আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হযবরল !

শুভ নববর্ষ ! বেশ কিছুদিন যাবৎ আমার সব কিছুই উল্টাপাল্টা হচ্ছে মানে ঘাপলা হয়ে যাচ্ছে সব কাজেই । যেহেতু হাতে লেখার মত কিছু নেই তাই আমি আমার ২০১৩ ইংরেজি নববর্ষের পর হতে ঘটে যাওয়া কিছু এলোমেলো ঘটনা নিয়ে আজকের পোস্ট লিখছি । ঘটনা ১ কনভোকেশন হবে ভার্সিটির , সবাই যেভাবে টাকা জমা দিবে আমিও সেভাবেই দিব ভাবলাম , মাঝে দেখি কয়েকজন বড়ভাই ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা পাঠাবেন , আমিও তাদের পদাঙ্ক অনুসরন করলাম । কদিন পর আমার এক বান্ধবি বলল তার সার্টিফিকেট আমাকে তুলতে হবে ,কি আর করা এবার ওর টাকা ব্যাঙ্কে যেয়েই জমা দিলাম অন্য একজনের মাধ্যমে । ভার্সিটির লিস্টে দেখি ওই ভাইদের সাথে সাথে আমারও নাম নাই মানে আমাদের টাকা জমা হয় নাই ।

অথচ ব্যাংকে এ যেয়ে টাকা জমা দিয়ে আসতে ১৫ মিনিটের বেশী লাগতো না ,অতি বুদ্ধির ফল হাতেনাতে পেলাম । এরপর কত ঘাটে যে ঘুরলাম সমস্যা সমাধানের জন্য তা বলার না , পরে এক স্যারের সহযোগিতায় টাকা জমা হল । এরপর দেখি যে ডকুমেন্টস পাঠানোর কথা ছিল সেই গুলো পাঠিয়েছিলাম সুন্দরবন কুরিয়ারে , কিন্তু কিছু বেকুবের সাথে আমি বেকুবেরও পেপারস যায়নি । এইখানেও তের নদীর ঘোল খাওয়ার অবস্থা । এক বন্ধু এস এম এস করল “ তোমার একটা কাজও কি ঝামেলা ছাড়া হয়না ?” এদিকে যখন জানলাম পেপারস পৌঁছায় নি ততক্ষনে আমি বাসা থেকে বের হয়ে গেছি , আর আমাদের নোটিসে বলা হয়েছে যে যেই পেপারস কুরিয়ার করেছিলাম তা যেন সাথে করে নিয়ে যাই , আমি সমস্যায় পরতে যেয়েও উদ্ধার পেলাম , সব পেপারস মেইলএ এটাচ করা ছিল ,এ যাত্রায় ঝামেলার হাত থেকে বেঁচে গেলাম অবশেষে কনভোকেশন এ যাবার আগের রাত্রি ,দেশে তখন চরম খারাপ পরিস্থিতি , আমাদের স্বনামধন্য কৃষিমন্ত্রী যাবেন আমাদের পদক দিতে ,আর আমাদের স্যারেরা এতটাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞবদ্ধ যে সেই রাতে এত গোলযোগের মধ্যেও তারা অনুষ্ঠান পেছাতে রাজিনা ।

আমরা তো প্রায় সবাই বাস ট্রেন এর টিকেট কেটেছি , অনেকে চলেও গেছে ,পরবর্তীতে রাত ৯টা থেকে সব ঢাকার বাইরের রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ , আমাদের যাওয়া বাতিল , বাকিরা যারা ট্রেনের সিট কেটেছে তারা তো খুব খুশি ,কিন্তু তাদের ট্রেন চালু হবার কিছু আগ মুহূর্তে আমাদের স্যারেরা জানালেন কনভোকেশন আপাতত স্থগিত । ফলাফলে আমি এ যাত্রাতেও ব্যর্থ হলাম । ঘটনা ২ আমি বুয়েটে মাস্টার্স এর জন্য আপ্লাই করব ,যেদিন কাগজপত্র জমা দিব সেদিন যেতে যেতে দেখি বিকেল ৫টা বেজে গেছে ,অগত্যা এক বান্ধবিকে দিলাম জমা দেয়ার জন্য । এরমাঝে এক সপ্তাহ কেটে গেছে পড়াশুনা তো মোটেই করছি না , হঠাৎ করেই দেখি পরীক্ষার ডেট দিয়ে দিয়েছে । আমার আবার টেনশন বেশী হলে পড়া তো হয়না ঘুমও বেড়ে যায় ।

যাই হোক পরীক্ষার আগের রাতে মনে পরল আমার প্রবেশপত্র বান্ধবীর কাছে তখন তো আর যাওয়া সম্ভব না ,তো বান্ধবিকে বললাম তুই থাকবি রুমে দুপুর ১ টায় আমি এসে নিব । সে বলল তার নাকি পরীক্ষা আছে বনানীতে সেও রুমে থাকবে না। এদিকে আমি অর্ধদিবস ছুটি নিব ,অফিস গুলশানে । বললাম ঠিক আছে তুই বনানী থেকে ১২ টার মধ্যে পরীক্ষা শেষ হলে কল দিয়ে জানাস আমি বনানী আসব ,অথবা তুই গুলশানে আসবি । পরদিন দেখলাম সে ১০ তার মধ্যেই জানাল তার কাজ শেষ সে রুমে চলে যাচ্ছে ।

এরপর অফিস শেষ করেই দৌড় দিলাম , ফার্মগেট হয়ে নীলক্ষেত এরপর বান্ধবীর বাসা থেকে প্রবেশপত্র নিয়ে গেলাম পরীক্ষার হলে । আমি এক স্যারকে জিজ্ঞাসা করলাম আমার সিট কোনদিকে ,স্যার বললেন যে কোন সিটে বসতে পারো । এরপর আমি আমার সিট ঠিক করে বসে পড়লাম ,কিছুক্ষনের মধ্যে আবিষ্কার করলাম আমি আমার প্রবেশপত্র হারিয়ে ফেলেছি । এদিকে সেদিকে খুজলাম ,পেলাম না ,এক স্যারকে বললাম উনি বললেন সমস্যা নেই ,রোল নাম্বার জানা থাকলেই হবে । পরীক্ষা দিলাম ভাবতে ভাবতে কি করলাম প্রবেশপত্র ! দুইদিন পর আজ ব্যাগ ঘাটতে যেয়ে দেখি প্রবেশপত্র জায়গা মতই আছে বলেন আমার মত আহাম্মক আর আছে ? ঘটনা ৩ ঘটা করে এই মাসেই দুনিয়ার সব মানুষ বিয়ে করছে ! একই মাসে চার চারটি বিয়ের দাওয়াত ।

হাতের অবস্থা ভালো না ,চিন্তায় আছি কিভাবে মাস চালাবো তার মধ্যে আরও একটা আকাম করে ফেললাম । বাসায় হঠাৎ করেই একদিন দুপুরে বনানী থেকে এক রেস্টুরেন্ট এর দুইজন বিক্রয়প্রতিনিধি এসেছে । যদিও কোনদিন এই ধরনের কেনাকাটায় অভ্যস্ত না তবুও লোকটাকে না বসিয়ে বের করে দেই কিভাবে ! তাই তাদের কথা শুনব ভেবেই বসালাম । তারা হাবিজাবি বুঝালো আমিও বুঝলাম ১ বছরের মেম্বার হলাম ৩১ তা কুপন পেলাম যার প্রতিটি ফ্রি হবে একটি মিল এর জন্য মানে দুইটা মিল অর্ডার করলে একটার দাম আর সাথে অন্যটির জন্য কুপন দিলেই হবে । আর দুইটি কম্পেন্সেটরি মিল রয়েছে ।

ব্যাস আমিও নিয়ে নিলাম ,অথচ বনানীতে আমি কোনদিন খাই না কিন্তু কেন নিলাম ? আমার আম্মুও তখন চেষ্টা করেছিল আমাকে না করতে কিন্তু কেন যেন উনিও পারলেন না আমাকে এই ভুগিজুগির হাত থেকে বাঁচাতে । এরপর লোকগুলো চলে যাবার পর থেকেই মনে হচ্ছে ভুল করলাম না তো ? যদি ভোগাস হয় ? ভণ্ডামি হয় ! পরদিনই গেলাম খোঁজ করতে আদৌ ওই রেস্টুরেন্ট আছে কিনা ! রিক্সাওালাকে বললাম বনানী ১৩ তে সে রিক্সা ঢুকালো ১২ দিয়ে এরপর তো কোথাও খুঁজে পাইনা , মনে মনে নিজেকে গালি দিচ্ছিলাম যে কি গাধাই না হচ্ছি দিন দিন আমি । হঠাৎ দেখি ১৩ র শেষ মাথায় অথবা শুরুতে বনানী মাঠের পাশে সেই ক্যাফে “ দ্যা জাংসন ক্যাফে ”। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম কেননা যদি না পেতাম তাহলে বাসায় আম্মুর ঝাড়ি থেকে কেউ বাঁচাতে পারতো না । সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে ভেতরে ঢুকে স্টাফদের কুপনটা দেখিয়ে বললাম আদৌ কি এইরকম কোন সার্ভিস তারা দিচ্ছে কিনা তারা তো হাসি মুখে বলল অফ কোর্স ম্যাম তখন মনে হল দুনিয়াতে আমার মত গাধা থাকলে কিছু ভালো মানুষও আছে যারা চাইলেই আমার মত গাধাদের আহাম্মক বানিয়ে ফেলতে পারে নিমিষেই ।

ঘটনা ৪ গতকালের একটা ঘটনায় আমি খুব লজ্জিত ! এটিএম বুথে ঢুকে দেখি দুইবাচ্চা আর তাদের বাবা টাকা তুলা নিয়ে রীতিমত ঝগড়া করছে যাই হোক আমি পাশের মেশিনে কার্ড ঢুকালাম ,দেখি কার্ড নিচ্ছে না টাকা শেষ হয়ে গেছে বা কোন সমস্যা , আমি আমার কার্ড যেই না ব্যাগে রাখতে যাবো ওমনি বড় বাচ্চাটা (৫/৭) বছরের হবে আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে , আমি তো ব্যাপারটা বুঝতেই পারছিলাম না ঘটনা কি ! ওদের বাবা না দেখেই বাচ্চা সাথে না নিয়েই বের হয়ে গেছিলেন , এদিকে ও তো আমার সাথে জোরাজুরি করছে কার্ড নিয়েই যাবে আমিও পরিস্থিতি বুঝতে না পেরে কার্ড ছাড়ছিলাম না :/ আর চিল্লাছিলাম এই ছেলে তোমার সমস্যা কী ? ওর বাবা ততক্ষণে এসে অনেক কষ্টে ওকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি আবার বললাম ও এইরকম করলো কেন ? ওর সমস্যা কী ?ওর বাবা খুব মন খারাপ করে বললেন ওর সমস্যা আছে !তখনি বুঝলাম ও অটিস্টিক শিশু , হায় আল্লাহ্‌ আমি কি করলাম , না জেনে বাচ্চাটার সাথে টানাহেঁচড়া করলাম । সব শিশুরা সুন্দর হয় কিন্তু এই শিশুটি অন্যরকম সুন্দর যার জন্য ও যে অটিস্টিক সেটা বুঝতে পারিনি । পেছন থেকে কয়েকবার দুঃখিত বললাম ওর বাবাকে , জানি না ওর বাবার মনের কষ্ট কমবে কিনা । ঘটনা ৫ তিনদিন ধরে ফালতু এই লেখা লিখছি , অবশেষে যখন পোস্ট করতে গেলাম তিনবার পোস্ট করার পরও তা পোস্ট হচ্ছিল না দেখে মনে হচ্ছে বাংলা দিনগুলোও ভিন্ন রকম হবার সম্ভাবনা নেই নববর্ষের উপহার ব্লগার ভাই বোনদের জন্যঃ আপনাদের যদি কারো ফ্রি খাবারের ইচ্ছা থাকে আমার থেকে কুপন নিয়ে যেতে পারেন “ দ্যা জাংসন ক্যাফে” এর সৌজন্যে । ভালো থাকবেন সবাই ,আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে বাংলা নববর্ষ আমার সব ওলটপালট ঘটনাগুলোকে স্বাভাবিক করে দেয় ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।