আমি ফিফা চেয়ারম্যান হতে চাই। চেয়ারম্যান হলে আমার নাম হবে জন ফু সোহেল
আপনি যদি শত কোটি বা হাজার কোটি টাকাও বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) পদ্ধতিতে প্রতারণার মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতে পারেন, সরকার সে জন্য আপনাকে জরিমানা করবে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা।
এ রকম নামমাত্র শাস্তির বিধান রেখে ‘ডাইরেক্ট সেল আইন, ২০১২’ নামের এমএলএম আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আইনের খসড়ায় দোষীদের তিন-পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের কথাও বলা হয়েছে। তবে তা সশ্রম না বিনাশ্রম, তা উল্লেখ নেই।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এমএলএম আইনের খসড়া তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠিয়েছে। এতে ১৪টি অধ্যায়, ৪৪টি ধারা ও দুটি তফসিল রয়েছে। আজ রোববার সচিব কমিটির বৈঠকে অনুমোদনের জন্য তা উপস্থাপিত হওয়ার কথা।
এই আইন পাস হলে দেশের এমএলএম কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসবে বলে সরকারের ধারণা। তবে আইনের বাস্তবায়ন কে করবে, তা এখনো ঠিক করা হয়নি।
কারণ, গোটা বিষয় নিয়েই মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে নানা মতপার্থক্য রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চাওয়া হলো, এমএলএম কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি পরিদপ্তর গঠন জরুরি। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, পরিদপ্তর নয়, বরং কর্তৃপক্ষ গঠন করা যেতে পারে। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ দুইয়ের একটির সঙ্গেও একমত নয়। এ মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য হলো, পরিদপ্তর বা কর্তৃপক্ষ আইন দিয়ে সৃষ্টি করা যায় না।
বরং আইন প্রণয়ন হওয়ার পর, সেই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান সৃজন করতে পারবে বা কোনো প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে পারবে।
খসড়ার সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, ‘এমএলএম কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে দেশে কোনো আইন নেই। কোম্পানি আইনে নিবন্ধন নিয়ে বা ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এরা ব্যবসা করছে। কখনো উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করছে জনগণকে। আবার কখনো অলীক পণ্য বিপণনে অস্বাভাবিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে এমএলএম প্রতারণা করে আসছে।
’
প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারি মাসে একবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমএলএম আইনের খসড়া উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু কার্যপ্রণালি বিধি অনুসরণ করা হয়নি বলে তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
আইনের উল্লেখযোগ্য দিক: যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদপ্তর (রেজসকো) থেকে বিদ্যমান ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের আওতায় লাইসেন্স ও নিবন্ধন নেওয়ার কথা আইনে বলা হয়েছে।
আইনের চতুর্থ অধ্যায়ে কিছু ক্ষেত্রে এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, পিরামিডসদৃশ বিক্রয় কার্যক্রম করা যাবে না।
অবস্তুগত বা অলীক পণ্য এবং সময়ের ধারাবাহিকতা বা পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিপণনযোগ্য হবে—এমন পণ্য বা সেবা নিয়েও ব্যবসা করা যাবে না।
এমএলএম পদ্ধতিতে যেসব পণ্যের ব্যবসা করা যাবে, তার একটি তালিকা আইনের দ্বিতীয় তফসিলে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে—গৃহস্থালি, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, প্রসাধন ও টয়লেট্রিজ, হারবাল, টেলিমার্কেটিং, কৃষিজ ও কৃষিজাত, টেলিকমিউনিকেশন সেবা বা ব্যবহারযোগ্য পণ্য এবং প্রশিক্ষণসংক্রান্ত সেবা ও পণ্য। চতুর্থ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, এ তালিকা কমানো-বাড়ানোর এখতিয়ার সরকারের হাতে থাকবে।
আইনের ১২ থেকে ২৯ অর্থাৎ মোট ১৮টি ধারায় শাস্তি সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে।
বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসার জন্য সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও তিন থেকে পাঁচ বছরের জেল, লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া ব্যবসা করলে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও ৬-১২ মাসের জেল, নির্দিষ্ট পণ্য ছাড়া অন্য পণ্যের ব্যবসা করলে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও তিন থেকে পাঁচ বছরের জেল, মোড়কবিহীন পণ্যের ব্যবসা করলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও এক থেকে দুই বছরের জেল, পরিবেশকদের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও এক থেকে তিন বছরের জেল খাটতে হবে।
বক্তব্য ও মতামত: লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত হলেও কোনো কোম্পানি যদি কার্যক্রম অব্যাহত রাখে, তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের পাঁচ বছরের জেল খাটতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগ এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানায়, লাইসেন্সবিহীন কোম্পানি কর্তৃক পরিচালিত কার্যক্রমকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
জানা গেছে, সচিব কমিটিতে অনুমোদনের পর আইনের খসড়া ফিরে আসবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। তারপর যাবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে।
এ বৈঠকে অনুমোদনের পর তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হয়ে ভেটিংয়ের জন্য যাবে আইন মন্ত্রণালয়ে। তারপর তা উপস্থাপন করা হবে জাতীয় সংসদে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।