নারী দেশে দেশে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে গর্ভবতী মেয়েরা প্রতি বছর টিউনিশিয়ায় প্রায় ৮ হাজার কন্যাসন্তান স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়৷ এর প্রধান কারণ অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ৷ কিন্তু যেটা সবচেয়ে অবাক করে, সেটা হলো সেই সব গর্ভের পিতৃ পরিচয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষকরাই এখানে ভক্ষক! শুধু টিউনিশিয়াই নয়, আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের বহু দেশেই দেখা যায় এই একই চিত্র৷ চোখে পড়ে গর্ভের ভারে ভারাক্রান্ত ছোট ছোট অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের৷ নিজ শরীর সম্পর্কে এদের স্বচ্ছ কোনো ধারণা নেই, নেই গর্ভের সন্তানকে বড় করার ক্ষমতা৷ অথচ সমাজে পুরুষতন্ত্রের চাপটা আছে ঠিকই৷ আর সেই চাপের ফলেই তারা স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়, বাধ্য হয় গর্ভের জারজ সন্তানকে আড়াল করতে৷ অথচ ভবিষ্যতের হাতছানিই তাদের স্কুলের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছিল৷ তখন কি তারা ভেবেছিল ক্লাস ঘরের এই গমগমে আওয়াজেই একদিন তাদের কণ্ঠ রোধ হওয়ার উপক্রম হবে? সোমবার সকাল৷ ৮টা বাজতে আর কয়েক মিনিট বাকি৷ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে ইহানামিলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস৷ লাইন দিয়ে সারি সারি ছেলে-মেয়ে শ্রেণিকক্ষের দিকে এগোচ্ছে৷ সকলের পরনেই সাদা শার্ট, টাই৷ এছাড়া ছেলেরা পরেছে গাঢ় নীল রঙের প্যান্ট আর মেয়েরা ঐ একই রঙের স্কার্ট৷ প্রতি বছর টিউনিশিয়ায় প্রায় ৮ হাজার কন্যাসন্তান স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয় এস্টার'এর পরনেও এই একই পোশাক৷ দশম শ্রেণিতে পড়ছে এস্টার৷ কিন্তু তার ক্লাসের আর পাঁচ জনের মতো নিজের ওপর আর যেন বিশ্বাস নেই মাত্র ১৯ বছরের এই মেয়েটির৷ আর সেটা হবে নাই বা কেন? মাত্র এক বছর আগে যে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে এস্টার৷ তার কথায়, ‘‘গর্ভাবস্থায় আমি নিয়মিত স্কুলে আসতে পারি নি৷ কত ক্লাস যে আমায় কামাই করতে হয়েছে, পিছিয়ে পড়তে হয়েছে...শুধুমাত্র শারীরিক অসুস্থতার কারণে৷ পেটে বাচ্চা আসার পরে আমার সব কিছুই কেমন যেন বদলে গিয়েছিল৷ এখনও যার জের কাটেনি৷'' অবশ্য অন্যান্যদের তুলনায় এস্টার'এর ভাগ্য প্রসন্নই বলতে হবে৷ আর এ জন্য এস্টার'এর বাবা-মা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য৷ বাচ্চা পেটে আসা মানেই যে এস্টার'এর ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাওয়া – সেটা তাঁরা মেনে নেন নি৷ বরং তাঁরা সবটা সময় এস্টার'এর পাশে ছিলেন, এখনও আছেন৷ কিন্তু সবার গল্প তো সমান নয়৷ এস্টার'এর ক্লাসেই আরো চার জন মেয়ে রয়েছে, যারা এস্টার'এর মতোই বাচ্চা প্রসব করেছে স্কুলে থাকতেই৷ তারা আজ হিমশিম খাচ্ছে স্কুলের গণ্ডি পেরোতে৷ এরা ছাড়া আরো অসংখ্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মা বাধ্য হয়েছে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে৷ তাদের বাচ্চাদের দেখাশোনা করার যে কেউ নেই৷ তাছাড়া, এত অল্প বয়সে মা হওয়া, শিশুর দেখাশোনা করা এবং পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া – এটা চাট্টিখানি কথা নয়৷ তার ওপর বেশিরভাগ মেয়েরা যেখানে থাকে সেখান থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার, যেটা তাদের পায়ে হেঁটেই পার করতে হয়৷ ফলে বাড়ি পৌঁছতে তাদের সন্ধ্যা হয়ে যায়৷ এস্টার জানায়, ‘‘স্কুল থেকে বাড়ি আসার পর আমি প্রায়ই খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি৷ তখন মেয়ের দেখাশোনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে আমার জন্য৷ কিন্তু আমি মা৷ তাই ক্লান্তি সত্ত্বেও আমাকে তার পরিচর্যা করতে হয়৷ আমিই যে তাকে এ পৃথিবীতে নিয়ে এসেছি, এটা আমি কীভাবে ভুলে যাবো?'' কীভাবে এই মাতৃত্বের দায়িত্ব তার ছোট ছোট কাঁধে এসে পড়েছে – সে কথা কিছুতেই বলতে চায় না এস্টার৷ তবে টিউনিশিয়ার এ অঞ্চলে এস্টার'এর মতো বহু মেয়ে রয়েছে৷ আফ্রিকার আরেক রাষ্ট্র তানজানিয়ার গাইটা রাজ্যের পরিস্থিতিও তথৈবচ৷ সেখানকার ‘তানজানিয়া মিডিয়া উইমেন অ্যাসোসিয়েশন'-এর আনানিলিয়া নিকা বলেন, ‘‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক স্কুল শিক্ষকরাই মেয়েদের শ্লীলতাহানি করে থাকে৷ ক্লাসের অল্প বয়স্ক মেয়েদের তারা বলে, ‘আমার সঙ্গে না যৌন সম্পর্কে না গেলে আমি তোমাদের পরীক্ষায় পাশ করাবো না৷' বলা বাহুল্য, এটা ক্ষমতার একটা অপব্যবহার৷ এতে স্কুল থেকে বিতাড়িত হওয়ারও একটা ভয় কাজ করে মেয়েদের মধ্যে৷ অনেক কিছু, অনেক অনৈতিক ঘটনাই এভাবে চলতে থাকে স্কুলের চার গণ্ডির মধ্যে৷ এটা খুবই দুঃখজনক৷'' এ সমস্যার একটা বিধান হওয়া প্রয়োজন৷ এমনটাই আশা করেন আনানিলিয়া নিকা৷ কিন্তু টিউনিশিয়া বা তানজানিয়ায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এহেন ঘটনাকে বিশেষ পাত্তাই দেয় না৷ অনেক শিক্ষকই তাই অন্যায় করেও পার পেয়ে যায়৷ যদিও তানজানিয়ার শিক্ষামন্ত্রী শুকুরা কাভাম্বা' বক্তব্য, ‘‘যারা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের জোর করে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে, তাদের কঠোর শাস্তির বিধান আমরা করেছি৷ আগের তুলনায় আইনেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ তাই মেয়ের বাবা-মা যদি শিক্ষকটিকে চিনিয়ে দেন, তাহলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে৷'' কিন্তু সেখানেই যে আসল সমস্যা! সামাজিক চাপকে অগ্রাহ্য করে কোন বাবা-মা নিজের মেয়ের লজ্জার কথা জন-সমক্ষে প্রকাশ করার সাহস পাবেন? তাও আবার টিউনিশিয়া বা তানজানিয়ার মতো পিছিয়ে থাকা সমাজ ব্যবস্থায়? সূত্র: ডয়েচে ভেলে
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।