আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশকে ভালোবেসে দেশের কতোটা উপকার করতে পেয়েছি জানিনা তবে বিনিময়ে পেয়েছি অনেক : ভালোবাসা আর পরিশ্রমের স্বীকৃতির আত্মপ্রচারনামূলক একটি পোষ্ট

Lonely Planet বিশ্বের সবচে বড় ট্রাভেল গাইড প্রকশনা সংস্থা। বিবিসির মালিকানাধীন এ সংস্থাটি ৮ টি ভাষায় প্রায় ৫ শতাধিক বই প্রকাশ করেছে যার অধিকাংশই বিভিন্ন দেশ আর শহরের ট্রাভেল গাইড এবং ম্যাপ। বলা হয়ে থাকে পৃথিবী ভ্রমণে দুটি জিনিষ লাগে এক. টাকা আর দুই. লোনলি প্লানেটের গাইড বুক। বাংলাদেশ নিয়েও লোনলি প্লানেটের একটি গাইড বই আছে, নাম : Lonely Planet : Bangladesh. বইটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বেড়াবার বিস্তারিত বর্ণনা আছে। এই কদিন আগ পর্যন্ত এটিই ছিলো বাংলাদেশ নিয়ে ইংরেজীতে লেখা একমাত্র পুর্নাঙ্গ ট্রাভেল গাইড।

(পরে BRADTH নামে আরেকটি প্রকাশনা সংস্থা আরেকটি গাইড বই বের করেছে। এবার একটু আগের প্রসঙ্গ টানি। বছর পাচেক আগে একটি ইমেইল পাই Ulrikh নামের এক অষ্ট্রেলিয়ানের কাছ থেকে। সে জানায় বাংলাদেশ নিয়ে ইন্টারনেট জগতে খুব একটা আপডেটেড তথ্য নেই। তাই আমি যেনো লোনলি প্লানেটের ওয়েবসাইটে গিয়ে হবু ট্রাভেলারদের তথ্য দেই।

এভাবেই শুরু। আমি ট্রাভালারদের প্রশ্নের নানা উত্তর দিতে থাকি। এসব ট্রাভেলাররা ঢাকা এসেই আমার সাথে যোগাযোগ করে। আমরা একসাথে চা খাই, বাসায় মাঝে মাঝে ডিনার করাই, তাদের ট্রিপ প্লান করে দেই, ট্রেন, রকেটের টিকেট করে রাখি এমনকি মাঝে মাঝে গ্রামীন ব্যাংক এ গিয়ে তাদের ইন্টার্নশীপ রিকোয়েষ্ট এর কি অবস্থা সেটারও খোজ নিয়ে দেই। আর কাপল বা শুধু সলো ফিমেল ট্রাভেলার হলে আমার বাসায় ফ্রি রাখী ৩-৪ দিন।

একটি রুম আলাদা রাখা আছে এদের জন্য। এতে কোন প্রকার টাকা নেইনা, নিজের চাকরীর ফাকে ফাকে এটা করি। এভাবে আমি গত ৫ বছরে প্রায় ৩০০০ বিদেশী ট্রাভেলারদের সাথে মিশেছি। আর এসব মানুষদের মধ্যে নানা রকম বৈচিত্রপূণৃ ব্যবহার পেয়েছি। কত ভালোবাসা যে পেয়েছি তাদের কাছ থেকে তার হিসেব নেই।

বছর তিনেক আগে একদিন মতিঝিলের অফিসে মাথা গুজে কাজ করছি, হঠাৎ দেখি চকচকে টাক মাথা এক বিদেশী। মাইক ব্রে!! মাইক ইংল্যান্ড এর তরুন যে কিনা বছর খানেক আগে এসেছিলো বাংলাদেশে এবং আমার সাথে ছিলো দুদিন। সে জড়িয়ে ধরে জানালো - ইন্ডিয়া যাচ্ছিলাম। ভাবলাম দুদিনের জন্য ঢাকা নেমে মাহমুদকে দেখে যাই আর চমক দিতেই সে এটা আগে জানায়নি আমায়। ডেলফি নামের এক ফরাসী তরুনীকে জানালাম আমি পত্রিকা সংগ্রহ করি।

সে দেশে ফিরে গিয়ে তার দাদার সংগ্রহে থাকা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ১৫/১৬ টি পত্রিকা পাঠিয়ে দিলো ১০০ ডলার খরচ করে কুরিয়ার এ। Ulrikh নামের এক অষ্ট্রেলিয়ান ট্রাভেলার প্রতি বছর একবার করে বাংলাদেশে আসে আর আমার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দুদিন হালচাষ করে, মাছ ধরে। ব্রাজিলের এক দম্পতি আমার জন্য নিয়ে এলো সাও পাওলোর এক বিখ্যাত ষ্টোর থেকে কেনা ব্রাজিল বিশ্বকাপ দলের অরিজিনাল জার্সি। বিশ্বিখ্যাত সুপার শপ হ্যারডস থেকে কেনা মগ, কলম সহ উপহার পেয়েছি ৫ টির মতো। Peter নামের এক জার্মান তার ব্লগে লিখেছেন।

বাংলাদেশ যাবেন দুটি কারনে এক. নদী দেখতে আর দুই. মাহমুদকে দেখতে। আর মরিমাসের মোহাম্মদ আলীর কথা কি আর বলবো। সে মোট ৫ বার এদেশে এসেছে এবং এদেশের মানুষের অবস্থা দেখে সে প্রতিবছর তার এবং সব আত্মীয়ের কোরবানীর টাকা এনে আমার গ্রামের বাড়িতে কোরবানী করে। কোন বছর ২০ টি গরু, কোন বছর তারো বেশী। নিজে দাড়িয়ে কোরবানী করে তা গ্রামের সব বাড়িতে পৌছে দেয়।

এবারো আসবে ইনশাল্লাহ। দেশের ভেতরের মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছি অনেক। বাংলাদেশ নেভির কর্নেল লেভেলের একজন অফিসার (যিনি তখন মিশনে ছিলেন বিদেশে) দুম করে ১০০ ডলার পাঠিয়ে দিতেন আমার নামে। বলতেন- আপনার কতো খরচ মাহমুদ ভাই। একটু শেয়ার করি।

লন্ডন প্রবাসী রিয়াজ ভাই দেশে আসেন দিন সাতেকের জন্য এসেই আমাকে জোর করে নিয়ে যান ডিনারে। বলেন- বিদেশীদের মুখে যখন আপনার প্রশংসা শুনি বুকটা বড় হয়ে যায়। বাড্ডার এক সফটওয়্যার কোম্পানীর মালিক আমাকে একটা ফ্রি ওয়েবসাইট করে দেবার জন্য প্রায়ই ফোন করছেন। এবার বলি প্রাতিষ্ঠানিক ভালোবাসার কথ। ২০০৮ সালের কথা।

অষ্টেলিয়ান এন ট্রাভেলারের ফোন পেয়ে হোটেল ভিক্টোরীতে গেলাম দেখা করতে। সে নাকি পুরো ১ মাস বাংলাদেশ ঘুরবে। আমি ১ মাসে পুরো বাংলাদেশ ঘোরার একটা ডিটেইল প্লান করে দিলাম। এবং কিছুদিন পর তার কথা ভুলে গেলাম। মাস ছয়েক পর দেখি ডাকযোগে আমার নামে লোনলি প্লানেটের Bangladesh গাইড বইটির নুতন এডিশনের একটি কপি এবং সাথে নোট : মাহমুদ, তুমি তোমার দেশের জন্য যা করছো তার কোন প্রতিদান নেই।

তবে সামান্য একটু কৃতজ্ঞতা বইটির ১৬৬ নম্বর পাতায়। পাতা খুলে দেখি সেখানে আমাকে নিয়ে বেশ কিছু কথা লেখা আছে। দেশের জন্য আমি কি করেছি জানিনা তবে লেখাটা পড়ে আমার মনটা ভরে গেলো্। আপনারাও পড়ুন নীচে : আবার সেদিন BRADTH প্রকাশনা সংস্থার BANGLADESH গাইড বইটির লেখক মেইল করে জানালো যে BRADTH গাইডের নুতন এডিশন এ (যা এখন প্রিন্ট এ আছ) আমার নাম ঠিকানা দিয়েছে যাতে আমার কাছে ট্রাভেলাররা ইনফরমেশন চাইতে পারে। জিনিষটা শেয়ার করলাম এ কারনেই যে কোন কিছুতে লেগে থাকলে তার স্বীকৃতি আসবেই কোন একদিন- এটা বোঝাতে।

নোট : আমার একটা ছোট ওয়েব সাইট আছে, যার মাধ্যমে আমি বিদেশী ট্রাভেলারদের প্রাইমারি ইনফরমেশনগুলো দেই। দেখুন : http://www.mahmud.bigbig.com  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।