... রোববার অবরোধ পরবর্তী সমাবেশ কর্মসূচি চলাকালে মতিঝিল থেকে পল্টন পর্যন্ত এলাকার ফুটপাতের হাজারো দোকান পুড়িয়ে দেয় হেফাজত ইসলাম। জীবিকা অর্জনের একমাত্র মাধ্যম চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
হতাশা আর আক্ষেপের মিশেলে আবুল খায়ের বললেন, “আমার দোকানে সবই ছিলো কোরআন শরীফ ও ধর্মীয় বই। হেফাজতের কর্মীরা যখন আগুন লাগাতে আসে, তাদের হাতে ধরে বলি-ভাই আমার দোকানে সব ইসলামী বই, কোরআন শরীফ। ভাই, আমার দোকানে আগুন দেবেন না।
”
আবুল খায়ের বলেন, “আমার অনুরোধে মন গলেনি তাদের। দশ/বারোজন হেফাজত কর্মী আমাকে লাঞ্ছিত করেন, মারধর করে আমাকে দোকান থেকে সরিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। ”
বারবার ভর করা বিলাপ সামলে তিনি বলেন, “ভাই, আমার আর কিছু নেই। ছয়লাখ টাকার বই ছিলো। এখন আমি কি করব।
একেবারে পথে বসে গেছি। ”
এরপরই মোক্ষম প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেন আবুল খায়ের। তিনি বলেন, “হেফাজতে ইসলাম আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করতে চায়, অথচ তারাই আল্লাহর কালাম পোড়ায়। তারা কিভাবে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করবে?”
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট সংলগ্ন গজ কাপড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘‘দু’দিন আগে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দোকানে কাপড় তুলেছি। বিকেলে দাড়ি-টুপি পরা ৪/৫ জন ও শার্ট প্যান্ট পড়া কিছু লোক পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
’’
এ দোকান দিয়েই তার ৫ সদস্যের সংসার চলছিলো বলে তিনি জানান।
কারো পুড়ে গেছে গজ কাপড়ের দোকান, কারো শার্ট-প্যান্ট, জুতা-স্যান্ডেল এবং কারো বই-পুস্তকের দোকান।
জুতা-স্যান্ডেল বিক্রেতা কবীর হোসেন বলেন, ‘‘দোকান পোড়ানোর সময় বলেছি, আল্লার দোহাই লাগে আমার পেটে লাথি মাইরেন না। কিন্তু ওরা শুনে নাই। আগুন লাগিয়ে দেয়।
’’
বইয়ের দোকান ‘হাসান বুক’ বাঁচাতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়েছেন হাসান।
“কোরআন শরীফ রয়েছে, এগুলো পোড়াবেন না” বলে বাঁচাবার চেষ্টা করেন হেফাজতের আগুন থেকে। কিন্তু কিছুতেই শোনেনি হেফাজতের কর্মীরা। লাঠি দিয়ে হাসানের দুই পায়ে ও শরীরে উপুর্যপরি আঘাত করেছে। হেফাজতের কর্মীরা পবিত্র কোরআনসহ প্রায় ৫০ হাজার টাকার বই পুড়িয়ে দিয়েছে।
হাসান বলেন, “ভাই, ওরা কাফের, কুরআন শরীফের কথা বলেও রক্ষা পাইনি আমি। আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তাতেও। ”
শুধু আব্দুল মজিদ আর হাসান নয়, শতাধিক ব্যবসায়ী হেফাজতের ভয়ংকর তাণ্ডবের বর্ণনা দেন।
১৬ বছরের কিশোর জুয়েল সব হারিয়ে পথে বসেছে। বইয়ের দোকানের পাশাপাশি পান-বিড়ির দোকানটিরও কোনো চিহ্ন নেই।
কোরআন শরীফের পোড়া অংশ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বই ব্যবসায়ী সেলিম জানান, কোরআনসহ অন্য বইগুলো র্যাক থেকে ফেলে দিয়ে আগুন দিয়েছে হেফাজত কর্মীরা।
একইভাবে মাসুম ইউসুফ, দেলাওয়ারসহ সবার বইয়ের দোকানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। কমরেড ফরহাদ-মনি সিংহ টাওয়ারের নিচের বইয়ের দোকান আর আশপাশে আগুন জ্বালিয়ে উল্লাস করেছে হেফাজতের কর্মীরা।
একই অভিযোগ করলেন হাদি খন্দকার, খোকন, সাগর, সুমনসহ আরো অনেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।