এক সময় বই ছিল আমার নিত্য সঙ্গী , অনেক রাত জেগে বালিশ নিয়ে উপুর হয়ে বই পড়তে পড়তে বুক ব্যাথা হয়ে যেত । পড়া শেষ হতো না । আজো বইয়ের কথা মনে হলে আমার বুকে ব্যাথা হয়, তাদের মলাটে ধুলোর আস্তর জমেছে বলে । বইয়ের পোকা থেকে এখন আমি ইন্টারনেটের পোকা ।
ভালো মানুষদের দেশে বলার কারণ একটাই ভুটানের মানুষরা এতো বেশী হেল্পফুল ওদেরকে ভালোমানুষ উপাধী না দিলে রীতিমতো অন্যায় হবে ।
ইন্ডিয়ার কাছে ট্রানজিট ভিসা নিয়াছিলাম, একবার ইন্ডিয়ার উপর দিয়া ভুটানে প্রবেশ করবো আরেকবার বের হয়ে বাংলাদেশে ফিরবো । কিন্তু ফেরার পথে বিমানে চলে আসায় আর ইন্ডিয়াতে দ্বিতীয়বার প্রবেশ করা হয়নি । আমার এই পোষ্ট মূলত ফটোব্লগ তাই ছবির মাধ্যমেই আমি যতটুকু সম্ভব তুলে ধরার চেষ্টা করবো, বিস্তারিত বিশ্লেষণে আমি যাবো না ।
ভুটানের আরো কিছু নাম আছে, স্থানীয় নাম ড্রুক গিয়ালখাপ, সংক্ষেপে ড্রুক ইয়ুল। এছাড়া বজ্র ড্রাগনের দেশ নামেও পরিচিত।
ঐতিহাসিক ভাবে এই দেশটি লো মন (দক্ষিণের অন্ধকারাচ্ছন্ন দেশ), লো সেনডেঞ্জং (দক্ষিণের চন্দন কাঠের দেশ), বা লো মেন জং (দক্ষিণের ঔষধি হার্ব-এর দেশ) ইত্যাদি নামে ও পরিচিত ।
ভুটান কখনো কারও উপনিবেশ ছিল না। শত শত বছর ধরে বিশ্বসম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেছে তারা। এটি তারা স্বেচ্ছায়ই করেছে। এখনো দেশটির শাসক ও জনতা বাইরের এবং বিশ্বায়নের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে সচেষ্ট।
ভুটানই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চেয়ে সামগ্রিক জাতীয় সুখকেই বড় করে দেখা হয়।
ওয়াংদি থেকে সকাল সকাল রওয়ানা হলাম পারোর উদ্যেশ্যে, পারোতেই ভুটানের একমাত্র বিমান বন্দর, পরদিন সকাল ১১টায় আমাদের ফ্লাইট । তবে পারো যেতে হলে আবারো থিম্পু হয়ে যেতে হবে, আর আমরা থিম্পু থেকে কিছু কেনাকাটাও সেরে নিলাম ।
পুনাখা থেকে থিম্পু যাওয়ার পথে আমরা যাত্রাবিরতি করি দোচুলায়। দোচুলা ভুটানিদের পূণ্য ভূমি।
দোচুলায় মূল আকর্ষণ এখানকার বৌদ্ধমঠ। খাড়া পাহাড়ের উপর বিশাল বৌদ্ধমঠ; বৌদ্ধমঠটি স্থাপত্যশৈলী আর শিল্পশৈলীর নজরকারা স্থাপনা। ভ্রমণার্থী আর পূণ্যার্থীদের ভিড়ে বৌদ্ধমঠটি বেশ জনসমাগম। দোচুলায় সৌন্দর্য্য আরো বাড়িয়ে দেয় ১০৮টি বৌদ্ধ স্তূপ । ২০০৪ সালে ভুটানের জ্যোষ্টতম রাণীমাতা আশী দরযী ওয়াংমো ওয়াংচুক দক্ষিণ ভুটানে আসাম বিদ্রোহে মারা যাওয়া শহীদের স্মরণে এই ১০৮টি বৌদ্ধ স্তূপ তৈরী করেন।
কাঠের তৈরী এই স্তূপ গুলোতে বৌদ্ধ ধর্মীয় বিশ্বাস, ভুটানের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের পরম স্পর্শ।
ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট, এখানে আপনাকে থামতেই হবে ।
চলতি পথে ক্ষুধা আর পিপাশা মেটানোর জন্য এমন দোকান পাবেন পথের ধারে,,,,,,,,,,,,,,,,
এমন আপেল বাগান ভুটানে আছে প্রচুর, কিন্তু এমন সময় আমরা ওখানে গিয়েছি যখন আপেলের অফ সিজন । আপেলের সিজনে নাকি ওখানে আপেল বিক্রি হয় ২০ রুপিতে, আর এখন ১৩০ রুপি ।
পাহাড়ী এমন আঁকাবাঁকা পথে আমরা এগিয়ে চলি পারোরদিকে.....
পারোর একটু আগে এটা কোন শহর নাম জানা হলো না, চলন্ত গাড়িতে থেকে ছবিটা উঠিয়েছি ।
দুপুর তিনটার দিকে আমরা পারো শহরে পৌছি, এবং খুব দ্রুত একটা হোটেল বুকিং দিয়েই আমরা ছুটি চীন সীমান্তবর্তী ড্রাকউইল জং দেখার জন্য । এদিকে পেটে প্রচন্ড ক্ষিদে অন্য দিকে সময় স্বল্পতা, হিসেব করে দেখলাম হোটেলে খেতে গেলে ১ ঘন্টার ব্যাপার তাই না খেয়েই আমাদের গন্তব্যের দিকে ছুটলাম । তাছাড়া ভুটানে সন্ধ্যাটা যেন হুট করেই নেমে আসে । আমাদের ড্রাইভার ডাসু ঠিলে প্রচন্ড ভদ্রলোকদের একজন, কখনো বিরক্ত না হয়ে আমাদের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল আর আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর খুব আন্তরিকতার সাথেই দিচ্ছিল ।
পারোর উপত্যকাটা বিশাল প্রসারিত, এখানে প্রচুর ফসলী জমির দেখা মিলবে ।
এক সময় আমরা পৌছে গেলাম ড্রাকউইল জং এ । পাহাদের উপরের ঐ পোড়া বাড়িটাই জং ।
জং এ উঠার পাথর বিছানো পায়ে হাটা পথ.....
আমরা সামনের পথ না ধরে পিছনের পথে হাটায় কিছুদুর গিয়েই বুঝতে পারলাম আমরা জং এর বিপদজনক পথটাই বেছে নিয়েছি । তবু এগিয়ে গেলাম, এবং এক সময় খুবই খাড়া এবং নুরী পাথরে ভড়া একটা পথে আমাদের উপরে চড়তে হয়েছিল এবং আমি সত্যিই খুব ভীত হয়ে পরেছিলাম তখন ।
পাহাদের উপর থেকে তোলা দূরে নীচে ভুটানী গ্রাম আর শস্য ক্ষেত ।
কুয়াশা ঢাকা কিছুটা বরফাচ্ছাদিত পাহাড়টা কিন্তু চীনে অবস্থিত ।
ড্রাকউইল জংটা আসলে পাহাড়ের উপরে একটা পোড়া প্রাচীন ধংসাবশেষ ছাড়া আর কিছুই নয়, কোন একটা যুদ্ধে নাকি এই জংএ বোমা মেরে এটাকে পুড়িয়ে দিয়েছিল ।
জং থেকে ফিরে আসার সময় ওনার সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়ে যায়, না তিনি আমাদের কোন আপ্যায়ন করেনি
সুতরাং আপনারা কেউ ওখানে গেলে আশা করি সতর্ক থাকবেন ।
আগামী পর্বে সমাপ্ত । ।
ভালো মানুষদের দেশে ( ভুটান ভ্রমণ ) -- ১
ভালো মানুষদের দেশে ( ভুটান ভ্রমণ ) -- ২ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।