আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Ragging

‘’ঐ এদিকে আয়’’। ডিপার্টমেন্টের বড় ভাইদের ডাকে তাদের দিকে এগিয়ে যায় হাসান। এবছর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার চান্স পেয়েছে । অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে, এখন সে তার স্বপ্ন ছুঁতে পেরেছে। সিনিয়র ভাইদের কাছে যাবার পরে একজন তাকে ধমকের সুরে বলল, ‘’ঐ চিনস তুই আমাগোরে? সালাম দেস নাই ক্যান?’’ একটু থতমত খেয়ে যায় হাসান।

সিনিয়র ভাইয়েরা ওর সাথে এমন রূঢ় আচরণ করবে তা প্রত্যাশা করে নি। একটু হেসে খুব সুন্দর করে বলল, ‘’সরি ভাইয়া, আমি আসলে বুঝতে পারি নি। ‘’ --ওও, বুঝতে পারো না? নয়া আইছো? প্যান্ট খোল, তাইলে বুঝবি। থতভম্ব হয়ে গেল হাসান। এদিকে অনেকেই জড়ো হয়ে গেল হাসানের চারপাশে।

রক্ত গরম হয়ে গেল ওর। পালটা জানতে চাইল, ‘’কী বলছেন আপনারা এসব?’’ --ঐ, মুখে মুখে তর্ক করছ আব্বার? নিজে প্যান্ট খুলবি না খুইল্যা লমু? র‍্যাগিং-এর শিকার হতে যাচ্ছে হাসান, বুঝতে পারলো ও। কিন্তু এত সহজে হাল ছেড়ে দেবার পাত্র সে নয়। এর মধ্যে কয়েকজন র‍্যাগার হাসানের প্যান্ট জোর করে খুলে নিল। চারপাশের হা হা হো হো হাসির শব্দে হাসানের বোধ শক্তি হ্রাস পেল।

একজন আবার দুটো ইট নিয়ে এসে রাখলো। আবারও নির্দেশ দিল র‍্যাগারেরা, ‘’এই দুই ইটের উপরে দুই পাও রাইখ্যা বস। ‘’ একজন ওকে ধরে ইট দুটোর উপরে নিয়ে বসিয়ে দেয়। আবারও নির্দেশ, ‘’এইবার পায়খানা কর, করবি না? কর। ‘’ হাসানের অবস্থা দেখে ওর ক্লাসে যে দু একজন এখানে এসে জড়ো হয়েছিল ওরা ভয়ে পালিয়ে গেল।

বড় ভাইয়েরা এদিকে অশ্লীল অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে একেকজন। এ ঘটনার পরে হাসান অনেক দিন ক্যাম্পাসে আসে নি। নিয়মিত ক্লাস করে নি। পর পর দু বছর ইয়ার ড্রপ গেল। সাধারনত কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষার্থীদের সাথে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা মজা করার জন্য র‍্যাগিং করে থাকে।

কিন্তু এই মজা করতে গিয়ে ব্যাপারটি আর নিছক নির্দোষ আনন্দে সীমাবদ্ধ থাকে না, হয়ে উঠে নিষ্ঠুর ও অমানবিক। অনেক সময় রাগিং এর নামে যৌন নির্যাতনের মত ঘটনাও ঘটে থাকে। র‍্যাগিং এর শিকার অনেকেই ভয়ে ক্যাম্পাসে আসা বন্ধ করে দেয়, অনেকের মূল্যবান শিক্ষা জীবন নষ্ট হয়ে যায়। মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকে আত্নহত্যাও করে বসে। আবার যে নতুন শিক্ষার্থীটি দিনের পর দিন র‍্যাগিঙ্গের শিকার হয়েছে, সে নিজে সিনিয়র হলে অন্য নতুনদেরকেও র‍্যাগিঙ্গের নামে অত্যাচার করে থাকে।

্র্যাগিঙ্গের এমন সব ন্যাক্কারজনক ও ভয়ংকর ঘটনা ঘটে যে, এর শিকার ব্যক্তি তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে কাউকে কখনো বর্ণনা করতে পারে না। শারীরিক, মানসিকভাবে অত্যাচারের ফলে নিজের উপর প্রচণ্ড ঘৃণা বা রাগ তৈরি হয় তাদের মনে। আত্নবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। র‍্যাগারদের প্রতি প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠতে পারে, এবং এতে সে তার চেয়ে দূর্বল কারো প্রতি একইভাবে আক্রমনাত্নক আচরণ করে থাকে। আমাদের পাশের দেশ ভারতে র‍্যাগিঙ্গের সমস্যাটি খুব প্রকটভাবেই দেখা যায়।

এমন কি ভারতীয় চ্যানেলের প্রচারিত বিজ্ঞাপনগুলোতেও র‍্যাগিঙ্গের ঘটনা সারাক্ষণই আমরা দেখছি। যার প্রভাব আমাদের মধ্যেও পড়ে। আমরাও নানাভাবে মানুষকে বোকা বানানোর নিষ্ঠুর খেলায় মেতে উঠি। শুধু যে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়েই র‍্যাগিং ঘটে তা নয়। ঘর থেকে শুরু করে স্কুল, অফিস সর্বত্র রাগিং হয়, তবে তার রূপটি অতটা চরম নয় বলে আমরা ততটা আমলে নেই না।

যেমন ঘরে ছোট শিশুদের আমরা নানা রকম কথা বলে ক্ষেপাই, যেমন, ‘’তুমি পঁচা’’। আবার স্কুলের শিশুরা নিজের সহপাঠিদের দ্বারা শারীরিক, মানসিক, আবেগিক নানাভাবে বুলিং-এর শিকার হচ্ছে। ওরা মারামারি করে আঘাত পায়, নানা রকম বাজে নামে বা খেতাবে একজন আরেকজনকে ডাকে ইত্যাদি। অফিসে সহকর্মীদের মধ্যেও নানা ধরনের বুলিং এর উদাহরণ পাওয়া যায়। ইদানিং মোবাইল বা ইমেইলের মাধ্যমেও বুলিং করা হচ্ছে, যা সাইবার বুলিং নামে পরিচিত।

তাই আমাদের নিজেদের অবস্থানগুলো থেকে ঘরে-বাইরে এ ধরনের আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নতুন পরিবেশে নতুন শিক্ষার্থীরা র‍্যাগিং এর শিকার হলে তা অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও রাগিং এর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। জরুরি একটি ফোন নম্বর নতুন শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া উচিত, যেন তারা রাগিং এর শিকার হলে খুব সহজেই অভিযোগ করতে পারে। নতুন শিক্ষার্থীরা সিনিয়র শিক্ষার্থীদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করে এ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারে।

নতুন শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত হবার জন্য সিনিয়রেরা রাগিং করে থাকে। একটি অপ্রীতিকর ঘটনা দিয়ে শুরু করছি, শেষ করছি আরেকটি ঘটনা দিয়ে। তিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি হয়েছে। এখনো তার কোন নতুন বন্ধু তৈরি হয় নি, কোথায় কোন ক্লাস হয় ঠিক ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না এখনো। নতুন পরিবেশের সাথে এখনো খাপ খেয়ে উঠেনি।

এমনি এক সকালে একটি ক্লাস শেষ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল ও। এমন সময় সিনিয়র এক আপু এসে, মিষ্টি হেসে ওর সাথে পরিচিত হলেন। নিজের পরিচয় দিয়ে তিমারও পরিচয় নিলেন। তিমাকে চুইংগাম খাবার জন্য সাধলেন, বাড়িয়ে দিলেন প্যাকেটটা। প্যাকেটের ভেতর থেকে একটুখানি বেরিয়ে থাকা চুইংগাম ধরে যেই তিমা টান দিল, অমনি একটা তেলাপোকা ছিটকে ওর গায়ে এসে পড়ল।

ভয়ে চোখ বন্ধ করে তিমা চিৎকার দিল। সবাই যখন হাসতে শুরু করল, তখন তিমা দেখল, ওটা একটা প্লাস্টিকের তেলাপোকা। কাণ্ড বুঝতে পেরে তিমাও সবার সাথে হেসে উঠল, আর আপুর সাথে কপট রাগ দেখালো। আপু এবার ওকে একটা ভাল চুইংগাম খেতে দিলেন আর দেখিয়ে দিলেন কিভাবে স্প্রিং দিয়ে ঐ তেলাপোকাটাকে তিনি আটকে রেখেছিলেন প্যাকেটের ভেতরে। সেদিন ডিপার্টমেন্টের অন্য আপুদের সাথেও তিমার পরিচয় হলো।

তৈরি হলো। বেশ কয়েকজন বন্ধুও। নতুন পরিবেশে নতুন শিক্ষার্থীদের সাথে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা পরিচিত হোক ভীতিকর রাগিঙ্গের মাধ্যমে নয়, আনন্দময় বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।