আপাতত ঘুরপাক খাচ্ছি!
❀
কাশফুলের সাথে নদীর একটা বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। এটা হতে পারে পবিত্র বন্ধুত্ব সম্পর্ক। হতে পারে পরস্পর নির্ভরশীলতার সম্পর্ক। আবার ক্ষুদ্র রঙ বেরঙের পাখি কিংবা জলচর পাখির সাথে কাশফুলের একটা সম্পর্ক আছে। পাখিরও আছে জল ও আকাশের সাথে সম্পর্ক।
আকাশের আছে মেঘের সাথে। মেঘের আছে বাতাসের সাথে সম্পর্ক। মেঘ, বাতাসের আছে বৃক্ষের সাথে সম্পর্ক। বৃষ্টি হয়ে সবুজের সাথে সম্পর্ক।
❀❀
যখন তুমি আকাশ দেখো।
শুধুই কি আকাশ দেখো। জলের নীল রেখা দেখো। যখন তুমি নদী দেখো আকাশের নীল ছবি দেখো। আকাশে মেঘ দেখলে বুঝবে সেখানে কাশফুলের ছোঁয়া আছে, বাতাসের ঘ্রাণ আছে। বস্তুত তুমি যখন কাশফুল দেখো।
একই অঙ্গে বহুরূপ দেখো। আকাশে সাদা মেঘের রঙ দেখো। যা ভালবাসার তথা পবিত্রতার মুকুট ধারণ করে আছে পৃথিবীর। সবুজ পাতা দেখো, সেখানে প্রকৃতির রঙের ছোঁয়া দেখো।
কাশগাছে কান পাতলে শুনবে পাখির কথা।
পাখির সাথে জলের তলের মাছেদের কথা। ধু-ধু চরের কথা। ধু-ধু চরে বিরাজমান নদী পয়স্তীদের কথা। মানব জীবনের কথা। কিংবা একটা রুপকথা।
❀❀❀
কথিত আছে, নদী তীরে যে সারি সারি কাশফুল দেখা যায়। তা একদা এক অপসরার কেশের মত ঘনকালো দীঘল ছিল। অপসরা হলো শরৎ ঋতু পরিচালিকা সুরকেশী। শরৎকাল এলে এই অপসরা স্বর্গ থেকে তার দীঘল ঘন কালো কেশগুলো ছড়িয়ে দিতো কাশফুল রুপে। ছড়িয়ে নদীর শারদীয় বাতাস ও রোদে শুকাতো।
শারদীয় বাতাসে কাশফুলে একটা নরম সুরেলা সুরের মূর্ছনা উঠতো। রাত্রীবেলা সেই সুরের মোহে নদীকূলবতী যুবক ও যুবতীরা ছুটে আসতো, প্রণয়ে মত্ত হতো।
❀❀❀❀
নদীর নাম পিয়াইন। এই নদী তীরবর্তী লোকজন নিত্য নদী ঘাটে আসতো। গৃহস্থালীর জলজ কাজকর্ম সম্পাদন শেষে বাটিতে ফিরে যেত।
এরকমই এক ঘাট কানাইঘাট। এই ঘাটে লোকজন প্রাত্যহিক কাজ সম্পাদন করতে আসতো। কেউবা দিনান্তে সন্ধ্যাবেলা সুখ দুঃখের আলাপ সারতে আসতো।
❀❀❀❀❀
এক শরৎকালের ঘটনা। চারিদিকে ঘন কালো দীঘল কাশফুল বাতাসে ঢেউ খেলে যায়।
ঋতু পরিবর্তনের চক্রে সুরকেশী এবার যেন দ্রুত পদক্ষেপেই ধরায় এসেছে। পিয়াইন নদীর দুই তীর যেন এক অপার বিস্ময়ের রুপ ধারণ করেছে। নদী তীরের বৃক্ষরাজীগুলো ভিন্ন সৌন্দর্যে শোভিত। সারাদিন নানান পাখি এ গাছ ও গাছে গান গেয়ে উড়ে বেড়ায়। ফুলে ফুলে প্রজাপতিরা ডানা মেলে ওড়ে।
সন্ধ্যা হতে না হতেই কাশফুলে যেন বীনের বাজনা শুরু হয়। সারারাত অব্দি চলে মোহময় সুরছন্দ। একদিন পূর্ণিমা রাতে এই সুরের টানে এক প্রেমিক জুটি আকাশ-মেঘ ছুটে আসে কানাইঘাটে। তারা হাতে হাত রেখে ঘাটের ধারে জলের কিনারায় বসে সারা রাত চাঁদ দেখে, নদীর জলে জোছনার খেলা দেখে কাটায়।
❀❀❀❀❀❀
সারারাত কেশচর্চা শেষে সুরকেশী কিছুটা হাঁফিয়ে উঠেছে যেন।
পৃথিবী সম্পর্কে উদাসীন সুরকেশী কাঁধ ঘুড়িয়ে নদীর দিকে চোখ মেলে। কিন্তু একি! সেই চোখের পলক যেন পড়তেই চায় না। আকাশের রূপ সৌন্দর্য দেখে সুরকেশী প্রেমে পড়ে যায়। মর্ত্যের কোন মানুষের সাথে অপসরার প্রণয় হতে পারেনা, এই ভেবে সে দু'কদম পিছিয়ে যায়। স্বর্গের দিকে পা বাড়াতে চায়।
কিন্তু অন্যান্য দিনের ন্যায় তার কদম এগোচ্ছে না। তার তো অনেক তারা আছে। তার অন্যান্য ঋতু পরিচালিকা বোনেরা সারারাত সুনিদ্রা কুসুম তেল নিয়ে তার অপেক্ষায় বসে আছে। সে ফিরলেই তার কেশে এখনকার নিয়মমাফিক এক নদী সুনিদ্রা কুসুম তেল দেয়া হবে। কারণ সামনের হেমন্তেই তার বিয়ে।
পাত্র স্বয়ং হেমন্ত ঋতু পরিচালক। তার সৌন্দর্য আরও বিকশিত হওয়ার জন্য কিছু দিন সুনিদ্রা প্রয়োজন। এদিকে সে এক দুনির্বার আকষর্ণে বাঁধা পড়ে যায়। আকাশ কে ছাড়া তার পা অচল যেন। সে আর কিছু ভাবতে পারে না।
শুধু আকাশের ভাবনা তার সমস্ত সত্তা জুড়ে আঁকড়ে ধরে। আচমকা সে আকাশকে বুকে টেনে নেয়ার জন্য হাত বাড়ায়। কিন্তু সুরকেশীর এহেন অপরাধে বাধ সাধে মেঘ। সে কোনক্রমেই আকাশকে ছাড়বে না।
❀❀❀❀❀❀❀
সুরকেশী রেগে গিয়ে বলে, আমার কেশের গানে তোমরা ছুটে আসো।
আমার কারণেই তোমরা আজ এক পার্থিব জুটি। আমি সহজেই তোমাকে ছাড়বো না। শর্ত দেয়। ঠিক আছে তুমি যখন আকাশকে ছাড়বে না, আবার আমারও চোখের মনি আকাশ। একটা কিছু বিনিময় করি।
এরপর আমি তোমাদের এই মর্ত্যে কখনো আসবো না। শুধু দূর থেকে দেখে যাবো আকাশকে। এই কথা বলে সে দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্বর্গের পথে পা বাড়ায়। নদী তীরের সব ঘনকাল কাশফুল বৃদ্ধাদের মত পাকা সাদা কেশে রুপান্তরিত করে। কেশের গান এখন ছোট ছোট রঙ বেরঙের পাখিরা গায়।
বিনিময়ে মেঘের দু'চোখ অন্ধ করে দেয়। প্রেমিকার অন্ধত্বের এই দুঃখে আকাশ হয়ে যায় নীল। সেই নীল আকাশের বুকে অন্ধ মেঘ দিক হাতড়ে উড়ে বেড়ায়। বেশী মন খারাপ হলে অঝরধারায় কাঁদে। মন খারাপের মানদন্ডে কান্নার জল ঝরায়।
ছবিঃ নিজস্ব এ্যালবাম। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।