আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ: ভারতীয় ‘পর্যটন নগরী’ বিনিয়োগ প্রস্তাবনা বিষয়ক কিছু প্রশ্ন

আলো অন্ধকারে যাই... ভারতের বৃহত্তম বহুমুখী ব্যবসায় কর্পোরেশন সাহারা ভারত পরিবারের চেয়ারম্যান সুব্রত রায়ের সফর পরবর্তী বাংলাদেশে এক হাজার কোটি টাকা (১২ কোটি মার্কিন ডলার) বিনিয়োগের একটি গল্প দেশের শিরোনামে পরিণত হয়েছে। গ্রুপটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ৪০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ‘পর্যটন শহর” আবাসন প্রকল্প বিকাশের পরিকল্পনা করছে। দেশের জন্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি হলেও বাংলাদেশী ব্লগাররা প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ব্যাপক সমালোচনা করছে। আরমানুজ্জামান ব্লগ.বিডিনিউজ২৪.কম-এ তার যুক্তি উত্থাপন করেছেন: বাংলাদেশে কোন বৈদেশিক বিনিয়োগ নিঃসন্দেহে চমৎকার ব্যাপার। কিন্তু মজার বিষয় হল আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ কতটা জরুরী।

বাংলাদেশের মত ছোট দেশে অসংখ্য দেশী কোম্পানী আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি এই খাতে বিনিয়োগে উৎপাদনশীল কিছুই নেই। আবাসন প্রকল্প তৈরী করে পরবর্তীতে তা বিক্রি করে প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাবেন। সাহারা মাতৃভূমি উন্নয়ন কর্পোরেশন লিমিটেডের লোগো বিশিষ্ট ব্লগার আরিফ জেবতিক এই বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশে সাহারা গ্রুপের নবগঠিত সহায়ক কোম্পানী - সাহারা মাতৃভূমি উন্নয়ন কর্পোরেশন লিমিটেডের সিইও হিসাবে একজন প্রভাবশালী সাংসদ পুত্রের নিয়োগ সম্পর্কে তার শংকা প্রকাশ করেছেন। তিনি তার ব্লগে লিখেছেন: আজকে সাহারা গ্রুপের প্রধান ব্যক্তি সুব্রত রায় সাহারা হোটেল রূপসী বাংলায় তার বাংলাদেশী কোম্পানীর শুভ উদ্বোধন করেছেন।

বাংলাদেশে তার ব্যবসায়িক স্বার্থ দেখবেন শেখ সেলিমের সুযোগ্য পুত্র শেখ ফাহিম। এই নিয়োগ আবার আড়ম্বরের সঙ্গে হয়েছে, অনুষ্ঠানে বিজনেস কার্ড তুলে দেয়া হয়েছে ফাহিমের হাতে। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে এদেশে সাহারা গ্রুপের গতি শুধু চলা শুরু করবে না, রীতিমতো দৌঁড়াবে। ঘটনাক্রমে সাহারা গ্রুপ চার বছরের জন্যে ৯৪ লক্ষ মার্কিন ডলার (৭৮ কোটি টাকার বেশি) প্রস্তাব করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পৃষ্ঠপোষক হয়েছে। আরিফ সাহারা গ্রুপের জন্যে নির্বাচিত এলাকায় একটি নদীর বিভিন্ন অংশ ভরাট করে জমি প্রস্তুতের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন।

তবে তার প্রধান উদ্বেগ হলো সংরক্ষিত সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের উপর প্রস্তাবিত নতুন শহরের পরিবেশগত প্রভাব, যেমন তিনি সাহারা গ্রুপের প্রধানের বিবৃতি থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন: বেশিরভাগ পরিবেশবাদী শুধু শুধুই ঝামেলা করেন, তারা সমাধান দেন না। শুধু ঝগড়া করেন। তাই সুন্দরবনে পর্যটন সিটিতে তারা বাধা দিলেও সমস্যা হবে না। কারণ তারা অনেকেই তো দোকান খুলে বসে আছেন। ব্লগার লেনিন রহমান আবাসন শিল্পে বিশ্বব্যাপী মন্দা সময় দেখিয়ে আরিফের পোস্ট সম্পর্কে মন্তব্য করছেন।

তিনি যোগ করেছেন: বর্তমান পৃথিবীতে অর্থনীতিতে সারবত্তাহীন জিডিপি বৃদ্ধির সবচেয়ে সহজ উপায় হলো আবাসন সেক্টরে ইনভেস্টমেন্ট। কিছু কিছু খাবারকে যেমন Empty calorie বলা হয় যেগুলো খেলে ক্যালরি ইনটেকই হয় শুধু কিন্তু কোন পুষ্টিগুন যোগ হয় না। আবাসন সেক্টরে ব্যাপক ইনভেস্টমেন্টে অনেক চাকরী তৈরী হয়, অনেক টাকার আদান-প্রদান ঘটে কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি হয় না। একসময় চাহিদা কমা শুরু হলে বেলুন ফেটে পুরো দেশকে দশ বছরের জন্যে কাহিল করে ফেলা। আজকে ৪-৫ বছর ধরে আমেরিকা-ইউরোপের অর্থনীতি রুগ্ন হয়ে আছে কেবল আবাসন সেক্টরের বেলুন ফাটার জন্যেই।

সংখ্যায় অল্প হলেও বিনিয়োগের পক্ষেও মতামত রয়েছে। একজন নেটনাগরিক আরমানুজ্জামানের পোস্ট সম্পর্কে মন্তব্য করছেন যে স্থানীয় কোম্পানীগুলোর মধ্যে কিছুটা প্রতিযোগিতার ফলে উপকার হবে: আপনার কি আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর সার্ভিস সম্পর্কে সামান্যতম ধারনা আছে। প্লট কেনার কত বৎসর/যুগ পরে প্লট দেওয়ার নিয়ম৷ দেশের টাকা বিদেশে চলে যাবে এই যুক্তি দিয়ে আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান গুলোকে শোষন করার একচেটিয়া অধিকার দেওয়া কি ঠিক? সত্যি করে বলতে গেলে আমাদের অতি লোভী ব্যবসায়ীরাই আমাদের খাদ্য, ফলমুল, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ যাবতীয় ক্ষেত্র সমূহ নষ্ট করেছে । তাই আমাদের বোধ করি উচিৎ নয় দেশীয় শোষক প্রতিষ্ঠান গুলোর পক্ষে যায় এমন কিছু করা৷ উভয় দেশের মধ্যকার কয়েকটি অমীমাংসিত সমস্যার (উদাহরণস্বরূপ দেখুন ১, ২, ৩) কারণে মানুষের অবিশ্বাস থেকে এই মনোভাবগুলো উদ্ভুত হয়েছে। শুধু সময়ই বলে দিবে এই বিনিয়োগ পরিকল্পনাটি বাংলাদেশের জন্যে ভাল হবে বা সর্বনাশ বয়ে আনবে কিনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.