আমরা যদি না জাগি মা, কেমনে সকাল হবে... 'অনুভূতি' আসলে সব শালারই আছে! প্রগতিশীলতার ভেক ধরা কেউ কেউ এতোদিন নিপুণভাবে অভিনয় করে আসছিল যে, 'অনুভূতি' জিনিসটা শুধু হেফাজতিদেরই আছে, ধর্মান্ধদেরই আছে, মৌলবাদিদেরই আছে। এই বেলা হাসনাত আবদুল হাইয়ের ছোট্ট একটি গল্প একেবারে হাতেনাতে প্রমাণ করিয়ে ছাড়লো যে, প্রগতিশীলতার ভেক ধরে যারা হেফাজতিদের বিরোধিতা করে আসছিল, বাক-স্বাধীনতার কথা বলে চোখের জল ফেলছিল, তারাও আসলে হেফাজতি গোত্রেরই, তারাও আসলে মৌলবাদিই, হেফাজতিদের মতো তারাও ভিন্নমতকে সহ্য করতে পারে না। রসুনের সবগুলো কোয়াই আসলে এক জায়গায়। এতোদিন ধরে বাক-স্বাধীনতার ধ্বজা ধরার অভিনয় যারা করে আসছিলেন, ছোট্ট একটি গল্প তাদের মুখোশটা পুরোপুরি খুলে দিয়েছে। এই লোকগুলোই এতোদিন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যেভাবে চোখের জল ফেলে আসছিলেন, তার সব একত্র করলে উত্তরবঙ্গের কোনো এক মরা নদীতে প্রাণ সঞ্চার করা যেতো নিশ্চিত।
হেফাজতের ধর্ম-'অনুভূতি' নিয়ে এতোদিন ধরে কতোই না ঠাট্টা, কতোই না মশকরা তারা করে আসছিলেন! অথচ ছোট্ট একটি গল্পের ভার বহন করতে গিয়ে তাদের 'অনুভূতি' এতোটাই আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে যে, রীতিমতো হেফাজত স্টাইলে তারা সাহিত্যিকের কল্লা চাইছে, পত্রপত্রিকা পোড়ানোর উৎসবে মেতেছে। আমার নিজের ধারণা, প্রথম আলো শ্রেফ বাণিজ্যিক স্বার্থে ক্ষমা চেয়েছে। সেটিই স্বাভাবিক। কারণ প্রথম আলো তো আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম কিংবা গাণ্ধী আশ্রম নয় যে, তারা জনসেবা করার জন্য পত্রিকা বের করেছে। বিশ্বের যে কোনো দেশেই সংবাদপত্র হলো একটি বাণিজ্যিক পণ্য।
তবু প্রথম আলোর এই ক্ষমাপ্রার্থনা মুক্তচিন্তাকে কিছুটা হলেও ব্যাহত করবে। তাদের এই ক্ষমাপ্রার্থনার নিন্দা জানাই।
লেখক কী লিখবেন, সেটি তার স্বাধীনতা
হাসনাত আবদুল হাইয়ের সেই ছোট গল্পে সীমা নামের একটি মেয়ের জীবনকথা চিত্রিত হয়েছে। চাঁদে যেমন সাঈদীর ছবি খুঁজে পেয়েছেন অনেকে, ঠিক তেমনি ওই গল্পে গণজাগরণ মঞ্চের কোনো এক নারীকর্মীর জীবনকাহিনী খুঁজে পেয়েছেন কল্পনার জোর খাটিয়ে। অনেকে এনেছেন অশ্লীলতার অভিযোগ।
সাহিত্যে যৌনতা থাকাটা কি অবৈধ কোনো কিছু? কোনো লেখা কারো ভালো লাগতে না পারে, কারো কোনো লেখা একজনের কাছে অশ্লীল মনে হতে পারে, তিনি আপত্তি জানাতেই পারেন। ক্ষুব্ধ কেউ সমালোচনাও করতে পারেন শালীন ভাষায়, সাহিত্যের প্রথা মেনে। আবার কারো কাছে সেই একই লেখা অশ্লীল মনে নাও হতে পারে। কিন্তু একজন লেখকের লেখা একেবারে বাতিল করে দেওয়া যায় না। লেখকের কলমের ওপর ফিল্টার বসানো যায় না।
লেখক কী লিখবেন, সেটি পুরোপুরিই তার নিজের স্বাধীনতা। অমুক-তমুক এই নির্দেশ দিতে পারেন না যে, লেখক এই শব্দ ব্যবহার করতে পারবেন আর ওই শব্দ ব্যবহার করতে পারবেন না। অমুক বিষয়ে লেখা যাবে আর তমুক বিষয়ে লেখা যাবে না। এগুলো শ্রেফ তালেবানি মানসিকতা। জামায়াতে-হেফাজতে ইসলামীর সঙ্গে এইসব প্রগতিশীল-মোল্লার খুব বেশি তফাৎ নেই।
হাসনাত আবদুল হাইয়ের লেখাটির ক্ষেত্রে যা ঘটছে, তা হচ্ছে লেখকের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ - স্পষ্ট করে বললে শব্দ-তালেবানি। ব্লগ ও ফেসবুকের কল্যাণে এই শব্দ-তালেবানি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। এই তালেবানদের হাতে লেখকের স্বাধীনতা পরাস্ত হতে পারে না। একপাল শব্দ-তালেবানের হাতে লেখকের স্বাধীনতা ভূলুন্ঠিত হবে- এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তা না হলে হয়তো এমন একদিন আসবে, প্রগতিশীলতার ভেক ধরা এই শব্দ-তালেবানরা তাদের পছন্দসই শব্দ কিংবা প্লটের তালিকা ধরিয়ে দেবে লেখকের হাতে।
আর লেখক সেই তালিকা দেখে দেখে শ্লীল সাহিত্য-আইনসম্মত সাহিত্য রচনা করবেন।
শব্দ-তালেবানদের প্রতিহত করা জরুরি
প্রগতির স্বার্থে যে কোনো মূল্যে এই শব্দ-তালেবানদের প্রতিহত করা জরুরি। এই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য লড়েছি অতীতে, লড়বো সারাজীবনই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।