আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘রাজশাহী আজ যা করবে, কাল তা বাংলাদেশ করবে’

সুখ নাইরে পাগল . . . রাজশাহী নগরের আলুপট্টির মোড়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা (গতকাল)। টিপটিপ বৃষ্টি। মসজিদ থেকে বের হলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান। সঙ্গে চারবারের মতো নির্বাচিত কাউন্সিলর আবদুল হামিদ সরকার।

মসজিদ থেকে বেরিয়ে গিয়ে বসলেন পাশের এক ব্যবসায়ীর কার্যালয়ে। চায়ের জন্য বললেন। এই মোড় দিয়ে যাচ্ছিলেন নবনির্বাচিত মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন। খায়রুজ্জামান এখানে আছেন শুনে ভেজানো দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন তিনি। খায়রুজ্জামান উঠে দাঁড়ালেন।

হাত বাড়িয়ে মোসাদ্দেককে বুকে টেনে নিলেন। নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকলেন কাউন্সিলর আবদুল হামিদ ও এই প্রতিবেদক। শুরু হলো আড্ডা। নতুন মেয়রের জন্য চা বলা হলো। মোসাদ্দেক চিনি ছাড়া চা খান।

ডায়াবেটিস হয়নি, কিন্তু মৃত্যুর আগে বাবার ডায়াবেটিস ধরা পড়েছিল। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে অনেক দিন থেকে মোসাদ্দেক চিনি ছাড়া চা পান করেন। বললেন, ‘এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। এতে ভালোও আছি। ’ কথায় কথায় নতুন মেয়র মোসাদ্দেক সিটি করপোরেশনের প্রসঙ্গ তুললেন।

সাবেক মেয়রের কাছে জানতে চাইলেন কয়টি প্রকল্প চলমান আছে। খায়রুজ্জামান একেক করে প্রকল্পগুলোর নাম বললেন। কোনটির কতটুকু অগ্রগতি, তা-ও বললেন। কীভাবে প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছেন, কীভাবে প্রকল্প পাস করাতে হয় তার দু-একটি কৌশলও বলে দিলেন। কথা চলল দুই মেয়রে— খায়রুজ্জামান: কাজগুলো বন্ধ করে দিয়ো না।

আমি নতুন অনেক কাজ করেছি। মিজানুর রহমান মিনুর আমলের কাজও শেষ করেছি। মোসাদ্দেক: উন্নয়ন চলমান প্রক্রিয়া। প্রকল্পগুলো জনস্বার্থেই নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পগুলো শেষ করব।

...মালোপাড়ার রাস্তাটার কী অবস্থা, ভাই! —কয়েকটি রিট থাকার কারণে অধিগ্রহণ ঠেকে আছে। —এই অধিগ্রহণটা আপনি করতে গেলেন কেন? —(খায়রুজ্জামান হেসে) অধিগ্রহণ না করলে তো উন্নয়নও করা যাবে না। —উন্নয়ন করে তো ভোট পাওয়া গেল না। নিজে ঠেকে এবার শিখলেন তো। (দুজনই একসঙ্গে হেসে উঠলেন)।

লিটন (খায়রুজ্জামান) ভাই, সিটি সেন্টারটা আপনি এনা প্রপার্টিজকে দিয়ে করালেন কেন, নিজে করলেই তো পারতেন। —নিজের করার মতো তো করপোরেশনের টাকা ছিল না। —স্বপ্নচূড়া প্লাজাটা সিটি ভবনের পাশে না করে জায়গাটি উন্মুক্ত রাখলে বেশি সুন্দর লাগত না! এই ভবনে সিটি বিশ্ববিদ্যালয় হলে সিটি ভবনের পরিবেশ আর আগের মতো থাকবে না। —পরে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিলেই হবে। ফাঁকা রাখলে ভালো লাগত ঠিক আছে।

তবে সিটি ভবনের সামনেও আরও বেশি জায়গা ছাড়া দরকার ছিল। তখন মিজানুর রহমান মিনু সেটা করতে পারেননি। যাই হোক, যে বাণিজ্যিক ভবনগুলো করা হয়েছে তাতে তুমি বসলে (মেয়রের দায়িত্ব নিলে) বুঝতে পারবে সিটি করপোরেশনের অনেক আয় হবে। —(আরেক কাপ চায়ের ফরমাশ দিলেন মোসাদ্দেক হোসেন) ভাই, মাদক রাজশাহীর অন্যতম সমস্যা। অভিভাবকেরা সচেতন না হলে শুধু প্রশাসন দিয়ে কি ঠেকানো যাবে? —কখনোই ঠেকানো যাবে না।

ছেলে কখন বাড়ি ফিরছে, কখন ঘুম থেকে উঠছে? মা-বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে। ছেলে রাত করে বাড়ি ফিরবে, দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘুমোবে আর মা-বাবা খেয়াল করবেন না; তাহলে তো হবে না। —ভাই, আপনার মনে আছে না, সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফিরলে আন্টির (খালা) কত বকা খেতে হয়েছে। দুই মেয়র এক জায়গায় বসেছেন, ইতিমধ্যে এ খবর চাউর হয়েছে। দু-একজন করে সমর্থকেরা আসছেন।

পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করছেন। আড্ডা অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে। এ সময় প্রথম আলোর পক্ষ থেকে নতুন মেয়র মোসাদ্দেক হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলো—এটা অনেকটা রীতি হয়ে গেছে, আগের জনপ্রতিনিধির স্মৃতিচিহ্ন মুছে দেওয়া। রাজশাহীতে সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান নগরের বিন্দুর মোড়কে সুন্দর করে সাজিয়েছেন। মাঝখানে একটা মনুমেন্ট তৈরি করেছেন।

নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন ‘এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বর’। আপনি কি এগুলো রাখবেন, না ভেঙে ফেলবেন? মোসাদ্দেক হোসেন বললেন, ‘না, না; ভেঙে ফেলব কেন! সারা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি যা-ই হোক, আমরা রাজশাহীর মানুষ নতুন সংস্কৃতি চালু করব। রাজশাহী আজ যা করবে, কাল তা বাংলাদেশ করবে। ’ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করার জন্য খায়রুজ্জামান নাগরিক কমিটিকে ধন্যবাদ জানাতে যাবেন। এ জন্য একটা আয়োজন করা হয়েছে।

তাই সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে উঠে গেলেন তিনি। আস্তে আস্তে ঘর ভরে গেল মোসাদ্দেকের সমর্থকে। সূত্র  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।