নিঃস্বার্থ মন্তব্যকে ধন্যবাদ, সাময়িক ভাবে আমি মন্তব্যে নেই রাজার খুব ইচ্ছে হল সে রাজা হবে। তার মুকুট থাকবে না। সে হেটে যাবে বাড়ি বাড়ি। তলোয়ার থাকবে না। থাকবে না সেপাই সান্ত্রী কিন্তু সবাই তাকে দেখে বলবে - জয় মহারাজ।
কিন্তু রাজার সেই ইচ্ছে পূরণ হয় না। তাকে রাজা রাজা ভাব ধরে সব আচার অনুষ্ঠান পালক করতে হয়। সে কোন প্রজার পিঠা ঘরে ঘুণে খাওয়া টুলে বসে পিঠা খেতে পারে না, নদীর ধারে বিশাল বটগাছের নিচে একলা বসতে পারে না। সে তখন কথাটা কাউকে বলতে চাইল। রাণীকে বলল, চলো আমরা এখান থেকে কোন অরণ্যে যাই।
সেখানে মিশে যাব প্রকৃতির সঙ্গে, মেহগনির নিচে কুটির পেতে থাকব। কাঠুরেরা আসবে। তাদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব হবে। মৌয়াল মধু নিতে আসবে তাদের সঙ্গে। আর রাখালেরাও আমাদের জানবে বন্ধু বলে।
রাণী বলল, বন্ধু হলে কি রাজা হয়? যত্ত পাগলামো আপনার। আপনি একা ঘুরে আসেন, আমি দুধে গোলাপ ছেড়ে স্নান করবো। ঘুম দেব, চন্দনের পালঙ্কে। তা না হলে কিসের রাণী।
রাজা বনের দু:খে একাই বনে চলে গেল।
রাতে যখন রাজপ্রাসাদের সাবই ঘুমে অচেতন তখন রাজা চুপি চুপি প্রাসাদের দুয়ার দিয়ে পালিয়ে চলে আসলো। বনে পথে হাঁটছে তো হাঁটছেই। ভোর হওয়ার আগেই রাজ্যের সীমানা পেরোতে চায় সে।
রাজা কখনোই পায়ে হেটে এতদুর যায় নি। তাকে বয়ে নেবার জন্য থাকতো পালকি।
ঘোড়ায় করে যেত শিকারে। ধুলো ছড়িয়ে। কিছু দূর গিয়ে তার পা আর চলতে চায় না। সে একটা গাছপালা ঘেরা জায়গায় ক্লান্ত হয়ে বসল। হয়তো সাপ লতিয়ে আছে গাছের ডালে।
ভোর হতে অল্প বাকি। তার ঘুম পেল। তারপর সে জানে না ..হঠাৎ একটা শব্দে জেগে উঠল।
একটা বনের পাখি ডাকছে । ভোরের ।
আলো ফুটছে। আর সামনে একটা জলাধার।
সে এগিয়ে গিয়ে তাকিয়ে লজ্জাপেল
তার গায়ে তখনো জরির কাজ করা জামা। পায়ের নাগরা যদিও ধূলো কাদায় একাকার।
এখন এসব খুলে পোশাক সে কোথায় পাবে।
সে ভাবল কোন দরিদ্র বাড়িতে গিয়ে পোশাক ধার নেবে।
সে জলের ঝাপটা মুখে দিয়ে ফের হাটতে লাগল।
হাটতে হাটতে বনের শেষ প্রান্তে চলে আসল, একটা গ্রাম।
একটা কিশোর গরু নিয়ে মাঠে যাচ্ছে, কেউ হেটে যাচ্ছে। কোনো কোনো ঘরের দাওয়ায় বসে ঝিমোচ্ছে পরিবারের বুড়ো সদস্য।
খুব বেশি দূরে না গিয়ে সে কাছা কাছি একটা ঘরের দরজায় কড়া নাড়ে সে।
ভিতর থেকে একটা শব্দ হল
-কে রে এই খানে?
-আমি
-আমি কে, নাম কি তোর
আগে একটু খুলেন। পানির পিপাসা পেয়েছে।
একটা বৃদ্ধা বের হল। এসেই চমকে গিয়ে বলল, কিরে তুই কি রাজার লোক? কি চাস আমার বাড়িতে?
রাজাকে চিনতে পারে নি বৃদ্ধা।
কিন্তু পোশাকে সন্দেহ থাকে।
-আমি রাজার লোক না। বহুদুরের মুসাফির। আমি যাত্রা করি, পালা করি। এই জন্য এই বেশ।
বৃদ্ধা তখন পাল্টে গেল। তার একমাত্র সন্তানও পালাগানের লোক।
( এখানেই গল্প শেষ হতে পারতো.. কিন্তু ধারাবাহিক গল্প বললে আরো কিছুদূর যেতে হবে.. তাই বলতে লাগলাম)
বৃদ্ধা বলল,
ঘরে আয় বাপ
ঘরে কিছু নাই, খালি মুখে পানি দেই কেমনে?
এই রাজ্যের পানিতেও অভিশাপ। তুই যদি রাজা হয়ে থাকিস তবে খাসনে।
রাজা মিথ্যে বলল,
-না, আমি রাজা না
-তাইলে ধর এই পানি খা।
একটা কাচের পাত্রে জল খেতে দিল, রাজা সেই জলে চুমুক দিতেই একটা জলদানব দেখতে পেয়ে। অতিকায়, কুৎসিত। দেখেই সে অজ্ঞান হল, আর উঠল না। এরপর রাজার কবর হল
। কবরের উপর গাছ হল।
পাখি আসল।
পাখিটা বলে চলল, রাজা রাজা রাজা।
এদিকে রাণী তখন নতুন রাজা পেল। সে রাজ্যের সবচেয়ে বীর্যবান সুঠাম যুবক। রানী ভাবল ভালই হল।
একটা কিছু না হারালে কিছু কি পাওয়া যায়।
সেই যুবকেরও রাজা হবার অভিলাষ। সে রাণীর শর্ত মেনে নিল সব। সুখে থাকল। রাত ভর জলসা হল।
একদিন ভোর বেলা নতুন রাজা বলল, আমি খোয়াব দেখেছি রাণী। আমাকে কেউ হাত দেখিয়ে বলছে - তুই রাজা না, রাণীর স্বামী মাত্র। আমি কি নকল রাজা? রানী, চলো আমরা বনে যাই। গিয়ে দুই প্রজার বেশে ফিরে আসি। সাদা পোশাকে।
তখন আকাশ বাতাস পশু পাখি, সবাইযদি রাজা তাহলে আর সন্দেহ থাকবে না। নিন্দুকেরা চুপ হয়ে যাবে।
রাণী বলল, ইস.. সখ কত। তুমি গেলে যাও। আমি চন্দন পালঙ্কে ঘুমাবো।
দাসীরা হাত ভর্তি কঙ্কন সাজাবে। তা না হলে কিসের রানী?
নতুন রাজা তখন বের হল পথে। এই রাজাও হাটছে হাটছে..
হাটতে হাটতে সে সামনে পেল একটা বিশাল নদী। নাদীর নাম গেলাস নদী। কারণ নদীটা ছিল কাচের গেলাসের মত গোল।
নদীর পার স্ফটিকের মত স্বচ্ছ। সেই নদীতে থাকতো একটা জলদানব। এখন নদী পার হওয়ার উপায় কি?
নৌকা না পেয়ে নতুন রাজা পা ডুবিয়ে পার হতে যাবে এমন সময় খপ করে খেয়ে ফেলল জলদানব।
উপর থেকে পাখিটা তখন বলে যাচ্ছিল, রাজা রাজা রাজা
ঠিক তখনই একটা কাণ্ড হল। আচমকা কেউ একজন তীর উড়ে এল।
কোন দিন থেকে আসল, ঠিক বোঝা গেল না। তবে দূরে মাটি থেকে একটা অশরীরি দেখা উঠে এল। আর শোনা গেল একটা গম্ভীর কণ্ঠস্বর। জলদানব কে কেউ হুকুম করছে নতুন রাজাকে ফিরিয়ে দিতে। দেখা গেল সেটা আর কেউ না সেই রাজ্যের প্রথম রাজা।
(উপস্থিত সবাই নড়ে চড়ে পরষ্পরের দিকে তাকাচ্ছিল!)
জলদানব তখন অবিকল রাণীর গলায় কাঁদতে লাগল। কিছুক্ষণ পর রাণীর বেশে ফিরে বলল, আমাকে মাফ করে দেন। এই নিয়ে অনেক কে খেয়েছি। ইচ্ছে করে করি নি। এর পিছনে অনেক ঘটনা.. বলে সে তার কাহিনী বলতে লাগল রাণীটা জন্ম থেকেই ছিল ভীষণ লোভী।
ছোটবেলায় তার লোভী স্বভাব দেখে ভাগ্যদেবী অভিশাপ দিয়েছিল, সে একজনের সাথে সারাজীবন থাকতে পারবে না। তার সাথে যারই বিয়ে হবে, কোন না কোন ভাবে তার মৃত্যু হবে।
*
ঠিক এতটুকু গল্প শুনে আমার বিরুদ্ধে খেপে গেল রাস্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর ড. সুরাইয়া শিমু্। পিছনের সীটে ছিল এডভোকেট কামরুন্নাহার। বলল
দেখুন মি, গল্পকার।
আপনি গল্পে রূপকথার নাম করে সীমা লঙ্ঘন করছেন। রাণীরা লোভী? রাজারা মহৎ? বাহ বাহ বাহ!
আরেকজন মেয়ে হাত তুলে দাঁড়িয়ে বলল, এসব পুরুষতান্ত্রিক গল্প, জেণ্ডার ডিসক্রিমিনেশেনের চূড়ান্ত। আর দেখুন নতুন রাজার স্বভাব। রাজ্যের লোভে হুড় হুড় করে এসে রাজা হয়ে গেল। রাণী ডাকলেই কি রাজা হতে হবে?
আমি তখন মহা ফ্যাসাদে।
সোশ্যালিস্ট পার্টির মেসবাহ উদ্দিন ছিলেন সরব। তিনি পরে মঞ্চে উঠে বললেন, দেখেন গল্পকার - সাম্রাজ্যবাদীরা প্রথম কনট্রাসেপটিভ টেস্ট করে ১৯৭৯ এ বাংলাদেশে। এই গল্পের মতই গল্প তৈরী করে পূঁজিবাদী চক্র। আর "রাজা" নামেই ব্র্যাণ্ডিং করে সেই কনট্রাসেপটিভকে।
আমি তখন খুব অবাক হলাম।
একটা সিম্পল গল্পকে মানুষ কই নিয়ে গেল!
--
ড্রাফট ১.০ / স্ট্যান্টবাজী গল্প ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।