাস গাছ কেটে ফেলার চিন্তা চলছে সংসদ সচিবালয়ে। স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট এরই মধ্যে এসব গাছ কেটে দেশীয় ঔষধি ও ফলজ গাছ লাগানোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ উদ্যোগ কার্যকর হলে সংসদভবন চত্বরে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিদেশি ইউক্যালিপটাসের জায়গা নিতে পারে বৈলাম, তেলসুর, গর্জনের মতো পরিবেশবান্ধব দেশি গাছ।
ইউক্যালিপটাস কেটে ফেলার এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও পুরো বিষয়টিকেই সন্দেহের চোখে দেখছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
সংসদ সচিবালয়ের কমন শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব ওয়াহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ইউক্যালিপটাস গাছ কেটে কোন ধরনের গাছ লাগানো যায় সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞসহ গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মতামতও নেবে সংসদ সচিবালয়। এ লক্ষ্যে আগামী ৪ জুলাই সংসদ ভবনের মন্ত্রী হোস্টেলের আইপিডি সম্মেলনকক্ষে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন ও বন বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সংসদভবন এলাকা ও সংসদ সদস্য ভবন চত্বরে প্রায় চারশ’র মতো ইউক্যালিপটাস গাছ রয়েছে। এসব গাছ কেটে সেখানে দেশীয় প্রজাতির ফলজ ও ঔষধি গাছ লাগানোর জন্য স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট এরই মধ্যে সংসদ সচিবালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন।
জানা গেছে, ওইসব বৈঠকে একাধিক কর্মকর্তা গাছ কাটার বিষয়ে পরিবেশবাদীদের বিরোধিতার কথা তুলে ধরেন। পরে এ বিষয়ে পরিবেশবাদীদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে এ বিষয়ে গণমাধ্যমের মতামত নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে সংসদ সচিবালয়ের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ড. এমএ মতিন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের সংগঠন অনেকদিন ধরেই ইউক্যালিপটাসসহ অন্যান্য বিদেশি গাছের বিপক্ষে কথা বলে আসছি। এসব গাছ আমাদের পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অনেক জায়গায় সরকার প্রাকৃতিক বন কেটে ইউক্যালিপটাস লাগাচ্ছে। ”
তিনি বলেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের ইউক্যালিপটাসের প্রতি একধরণের নেশা আছে।
সেখানে সংসদ সচিবালয় কেন হঠাৎ করে এ গাছের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলো সেটা ভেবে দেখতে হবে। ”
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামাল হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, “সংসদ সচিবালয়ের সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে। আমাদের পরিবেশে ইউক্যালিপটাস গাছ ঠিক সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাছাড়া দেশীয় প্রজাতির গাছ থাকতে কেন বাইরের গাছ লাগাতে হবে। ”
দেশীয় বিরল প্রজাতির গাছ নিয়ে গবেষণারত এ শিক্ষক আরো বলেন, “ইউক্যালিপটাস নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।
তবে জাতীয় সংসদ যেহেতু দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান সেখানে দেশীয় গাছ লাগানো উচিত। কারণ সংসদের মাধ্যমেই আগামী প্রজন্ম অনেক কিছু শিখতে পারে। ”
তিনি বলেন, “বৈলাম, তেলসুর, গর্জন এসব আমাদের নিজস্ব গাছ। এসব গাছ সংসদ ভবন এলাকায় লাগানো উচিত। ”
ঔষধি উদ্ভিদ গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, “সংসদ এলাকায় দেশীয় গাছ লাগানোর সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই।
কারণ হাজার বছর ধরে যে গাছ আমাদের পরিবেশে বেড়ে উঠেছে সেগুলোকেই পরিচর্যা করা উচিত। এসব দেশীয় গাছ রক্ষা করলে আমাদের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। ”
তিনি আরো বলেন, “দেশীয় গাছগুলোর সঙ্গে আমাদের দেশীয় পাখিগুলো পরিচিত। এরা এসব গাছে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ”
উল্লেখ্য, ওশেনীয় অঞ্চল থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ে আমদানি শুরু করা ইউক্যালিপটাস পরিবেশের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর একটি গাছ বলে পরবর্তীতে প্রমাণ হয়।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে আরও ব্যাপকহারে এ গাছ আমদানি শুরু হয়। এক একটি ইউক্যালিপটাস গাছ বছরে সাড়ে চার টন পর্যন্ত পানি টেনে ওই গাছ সংলগ্ন জমির উর্বরতা কমিয়ে দেয় অভিযোগ আছে। এমনকি এ গাছে সচরাচর কোন পাখিকেও বাসা বাঁধতে দেখা যায় না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।