পত্রিকার পাতায় চোখ আটকে গেল। ১ আষাঢ় । ধাক্কা খেলাম । ভ্রু কুচকে এলো। এই যা আজ পহেলা আষাঢ়! বৃষ্টি কই? পত্রিকাটা হাতে নিয়েই জানালার কাছে দাঁড়ালাম।
বাইরে এক ফোঁটা বৃষ্টিও পড়ছে না। তবে দু'দিন আগের সেই চোখ ধাঁধানো রোদ নেই। প্রকৃতিটা কেমন যেন গুমোট । অভিমানী নারীর মত মুখ ভার করে আছে। যেন কেঁদে ফেলবে।
কিন্তু কাঁদছে না। কি যেন আবদারে আদুরে মেয়ের মত গাল ফুলিয়ে আছে। পাশের ছাদে বেড়ে উঠা গাছ গুলো শাখা নাড়িয়ে কী যেন আলাপ পাড়ছে। নারিকেল গাছটাও বোঝাতে চাইছে। কিন্তু অভিমানী নন্দিনী কিছুতেই বুঝবে না।
মেঘ গুলো হঠাৎই উধাও হতে লাগলো। যেন এখানে কোন খেলার সাথী নেই। এখানে স্বাধীনতা নেই। এখানে কোন রং নেই। যেতে হবে দূর পাহাড়ের দেশে।
যুবক অদ্রি তার অপেক্ষায় আছে। মেঘ কেটে যাওয়া আকাশের পানে চেয়ে আমার একটুও ভাল লাগছিল না। এই আষাঢ় বৃষ্টিহীন থেকে যাবে? পত্রিকার পাতায়ও মন বসছে না। রোহিঙ্গাদের স্থান দিতে পশ্চিমাদের চাপ, আশুলিয়াতে শ্রমিক অসন্তুস, বাজেট নিয়ে অবিশ্বাস, ছায়ানট- উদীচীর বর্ষা বরণ_উল্টে পাল্টে রেখে দিলাম। ফেসবুক বর্ষাময়।
কেউ বলছে বৃষ্টি হচ্ছে , কারও ওখানে আবার আমারই মত খরা। ফেসবুক ছেড়ে আবার জানালায় দাঁড়ালাম। ভাবলাম সারা দিনতো পড়েই আছে। বৃষ্টি হবে হয়তো। মনে মনে আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে লাগাবো বলে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
মুঠোফোনে দু'চার জনের সাথে বৃষ্টিহীন আষাঢ়ের শুভেচ্ছাও বিনিময় হলো। দুদিন আগে জানালায় দাঁড়ানো যেত না। চোখ ঝলসে যেত। যেন আমি জানালায় দাঁড়িয়েঁছি এটাই আমার অপরাধ। মনের কানে শুনতে পেতাম অগ্নি গ্রীষ্ম চোখ রাঙ্গিয়ে বলছে হে হতভাগা যুবক, তোমরা প্রতিনিয়ত প্রকৃতিকে ধ্বংস করে যাচছ।
প্রতিদানে যদি প্রকৃতিও চোখ রাঙায় , তবে মাথা ব্যাথা কেন? আজ বর্ষাও কি সেই অভিমানেই দূরে দূরে থাকছে? সত্যিই তো প্রথিবীটাকে প্রতিনিয়তই আমরা ধর্ষন করে চলছি। বাড়ছে কার্বন নিঃসরণ, বন কেটে মিল-কারখানা হচেছ, পাহাড় কেটে শহর-বসতি গড়ছে। সেই ধকল সহ্য করতে না পেরে প্রকৃতি এমন অপ্রাকৃত আচরণ শুরু করে দিয়েছে। তাকে তো শুধু শুধু দোষ দেয়া যায় না। সারাদিন আর বৃষ্টি হলো না।
পরদিন সকালে এক পশলা হলো। কাক ভেজার মতো। পরদিনও সন্ধে হয় হয় করে আর এক পশলা। সন্ধা বলে আর ভিজার ইচ্ছা থাকলেও ভেজা হয়ে উঠলো না। বেলকনিতে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা ধরেছিলাম।
মনে হলো আমি বৃষ্টিকে ছুলেও বৃষ্টি আমাকে ছুইছে না। সেই স্পর্শ নেই, গন্ধ নেই , সেই মাদকতা নেই। দক্ষিণ ঢাকার এই অংশে বর্ষা আসলেই বাতাসে ইলিশের গন্ধ ভাসতো। ভিজে জুবুথুবু শালিক, কাক, দোয়েল কার্নিসে বসে পাখা ঝাপটাতো। শান্ত পুকুরের জল, জলের উপর শুয়ে বাতাসের সাথে গোপন প্রণয়ে জড়াতো।
বৃষ্টি তা টের পেয়ে চরম আঘাতে পুকুরের জলকে জর্জরিত করতো। অবাদ্ধ হলেও পুকুরের জল খুব উচ্চবাচ্চ করতো না। শুধু আঘাতে উহ আহ করে পুকুরময় ছুটাছুটি করতো। বর্ষায় ভেজা প্রকৃতি রমণীর মত মাথা তুলে মুচকি হাসতো। যেন সবুজ শাড়িতে জড়িয়ে বৃষ্টির পর খোপা খুলে চুল শুকাচেছ।
কোন দুষ্ট যুবকের চোখে চোখ পড়তেই শাখা-প্রশাখা নেড়ে হেসে কুটিকুটি হতো। বৃষ্টি নেই, তবুওতো ক্যালেন্ডারের পাতায় বর্ষা এসেছে। বৃষ্টি হবে, ব্যঙ ডাকবে। বৃষ্টিতে ভিজে গাছগাছালি, বিল্ডিং সব যৌবনবতী হবে। ভিজে প্রকৃতির গন্ধ নাকে নিয়ে ঝিম ধরা প্রকৃতির বৃষ্টি ভেজা নগ্ন কান্তা দেহ দেখবো বলে পুরোটা দিন ঘর আর জানালা করেই কেটে গেল ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।