আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইংলিশ ফর টুডে

ইংলিশ ফর টুডে। আজকের জন্য ইংরেজি। গত বা আগামীকালের জন্যে নয়। মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সবারই এই সিরিজের বইগুলি একবার করে গিলে ফেলার কথা। কেউ কি ফেলে? আচ্ছা আমরা দেখি গিলে না ফেলার কারণে কী ফল হতে পারে।

গিলে না ফেললেও ক্ষতি তো কিছু হয় না। ম্যাড়মেড়ে তুলতুলে পাঠ্য বই বাদে বাজারে রয়েছে রঙবেরঙের মডেল কোশ্চেন বই। সেগুলো একবার মুখস্থ করে ফেলতে পারলে কার সাধ্যি পরীক্ষায় আটকায়? সচরাচর—এদেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আর বিকল্প না খুঁজে পরীক্ষায় কমন পড়ার নিশ্চয়তার আশায় এসব মডেল বই চর্চা করে। তাদের দোষও আসলে নেই। যেখানে শিক্ষকেরা ওর বাইরে আর প্রশ্ন করবেনই না, তখন খামোখা ঝুঁকি নিয়ে লাভটা কী? কথা হল, কমিউনিকেটিভ সিস্টেমের এসব পাঠ্য বই কেন পড়া হয়ে থাকে না? যাদের মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পদ্ধতির সাথে সরাসরি যোগ আছে, এটা তাদের অজানা নয়, যে ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্ন পদ্ধতি অত্যন্ত অদ্ভুত ধরণের।

প্রায়শ এমন সব প্রশ্ন থাকে, যাতে ভাষার চর্চা থেকে আলোচ্য প্যাসেজ চর্চায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে মনে হয়। ভাষার যথেষ্ট দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও একদম অচেনা প্রশ্নে যে কারও মাথা চুলকাতে হয়। ক্লাসরুমে পড়া-বলা-শোনা-লেখা এগুলোর চর্চা হয়ত কোথাও সত্যিই হয়ে থাকে, তবে আমার জানামতে তেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমি পাই নি। তারপরও প্রশ্নটা অতটা ভয়ঙ্কর হত না, যদি না তাতে সহজে সব কমন পড়বার নিশ্চয়তা অন্তর্হিত থাকতো। ভালোমতো কমিউনিকেটিভ সিস্টেম চর্চা করে বড়জোর “A” গ্রেডের মার্ক আশা করা যায়,—এর বেশি কিছু নয়।

যেখানে “A+” এর ছড়াছড়ি, সেখানে A গ্রেডের মূল্য কোথায়? কাজেই আমরা দেখলাম ইংলিশ ফর টুডে বইকে বেনোজলে পার করে দিলেও সমস্যা হচ্ছে না। এখন কথা হল, আছে কী এই বইতে? আছে অদ্ভুত জিনিস। সব শ্রেণীর সব বইতে ঘুরেফিরে যে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে, “পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে” একটা বড় সাইজের গ্রাম হয়ে গেছে। একে বলা হচ্ছে গ্লোবালাইজেশন। ইংরেজি এই গ্রামের প্রধান ভাষা।

তুমি গ্রামে থেকে এই ভাষা শিখবে না, তা হবে না। এই বই কি ভাষাশিক্ষা দেয়? দেয় হয়তো। সেটা নিউজ-পেপারের ভাষা। গঠনগত আর অর্থগত দিক দিয়ে দুর্জ্ঞেয় একটা ভাষা। তাতে কোনও প্রাণ নেই, কোনও সাহিত্য হয়না সে ভাষায়।

কেউ খুব চেষ্টা করে এই ভাষাটা হয়তো শিখে নিতে পারবে, কিন্তু কখনো আত্মস্থ করে উঠতে পারবে না। সংবাদ পরিবেশনের জন্যে ভাষা আত্মস্থ করবার প্রয়োজন হয় না। যেটা প্রয়োজন সেটা হল তথ্য পরিবেশন। কোনও এক অদ্ভুত কারণে বইয়ের লেখকদের ধারণা জন্মেছে ছেলেমেয়েদের মাথায় ঢুকোতে হবে, এন.জি.ও. ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থাতেই দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। দেশ উন্নতি করবে, তার জন্যে তো সময় লাগবে।

ব্রিটিশ আর আমেরিকানদের অন্ধভাবে মান্য করতে হবে। ওনারা যে আমাদের পথের দিশা! তাঁরা যেমন চাইবেন, কথা সেভাবেই কইতে হবে, সেভাবেই দুনিয়া চিনতে হবে! আমার লেখায় যদি মনে হয়ে থাকে আমি ইংলিশ ফর টুডের উপর বেশি অনাচার করে ফেলছি, তাহলে আপনারাই বলুন, আমাদের দুনিয়ার এত এত স্থাপত্যকির্তী থাকতে কেন স্ট্যাচু অভ লিবার্টি বিষয়ে জানতে হবে? বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতায় কেন ইঁদুর দৌড় দৌড়াতে হবে? এই বিশ্বায়ন তো নতুন কিছু নয়—এর যে চিরচেনা একটি নাম সকলেই জানে—নব্য সাম্রাজ্যবাদ! দুনিয়াকে প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় ইত্যাদি ভাগে ভাগ করে লুটেপুটে খাওয়ার ফন্দি। এটাই কি পুঁজিবাদের চূড়ান্ত রূপ নয়? মজার কথা হল, উচ্চ মাধ্যমিক ইংলিশ ফর টুডে বইতে আবার পুঁজিবাদ বিষয়ে সাবধানবাণী আওরানো হয়েছে। সবাই যদি নিজ পকেট ভরতে চায়, তাহলে মানব সভ্যতার কী হবে গো??? অনেক কথা হল। আমাদের বাংলা বইয়ে যখন বলা হচ্ছে বারে বারে বিপ্লবী চেতনায় জেগে উঠতে, তখন তার সমান্তরালে ইংরেজি পাঠ্য বইতে আমলা মানসিকতা কেন শেখানো হচ্ছে, সেটা আমার বোধগম্য হয়নি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.