আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কল্পগল্পঃ- হাইব্রীড কাউ প্রজেক্ট

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

হটাৎ করে ড. কাউওয়াসাকির ডাক পড়েছে বিজ্ঞান পরিষদর সর্বোচ্চ সভায়। সাধারনত পশু বিশেষজ্ঞকে বিজ্ঞান পরিষদের সভার ডাকা হয় না। কিন্তু গতকাল একটা সম্প্রদায়ের লোক একটা সভায় মিলিত হয়ে পশুহত্যা - বিশেষ করে গরু হত্যার পাশবিকতার বিষয়ে আলোচনার পর গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেবে বলে চিন্তা ভাবনা শুরু করার কথা নিয়ে আলোচনা করেছে। সেই সভার দৃশ্য আর খবর কাউওয়াসাকি তার তৃতীয় মাত্রার টিভিতে শোয়ার ঘরে শুয়ে শুয়ে দেখেছে। সাধারনত সে টিভির খবর দেখেন না।

কিন্তু পশু বিষয়ক একটা খবর দেখানোর কারনে বাসার কাজের জন্যে ব্যবহূত ৮ম মাত্রার রোবটটি ওর মেমোরিতে সেই খবরটি রেকর্ড করে রাখে। পরে গুরুত্বের বিবেচনায় ১ম শ্রেনীকে ফেলে তাকে খবরটি দেখতে বলে রোবট। খবরে দৃশ্য দেখার সময় উনি ভালভাবে লক্ষ্য করে দেখেছে সভায় উপস্থিত গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যে আসনে বসে ছিলো তা ছিলো গরুর চামড়ার তৈরী আর উপস্থিত মহিলাদের কাঁধে শোভা পাচ্ছিলো গরুর চামড়ার ব্যাগ। পুরুষদের কোমড়ে পড়েছিলো গরুর চামড়ার বেল্ট আর সবারই পড়নে ছিলো গরুর চমড়া দিয়ে তৈরী জুতা। এই বিষয়টা কাউওয়াসাকিকে খুবই ভাবিয়েছে।

এরা গরুর চামড়া ব্যবহারের বিষয়ে কোন কথা বলেনি - মানে চামড়া এরা ব্যবহার করবে - সেই জন্যে গরু কাঁটার কারগরী বিষয়গুলো হয়তো একটু পরিবর্তন করতে হতে পারে। কিন্তু চামড়ার জন্যে কাঁটা গরুর মাংস যদি না খেয়ে ফেলে দিতে হয় তাতে যে বিরাট অপচয় হতে তা নিয়ে মহা চিন্তিত হয়ে কাউওয়াসাকি। সবচেয়ে মজার দৃশ্য দেখে সে মহাবিভ্রান্ত হয়ে গেল - সেই সভার শেষে সবাই মহা আনন্দের সাথে গরুর মাংসের স্টেইক দিয়ে ডিনার করলো - তখন কারো চোখে মুখে পশুহত্যার পাশবিকতা বিষয়ক উৎকন্ঠার লেশমাত্র ছিলো না। বিজ্ঞান পরিষদের সভা শেষ হয়ে গেল দ্রুতই। সভায় অর্থনীতি বিভাগকে সম্প্রদায়টির গরুর মাংস না খাওয়ার কারনে কি ধরনের অর্থনীতির ক্ষতি হতে পারে সেই বিষয়ে সমীক্ষা চালাতে বলা হলো।

এদিকে গোয়েন্দা বিভাগকে সম্প্রদায়টির উপর নজর রাখতে বলা হলো - গরু ছাড়াও ওরা কি মোরগ, হাঁস বা শুয়ড়ের মাংস খাওয়ার বিষয়ে একই ধারনা পোষন করে কিনা বা একই ধরনের কথা বলে কিনা দেখার জন্যে। সবশেষে কাউওয়াসাকির বিভাগকে মোটা অংকে অর্থ বরাদ্ধ দেওয়া হলো যাতে একটা হাইব্রীড গরু তৈরী করে দ্রুত বাজারে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয় - যার মাংস খাওয়ার সময় কোন ধরনের নিসংশতা কিষয়ক প্রশ্ন উঠবে না। (২) অনেক দিন ঘরে বসে বসে আর্কাইভ থেকে প্রাচীন আমলে কারশিমা-গোবিন্দের হিন্দি মুভি দেখে দেখে কাউওয়াসাকির বুদ্ধাংক দারুন ভাবে কমে গিয়েছে। গতকাল গোপনে নিজের বুদ্ধাংক মেপে দেখলো ৬০ এ নীচে - অবাক হয়ে ভাবলো - এতো বানরের চেয়েও কম। মেশিন থেকে দ্রুত ফলাফল মুছে ফেললো।

কারন বিজ্ঞান পরিষদ যদি টের পায় - তবে তাকে হয়তো মংগল গ্রহে রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে পাঠিয়ে দেবে - সেখানে এখন আদিমকালে রাজনৈতিক চর্চা চালানো হচ্ছে সভ্যতার বিকাশের ধারাবাহিকতা রাখার জন্যে। কাউয়াসাকি দ্রুত কাজ শুরু করে দিলেন। সহকর্মীদের উপর প্রচন্ড চোটপাট আর অতিরিক্ত সময় দফতরে থেকে দফতরকে রীতিমতো যুদ্ধের হেডকোয়ার্টার বানিয়ে ফেললেন। অবশেষ একসমপ্তাহ পরে এক সহকর্মী তরুন বিজ্ঞানী ড. আরিফভ একটা ধারনা নিয়ে এলো। তার ধারনার উপর একটা প্রেজেন্টেশন হলো।

সেখানে সে দেখালো আদিকাল থেকে গরু এখনও গরুই আছে - গরুর বুদ্ধি বিবেচনার কোন উন্নতি হয়নি। সুতরাং হাইব্রীড বানানোর প্রজেক্টে যদি শুধু গরুর উপর ফোকাস করা হয় - তবে হয়তো আশানুরুপ ফলাফল পেতে কয়েক হাজার বছর লাগবে। তাই মানুষের নিকটতম প্রানী বানরকে ফোকাস করে তার প্রজেক্ট দাড়াবে। বানর আর গরু মিলিয়ে একটা শংকর তৈরী হবে। কিন্তু মগজের জায়গার একটা ৪র্থ শ্রেনীর রোবটের কপোট্রন লাগানো হবে।

জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এদের কোষের মিউটেশন কয়েক লক্ষ গুন বাড়িয়ে দেওয়া হবে। আর কপোট্রনের প্রোগ্রামের কোডের কষ্টের অংশটা মুছে ফেলা হবে। এর ফলে সেই হাইব্রীড গরুটা নিজেই নিজের মাংস কেটে ক্রেতাদের দিতে পারবে। সেই সাথে সাথে তখন চমৎকার মেয়েলি গলায় বলে উঠবে - -আশা করি এই মাংসের স্টেইক দারুন নরম আর সুস্বাদু হবে। যদি খেতে সমস্যা হয় - দয়া করে আমাদের টেক্স করবেন - আপনার বাসায় মুল্যসহ নতুন মাংস পাঠানো হবে।

হাইব্রীড কাউগুলোকে নিয়ে বিক্রেতাদের গাড়ী ক্রেতাদের বাড়ী বাড়ী যাবে। নিজেরাই নিজেদের মাংস কেটে ক্রেতাদের হাতে উঠিয়ে দেবে। তখন ক্রেতা যদি কাঁটার দৃশ্য দেখতে না চায় - তাহলে একটা বিশেষ পোষাক পড়ানো হবে হাইব্রীড গরুকে - যে মাংস কাটার সময় হাসিমুখে কথা বলবে ক্রেতার সাথে। হয়তো বলবে - কি বিচ্ছিরি আবহাওয়া হয়েছে বলুত তো! এই থিসিসের একটা বড় সমস্যা হলো কাঁটলে যে রক্ত বেরুবে - তা বন্ধ করা যাবে কিভাবে সেই বিষয়টি এখনও ড. আরিফভ ঠিক করতে পারছেন না। রক্তের বিকল্প কি হতে পারে তা এখনও বৈজ্ঞানকিরা বের করেনি।

বিষয়টা এতো গুরুত্বপূর্ন হতো না যদিনা পশু হত্যার পর বহমান লাল রক্ত সম্প্রদায়টিকে বিব্রত করতো। তারপরও আশাবাদী কাউয়াসাকির টিম - দ্রুতই একটা মানবিক বোধ সম্পন্ন হাই ব্রীড গরু বাজারে ছাড়া যাবে। যাতে করে ভবিষ্যত প্রজন্মের একটা অংশকে প্রোটিনের অভাব জনিত নিউরাল রোগ থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হবে। (ড. জাফর ইকবালের কপোট্রনিকেল সুখদুঃখ থেকে ধারনাটি ধার করা হয়েছে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।