ভালো মানুষ হতে চাই"-উত্তরটা এমনি ছিল। ছোট্ট একটা মুখ থেকে এমন উত্তর পেয়ে নিজেকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করালাম,কীসের পেছনে ছুটছি এতো!! মানসশৈত্যজবিভবলব্ধতাড়নাপ্রসূতজান্তবপ্রবৃত্তিহেতু এক নিঃস্বপ্ননিদ্রাভিলাষী -হ্যালো স্লামালাইকুম।
-হ্যালো।
-জি কে বলছিলেন?
-আপনার কণ্ঠটাতো সুন্দর।
-জি?
-বললাম আপনার কণ্ঠ অনেক সুন্দর।
আমি কিছুটা অবাক এবং কিছুটা বিরক্ত হয়ে ফোনটা কেটে দিলাম। ২০০৪ কি ২০০৫ সালের কথা। বাংলাদেশে তখন ওতটা মোবাইলের প্রচলন ছিল না। বাড়িতে বাড়িতে তখন টিঅ্যান্ডটি এর প্রচলানই বেশি ছিল। আমি তখন ক্লাস নাইনে কি টেনে পরি।
সন্ধ্যার সময়। বাবা থাকেন দেশের বাইরে। ভাইয়ারা সন্ধার সময় বাইরেই থাকে, আর মা গিয়েছেন একদিন এর জন্য গ্রামের বাড়িতে। যেহেতু আমার স্কুল খোলা ছিল, তাই আমাকে নিয়ে যেতে পারেননি। বাড়িতে একা থাকতে আমার কখনই খারাপ লাগত না।
ইচ্ছে মত টিভি দেখা যেতো।
তাই ফোনটা বাঁজার পরে আমাকেই ধরতে হল। বাসায় অন্য কেউ থাকলে আমি সাধারনত ফোন ধরি না। কিন্তু আজকে বাধ্য হয়েই ধরতে হোল আর যখন শুনলাম কেও আমার কণ্ঠের প্রশংসা করছে তখন বুঝতে আর বাকি রইলনা কোন আজেবাজে কল।
ফোন কাঁটার দুই মিনিটের মাথায় আবার কল আসল।
-হ্যালো।
-আপনি ফোনটা কেটে দিলেন কেন?
-মানে?
-আমিতো খারাপ কিছু বলিনি। শুধু বলেছি আপানার কণ্ঠটা সুন্দর।
মস্তিষ্ক বলছিল ফোনটা কেটে দেয়ার জন্য, কিন্তু মন বলছিল না কাটার জন্য। শেষ পর্যন্ত জয় হলো মনেরই।
মনটা মনে হয় প্রশংসা শুনে খুশিই হয়েছিল। ফোনের ওইপাশের কণ্ঠটাও বেশ সুন্দর এবং গোছানো। একজন কিশোরী মেয়ে আর প্রথমবারের মত শুনছে তার কণ্ঠটা সুন্দর, মনতো গলবেই। তাই ভাবলাম কথা বলেই দেখি।
-জি ধন্যবাদ।
কিন্তু আপনি কে?
-আমার নাম শিহাব। আপনার নাম কি?
ভাবলাম বানিয়ে কোন নাম বলব কিন্তু আসল নামটাই বলে দিলাম। তারপর বেশ অনেক্ষন কথা হলো আমাদের। জানতে পারলাম তার বাবা মা দুই জনই দেশের বাইরে থাকেন তাই এখন তাকে একাই থাকতে হয়। পড়ে scholastica তে, এইবার ও লেভেল দিবে।
মায়া লাগল খুব। হয়তো এর জন্যই আরো কথা বললাম। জানিয়ে দিলাম সন্ধ্যার সময় আমাকে পাওয়া যাবে।
এরপরদিন সন্ধ্যার সময় যখন ফোন আসল তখন আম্মু ধরল। হ্যালো হ্যালো করার পরও যখন ওইপাশ থেকে কোন কথা আসলনা তখন আমার এর বুঝতে বাকি রইলনা ফোনটা কোথা থেকে এসছে।
এরপরদিন সন্ধ্যার সময় যখন ফোনটা আসল আমিই ধরলাম। ওইপাশ থেকে হ্যালো শোনার সাথে সাথে চিনতে পারলাম কারন শিহাব কিছুটা টেনে হ্যালো বলত। আম্মু পাশেই ছিলেন। তাই সাথে সাথে বললাম,
-কে? সাথি? কি খবর?
তারপর কর্ডলেস ফোনটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলাম। প্রথমবার লুকিয়ে লুকিয়ে কোন ছেলের সাথে কথা বলছি, ভয়তো লাগবেই।
এভাবেই চতুর্থ দিন কথা বলার সময় আমাকে বলল, “I think I am falling for you.” আমি তখন জানতামও না এর মানে কি, কিন্তু আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। তাই সাথে সাথে উত্তর দিলাম, “ওইরকম তো কথা ছিল না, আমি আগেই বলেছি আমরা বন্ধু হয়ে থাকব। ”
আমার সবচাইতে বড় ভয় ছিল আমার বড় ভাই। সে যদি কোনভাবে জানতে পারে আমি কোন ছেলের সাথে ফোনে কথা বলছি তাহলে তুলকালাম কাণ্ড ঘটাবে। কিন্তু সেটাও কোন বিষয় ছিল না, বিষয়টা ছিলেন আমার মা।
আমার মা আমাকে অনেক বিশ্বাস করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন আমার বয়সী অন্যান্য মেয়েদের মত আমি কোন ছেলের সাথে জড়াব না। তাই মনে হচ্ছিল আমি আমার মাকে ঠকাচ্ছি। তাই ষষ্ঠ দিনের দিন কথা বলার সময় বলে দিলাম, “আমাকে আর ফোন না করলে খুশি হব, কারন আমি আমার মায়ের বিশ্বাসটাকে ভাঙতে চাই না। ” এই বলে ফোনটা রেখে দিলাম।
নিজেকে অপরাধবোধের হাত থেকে রক্ষা করতে চাইলাম।
সপ্তম দিন শিহাব আবার ফোন করল তখন বলে দিলাম,
- বলেছিনা, আমাকে আর ফোন করবেন না।
- আমি সত্যি আর ফোন করব না?
- না, ফোন করবেন না।
এই বলে ফোন কেটে দিলাম, কিন্তু কেন জানি মনে মনে চাইছিলাম ফোনটা আবার করুক। কিন্তু সেই ফোন আর আসেনি।
নতুন আরেক অপরাধ বোধ জন্ম নিতে শুরু করল। মনে হল, আহারে ছেলেটা একাকিত্য কাটানোর জন্যই হয়তো আমার সাথে কথা বলত। তাই দুই দিন পরে আমি তার দেয়া নাম্বারটায় ফোন দিলাম। কিন্তু ফোন গেল কোন অদ্ভুত জায়গায়। মানে নাম্বারটা ভুল।
মনে মনে কিছুটা হেসে নিলাম। আমি তো তাহলে ভুল করিনি। বিশ্বাস করাটাই তাহলে ভুল হতো।
এরপর হাই স্কুল, কলেজ পাশ করে আজেক আমি ইউনিভার্সিটিতে। এরমধ্যে অনেক ছেলেই আমার ক্লাসমেট ছিল।
তাদের সাথে কথা হতো, অনেকের সাথে ভাল পরিচয়ও ছিল। কিন্তু কারো জন্য অভাবে কিছু অনুভব করিনি। তাই আজকে আমি শিহাবকে ধন্যবাদ জানাই। কাওকে এখন আর আমি বিশ্বাস করিনা, তাই কোন ভুল করারও সম্ভাবনা নেই। আরে হ্যাঁ, আপনার কথা আমার সবসময় মনে থাকবে।
( গল্পটি আমার পরিচিত একজনের কাছ থেকে নেয়া। আমি শুধু তার ভাষায় বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি মাত্র। ভুল ত্রুটি দয়া করে ক্ষমার চোখে দেখবেন। ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।