ভবিষ্যতে আর কেউ বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ও ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য আরো ৫৯ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ এবং ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সম্মাননা হিসেবে প্রত্যেককে দেয়া হয় ২২ ভরি রূপার ওপর এক ভরি স্বর্ণখচিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ সম্বলিত পদক।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং বাঙালি জাতির গর্বের ইতিহাস তুলে ধরেন।
দেশের জন্য যারা জীবন দিয়ে অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা আমাদের মা-বোন, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল তারাই ক্ষমতায় এসেছিল। তারা ক্ষমতায় ছিল ২১ বছর। মানুষ এজন্য অনেক যন্ত্রণার শিকার হয়েছে। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আবার উজ্জীবিত করি। আমাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনে এ সুযোগ দেওয়ার জন্য দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশ স্বাধীন দেশ। ভবিষ্যতে কেউ বাংলাদেশের জনগণের অধিকার নিয়ে ছিনিনিমি খেলতে পারবে না। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত করে গড়ে তুলবো।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে কাজ করতে হবে। এর সুফল জনগণের মধ্যে আমরাই ছড়িয়ে দিতে পারবো।
বিদেশি যেসব বন্ধুরা আমাদের সহযোগিতা করেছিলেন তাদের আমরা সম্মানিত করেছি। আমরা একটি কৃতজ্ঞ জাতি। যারা যতোটুকু করেছে আমরা যেন তা স্মরণ করি। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারি। তিনি বলেন, একদিকে ইতিহাস বিকৃত করা হয় অপরদিকে যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।
সংবিধান সংশোধন করে বাংলাদেশকে একটি শোষণমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। বিশ্ব দরবারে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে থাকবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে সক্ষম হবো।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য পাঁচশর বেশি বিদেশি বন্ধু ও প্রতিষ্ঠানকে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে ছয় দফায় মোট ২৬৯ ব্যক্তি ও ৯ প্রতিষ্ঠানকে ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’ ও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ পদক দেয়া হয়েছে।
গত ১ অক্টোবর সপ্তম দফায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলী আহমদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইকে গুজরালকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ দেয়া হয়। তাদের পক্ষে তাদের সন্তান যথাক্রমে ড. পারভেজ আহমদ ও ড. তিজাস নায়েক এ পদক নিতে আসেন।
ভবিষ্যতে আরো ৫৭ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মৈত্রী সম্মাননা’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। এ তালিকায় রয়েছেন ভারতের ৪৮ জন, পাকিস্তানের ৩ জন, জাপানের ২ জন, মিসরের ১ জন, যুক্তরাজ্যের ২ জন, যুক্তরাষ্ট্রের ২ জন ও তুরস্কের ১ জন।
সম্মাননা তালিকায় রয়েছেনÑ ভারতের চিকিৎসক ও রাজনীতিবিদ ডা. জয়নাল আবেদীন, কলামিস্ট ও সমাজকর্মী স্বপন কুমার ভট্টাচার্য, শিক্ষক ও সমাজকর্মী শ্রীমতি মৃন্ময়ী বোস, প্রযোজক ও অভিনেতা বিশ্বজিৎ রঞ্জন চ্যাটার্জি, সমাজকর্মী শ্যামল চৌধুরী, সাংস্কৃতিকব্যক্তিত্ব শ্রীমতি গৌরী ঘোষ, সাংস্কৃতিকব্যক্তিত্ব শ্রী পার্থ ঘোষ, বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার স্বরূপ কৃষ্ণ কউল, মরণোত্তর লেখক ও সমাজকর্মী ড. আসগর আলী ইঞ্জিনিয়ার, মরণোত্তর সমাজকর্মী স্নেহাংশু কান্ত আচার্য, মরণোত্তর চিত্রশিল্পী সোমনাথ হোরে, মরণোত্তর রাজনীতিবিদ ও ইসলামিক চিন্তাবিদ মওলানা সৈয়দ আসাদ মাদানী, মরণোত্তর রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী ভিকে কৃষ্ণ মেনন, মরণোত্তর সঙ্গীত শিল্পী সুচিত্র মিত্র পদ্মশ্রী, মরণোত্তর সমাজকর্মী এনবি মুখার্জি, মরণোত্তর সমাজকর্মী রবীন্দ্র মোহন চৌধুরী, মরণোত্তর আইনজীবী ও সমাজকর্মী আবুল ফজল গোলাম ওসমানী, মরণোত্তর ভারতীয় সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল কুলওয়ান্ট সিং, মরণোত্তর সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফার কিশোর পারেখ, মরণোত্তর সাবেক সরকারি কর্মকর্তা অশোক রায়, মরণোত্তর কবি ও সাংস্কৃতিকব্যক্তিত্ব সুভাস মুখোপাধ্যায়, মরণোত্তর অর্থনীতিবিদ সমর রঞ্জন সেন, মরণোত্তর কূটনীতিক সমর সেন, ভারতীয় সেনাসদস্য শহীদ সুবেদার মালকিত সিং মহাবীর চক্র, মরণোত্তর সুকদেব সিং সান্ধু এবং মরণোত্তর লে. জেনারেল তপিশ্বর নারায়ণ রায়না মহাবীর চক্র।
পাকিস্তানের মরণোত্তর রাজনীতিবিদ মাস্টার খান গুল, মরণোত্তর রাজনীতিবিদ খান আব্দুল ওয়ালী খান এবং মরণোত্তর রাজনীতিবিদ খান আব্দুল গাফফার খান। জাপানের সমাজকর্মী কেন আরি মিতসু ও মরণোত্তর সেনা কর্মকর্তা ও সমাজকর্মী লে. জেনারেল লইচি ফুজিওয়ারা।
যুক্তরাজ্যের সমাজকর্মী এলিন কনেট ও অধ্যাপক সমাজকর্মী ড. পাউয়েল কনেট। যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী ম্যারি ফ্রান্সিস ডুনহাম এবং অধ্যাপক ড. আলফ্রেড সোমের। তুরস্কের মরণোত্তর সাংবাদিক ও সমাজকর্মী কেটিন ওজব্যার্ক এবং মিসরের প্রতিষ্ঠান এফ্রো-এসিয়ান পিপলস সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (এএপিএসও)।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।