নাশরাত চৌধুরী: ‘আগামী নির্বাচনের আগেই বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করবো। তাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন সবই করবো। আমার সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটকেও পরিকল্পনা সফল করার জন্য এক করবো। আজ জোটের বৈঠক আছে। এই বৈঠকে আমার দলের পক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার রাজনৈতিক ফর্মুলা বাস্তবায়ন করার জন্য শরিক দলের সহায়তা চাওয়া হবে।
আমি আশা করি জোট এই বিষয়ে আমাদের সমর্থন দেবে- জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু মানবজমিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
হাসানুল হক ইনু গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে হঠাৎ করেই বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ঘোষণা দেন। তার এ ঘোষণার পেছনের কারণ খোঁজা হচ্ছে এখন। এতদিন আড়ালেই আলোচনা চলছিল এসবের, একই সঙ্গে চলছে বিভিন্ন উদ্যোগও। এই অবস্থার মধ্যে প্রকাশ্যেই মাইনাস করার ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন তিনি।
তার এই ধরনের ঘোষণাকে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে দেখছেন। তবে তিনি বলেন, আমি লক্ষ্যে পৌঁছবোই।
গতকাল দুপুরে হাসানুল হক ইনু আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া মনে করেছেন তিনি যুদ্ধাপরাধীদের পার পাইয়ে দিতে পারবেন। সরকার তাদের বিচার করতে পারবে না। তার সেই স্বপ্ন কোন দিনই সফল হবে না।
কারণ তাদেরকে রক্ষা করার ষড়যন্ত্রের অপরাধে ও মদত দেয়ার কারণে তাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস হতেই হবে।
বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার জন্য কি কৌশল নিয়েছেন জানতে চাইলে ইনু বলেন, তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও নির্বাচনী- এই তিনটি কৌশলই অবলম্বন করা হচ্ছে। এর যে কোনটি ব্যবহার করেই আমরা কাঙ্ক্ষিত সাফল্যে পৌঁছতে পারবো।
তিনি বলেন, আমি প্রথমে রাজনৈতিক কৌশলই চালাবো। এতে কাজ না হলে নির্বাচনী কৌশল ব্যবহার করা হবে।
তিনি যেন আগামী নির্বাচনের বাইরে থাকেন, নির্বাচনে তিনি বা তার পরিবারের কেউ অংশ নিতে না পারেন সেই ব্যবস্থা করা হবে। তারপরও যদি তিনি সরে না যান, তাহলে তাকে যাতে আগামী দিনে মানুষ ভোট না দেন, তার দল যাতে সরকার গঠন করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করবো। এই জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলবো। আমি ইতিমধ্যে যুব সমাজ, মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশকে এক করেছি। এছাড়াও আরও অনেকেই আমার সঙ্গে এক হবেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনে তাকে অযোগ্য করা ও নির্বাচন থেকে তাকে দূরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেবো। প্রয়োজনে প্রশাসনিক যন্ত্রকে কাজে লাগানো হবে। তিনি দুর্নীতি করেছেন, অন্যদের দুর্নীতি করতে সহায়তা করেছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। ওই সব মামলায় শাস্তি হলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন।
তিনি বলেন, আমি বেগম জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছি। এতে আমাকে সফল হতেই হবে।
বেগম খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, একটি বড় দলের প্রধান, বিরোধী দলের নেতা, তার মতো একজন নেতাকে আপনি মাইনাস করতে চাইছেন এটা কি সম্ভব? ওয়ান ইলেভেনের সরকারও তো চেষ্টা করে পারেনি? এ জিজ্ঞাসার জবাবে ইনু বলেন, কেন সম্ভব হবে না, আমি মনে করি, অবশ্যই সম্ভব। অসম্ভবকেই আমি সম্ভব করবো। ওয়ান ইলেভেনের সরকার পারেনি তাদের ফর্মুলা ভুল ছিল।
আমি ওই পথে যাচ্ছি না। আমার ফর্মুলা ভিন্ন। এ ফর্মুলা ব্যর্থ হবে না।
তার মানে আপনার পেছনে বড় কোন শক্তি রয়েছে- যাদের সহায়তায় আপনি তাকে মাইনাস করার ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে চাইছেন- এই প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, আমার পেছনে বড় শক্তি আছে এটা ঠিক। সেটা হচ্ছে জনগণের শক্তি।
আর মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। তিনি বলেন, আমি শিগগিরই তাকে মাইনাস করার কর্মসূচির বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ির অভিমুখে আমি পাঁচ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও তাদের সদস্যদের নিয়ে মিছিল করবো। সেখানে তার বাড়ির সামনে গিয়ে তাকে বলবো, রাজনীতি থেকে সরে যান এছাড়াও তাকে সরানোর জন্য আরও অনেক কর্মসূচি রয়েছে আমার। এই সব কর্মসূচি ধীরে ধীরে পালন করা হবে।
আপনার মূল উদ্দেশ্য কি? তাকে মাইনাস করে আপনি কেমন করে লাভবান হবেন? ইনু বলেন, তাকে মাইনাস করে এই দেশের গণতন্ত্র লাভবান হবে। কারণ একটি দেশের গণতন্ত্রের জন্য মহাবিপদ হচ্ছে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীরা, সামপ্রদায়িকতা, নারী ধর্ষণ ও জঙ্গিবাদ- এই চারটি বড় সমস্যা। এই চারটি সমস্যাকে বেগম খালেদা জিয়া জিইয়ে রাখছেন। তিনি এর পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। তাকে এক শর্তেই রাজনীতিতে আমরা থাকতে দিতে পারি যদি তিনি এইসব ছেড়ে রাজনীতিতে থাকেন।
ওই সব গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
তার মানে কি খালেদার রাজনীতিতে থাকা না থাকা আপনার ওপর নির্ভর করছে? ইনু বলেন, বলতে পারেন সেই রকমই।
আপনি গণসচেতনতা তৈরি করবেন আর খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াবেন- বিষয়টি তো এত সহজ নয়, কারণ তিনিও ক্ষমতা রাখেন, বিভিন্ন দিকে লবিং রাখেন ইনু বলেন, তা জানি। আমি এমন পরিস্থিতি তৈরি করবো যে কোন লবিংয়ে কাজ হবে না। তিনি বলেন, আমরা ছোট দল স্বীকার করি।
কিন্তু বিএনপি যদি মনে করে আমাদের কথায় তাদের কিছুই হবে না, তাহলে তা হবে ভুল ধারণা। কারণ আমরা ছোট হলেও অনেক কিছুই করতে পারি।
কেউ কেউ বলছে, সরকার আপনাকে দিয়েই বেগম জিয়াকে মাইনাস করতে চাইছে, আপনিও আগামী দিনে ক্ষমতায় যাওয়ার আশায় এবং আলোচনায় থাকার জন্যই এটা ঘোষণা করেছেন? ইনু বলেন, দেখলাম নজরুল ইসলাম খান আমার কথার রেশ ধরে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার ক্ষমতা ইনু’র নেই। তিনি কি আমার ক্ষমতা জানেন? জানেন না। জানলে বলতেন না।
আমি তার কথার বিরোধিতা করেই বলছি, আমার ক্ষমতা আছে কি নেই এটা তিনি আগামী দিনেই টের পাবেন। এ নিয়ে এখন এর বেশি বলতে চাই না।
আপনার সঙ্গে কি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, ১৪ দলীয় জোটের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কি এসব বিষয়ে কথা হয়েছে, তিনি কি আপনার এই ফর্মুলা মেনে নিয়েছেন? ইনু বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হয়নি। কথা বলে নেবো। এটা সমস্যা নয়।
আশা করি তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জন্য সব ধরনের সার্বিক সহায়তা দেবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।