জালিমের ফাঁসি হোক, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হোক, রাজাকারদের ফাঁসি হোক সামান্য কারণেই শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে এই বিশাল শিল্প ধ্বংসের চক্রান্তে জড়িত দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে অতীতে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একশ্রেণীর নামধারী রাজনৈতিক নেতা, এনজিও এবং শ্রমিক সংগঠনের মদদে এই ধ্বংস চলছেই। নেপথ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে।
আশুলিয়ায় টানা ৬ দিন ধরে শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যেই গার্মেন্টস কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আমাদের শিল্প বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।
সরকারের উচিত এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। তা না হলে এই শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।
সূত্র মতে, পরিস্থিতি এমন হলে দেশের লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ার পাশাপাশি রফতানি খাতে বড় ধরনের ধস নামবে। দেশের ৩ হাজার ৮শ’ পোশাক কারখানার মধ্যে ৩৫০টিই আশুলিয়ায়। এতে সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ শ্রমিক কাজ করছে।
গত ৬ দিনের মতো গতকালও আশুলিয়ায় বিক্ষোভ করে পোশাক শ্রমিকরা। মূলত: পোশাক শিল্পের ঈর্ষণীয় সাফল্য ব্যর্থ করে দিতে বাংলাদেশের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের অবকাঠামো সম্পর্কে বায়ারদের ভুল বার্তা দেয়া হচ্ছে।
বায়ার ও বিদেশী ভোক্তাদের কাছে নেতিবাচক ধারণা দিতে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, ঘনঘন শ্রম অসন্তোষ, শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যাকা-সহ বিভিন্ন বিষয় ফোকাস করতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কাজ করছে। ভারতের দখলে চলে যাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ, আমেরিকান ও কানাডিয়ান নাগরিকরা অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে এসব পোশাক কারখানা দখলে নিচ্ছে। গত এক বছরে অর্ধশতাধিক বৃহৎ তৈরি পোশাক কারখানার মালিকানা বদল হয়েছে। এসব কারখানা থেকে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ বাংলাদেশি শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে।
পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতার মাধ্যমে বন্ধ থাকা আরো শতাধিক কারখানা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ীরা কিনে নিচ্ছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশের গার্মেন্ট সেক্টর দখলে নিতে রীতিমতো আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
নিজস্ব এজেন্টদের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে দিয়ে তারা একে একে দখল করে নিচ্ছে বড় বড় গ্রুপের পোশাক কারখানাগুলো।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, কয়েক বছর ধরে সাভার, আশুলিয়া, জয়দেবপুর ও কাঁচপুর এলাকায় গার্মেন্ট কারখানাগুলোয় শ্রমিক অসন্তোষ ও নাশকতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ করে এবং কাজের পরিবেশও বেশ ভালো, এমন সব কারখানা ভাংচুরের শিকার হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, এনজিও কর্মী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ চক্র এবং ত্রেক্ষবিশেষে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও এসব ভাংচুরে ইন্ধন দিয়ে থাকে। এসব ভাংচুরের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কারখানার জেনারেল ম্যানেজার, প্রোডাকশন ম্যানেজার, অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার, মার্চেন্ডাইজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতারও প্রমাণ মিলেছে।
মধ্য সারির ম্যানেজমেন্টের এসব পদে কর্মরতদের ৮০ শতাংশই বিদেশি। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ভারতীয় নাগরিক। এভাবে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করে ইতিমধ্যে এসকিউ, ক্রিস্টাল, মাস্টার্ড, হলিউড, শান্তা, রোজ, ফরচুনা, ট্রাস্ট, এজাক্স, শাহরিয়ার, স্টারলি ও ইউনিয়নের মতো দেশসেরা সব গার্মেন্টস ক্রয় করে নিয়েছে। বিক্রির কথাবার্তা চলছে আরো শতাধিক কারখানার। বিক্রি উপক্রম এসব কারখানার ক্রেতারাও বিদেশি বলে জানা গেছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার তৈরি পোশাক কারখানায় ২২ হাজারের মতো বিদেশি কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছে। এদের মধ্যে দেড় হাজারের বেশি ভারতীয় নাগরিক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উদ্যোক্তারা পরিচালিত হন তাদের তৈরি করা ছক অনুযায়ী। এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ যে ভারতের তুলনায় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে, তার সবই ভারতীয়দের নখদর্পণে। তারাই মূলত ছক আঁকে বাংলাদেশের সেরা কারখানাগুলোকে কীভাবে ভারতীয়দের দখলে নেয়া হবে।
তারাই বিদেশে অবস্থানরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যবসায়িক সম্ভাবনাগুলো জানিয়ে কারখানা কিনে নিতে উৎসাহিত করে। মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার আগে বিভিন্ন অজুহাতে কারখানাগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। নতুন মালিক এসে এগুলোর আধুনিকায়ন করে উন্নত মেশিনারি দিয়ে। এর পর বাংলাদেশী ৮০ থেকে ৯০ ভাগ শ্রমিক ছাঁটাই করে ভারতীয় শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়া হয় এসব কারখানায়।
বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে তাদের তালিকাভুক্ত বায়িং হাউজের সংখ্যা ৮শ’ ৯১টি।
এর বাইরে আরো কয়েকশ বায়িং হাউস আছে। বায়িং হাউজগুলোর ৮০ থেকে ৯০ ভাগই নিয়ন্ত্রণ করে ভারতীয় নাগরিকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর অভিজাত এলাকাগুলোতে বাড়ী ভাড়া নিয়ে বায়িং হাউসের রমরমা ব্যবসা করছে তারা। বিভিন্ন সময় পর্যটক হিসেবে এরা বাংলাদেশে এলেও আর ফিরে যায়না। বিদেশী বায়ারদের হাতে নিয়ে তারা এক রকম জিম্মি করে ফেলেছে বাংলাদেশের পোশাক খাতকে।
সূত্র আরো জানায়, দেশের প্রায় ৫ হাজার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মধ্যে বিশ্বমন্দা, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটে দেড় হাজার কারখানা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারখানা ভারতীয়রা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্রয় করে নিয়েছে। এভাবে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের বাজার চলে যাচ্ছে ভারতের হাতে।
বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্যের কলোনীতে পরিণত হচ্ছে। সঙ্গতকারণেই কিছুদিন পর পর গার্মেন্টস খাতে শ্রমিক অসন্তোষ ও শ্রমিকদের বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার যে ঘটনা ঘটছে, এর স্থায়ী সমাধান দরকার।
এ জন্য সরকার-শ্রমিক-মালিক- এই তিন পক্ষকেই ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের অর্থনীতির এই প্রধান খাতটি যাতে কোনভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষ ও বিক্ষোভের নেপথ্যে যে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা দরকার। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থেই গার্মেন্টস শিল্পকে রক্ষা করতে হবে।
প্রসঙ্গত আমরা মনে করি পোশাক শিল্পের এ দুরবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত দূর হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত মালিক-শ্রমিক উভয়ের মধ্যে হক্কুল ইবাদ সম্পর্কিত ইসলামী মূল্যবোধ ও চেতনা গড়ে না উঠবে।
“শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বে তার মজুরী দিয়ে দাও”- হাদীছ শরীফ-এর এ মর্মকথার পূর্ণ প্রতিফলন ব্যতীরেকে শ্রমিক অসন্তোষ কোনদিনই থামবেনা। অপরদিকে যে শ্রমিক মালিকের প্রতি ক্ষেত্রবশত কারখানা ভাংচুর করে তার মধ্যে হক্কুল ইবাদের আদর্শ না ঢোকানো পর্যন্ত ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও মনোভাব থেকে তাদের বিরত রাখা যাবে না।
কাজেই গার্মেন্টস শিল্পের সব অস্থিরতা নিরসনে শ্রমিক-মালিক উভয়ক্ষেত্রেই ইসলামী আদর্শের উজ্জীবন ঘটাতে হবে।
বিস্তারিত এখানে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।