নো কমেন্টস পটুয়াখালী জেলার লোক সাহিত্যেরমধ্যে খেলার গান/ছড়া, মেয়েলী গীত, হয়লা, বোল, লোকগীতি, কবি গান, কর্ম সংগীত, মন্ত্র, রয়ানী, শ্লোক ভাঙ্গানী, ধাঁধাঁ বা হেয়াঁলী, ভাদু গান, ঘাটু গান, লোক বিশ্বাস/সংস্কার, বাউল, মুর্শিদী, মারফতী, রাখালী, জারী, ফকিরালী গান, সুরেশ্বরী গান, পটুয়ার গান ইত্যাদি।
রয়ানী-
রয়ানী বা ভাষাণ গান মূলত চাঁদ সওদাগর, লক্ষীন্দর ও বেহুলার প্রচলিত লোক কাহিনীভিত্তিক মনসাদেবির মাহাত্ম্যসূচক সংগীত। রয়ন বা স্মৃতিকথা থেকে রয়ানী শব্দের উদ্ভব। অন্যদিকে সারারাত এ গান পরিবেশিত হওয়ায় রজনী শব্দ থেকে রয়ানী শব্দের উদ্ভবও হতে পারে। আবার রয়ানী যাত্রা (যাত্রা যখন একস্থান থেকে অন্যস্থানে রওয়ানা বোঝায়) ফলে যাত্রার পূর্ব বঙ্গীয় কথ্য ভাষা প্রকাশক রওয়ানা থেকে রয়ানী শব্দের উদ্ভব।
স্মৃতিকথা বা মাহাত্ম্যগাথা বিশেষ করে সর্পদেবি মনসার জন্ম থেকে লক্ষীন্দরের পুনর্জীবন প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে তার দেবত্ম প্রচেষ্টার গীতিকাহিনীই রয়ানী। আর এর রচয়িতাদের বলা হয় রয়ানীকার।
রয়ানী এক ধরনের বিশেষ ভঙ্গিমার পালাগান। একজন হাত নেড়ে নেচে নেচে গান ধরেন- দোহারীরা তার সাথে ধুয়া তোলেন। দলপতির হাতে থাকে দুটি চামর।
গাইতে কোনো বিশেষ সজ্জার প্রয়োজন হয়না সাধারন পরিচ্ছদেই এই গান গীত হয়ে থাকে। বিধবা মেয়েরা এই গীত গেয়ে থাকেন। রয়ানী গাইলে সধবা মহিলা এবং পুরুষদের ক্ষতি হতে পারে এমন ধারনা প্রচলিত আছে।
বিজয়গুপ্তের কাহিনী ‘পদ্মাপুরান’, ‘মনসামঙ্গল’ বা ‘বিজয়গুপ্তের পাঁচালী’ শ্রাবণ মাসে অনেক পরিবারে নিয়মিত সুর করে পঠিত হত। বিপদ আপদ থেকে মুক্তি কিংবা সন্তানলাভের আশায় কিংবা বনিকের বানিজ্যপ্রসারের জন্য রয়ানী এবং মনসার পূজা মানত করত।
সেই পূজা মানত রক্ষা করতে গৌরনদীর ফুল্লশ্রীতে কয়েকটি রয়ানী দল গড়ে ওঠে। পটুয়াখালীতেও গড়ে ওঠে এবং সম্মানীর বিনিময়ে রয়ানী গায়। লাউকাঠী ইউনিয়নের অমল শীল এবং যতীন পাল মুহুরী রয়ানীকার।
পটুয়ার গান-
নদীতে একধরনের ছৈওয়ালা নৌকায় নারী-পুরুষ মাছ ধরে। এদের পুরুষরা একধরনের গান গায়, এই গানকে বলা হয় পটুয়ার গান।
পটুয়া মানে পট আঁকিয়ে। মাঝিদের পূর্ব পুরুষরা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পট এঁকে জীবন ধারন করতো। যেমন-
দেখো সতী নারীর পতি যেমন আশমানের চূড়া
অসৎ নারীর পতি যেমন ভাংগা নায়ের গুড়া
এ যে ঘোর কলিকাল....................................।
এ যে ঘোর কলিকাল মাতাল বৈতাল হইয়াছে প্রবল।
ধরম করম লজ্জা শরম হইয়াছে বিফল।
নিদানকালে কেউ কারো নয় দেখরে মন চাইয়া
তররে যদি ভবনদী হরিগুণ গাইয়া
ঘাটুগান-
বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকলে নৌকার পাটাতনের উপর এই গানের আসর বসে। ঘাটে ঘাটে ঘুরে এই গান গাওয়া হয় বলে একে ‘ঘাটুগান’ বলে। যেমন-
তমাল ডালে বইয়া কোকিল ডাকছে ডাকছে ঘনঘন
তোমরা কি কেউ দেখছ আমার প্রাণ বন্ধু সুজনরে।
ভেরণ কাডের নাওখানিরে মধ্যে তাহার ছইয়া
আগা হইতে পাছায় গেলে গলই পড়ে নুইয়ারে।
বইল্যা দেগো প্রাণ সজনী
ওগো আমি জনম দু:খিনী
প্রিয় বিনে মোর জান কান্দে দিবারজনী
আমার কপালে কি ল্যাখছে না জানি
ওগো আমি জনম দু:খিনী।
ভাদু গান-
বর্ণ হিন্দুদের কুমারী কন্যাদের ভাদ্র মাসের গীত ‘ভাদু গান’।
ঘইস্যা রহিলাম বইস্যা মাথা আর আমাদের কে আছে
মা রহিল তেপান্তরে প্রাণ জুগাব কার কাছে।
ফুলের মাঝে কেমন সাজে চরণ দুখানি
আজ মনের সাধে পূজব ভাদু আয়লো সজনী
আয় চারুবালা, আয় চঞ্চলা, আয়লো সবে সঙ্গিনী
পথে যেতে যেতে মালা গেথে করব ফুলের আমদানী
সারাদিন খেলাখেলি নাই ভাদু কেবলই মালাটি গেঁথেছি
পর ফুলহার ভাদুলো আমার তোমারই জন্য গেথেছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।