“এখন অনেক রাত-
এখনি আমি শুইয়া হমু কাত। ”
-স্ট্যাটাস টা দিয়ে শেষবারের মত ফেসবুকের হোমপেজ টা চেক করতে লাগলাম । ইতিমধ্যে তিন-চারটা লাইক ও পড়ে গেল দেখতে দেখতে । এর মধ্যে আমার এক জিগরি দোস্ত এর লাইক নজরে আসল। তো হঠাত কি মনে করেই যেন ওর প্রোফাইলে ঢুকলাম।
ঢুকেই তার বিভিন্ন স্ট্যাটাসে জনৈক রুমা ফেরদৌস নামক এক রমনীর কয়েকটি কমেন্ট পড়লাম এবং আমাদের ফ্রেণ্ড গ্রুপের নিয়ম অনুযায়ী তাকে এক খানা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালাম। এখানে বলে রাখা ভাল যে আমাদের ফ্রেন্ড গ্রুপের এটা অলিখিত নিয়ম ছিল যে আমাদের মধ্যে কেহ যদি কোন অচেনা রমণীর সাথে ফেসবুকীয় বন্ধুত্ব গড়ে তোলে তবে আমরাও দল বেঁধে উনাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাব। কিন্তু কিছুদিন পরেই লক্ষ্য করলাম উনার সাথে আমার বন্ধুত্বটাই টিকে রইল এবং কিছুদিন পর ধীরে ধীরে উনার সাথে আমার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড এর সংখ্যা শূণ্যে এসে দাঁড়াল।
-এটাই ছিল শুরু । কিন্তু কিসের শুরু?? আসলে এটা ছিল আমার “ইট’স মাই লাইফ” মার্কা জীবনে “মাই হার্ট উইল গো অন” এর রোমান্টিক সুর বেজে ওঠার করুণ কাহিনির শুরু।
আমার শান্ত জীবন সমূদ্রে আমার পাগলিটার ঝড় তোলার করুণ কাহিনির শুরু। আসলেই করুণ কাহিনি ই তো বটে। কারণ প্রায় ৩৮০ দিন অর্থাৎ ৯১২০ ঘন্টা অর্থাত ৫৪৭২০০ মিনিট কারও কথা ভেবে কষ্ট পাওয়া, তার মুখ থেকে একটু “হ্যাঁ” শোনার অপেক্ষা, তাকে না পাওয়ার যন্ত্রণা ভোগ করা –এত কিছু সহ্য করা তো সোজা কথা নয় । তবুও এত সময় অপেক্ষা করে তাকে যে আমি বোঝাতে পেরেছি তার জন্য আমার ভালবাসা কতখানি সেটাই বা কম কিসের?আসলে ঐ দিনের জনৈক রুমা ফেরদৌস যে এক দিন আমার ঐকিক রুমা ফেরদৌসে পরিনত হবে সেটা কখনো কল্পনাও করেছিলাম না।
-আচ্ছা আসলে শুরুটা ছিল কিভাবে? সামান্য চ্যাটিং ?নাহ, তাও তো খুব বেশি হত না।
কিন্তু কিসের মায়ায় পড়লাম , কিভাবে পড়লাম?কিছুই জানিনা। শুধু মাত্র হঠাত একদিন অনুভব করলাম তার কথা আমি অবচেতন মনেই চিন্তা করছি। নিজের অজান্তেই কিছুটা ভড়কে গিয়েছিলাম সেদিন। নিজের মনেই চিন্তা আসল চিনিনা জানি না ,এরকম একটা মেয়ের কথা আমি অবচেতন মনে কেন চিন্তা করছি। ব্যপারটাকে প্রথম দিকে সম্পূর্ণই উপেক্ষা করতে লাগলাম।
কিন্তু কিছু দিন পর ই ব্যপারটা আর উপেক্ষা করার পর্যায়ে থাকল না। কারণ চলার পথে প্রতিটা কাজে, প্রতিটা ক্ষণে যদি একজনকে পাশে অনুভব করা শুরু করি তাহলে কিভাবে সেটাকে উপেক্ষা করি?কিন্তু কিভাবে বলি?? নিজের কাছেই তো এর কোন ব্যাখ্যা ছিল না। জীবনের ঊনিশ বসন্ত পার হবার পর বিংশ তম বসন্তে মনের বাগানে এরকম ভাবে যে ভ্রমরের প্রবেশ ঘটবে সেটা নিজেই তো কোন দিন কল্পনা করি নাই। কিন্তু বলতে তো হবেই । তাই একদিন অনেক সাহস যোগাড় করে, দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে ,মনের ভেতর অনেক আশার ফানুস জালিয়ে আধো রোমান্টিক একখানা মেসেজ পাঠালাম।
কিন্তু খুব বেশি দেরি করতে হয়েছিল না আমার আশার ফানুস গুলোর ফুটো হতে। কিছুক্ষন পর আমার যাবতীয় ফানুসগুলোকে আর খুঁজে পেলাম না। মনের বাগানে যে ভ্রমর ঢুকেছিল তা এক খানা হুল ফুটিয়ে চলে গেল। হুলের বিষে কিছুদিন দংশিত হলাম। কিন্তু ততদিনে নিজের থেকেও বেশি যাকে ভালবেসে ফেলেছি কেমনে তাকে হঠাত করে ভুলে যাই।
তাই ভুলে যাওয়ার নিরন্তর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আবার বেসম্ভব অধ্যাবসায় নিয়ে তাকে রাজি করানোর যুদ্ধে নামলাম।
-মূলত এখান থেকেই শুরু হল আমার ৫৪৭২০০ মিনিট এর করুণ কাহিনি। এই ৫৪৭২০০ মিনিটে কি না করছি তাকে রাজি করানোর জন্য , নিজের ভালবাসা বোঝানোর জন্য। তাকে নিয়ে গান বাধা , তার জন্য গীটার শেখা,তাকে প্রতিনিয়ত বোঝানোর চেষ্টা করা। এক সময় আমার প্রতি রুষ্ট হয়ে যোগাযোগের সব উপায় ই বন্ধ করে দিল সে।
ভাসমান কচুরিপানার মতই টালমাল হয়ে গেছিলাম সেদিন। তারপর ও আশা ছেড়েছিলাম না। অনেক কষ্টে তার নাগাল পাই আবার। আবার মনের পুরানো ব্যথা ভুলে তাকে আপন করে নেবার চেষ্টায় নামি। আমার এই বেসম্ভব অধ্যাবসায়ের সামনে পাগলী টা একদিন হার মানতে বাধ্য হল।
দিনটা ছিল জানুয়ারী মাসের ১৫ তারিখ। এদিন ছিল পাগলিটার কাছে আমার ভালবাসার বিজয়ের দিন। আমার ৫৪৭২০০ মিনিট করুণ কাহিনি শেষ হবার দিন। এদিন পাগলি টা কেঁদেছিল আমার জন্য। তার কান্না ভেজা কন্ঠেই জিজ্ঞাসা করেছিল, “বাসবি তো ভাল এভাবে সারা জীবন??” আমার কিছু বলতে হয়েছিল না সেদিন।
আমার চোখের আনন্দাশ্রুই বলেছিল আমার হয়ে কথা।
সেদিন থেকে শুরু আমার সুখের কাহিনির। এরপর সময় গড়িয়েছে অনেক। সময়ের সাথে পালটে গেছে অনেক কিছুই ,পালটায়নি শুধু আমার ভালবাসা। নাহ ,পালটায়নি বললে তো আসলে ভুল হবে।
দিনে দিনে তো বেড়েই চলেছে এটা। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হল আমার পাগলিটা এখন আমাকে যে পরিমাণ ভালবাসে মাঝে মাঝে নিজের ভালবাসাকেই ছোট মনে হয়ে যায়। পাগলিটাকে নিয়ে অনেক সপ্ন দেখেছি এতদিন । এখন শুধু সপ্ন পূরণ করার পালা। সপ্ন গুলো দেখেছি একা কিন্তু পূরণ করব দুজন কে নিয়েই।
পাগলিটার সাথে কথা হয় নাই আজকে। পাগলিটার শরীর অনেক খারাপ আজকে। কিন্তু তোর সাথে কথা না হলে যে ঘুম আসে না আমার পাগলি। তাইতো রাত জেগে তোর কথা মনে করে লিখে ফেললাম এটা। পাগলি তোর জন্য শেষে কিছু কথা-
“এখন অনেক রাত-
তোর কথা পড়ছে মনে অকস্মাৎ,
চোখটা বুজে হাত বাড়িয়ে তোকে ছুঁই-
কিন্তু চোখটা খুললে কোথায় হারাস তুই?”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।