আমাদের পাড়াতে একটি নতুন সেলুন হয়েছে। শীততপ নিয়ন্ত্রিত। খরচ একটু বেশী তবু আজ লোভ সামলাতে পারলাম না। কারন ভেতরে টিভি দেখার ব্যবস্থা আছে! বাংলাদেশ - অষ্ট্রেলিয়ার প্রথম টেষ্ট খেলা চলছে। নাফিস - বাসার জুটি ওর্য়ানকে পিটাচ্ছে! চার চেয়ারের সবাই খেলা দেখছে।
সরাসরি নয়তো কাঁচে চোখ রেখে। নাপিতরাও কাজ করছে ঢিমেতালে অনেক সময় নিয়ে। দোকানের মালিক এবং প্রধান নাপিত; তার কিছুটা বাতিক আছে কদিন পরপর চুলের ডিজাইন করা। তিনি এক ভদ্রলোকের চুল কাটছেন এবং কথা বলছেন। বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে বলতে তারা স্রষ্টার সৃষ্টি বিষয়ে এলেন।
নাপিত এবং ভদ্রলোক ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। কি প্রসঙ্গে যেন নাপিত বলে বসলেন, আমি স্রষ্টার অস্থিত্বকে বিশ্বাস করি না।
ভদ্রলোক এবার মাথা উচুঁ করে বললেন, ‘কেন তুমি বিশ্বাস কর না তার কারনটা কি জানতে পারি?’
নাপিত বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই জানতে পারেন। আমি স্রষ্টার অস্থিত্বকে কেন বিশ্বাস করি না তা বুঝতে হলে আপনাকে পথে পথে ঘুরে দেখতে হবে। বলেন, তাঁর অস্থিত্ব যদি থাকতই তবে রাস্তায় কি এত অসহায় অনাহারী মানুষ থাকত? সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে যেত? যদি তিনি সত্যি থাকতেন তবে আমাদের এত কষ্ট থাকত না, বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করতে হত না।
ভদ্রলোক চুপচাপ কথা শুনে যাচ্ছিলেন। তাঁকে চিন্তিত দেখাচ্ছিল কিন্তু কোন কথা বললেন না। সম্ভাবত তিনি কোন তর্কের মধ্যে যেতে চাচ্ছিলেন না। নাপিত চুলকাটা শেষ করল। ভদ্রলোক দোকান থেকে চলে গেলেন।
নাপিত এবার আমার চুল কাটা আরম্ভ করল।
ভদ্রলোক সেলুন থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এক উস্কখুস্ক জটাধারী লোক পেলেন। জটাধারীকে নিয়ে ভদ্রলোক আবার সেলুনে ফিরে এলেন এবং নাপিতকে বললেন, ‘তুমি কি জানো? পৃথিবীতে কোন নাপিতের অস্থিত্ব নেই।
নাপিত আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইল, আপনি কি করে এমন কথা বলতে পারেন? এইতো আমি এবং আমিই নাপিত। কিছুক্ষণ আগেই তো আপনার চুল কাটলাম!
ভদ্রলোক চিৎকার করে বললেন, ‘না, নাপিতের কোন অস্থিত্বই নেই।
যদি থাকতই তবে এই লোকটির মত উস্কখুস্ক, অবিন্যস্ত, অপরিচ্ছন্ন লম্বা লম্বা জটাধারী দাঁড়ি চুলঅলা লোক রাস্তায় ঘুরে বেড়াত না।
নাপিত বলল, আহ্ নাপিত অবশ্যই আছে। লোক যখন আমার কাছে না আসে তখনই এমন হয়।
ভদ্রলোক এবার ভাবগম্ভীর দৃড়তার সাথে বললেন, স্রষ্টাও সর্বত্র বিরাজমান কিন্তু আমরা তাঁর কাছে যাই না। তাঁর সহযোগিতার জন্য আমরা প্রার্থনা করি না... তাইতো পৃথিবীতে এত হিংসা হানাহানি যুদ্ধ কষ্ট।
** ইন্টারনেটে পাওয়া গল্পের ছায়া অবলম্বনে
রচনা সময় # জানুয়ারী' ২০০৭
লেখাটি রহস্যপত্রিকা - জুন ২০১২ সংখ্যায় প্রকাশিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।