আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।
দুর্গম গিরির বাঁকে বাঁকে মৃত্যুফাঁদ, সে ফাঁদ উৎরে প্রথম বাংলাদেশী নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করা নিশাত মজুমদারকে পুষ্পবৃষ্টিতে বরণ করে নেয়া হলো গতকাল বিকেলে। ১৯ মে তিনি ও এম এ মুহিত এভারেস্ট জয় করেন। তারপর দ্বিতীয় নারী হিসেবে এভারেস্টে উঠেছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন।
কাল বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে নিশাত ও মুহিত নামেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফাইটে তারা দেশে আসেন।
নিশাত দেশের মাটিতে পা রেখেই তার অনুভূতির কথা জানিয়ে বললেন, ‘নারী হিসেবে নিজেকে দেখিনি। দেখেছি একজন মানুষ হিসেবে। সে হিসেবেই আমি এভারেস্ট জয় করেছি।
এ জয়ের পদে পদে বিপদ ছিল। মনে হচ্ছে জীবনের শেষ এখানেই। সেখান থেকে ফিরে এসেছি। ভালো লাগছে। ’
তিনি বলেন, ‘যত রকম ভয়ঙ্কর সমস্যা আছে, তার সব সম্মুখীন হয়েছি।
এটা আমার দ্বিতীয় জন্ম। কারণ যে সমস্যায় পড়েছিলাম, তাতে মনে হয়নি বেঁচে যাব। জীবন মৃত্যুর মাঝখানে ছিলাম। পর্বত আরোহণের সময় সব শক্তি শেষ হয়ে গিয়েছিল। নামার সময় আমার শরীরে আর কোনো শক্তি ছিল না।
দুই দুইবার বরফ ধসের সম্মুখীন হয়েছি। ’
তিনি বলেন, ‘আমার এ বিজয় দেশের তরুণ-তরুণীদের উদ্দেশে উৎসর্গ করছি, যাতে তারা মাদক, ধূমপান, নেশা ত্যাগ করে দেশের কথা ভাবে, দেশের উন্নয়নের কথা ভাবে। ’
নিশাত বলেন, ‘আবহাওয়া খারাপ ছিল। মনে হচ্ছিল খারাপ আবহাওয়া আমাদের তিব্বতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। বরফ ধসের কারণে মাথা ও কপালে আঘাত পাই।
’
নিশাতের সাথে আরেক এভারেস্টজয়ী মুহিত বলেন, ‘আগেরবার তিব্বত দিয়ে উঠেছিলাম। এবার নেপাল দিয়ে উঠি। কুম্ভু আইস ফলের কারণে আমাদের সাথের ১২ থেকে ১৩ জন মারা যায়। আমরা অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছি। নিশাত ঝড়ে ৩০ ফুট দূরে উড়ে যায়, পরে তাকে তুষারের মাঝখানে পাওয়া যায়।
’
তিনি জানান, ‘তিব্বতের চেয়ে নেপাল দিয়ে এভারেস্টে ওঠা খুবই কঠিন। এভারেস্টে উঠেই আমি বলি, বেঁচে আছি। ’
বিমানবন্দরে নিশাতকে স্বাগত জানান তারা মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাক্সীসহ বিভিন্ন সংগঠন। সেখান থেকে শোভাযাত্রা সহকারে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসেন। সেখানে দেশের সব শহীদদের উদ্দেশে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্ট জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করা লক্ষ্মীপুরের মেয়ে নিশাত মজুমদার ও এম মুহিত দুইজনেই বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং কাবের সদস্য। মুহিতের এটি দ্বিতীয়বার এভারেস্ট জয়।
২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন মুসা ইব্রাহিম। তবে বাংলাদেশের কোনো মহিলা হিসেবে প্রথম সেই কৃতিত্বের অধিকারিণী হলেন নিশাত মজুমদার।
কাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন, নিশাত মজুমদারের এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের সব পর্বতারোহীকেই দারুণ গর্বিত করেছে।
দেশের পর্বতারোহণে এটা এক বিরাট আনন্দের ঘটনা।
ব্যবসায়ী বাবা আবদুল মান্নান মজুমদার ও গৃহিণী মা আশুরা মজুমদারের চার সন্তানের মধ্যে নিশাত দ্বিতীয়। তার জন্ম ১৯৮১ সালে লক্ষ্মীপুরে। রাজধানীর পান্থপথে ভাড়া বাসায় থাকেন তারা ।
নিশাত মজুমদার ফার্মগেটের বটমূলী হোম উচ্চবালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন।
বর্তমানে তিনি ঢাকা ওয়াসায় হিসাবরণ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।
বাংলাদেশের প্রথম নারী এভারেস্ট জয়ী নিশাত ২০০৩ সালে এভারেস্ট বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া (৩, ১৭২ ফুট) কেওক্রাডং জয় করেন।
২০০৬ সালের মার্চে বিশ্ব নারী দিবস উপলে বিএমটিসি আয়োজিত বাংলাদেশের নারী অভিযাত্রী দলের সাথে ফের কেওক্রাডং চূড়ায় উঠেন তিনি। একই বছরের সেপ্টেম্বরে বিএমটিসি আয়োজিত নারী অভিযাত্রী দলের সাথে তিনি এভারেস্ট বেস ক্যাম্প (১৭ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতা) ট্র্যাকিংয়ে অংশ নেন।
এরপর ২০০৭ সালের মে মাসে বিএমটিসির অর্থায়নে দার্জিলিংয়ের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ প্রশিণ নিয়ে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে হিমালয়ের মেরা পর্বতশৃঙ্গ (২১ হাজার ৮৩০ ফুট) জয় করেন নিশাত মজুমদার।
এভারেস্ট অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে পরের বছরের মে মাসে হিমালয়ের সিংগুচুলি পর্বতশৃঙ্গে (২১ হাজার ৩২৮ ফুট) ওঠেন। একই বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি ভারতের উত্তর কাশীর গঙ্গোত্রী হিমালয়ের গঙ্গোত্রী-১ পর্বতশৃঙ্গে (২১ হাজার ফুট) বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অভিযানে অংশ নেন।
নিশাত ২০০৯ সালের এপ্রিলে পৃথিবীর পঞ্চম উচ্চতম শৃঙ্গ মাকালুতে (২৭ হাজার ৮৬৫ ফুট) ভারত-বাংলাদেশ যৌথ অভিযানে অংশ নেন। গত বছরের অক্টোবরে বিএমটিসি আয়োজিত হিমালয়ের চেকিগো নামের একটি শৃঙ্গেও সফল অভিযানে যান নিশাত। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।