আমি একজন সংবাদকর্মী। যা সত্য মনে করি তুলে ধরি। মাহমুদুর রহমানের জন্য আদালতে লড়ব: ব্যারিস্টার রফিক-উল হক
বাংলাদেশের দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের পর ১৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। তো মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার, তাকে রিমান্ডে নেয়া এবং পরবর্তীতে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি কী হতে পারে এসব বিষয়ে আমরা কথা বলেছি দেশের বর্ষীয়ান আইনজীবী, সাবেক এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক- উল হকের সঙ্গে।
পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাতকারটি উপস্থাপন করা হল-
প্রশ্ন: জনাব রফিক-উল হক! দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তো, আইনের যে গ্রাউন্ডে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা কতোটা ন্যায়সঙ্গত?
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক: দেখুন, মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারটা আমার কাছে খুবই আশ্চর্যজনক মনে হচ্ছে। এটা অনেকটা পলিটিক্যাল। দেখানো হচ্ছে তিনি সত্যিকারের ‘ক্রিমিনাল’। মাহমুদুর রহমান কী ক্রিমিনাল অ্যাক্ট করেছেন সেটা তো আমার বুদ্ধিতে কুলায় না। তিনি কী বলেছেন! স্কাইপে যেটা দেখেছেন তিনি সেটা তার কাগজে ছাপিয়েছেন।
এতে তিনি অন্যায় কী করেছেন? কোন আইনে তার অপরাধ, সেটাতো আদালত বলছে না। আমি টেলিভিশন খুলে বসে আছি। আমি দেখতে পাচ্ছি মাহমুদুর রহমানকে কোর্টে নিয়ে গিয়েছে। ওখানে আমি ল ইয়ারকে ফোন করলাম সেও বলতে পারল না কোন্ আইনে তাকে গ্রেফতার করা হল। আমার মনে হচ্ছে, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের আক্রোশ তো বহুদিন থেকে আছে।
সেই পরিপ্রেক্ষিতে হয়ত তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রশ্ন: মূলত রাজনৈতিক কারণেই মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে। সে অভিযোগ কতটা সত্য, আপনার কাছে কি মনে হয়?
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক: অনেকটা তাই, অনেকেও একই কথা বলছে। কারণ বিএনপির বড় বড় নেতাদের সবাইকে তো জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে।
প্রশ্ন: যে অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ১৩ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত- তা কতোটা যৌক্তিক?
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক: দেখুন, এটা অত্যন্ত অন্যায়।
তার মতো ব্যক্তিকে রিমান্ডে দেবে কেন? রিমান্ডে নেয়া হয় কারও কাছ থেকে তথ্য আদায়ের জন্য, কনফেশনের জন্য। তো সেটা তো জেলে বসেও করতে পারে। রিমান্ডে নেয়া মানে টর্চার করা। টর্চার করে কারো কাছ থেকে কনফেশন নেয়া। রিমান্ড খুবই অন্যায় একটা বিষয়।
জাস্টিস হামিদুল হক বহু বছর আগে হাইকোর্টে একটা জাজমেন্ট দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে রিমান্ডে নেয়া উচিত না। তাছাড়া রিমান্ডে নেয়ার ব্যাপারেও বলা হয়েছে- রিমান্ডে নিয়ে কাউকে যখন ইন্টারোগেট করা হবে তখন বাইরে থেকে যেন তা দেখা যায় এবং তার আইনজীবী সেখানে বসা থাকবে। তো জাস্টিট হামিদুল হকের সেই জাজমেন্টে বলার পরও কেউ তো কারো কথা শোনে না। কিন্তু বাংলাদেশে কে শোনে কার কথা?
প্রশ্ন: জনাব রফিক-উল হক, আপনি ২৩ ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে 'অবরুদ্ধ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের তিনটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে' সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন- “তিনি বের হয়ে আসুক, তাকে জেলে নিলে আমি তার পক্ষে লড়াই করব।
তাকে কারাগারে থাকতে দেব না। প্রয়োজনে মাহমুদুর রহমানের জন্য জেলখানায় যাব। ”
মাহমুদুর রহমান তো গ্রেফতার হয়ে গেলেন, এখন আপনার সেই দিনের বক্তব্য এবং আজকের বাস্তবতাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক: ঠিক আছে, I speak to that. আর সেজন্যে আমি মাহমুদুর রহমানের লোকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। এর আগে আমি এ ব্যাপারে নোমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতাম কিন্তু এখন তিনি লন্ডনে আছেন। অন্য কারো সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি কিন্তু এখনও কাউকে পাইনি।
তাছাড়া আজ হরতাল ছিল যে কারণে আরো অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। তার অফিসে গিয়ে যে খোঁজ নেব সেটাও পারিনি। আমি এখনও স্পষ্ট করে বলছি- মাহমুদুর রহমানের জন্য আমি আদালতে যাব, আমি লড়ব।
প্রশ্ন: ব্যারিস্টার রফিকুল হক, মাহমুদুর রহমান গ্রেফতার হলেন, এখন তো আইনি লড়াইয়ের প্রশ্ন। তো মাহমুদুর রহমান আইনী লড়াইয়ের অধিকার কতোটা পাবেন এবং এ অবস্থায় তার বিষয়ে আপনার ভূমিকা কি হবে?
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক: দেখুন আমি আইনজ্ঞ।
আমি কোর্ট সম্পর্কে কোন খারাপ ধারণা করি না। আমি সবসময় ভাবি যে, কোর্ট নিশ্চয়ই সুবিচার করবে। কোর্ট সম্পর্কে যে যাই বলুক না কেন, আমি একজন আইনজীবী হয়ে কোর্ট সম্পর্কে কোন কমেন্ট করতে চাই না। প্রথমে লোয়ার কোর্টে পরে হাইকোর্টে এ ব্যাপারে আইনি লড়াই হবে। তবে এখন শুনছি মাহমুদুর রহমানকে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হবে।
সেখানে যদি কেস হয় তাহলে বেল পাওয়া ইম্পসিবল। বিষয়টি আমি এখনই টিভিতে শুনলাম। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কিভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে তার কেস নিয়ে যাবে!
প্রশ্ন: আচ্ছা! দেশে তো এক ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের পর সামগ্রিকভাবে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা কি হতে পারে?
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক: দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আবার মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের পর দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক অবস্থা কি হবে তা এই মুহূর্তে বলাটা too early. আগামীকাল বা পরশু এ ব্যাপারে মন্তব্য করা সম্ভব। এখনতো সবে ধরে নিয়ে গেছে, রিমান্ডে নিয়েছে।
তাছাড়া আগেই তো বলেছি আজ হরতাল চলছে ফলে বাইরেও বেরুতে পারছি না। ফলে আগামীকাল এ ব্যাপারে কথা বলতে পারব।
প্রশ্ন: দেশের আজকের যে পরিস্থিতি আপনার দৃষ্টিতে এর দায় কার কতোটা?
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক: আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপ দরকার, তাদের বসা দরকার। কনফ্রন্টটেশন না কনসলিউশ্যান দরকার। দুই নেত্রী একসাথে বসে দেশের সমস্ত সংকট নিয়ে কথা বলা দরকার।
দরকার হলে দেশের সাধারণ নাগরিকদের সাথে কথা বলা যেতে পারে, আলাপ আলোচনা হতে পারে। যেভাবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব নেতাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে সেটা আসলে কী? আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হল। এগুলো গণতন্ত্রের পথ নয়। গণতন্ত্র ভিন্ন কথা বলে। গণতন্ত্রে যেতে হলে তাদের attitude চেঞ্জ করতে হবে।
সরকারের বর্তমানের attitude নিয়ে গণতন্ত্র হতে পারে না।
বিস্তারিত
সূত্র: রেডিও তেহরান ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।