আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোহিঙ্গা ভাবনায় ছাগু সম্প্রদায়ের শুভবুদ্ধির উদয়: ছাগুরা যখন ভাদায় রূপান্তরিত হন

ছবির কৃতজ্ঞতা: কালের কণ্ঠ কয়েকদিন যাবৎ রোহিঙ্গাদের নিয়ে ব্লগ ফেসবুক সহ সামাজিক গণমাধ্যমগুলোতে ঝড় উঠছে, তাদের পাশে দাঁড়ানোর, সহযোগিতা করার। কিন্তু আমরা যা দেখছে তা কেবল ব্লগীয় দৃষ্টিভঙ্গি। সুক্ষ্ণভাবে চিন্তাটা করা হয় নি। আমি আগেই বলেছিলাম, মানবিকতার পটেনশিয়াল টেস্ট জরুরি। আমরা রাস্তায় চলতে গেলে সবসময় ভিক্ষুককে পয়সা দান করি না।

তাদের উপর আমাদের মানবিকগুণাবলী দেখাতে গেলে পকেটের পয়সা শেষ করে বাসায় ফিরতে হবে। কারণ শহরে তো আর ভিক্ষুকের অভাব নেই। পার্কে বসে যারা প্রেম ট্রেম করেছেন তারা নিশ্চয় জানেন, একজন ভিক্ষুককে কিছু সাহায্য করলে মূহুর্তেই এসে হাজির হবে আরো দশজন সাহায্যপ্রার্থী। আপনি কাকে দিবেন আর কাকে দিবেন না। আপনার পাশে আপনার প্রেমিকা থাকায় তাকে পুঁজি করেই সাহায্যপ্রার্থীরা মনে করে সাহায্যটা তিনি পাবেন।

কারণ আপনার প্রেমিকাকে মনে করবে নিয়ামক। যা ভিক্ষা পেতে সাহায্য করে। তেমনি একাত্তরকে নিয়ামক ভাবার কোনো কারণ নেই। ব্লগে দুই ধরণের ব্লগার সচল। এক ছাগুসম্প্রদায়।

আরেকদল ভাদা। ছাগুদের বিপক্ষে কিছু বললেই আপনি ভাদা। অর্থাৎ আপনি ভারতের পান খেয়েছেন। আপনি তাদের দালাল। কিন্তু মায়ানমারের ঘটনায় ছাগুসম্প্রদায় ভাদায় রূপান্তরিত হলো।

তারা মাদা(মায়ানমারের দালাল) হয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনেক দাবি-দাওয়া তুলে ধরলেন, সেই সাথে একাত্তরে ভারত যে আশ্রয় দিয়েছিলেন সেটাও উল্লেখ করতে ভুলেননি। সেই সব ছাগুসম্প্রদায়দের জন্য আরিফ জেবতিকের এই লেখাটা... " ..ভাবনার উদয় ঘটাবে ছাগুদের...ভালো লাগলো লেখাটা..তাই শেয়ার করলাম.. অপারেশন নাগামিন: বাংলাদেশে প্রথম উদ্বাস্তু ঢেউ-১৯৭৮ ১৯৭৪ সালে জান্তা সরকার চালু করে ইমার্জেন্সি ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট। এই অ্যাক্টে বলা হয়_ভারত, চীন ও বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণ করাই আইনের উদ্দেশ্য। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নাগরিক কার্ড বহন করা বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু এ সময় কোনো রোহিঙ্গাকে নাগরিক কার্ড দেওয়া হয় না, তাদের দেওয়া হয় 'অভিবাসী কার্ড'; যে কার্ড প্রমাণ করে যে তারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়।

প্রথমদিকে এ রকম কার্ডে কোনো সমস্যা বোঝা না গেলেও, আসল সমস্যা শুরু হয় কয়েক বছর পর। ১৯৭৭ সালে সামরিক সরকার শুরু করে 'অপারেশন নাগামিন' বা 'ড্রাগন রাজ'। এই অপারেশনে অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করার নামে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় রাখাইনরা। ১৯৭৮ সালের মে মাসের মধ্যে কমপক্ষে দুই লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশে উদ্বাস্তুদের দ্বিতীয় জোয়ার : ১৯৯১-৯২ আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, বাকি সব নাগরিক অধিকার সংকুচিত করে ফেললেও ১৯৯০ সালের নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়।

অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক অধিকার না থাকা মিয়ানমারে ভোট বিষয়ে সরকারের অভিজ্ঞতার অভাবই হয়তো রোহিঙ্গাদেরও ভোটার করার ভুল করে বসে সরকার। ব্রিটিশ শাসনকালে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার ছিল, তাই জান্তা সরকার বিষয়টিকে আলাদাভাবে দেখেনি। এই নির্বাচনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় অং সাং সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিজয়ী হয়। মিয়ানমারের এই নির্বাচনে এনএলডি ৪৮৫টি আসনের মধ্যে ৩৯২টি আসন পেলেও জান্তা সরকার সুচির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে। এতে করে মিয়ানমারজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে অসন্তোষ আর বিক্ষোভ।

২১টি এথনিক গ্রুপ মিলে তৈরি হয় 'ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স অব বর্মা' যা ড্যাব নামে পরিচিতি পায়। ড্যাব ঘোষণা করে, সামরিক সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্র ছিনিয়ে আনতে তারা সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করবে। রোহিঙ্গাদের দুটি সংগঠন অল বর্মা মুসলিম ইউনিয়ন এবং আরাকান রোহিঙ্গা ইসলামিক ফ্রন্টও যৌথ বিবৃতিতে জানায়, তারাও সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে শামিল হবে। সামরিক একনায়করা যা করে, এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জনরোষকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় পর্যবসিত করতে আক্রমণ শুরু হয় রোহিঙ্গাদের ওপর।

উস্কে দেওয়া হয় স্থানীয় রাখাইনদের। একই সঙ্গে চলে সামরিক অভিযান। নির্যাতন মাত্রা ছাড়া করে রোহিঙ্গাদের আরেকবার ঠেলে দেওয়া হয় বাংলাদেশের দিকে। বড় আকারের রোহিঙ্গা শরণার্থী আগমনের দ্বিতীয় পর্যায় ঘটে এ সময়। ১৯৯১ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ সরকার জানায়, পূর্ববর্তী ছয় মাসে অন্তত দুই লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

এ সময় থাইল্যান্ড এবং বিশেষ করে মালয়েশিয়াতেও ব্যাপকসংখ্যক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করে। আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাজি হয়। ১৯৯২ সালের ২৮ এপ্রিল মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সব বহিরাগত উদ্বাস্তুকে ফেরত নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও মিয়ানমারের অসহযোগিতায় সেটি শেষপর্যন্ত সম্ভব হয়নি।

ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশও আবার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। সতর্ক থাক বাংলাদেশ! দায় আন্তর্জাতিক মানবগোষ্ঠীর রোহিঙ্গা যে আমাদের জন্য মিয়ানমারের চাপিয়ে দেওয়া একটি বড় বিপদ, সে বিষয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখনো সচেতন নয়। অধিকাংশ লোকই একে দেখছে একটি মানবিক বিপর্যয় ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যা কোনো সাময়িক বিপর্যয় নয়, দীর্ঘ কয়েক যুগের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চলে আসা এথনিক ক্লিনজিং। মিয়ানমার সরকার চায় এই প্রায় ২০ লাখ রোহিঙ্গার দায় সব সময়ের জন্য বাংলাদেশের কাঁধে চাপিয়ে দিতে।

মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তারা প্রায়ই প্রকাশ্যে এই রোহিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি হিসেবে আখ্যায়িত করে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এ সময় বাংলাদেশকে সতর্ক হতে হবে। শুধু ভাষা, ধর্ম কিংবা নৃতাত্তি্বক গঠনে সাদৃশ্য থাকার কারণেই মিয়ানমারের ২০ লাখ লোকের দায় বাংলাদেশ নিতে পারে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার সীমান্ত প্রহরা শিথিল না করার একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের উচিত হবে না বিশ্বের কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করে এই অবস্থান থেকে সরে আসা।

রোহিঙ্গা সমস্যার সঙ্গে বাংলাদেশ কোনোভাবেই যুক্ত হতে পারে না। ইতিমধ্যে যে বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা এ দেশে অনুপ্রবেশ করেছে তাদেরও ফেরত দানের ব্যাপারে বাংলাদেশকে বড় আকারে উদ্যোগ নিতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যদি এদের ফেরত দেওয়া না যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন। মিয়ানমার এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো বদ্ধ দেশ নয়। গণতন্ত্রের পথে দেশটি এক পা-দুই পা করে অগ্রসর হচ্ছে।

নিজেদের সভ্যদেশ হিসেবে প্রমাণ করতে হলে মিয়ানমারের উচিত দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা। একটি দেশের মধ্যে শতাব্দীর পর শতাব্দী বাস করে আসা বড় একটি জনগোষ্ঠী নাগরিকত্ববিহীন থাকতে পারে না। পৃথিবীর সব মানুষেরই একটি দেশ পাওয়া জন্মগত অধিকার, মিয়ানমারের সেনাশাসকরা গায়ের জোরে সেই অধিকার অস্বীকার করবেন, সেটি চলতে পারে না। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব যদি দেওয়া না যায়, তা হলে আগামী দিনের ইতিহাসে একালের বিশ্ব নেতৃত্বকে প্রশ্নের মুখেই পড়তে হবে। " রোহিঙ্গারা এখন একটা সমস্যা।

এই সমস্যা সমাধানে বিশ্বসম্প্রদায়কে চাপ প্রয়োগ করুন, বাংলাদেশের সরকারকে নয়।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।