এক সময় বই ছিল আমার নিত্য সঙ্গী , অনেক রাত জেগে বালিশ নিয়ে উপুর হয়ে বই পড়তে পড়তে বুক ব্যাথা হয়ে যেত । পড়া শেষ হতো না । আজো বইয়ের কথা মনে হলে আমার বুকে ব্যাথা হয়, তাদের মলাটে ধুলোর আস্তর জমেছে বলে । বইয়ের পোকা থেকে এখন আমি ইন্টারনেটের পোকা ।
ভালো মানুষদের দেশে বলার কারণ একটাই ভুটানের মানুষরা এতো বেশী হেল্পফুল ওদেরকে ভালোমানুষ উপাধী না দিলে রীতিমতো অন্যায় হবে ।
ইন্ডিয়ার কাছে ট্রানজিট ভিসা নিয়াছিলাম, একবার ইন্ডিয়ার উপর দিয়া ভুটানে প্রবেশ করবো আরেকবার বের হয়ে বাংলাদেশে ফিরবো । কিন্তু ফেরার পথে বিমানে চলে আসায় আর ইন্ডিয়াতে দ্বিতীয়বার প্রবেশ করা হয়নি । আমার এই পোষ্ট মূলত ফটোব্লগ তাই ছবির মাধ্যমেই আমি যতটুকু সম্ভব তুলে ধরার চেষ্টা করবো, বিস্তারিত বিশ্লেষণে আমি যাবো না ।
এই বাসে করেই আমরা ঢাকা থেকে বুড়িমারী পৌছি খুব ভোরে ।
বুড়ির হোটেলে সকালের নাস্তাটা সারি ভরপেট ভাপ উঠানো ভাত, রুই মাছ , বেগুন ভাজি আর আরো কিছু সবজি দিয়ে ।
বুড়ির হোটেলের রান্নাটা অতি চমৎকার, আর মানুষ হিসাবে বুড়ি আরো বেশী চমৎকার । ওখানে গিয়ে বুতির হোটেলে না খেলে পস্তাইবেন
বুড়ির হোটেলের খাবারের মূল্য তালিকা ।
বুড়ির সাথে একটা পোজ না দিলে কি চলে ? বুড়া বুড়ি বলে কথা
ভোরে গিয়ে সীমান্তে অবস্থান করলে কি হবে, আমাদের ইমিগ্রেশনের লোকদের ঘুম ভাঙ্গতে সকাল ১০টা, তাই কি আর করা ঘুরেফিরে খালি ছবি তোলা । বুড়িমারীতে ভারতের সাথে আমাদের জিরো পয়েন্ট ।
দুই দেশের ইমিগ্রেশন পার হয়ে ট্যাক্সি নিলাম জয়গাঁ এর উদ্দেশ্যে ।
মাঝপথে জলপাইগুড়ির চা বাগান। কী মনোরম দৃশ্য।
পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার জয়গাঁতে ভারতের শেষ সীমানা, এবং এখান থেকেই ভুটান শুরু। শুরুতেই পড়ছে ভুটানের ফুন্টসলিং এবং এই ফুন্টসলিং-এই আমরা দুপুর দুইটা নাগাদ পৌঁছাই । চলন্ত গাড়িতে বসে তোলা ছবি ।
এটা কি ফুল জানি না, মাঝপথে এক জায়গায় আমাদের গাড়ি থামে তেল নেওয়ার জন্য, তখন তুলি এই ছবিটা ।
হাসিমারা রেলষ্টেশন, রেল লাইনের প্রতি আমার বিশেষ দূর্বলতা আছে তো তাই চলন্ত গাড়িতে থেকেই ছবিটা তুলে নেই ।
ফুন্টসলিং জিরো পয়েন্ট, মানে ইন্ডিয়ার সীমানা শেষ, আর ভুটান শুরু ।
একই রাস্তার উপর দাড়িয়ে এই গেইটের বাহিরে ইন্ডিয়া আর ভেতরে ভুটান । তবে একই রাস্তার উপর হলেও ভেতরে আর বাহিরে রাত-দিন তফাৎ, ইন্ডিয়ার পাশটা নোংরা অপরিচ্ছন্ন আর ভুটানের পাশটা ঝকঝকে তকতকে ।
যেন দেশ দুইটার মানুষেরই প্রতিচ্ছবি ।
কৃষ্ণচুরা গুলো কিন্তু আমদের দেশেই মতো তবে ভুটান এতো বেশী ফুল, ওটাকে ফুরের রাজ্য বললেও বেশী বলা হবে না ।
সামনে ট্যাক্সি ষ্টান্ড, থিম্পু যেতে হবে ওখান থেকেই, অবশ্য থিম্পু যাওয়ার বাস ও আছে....কিন্তু আমরা ট্যাক্সিতে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিলাম ।
আর ফুন্টসলিং থেকে ট্যাক্সি করে রওয়ানা হই ভুটানের রাজধানী থিম্পুর উদ্দেশ্যে । দুরত্ব ১৭২ কিলোমিটার ।
পাহাড়ি রাস্তা। পাহাড় ঘুরে ঘুরে যেতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন একই জায়গায় আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি। বাঁদিকে ভীষণ খাদ, কখনো সেই খাদ আবার চলে যাচ্ছে ডান দিকে । তাকাতেই ভয় করে।
অবশ্য দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে হতে থাকে, আর যেন চোখের দেখা বিশ্বাস করতে পারছি না। যেন স্বপ্ন দেখছি। রূপকথার গল্পের দেশে ভাসছি। পাহাড়ের ঢালে যেন প্রকৃতিকে ছড়িয়ে দিয়েছে বা কেউ যেন গেঁথে সাজিয়ে দিয়েছে ।
একটা আশ্চর্য্য ব্যপার হল এতদূর রাস্তায় এলাম, কোনও হর্ন শুনিনি। এত বাঁক, এত ঘুরপথ, তবু কোনও হর্ন দরকার হয় না। সবাই নিজের সাইডে যাতায়াত করছে। রাস্তায় গাড়িও অবশ্য কম। পাঁচটা বাজতেই ঘোর অন্ধকার নেমে আসছে পাহাড়ের গায়ে।
সূর্য আড়াল হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে চোরাবালির মতো পাহাড়ের শীর্ষে দেখা গেছে সূর্যকে। আর যতই উচ্চতায় উঠতে লাগলাম শীত ও ততই বাড়তে লাগলো ।
বুঝলাম কেনো ভুটান কে এশিয়ার সুইটজারল্যান্ড বলে ।
পুলিশ চেকপোষ্ট, পুলিশরা এতো ভদ্র হয় এই প্রথম জানলাম ।
চলন্ত অবস্থায় তোলা পাশের পাহাড়ের তোলা ছবি ।
পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে বাঁকে পাবেন এমন ভাসমান দোকান । এখানে খাদ্য আর পাণীয় পাওয়া যাবে ।
এক সময় আমরা পৌছে গেলাম ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে । তখন রাত ১০টা ।
অতঃপর গরম পানিতে গোসল করে ঘুম ।
এটা নাকি ওদের পাপ মোচন করে, ভেতরে অনেকগুলো ঘুড়ির নাটাইয়ের মতো চাকতি, এগুলো ডান দিকে ঘুরাতে হয় আর কিছু একটা জপতে হবে ।
মাঝে মাঝে মেঘগুলো এমনিভাবে থিম্পুর মাটিতে নেমে আসে ।
আগেই বলেছি, ভুটানকে ফেলের রাজ্য ও বলা যায়,,,,,,,,
থিম্পুতে যে হোটেলে ছিলাম ।
থিম্পুর নদী, নাম জানা হয়নি ।
এই বৌদ্ধ মুর্তিটি অনেক উঁচু পাহাড়ে বসানো আছে, থিম্পু শহরের যে কোন স্থানে থেকে এটা দেখা যায় । রাতে খুব ভালো লাইটিং হয় । মুর্তিটার উচ্চতা ১৬৯ফুট ।
থিম্পুর জিরো পয়েন্ট, এই স্থাটির নাম ক্লক টাওয়ার ।
পাহাড়ের উপর থেকে থিম্পু শহর ।
রাতের থিম্পু নগরী ।
চলবে...................
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।