চোখে যা দেখি, কানে যা শুনি, তা নিয়ে কথা বলবোই ! মফস্বল থেকে যারা লেখা-লেখি করে তাঁদের বেশিরভাগই ছড়া-কবিতা দিয়ে স্থানীয় কোনো পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেন। খুব কমই আছেন যাঁরা প্রবন্ধের মতো গবেষণাধর্মী কাজের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেন, তাও আবার মফস্বল শহরের লেখক জাতীয় পত্রিকার পাতায়। হ্যাঁ, আছেন। তবে এদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে নয়। সত্তুরের দশকে মফস্বল শহর থেকে কোনো দৈনিক পত্রিকাতো ছিলোই না, সাপ্তাহিক পত্রিকাও ছিলো হাতে গোনা ২/৩ টা।
মাসিক আল ইসলাহ সাহিত্য পত্রিকাটি বীরদর্পে মাথা উঁচু করে হাঁটতে থাকলেও মাঝে মধ্যে হোচট খেতো। এমনি অবস্থাতেও আমরা যারা তখন থেকে লেখা-লেখি শুরু করি তাঁদের সিংহ ভাগই হয় সাপ্তাহিক যুগভেরী না হয় মাসিক আল ইসলাহ তে লেখা ছাপিয়ে হাতেখড়ি নিয়েছি। যে দু’চার জন লেখক প্রথম থেকেই জাতীয় পত্রিকার মাধ্যমে উঁচু মাপের লেখা দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম আমার আজকের লেখার বিষয়-ব্যক্তিত্ব নূরুজ্জামান শাহরিয়ার। নূরুজ্জামান শাহরিয়ার লেখা-লেখি শুরু করেন ১৯৭৬ সন থেকে। প্রথম লেখা ছাপা হয়েছিলো তখনকার বহুল প্রচারিত দৈনিক আজাদ পত্রিকায়।
প্রবন্ধ দিয়ে লেখা-লেখির শুরু বলেই হয় তো তিনি শেষ পর্যন্ত প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও কলাম পর্যন্তই ছিলো তার পরিধি। তিনি স্থানীয় ও জাতীয় প্রায় সকল পত্র-পত্রিকাতেই গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ, সামাজিক বিভিন্ন অবক্ষয় রোধে বিকল্প পথের সন্ধানে গবেষণা লব্ধ নিবন্ধ, বিভিন্ন দিবসকে উপলক্ষ্য করে প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ধর্মীয় আচার-আচরণকে সামনে রেখে মূল্যবোধের তাগিদে তাঁর অসংখ্য লেখা এবং দেশ-জাতি-ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর লেখা বুদ্ধা পাঠক মহলে সমাদৃত হয়েছে। তাঁর লেখা কলামগুলো ছিলো ইসলামী রেঁনেসার চিন্তা লব্ধ বাম্পার ফলন। সুলেখক প্রাবন্ধিক ও গবেষক নূরুজ্জামান শাহরিয়ার ১৯৬০ সনে সিলেটের অতিপরিচিত এক সাহিত্যিক পরিসরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সুসাহিত্যিক ও সম্পাদক মোঃ আব্দুস সাত্তার ছিলেন মাসিক তাকরির এর সম্পাদক।
দীর্ঘ দিন তিনি একাগ্রচিত্তে তাকরির সম্পাদনা করেন। নিভৃতচারী ছিলেন বলেই অনেকেই তাঁর সাথে পরিচিত নয়। নূরুজ্জামান শাহরিয়ারের মামা ছিলেন মাসিক কাফেলা সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল হামিদ। তিনি ছিলেন তৎকালে রেডিও বাংলাদেশ সিলেট কেন্দ্রের একজন নিয়মিত কথক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট লেখক। নূরুজ্জামান শাহরিয়ারের নানা ছিলেন সুসাহিত্যিক এবং সিলেটের প্রাচীনতম সাহিত্যপত্র মাসিক আল ইসলাহ এর আজীবন সম্পাদক এবং সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের (কেমুসাস) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং আজীবন সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ নূরুল হক।
নূরুজ্জামান শাহরিয়ার ১৯৭৭ সনে কেমুসাস সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধকার হিসেবে। ২০০৪ সনে কেমুসাস আয়োজিত হজরত শাহজালাল (রঃ)-এর উপর প্রবন্ধ রচনায় ১ম স্থান অধিকার করেন। ধীরস্থির গম্ভীর প্রকৃতির নূরুজ্জামান শাহরিয়ার কথা বলতেন খুব কম, কাজ করতেন বেশি। তাঁর চলনে-বলনে মেধা পরিচয় পাওয়া যেতো। নূরুজ্জামান শাহরিয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাউন্টিং-এ অনার্স সহ এম.এ পাস করে ব্যাংকার পেশায় যোগদান করেন সরকার নিয়ন্ত্রিত সোনালী ব্যাংকে।
তিনি ব্যাংকিং ডিপ্লোমা ১ম ও ২য় পর্ব কৃতিত্বের সাথে সমাপ্ত করেন। ১৯৯২ সনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজম্যান্ট (বিআইবিএম) কর্তৃক Post training utilization in banks শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পে মনোনয়ন লাভ করে কৃতিত্বের সাথে তা সম্পাদন করেন। একজন ব্যাংকার হিসেবে তিনি ছিলেন সকলের বিশ্বস্ত। আর এই সুযোগে সহজ-সরল এই মানুষটির বিরুদ্ধে কলঙ্কলেপনের উদ্দেশ্যে একটি কুচক্রি মহল অর্থ-লেন দেনের ফাঁদে ফেলে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করায়। ব্যাংকার সমাজে এটি ছিলো অবিশ্বাস্য একটি কালো অধ্যায়।
অবশ্য পরে তা নিরসনও হয় এবং চাকুরি ফিরে পান। জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত তিনি তাঁর পেশায় দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। চাকুরি জীবনে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শিষ্টাচারের জন্য তাঁকে খুবই ভালোবাসতেন। তাঁরা মনে করতেন নূরুজ্জামান শাহরিয়ার একজন শাদা মনের মানুষ। সুসাহিত্যিক প্রাবন্ধিক গবেষক নূরুজ্জামান শাহরিয়ার ১৯৯৯ সনে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক Research board of advisor মনোনীত হন।
তাঁর মেধা, আন্তরিকতা ও দক্ষতা তাঁকে নিয়ে গেছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। তিনি বিগত ৫ জুন মঙ্গলবার ভোর ৬ টায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন (ইন্না ... রাজিউন)। বৈবাহিক জীবনে তিনি ছিলেন্ ২ পুত্র সন্তানের সফল জনক।
সৌজন্য: সিলেটের ডাক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।