আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। আমি কিছু বলতে চাই। আমাকে বলতে দিন.। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সাংবাদিকদের ওপর হামলায় জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার একজন নিজেকে সরকার সমর্থিত যুবলীগের কর্মী বলে দাবি করেছে।
সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের ওপর হামলার কথা স্বীকারও করেছে জাহেদুল ইসলাম সৌরভ নামে ওই যুবক।
তবে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম বলেছেন, জাহেদুলের এই দাবি মিথ্যা।
সোমবারের হামলার পর পুলিশি অভিযানে গ্রেপ্তার অন্য দুজন নিজেদের সম্úৃক্ততা অস্বীকার করেছে। তাদের নাম ইলিয়াস মাষ্টার সুমন ও মীর হোসেন।
মহাখালীর আমতলীতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কার্যালয়ের নিচে সোমবার রাতে একদল যুবক অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। এতে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন তিনজন।
এরপর রাত থেকে অভিযান চালিয়ে মহাখালী এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার তাদের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে আনা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সকালে জাহেদুলকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জড়িত অন্যদের নামও পাওয়া গেছে। ”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ইতোমধ্যে বলেছেন, হামলাকারীরা যে দলেরই হোক তাদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।
জাহেদুল সাংবাদিকদের জানান, তিনি যুবলীগের ওয়ার্ডের ‘গ’ ইউনিটের কর্মী। তিনি তিতুমীর কলেজে ডিগ্রি প্রথম বর্ষে পড়ছেন।
মির্জা আজম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যুবলীগের গঠনতন্ত্রে ‘গ’ ইউনিট বলে সাংগঠনিক কোনো কাঠামো নেই। ”
গ্রেপ্তার জাহেদুলের দাবি উড়িয়ে তিনি বলেন, “এটা পুরোপুরি বোগাস। ”
জাহেদুল জানান, সকালে বাসায় ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ৬৯/২ সাকারিয়া মসজিদের গলির বাসা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
হামলায় আহত সাংবাদিক নেওয়াজ মোহাম্মদ রিফাত, সালাউদ্দিন ওয়াহেদ প্রীতম এবং অফিসকর্মী রুহুল আমিনের দেহে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন থাকলেও হামলার সময় কাউকে ছুরিকাঘাত করা হয়নি বলে দাবি করেন জাহেদুল।
ছুরিকাঘাত না হলে এত রক্তপাত কীভাবে হলো- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “রক্তপাতের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ”
জাহেদুল হামলায় জড়িত হিসেবে তিন ‘বড় ভাই’য়ের নাম বলেন। তারা হলেন- ইমরান, ইয়াকুব ও সাদ্দাম। এদের দুজন একটি বেসরকারি ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে বলে দাবি করেন তিনি।
কী চাকরি করে- প্রশ্ন করা হলে তা বলতে পারেননি তিনি।
ওয়ার্ড যুবলীগের ‘গ’ ইউনিটের ‘বড় ভাইদের’ নাম জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ‘জানি না’ বলে এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, “এই বড় ভাইদের একজন আমার চাকু রেখে দেয়। ”
যদিও এর আগেই জাহেদুল বলেছিলেন, সাংবাদিকদের ছুরিকাঘাত করা হয়নি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গিয়ে জাহেদুল বলেন, “আমি সাইকেলে করে যাচ্ছিলাম।
এ সময় বিডিনিউজ কার্যালয় ভবনের সামনের ফুটপাতে মালামাল রাখা ছিল। আমি মালামাল সরাতে বললে আমাকে একজন বলে- ‘এটা রাস্তা না, ফুটপাত। এর পরপরই তার সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা হয়। আমি ঘটনা মোবাইল ফোনে বড় ভাইদের জানাই। ”
জাহেদুল দাবি করেছে, তাকে আটকে রেখে মারধর করা হয়।
এরপর তার ‘বড় ভাইরা’ ঘটনাস্থলে আসেন।
গ্রেপ্তার ইলিয়াস হামলায় নিজেদের সম্úৃক্ততা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি কিছু জানি না। রাস্তা থেকে ধরে এনে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। ”
মীর হোসেনও বলেন, “আমি কিছু জানি না। আমি জড়িত থাকলে আমাকে পাড়া দিয়ে মেরে ফেলেন।
”
কী কারণে এই হামলা হয়েছে এবং এর পেছনে কার কী স্বার্থ রয়েছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান উপকমিশনার মাসুদুর।
হামলার ঘটনায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায়ই তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
ছুরিকাঘাতে আহত সহ সম্পাদক রিফাত, প্রতিবেদক প্রীতম এবং অফিস সহকারী রুহুল আমিন এখনো ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রীতমকে কয়েক ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার সারাদেশেই বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে সাংবাদিকরা।
হামলাকারী ‘যুবলীগকর্মী’ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।