আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জরীর আজ মন ভাল নেই

ঠিক যেখানে দিনের শুরু অন্ধ কাল রাত্রি শেষ মন যত দূর চাইছে যেতে ঠিক ততদূর আমার দেশ । এ মানচিত্র জ্বলছে জ্বলুক এই দাবানল পোড়াক চোখ আমার কাছে দেশ মানে এক লোকের পাশে অন্য লোক । গ্রামের নাম বনপাড়া । রাত আনুমানিক এগারোটা । ছোট্ট শান্ত এই গ্রামে তখন নিশুতি রাত ।

আকাশের অবস্থা খুব একটা ভাল না । বৈশাখীর পূর্বাবাস । ঝড় বাদলার এই রাতে বাড়ির পাশের পুকুরঘাটে একা নিবিষ্টমনে একটা ছায়ামূর্তি যেন বৃষ্টির প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছে । আজমল সাহেব । কিছুক্ষণ আগে যার বড় মেয়ে জরীর বিয়ে ভেঙ্গে গেছে ।

মেয়েকে সান্ত্বণা দেবার ভাষা খুজে না পেয়ে সে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছে । জরী । মা মরা মেয়ে । খুব ছোট্টবেলায় অনেককাল আগে মায়ের সাথে সে মামাদের বাড়ি গিয়েছিল । মামাদের বাড়ির উঠোনটা কত্ত বড় ছিল ।

বাড়ির পাশ দিয়েই হুইশেল তুলে ট্রেন চলে যেত । কত মানুষ যে তাতে চড়ত তার ইয়ত্তা নেই । সেবার মায়ের সাথে সে কত্ত জায়গা ঘুরেছিল । মায়ের স্মৃতি বলতে তার কাছে এতটুকুই । তার আদর স্নেহ খুব একটা পায়নি ।

কিন্তু ছোট ভাইটিকে ঠিক যেন মায়ের আদরেই বড় করেছে । প্রকৃতির কী এক মায়ার খেলা ! প্রতিটি নারীর মনেই খুব সযতনে মাতৃত্বের মমতা লুকিয়ে রেখেছে । জরীর আজ মন ভাল নেই । তবে তার বিয়ে ভেঙ্গেছে বলে নয় । তার বাবা কষ্ট পেয়েছে বলেই তার খুব কান্না পাচ্ছে ।

যে বাবার চোখের মাঝে খুজে নেবে সান্ত্বণার ভাষা । সেই তিনিই শান্ত থাকতে না পেরে বাইরে বৃষ্টিতে ভিজছেন । হারিকেনের আলোটা দপদপ করে নড়াচড়া করছে । ঘরের চালায় টুপটাপ বৃষ্টির শব্দ । কিন্তু জরী নিশ্চুপ নিস্তব্দ হয়ে বসে আছে ।

সে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা তার এখন কী করা উচিত । মন্তু , জরীর ছোট ভাই । জরীকে সে বড়পা বলে ডাকে । বড়পার বিয়েটা হয়নি বলে মনে মনে সে খুশিই হয়েছে । বড়পা ঘুম পাড়িয়ে না দিলে যে তার ঘুম আসেনা ।

তাছাড়া স্কুল পালিয়ে রহমতদের বিলে মাছ ধরতে যাবার সময় বাবার চোখে পড়লে এই বড়পাইতো তাকে মারের হাত থেকে রক্ষা করে । তবু সবার এই চুপচাপ থাকা তার ভাল লাগছেনা । হঠাৎ বলে ওঠে : ‘বড়পা বাজান কই ? খিদা লাগছে । ‘ ঘরে রান্নার আয়োজন বেশ ভালই ছিল । আড়াই সের চাউলের পোলাও আর একটা মুরগী রান্না করা হয়েছিল নতুন বরের জন্য ।

পাশের বাড়ীর রহমত চাচার বউ রান্না করেছিলেন । কিন্তু সবই ভেস্তে গেল । বরের চাহিদা অনুযায়ী কুড়ি হাজার টাকা জোগাড় করতে না পারায় বিয়েটা ভেঙ্গে গেল । আজমল সাহেব অনেক অনুনয় বিনয় করলেন । আরো দু’টা দিন সময় চাইলেন ।

কিন্তু কোন লাভ হলনা । বিয়েটা ঠেকাতে পারলেননা । তিনি এখন ঘরে ফেরার সাহস পাচ্ছেননা । নিজের অক্ষমতা খুব করে বিধছে মনের মাঝে । কী বলে সান্ত্বণা দিবেন মেয়েকে ।

মা মরা মেয়ে । দুঃখে দুঃখেইতো কেটে গেল তার সারাটা জীবন । মন্তু জরীকে ডেকে বলল : ‘বড়পা চল । বাজানরে ডাইকা নিয়া আহি । ’ দুই ভাইবোন হাত ধরাধরি করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ।

পুকুরঘাটের দিকে যেতেই আজমল সাহেব বললেন :’কী রে মা । এত রাত্তিরে বাইরে বের হইলি কেন ? চল ঘরে যাই । ’ জরী বলল : ‘না বাজান । ঘরে যাইতে ইচ্ছা হইতাছেনা । কতদিন বৃষ্টিতে ভিজিনা ।

আইজকা খুব ভিজতে ইচ্ছা করতাছে । ’ আজমল সাহেব বললেন :’পাগলী , ঠান্ডা লাইগা যাইব যে । ল রে মা । চল ঘরে যাই । ’ কিন্তু তারও এখানে ভিজতে ইচ্ছে করছে ।

দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে আজমল সাহেব অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজলেন । কারো মুখে আর কোন সাড়াশব্দ নেই । হু হু করে তিনি কেঁদে উঠলেন । চোখের জল আর ধরে রাখতে পারলেননা । তবু তিনি হয়তো এই ভেবেই খুশি হলেন যে তার কান্নাভেজা চোখটাতো লুকাতে পেরেছেন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.