ধুসর
ছোট্ট ভাইয়া টা অনেক পঁচা হয়ে গেছে। কতবার বললাম যে আমাকে একটা মোবাইল কিনে দিতে, দিচ্ছে না তো দিচ্ছে না-ই। মোবাইল না হয় না ই দিল, কিন্তু সে নিজেও তো আসতে পারে!! পুজো তেও আসার নাম নেই, বলল কিনা তার অনেক কাজ। কি এমন কাজ? মানুষের কাপড় সেলাই করাটা কি এতটাই বড় হয়ে পড়ল?
ভাগ্যটাই আমাদের সুখের কাছে এভাবে সপে দিল আমার ছোট ভাইয়া টা। সংসারের অভাব মোচনের জন্য বড় ভাইয়ার হাত ধরে সে চলে গেল ঢাকা।
ক্লাস নাইন কি কোনো পরা লেখা হলো? তার পর ও গেল....
খুব সকাল- ছোট ভাইয়ার কন্ঠ মনে হলো!! আমাকে নাম ধরে ডাকছে, হ্যা সত্তি ই তো আমার ছোট্ট ভাইয়া এসেছে .. মনের ভেতরের অভিমান টা যেন এবার আবেগের রূপ নিল। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না. দৌড়ে গেলাম ছোট ভাইয়ার কাছে। কেমন শুকিয়ে গেছে। পিসি মা আর মা রান্না ঘরেই ছিল। পরম মমতায় তারা জড়িয়ে নিল আমার ছোট ভাইয়া কে।
আমার কানটা ধরেই সে একটা টান দিল আর বলল - কি রে পাগলি রাগ করে আমাকে ফোন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলি নাকি? আমি বললাম - রাগ করবই তো. আমাকে না তোমার মোবাইল দেওয়ার কথা ছিল? তুমি যে সেটা ভুলে গেলে? অমনিতেই মা এসে ধমক দিল, " ছেলেটা এতদিন পর এসেছে আর অমনিতেই আবদার শুরু করে দিলি? একটু জিরোতে তো দিবি..."
ছোট ভাইয়া হাসলো, কিছুই বলল না।
আমার তো ঘরের সব কাজ কর্ম সব বন্ধ। সারাদিন ছোট ভাইয়ার সাথে শুধূ গল্প আর গল্প। আমার ছোট ভাইয়াটা না আসলে অনেক ভালো, ঢাকা শহরে ঘটে যাওয়া সব কিছুই আমাকে বলতে লাগলো। খুব মজা পেতাম এই ভেবে যে ঢাকাতে আমার ভাইয়াটা ও অনেক মজা করে।
কিন্তু এত মজার মজার ঘটনার মধ্যেও উপলব্ধি করতে পারতাম যে আমাদের জন্য তার মনটা অনেক কাঁদে।
পরদিন মা নানা রকম পিঠে পুলি বানালো.. খুব ভোরেই উঠে দুই ভাই বোন গিয়েছিলাম বকুল তলায়। ফুল কুড়িয়ে ঘরে ফিরেই খুব মজা করে পিঠা পুলি খেলাম,ছোট ভাইয়াকে তো আর ছাড়তে ইচ্ছা হচ্ছিল না, কিন্তু নিজের ইচ্ছাটা নির্বাসিত হলো, যখন দেখলাম ভাইয়া আমার যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেক জোর করেও তাকে রাখা গেল না। তবে সে কথা দিল যে শিগ্ঘ্রই সে আবার আসবে,সাথে করে মা কিছু পিঠা দিয়ে দিল।
যাওয়ার সময় কেন জানি ভীষণ মন খারাপ হচ্ছিল, ছোটভাইয়া মাথায় হাত বুলিয়ে বলল - " শোন, আগামী বার আসার সময় তোর্ জন্য একটা মোবাইল নিয়ে আসব-কেমন?"
ঢাকায় পৌছে ভাইয়া ফোন দিল যে সে ঠিক মত পৌছেছে, আর মা কে বলল -" মা তোকে ছেড়ে থাকতে অনেক কষ্ট হয়"
কয়েক দিন পর, সকাল হতেই মনটা খুব খারাপ। হটাথ করেই যেন শুনলাম ছোট ভাইয়ার কন্ঠ!! দৌড়ে ঘর থেকে বের হলাম. কিন্তু কই? কথাও তো কেউ নেই.
ছোট্টভাইয়ার কন্ঠ নিয়ে এমন বিভ্রমে তো আগে কখনো পরিনি!! শুনলাম দেশে অবরোধ না কি যেন চলছে. একটু পর ই ফোন এলো ...আমার ছোট ভাইয়াকে কারা যেন মেরেছে। সে এখন হাসপাতালে। আকাশ যেন ভেঙ্গে পড়ল আমার উপর। ওরা কেন মারবে আমার ভাইয়াকে ? আমার ভাইয়া তো কখনো রাজনীতি করেনি..! আমার ভাইয়া তো কারো ক্ষতি করেনি...! নিজের মনে উত্থাপিত এই প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না. ভগবানের কাছে শুধূ এই প্রার্থনাই করছিলাম যে - আমার ছোট ভাইয়াকে সুস্থ করে দাও।
কোনো ভাবেই ছোট ভাইয়ার কোনো খবর পাচ্ছিলাম না। দিন গড়িয়ে সন্ধা হলো, দূর দিগন্ত রেখায় করা যেন আসছে। মানুষের বেশ শোরগোল। কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখতে পেলাম আমার ছোট ভাইয়া এসেছে। হ্যা সবাই আমার ছোটভাইয়া কে চাদরে মুড়িয়ে নিয়ে এসেছে।
আমার ছোট ভাইয়া নির্লিপ্ত .. নিথর....রক্তাক্ত...
আমি জ্ঞান হারালাম।
ছোট ভাইয়া রে ওরা তোকে কেন মারলো রে? আমি জানি তুই কোনো অন্যায় করিস নি. তবু কেন তোকে জীবন দিতে হলো? তুই কি সত্যি আমাদের ছেড়ে চলে গেলি?তোর্ করুন আকুতি কি সেই পশুদের মনকে একটু ও নারা দেয়নি ?তারা কি বুঝে না ছোটভাইয়া হারানো কত কষ্টের? আমার মোবাইল লাগবে না রে ভাইয়া, তবু তুই ফিরে আয় . একটি বার আমার মাথায় হাত রেখে বল -"পাগলি" .
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।