সুন্নী (হানাফী) উত্তরাধিকার আইনে যেসব উত্তরাধিকারীদের মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে অধিকার দেওয়া আছে:
অংশীদারগণ
স্বামী
পিতা
আপন বোন
স্ত্রী
মাতা
বৈমাত্রেয় বোন
দাদা
দাদী বা নানী
বৈপিত্রেয় ভাই
কন্যা
পুত্রের কন্যা
বৈপিত্রেয় বোন
১) স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর অধিকার (Husband): মুসলিম আইন এবং কোরআনের বিধান মোতাবেক সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে স্বামীকে দুটি অবস্থায় বিশ্লেষণ করা যায়; যথা -
ক) মৃত ব্যক্তির সন্তান সন্ততি বা পুত্রের সন্তান সন্ততি বা তার নিম্নে কেউ না থাকলে ১/২ অংশ পাবে। যেমন:
মৃত ব্যক্তি
স্বামী (১/২)
পিতা (১/২)
খ) আবার মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান- সন্ততি কেউ থাকলে সেক্ষেত্রে ১/৪ অংশ পাবে। যেমন:
মৃত ব্যক্তি
স্বামী (১/৪) তিন পুত্র (৩/৪)
২) স্বামীর সম্পত্তিতে বিধবা স্ত্রীর অধিকার (Wife): মৃত ব্যক্তির স্ত্রী একজন থাকুক আর একাধিক থাকুক তাদের সম্পত্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দুটি অবস্থা উল্লেখ করা যায়; যথা-ক) মৃত ব্যক্তির সন্তান সন্ততি বা তার নীচে কেউ না থাকলে স্ত্রী ১/৪ অংশ পাবে। যেমন:
মৃত ব্যক্তি
স্ত্রী (১/৪) পিতা (৩/৪)
খ) অপরদিকে মৃত ব্যক্তির সন্তান সন্ততি বর্তমান থাকলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী ১/৮ অংশ পাবে। আর যদি মৃত ব্যক্তির একাধিক বিধবা স্ত্রী থাকে, তবে সব বিধবা স্ত্রীরাই উপরোক্ত ১/৪ বা ১/৮ অংশ হতে যেরকমই হয়, সমান হারে তাদের অংশ ভাগ করে পাবে।
যেমন:
মৃত ব্যক্তি
স্ত্রী (১/৮) পুত্র (৭/৮)
স্বামী পীড়িত অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দিলে উক্ত তালাকী স্ত্রীর ইদ্দত কাল এর মধ্যে স্বামী মারা গেলে তালাকী স্ত্রী স্বামীর ওয়ারিশ হবে (192 Sind, 1771)। কিন্তু স্বামী একইভাবে স্ত্রীর উত্তরাধিকারী হতে পারবেনা।
৩) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে পিতার অধিকার (Father): মুসলিম আইন এবং কোরআনের বিধান অনুযায়ী পিতা কোরানিক অংশীদার। পিতার এই অংশ তিনটি অবস্থায় দেখানো হলো।
ক) মৃত ব্যক্তির পুত্র কিংবা তার চেয়ে নীচে কেউ থাকলে পিতা মাত্র ১/৬ অংশ পাবে।
যেমন: সেলিম একজন সুন্নী মুসলমান সে পিতা, এক পুত্র ও এক কন্যাকে ওয়ারিশ রেখে মৃত্যুবরণ করেছে, এখন মৃত সেলিম এর সম্পত্তি বন্টন করা হবে ।
পিতা - ১/৬ =৩/১৮ অংশ অংশীদার হিসেবে প্রাপ্ত হবে
পুত্র - ৫/৯ = ১০/১৮ অংশ অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে প্রাপ্ত হবে
কন্যা- ৫/১৮= ৫/১৮ অংশ অবশিষ্টংশভোগী হিসেবে প্রাপ্ত হবে
এক্ষেত্রে পিতা মৃত (পুত্র) সেলিম এর পুত্র, কন্যা বিদ্যমান থাকায় ১/৬ অংশীদার হিসেবে প্রাপ্ত হবে।
পুত্র ও কন্যা তাদের মৃত পিতার সম্পত্তিতে অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে যথাক্রমে ৫/৯ এবং ৫/১৮ অংশ প্রাপ্ত হবে। কন্যা পুত্রের অর্ধেক পাবে।
খ) পুত্র না থাকলে কন্যা বা তার নীচে কেউ থাকলে পিতা ১/৬ অংশ এবং এবং অবশিষ্টভোগী হিসেবে সম্পত্তি পাবে।
যেমন:
মৃত জলিল
পিতা কন্যা
১/৬ + ২/৬ (আসাবা) = ১/২ ৩/৬=১/২
গ) পুত্র কন্যা বা পুত্রের পুত্র বা তার নীচে কেউই না থাকলে পিতা আসাবা বা অবশিষ্টাংশভোগী হবে এবং অবশিষ্ট সম্পত্তি পাবে।
মৃত বশীর
পিতা কালাম মাতা ফুলি ভাই জাহেদ বোন নূরী
২/৩ ১/৩ ০ ০
বশিরের পিতা জীবিত থাকায় ভাইবোন বঞ্চিত হবেন। তবে ভাইবোন জীবিত থাকায় মাতা ফুলি ১/৬ অংশ প্রাপ্ত হয়। অবশিষ্টভোগী হিসেবে পিতা কালাম ৫/৬ অংশ পেয়েছে।
অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে পিতা: মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান এমনি নিম্নগামী অধঃস্তন বংশধর বিদ্যমান না থাকলে পিতা অবশিষ্টাংশভোগী বা শেষভোগী হিসেবে সম্পত্তি প্রাপ্য হয়।
অনুরূপভাবে মৃত ব্যক্তির অংশীদার শ্রেণীভুক্ত অন্য কোন ওয়ারিশ বিদ্যমান থাকলে, উক্ত অংশীদার শ্রেণীভুক্ত ওয়ারিশদের অংশ মিটিয়ে দেবার পরই পিতা অবশিষ্টাংশভোগী বা শেষভোগী হিসেবে সম্পত্তি প্রাপ্ত হবেন। যেমন: খায়ের একজন সুন্নী মুসলমান। সে এক স্ত্রী ও পিতাকে ওয়ারিশ রেখে মৃত্যুবরণ করেছে। এখন মৃত খায়ের এর সম্পত্তি বন্টন করতে হবে:
মৃত খায়ের
স্ত্রী ১/৪
পিতা ৩/৪
এক্ষেত্রে মৃত খায়ের নিঃসন্তান বিধায় তার স্ত্রী ১/৮ এর স্থলে ১/৪ অংশ প্রাপ্ত হয়েছে এবং স্ত্রী অংশীদার শ্রেণীভুক্ত হওয়ায় তার ১/৪ অংশ মিটিয়ে দেবার পরই পিতা মৃত খায়ের এর বাকী (১ - ১/৪) = ৩/৪ অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে প্রাপ্ত হয়েছে ।
৪) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে প্রকৃত পিতামহ বা দাদার অধিকার (True Grand-Father): মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান অথবা পুত্রের সন্তান (যতই নিম্নগামী হোক না কেন) থাকলে এবং পিতা অথবা নিকটতম পিতার পিতা না থাকলে সত্যিকার পিতামহ ১/৬ অংশ পায়।
এবং এরা কেউ না থাকলে সত্যিকার পিতামহ অবশিষ্টভোগী অংশ গ্রহণ করবে। অর্থাত্ পিতা যে অবস্থায় যা পায় পিতামহ সে অবস্থায় তাই পাবে, কিন্তু পিতা জীবিত থাকলে পিতামহ কিছুই পাবে না। যেমন:
মৃত ব্যক্তি
পিতামহ পিতা
০ ১
পিতার অবর্তমানে পিতার উল্লেখিত তিনটি অবস্থা পিতামহের উপর বর্তাবে । কিন্তু ৪টি মাত্র স্থানে পিতা ও পিতামহের কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়; যথা-
ক) পিতার মাতা পিতার সাথে থাকলে সম্পত্তি পায়না কিন্তু পিতামহের সাথে পেয়ে থাকে ।
খ) স্বামী বা স্ত্রীর সাথে পিতা ও মাতা থাকলে স্বামী বা স্ত্রীকে দিয়ে যা অবশিষ্ট থাকে মাতা তার ১/৬ অংশ পায় কিন্তু এক্ষেত্রে পিতার স্থলে পিতামহ থাকলে মাতা সমস্ত সম্পত্তির ১/৩ অংশ পায়।
গ) সহোদর ও বৈমাত্রেয় ভাই বোনগণ পিতার সাথে বঞ্চিত হবে, কিন্তু কোন কোন ইমামের মতে তারা পিতামহের সাথে বঞ্চিত হবে। ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এর মতে তারা পিতামহের সাথেও বঞ্চিত হবে। আমরা উত্তরাধিকার বন্টনের ক্ষেত্রে উক্ত ইমাম সাহেবের মত অনুসরণ করে থাকি।
৫) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার প্রকৃত মাতামহী/পিতামহী (নানী/দাদী) এর অধিকার (True Grand Mother): উত্তরাধিকার লাভের ক্ষেত্রে নানী/দাদীর তিনটি অবস্থা লক্ষ্য করা যায়:
ক)মৃত ব্যক্তির মাতা, নিকটতম প্রকৃত মাতামহী কিংবা নিকটতম প্রকৃত পিতামহী না থাকলে নানী ১/৬ অংশ সম্পত্তি লাভ করেন।
খ) মৃত ব্যক্তির মাতা, পিতা, নিকটতম প্রকৃত মাতামহী কিংবা নিকটতম প্রকৃত পিতামহী না থাকলে দাদী ১/৬ অংশ সম্পত্তি লাভ করেন।
গ) দাদী ও নানী উভয়েই থাকরে তারা একত্রে ১/৬ অংশ সমান পাবেন। প্রকৃত পিতামহী হলেন এমন একজন পূর্বনারী যার এবং মৃত ব্যক্তির মধ্যে মাতৃ সম্পর্কীয় কোন পিতামহ মধ্যবর্তী হননা। যেমন: পিতার মাতা, পিতার মাতার মাতা, পিতার পিতার মাতা, মাতার মাতা মাতার মাতার মাতা।
(৬) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার মাতার অধিকার (Mother): উত্তরাধিকার লাভের ক্ষেত্রে মাতার তিন অবস্থা হতে পারে:
ক) যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নেরই হউক, অথবা যদি পূর্ণ বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় দুই বা ততোধিক ভাই কিংবা বোন, এমনকি একজন ভাই এবং একজন বোন থাকে, তাহলে ও ১/৬ অংশ পাবেন। যেমন:
মৃত ব্যক্তি
মাতা (১/৬) পুত্র (৫/৬)
খ) কিন্তু যেসকল ক্ষেত্রে মাতা ১/৩ অংশ পায় সেক্ষেত্র গুলো নীচে দেওয়া হলো:
যখন মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান অথবা পুত্রের সন্তান (যতই নিম্নগামী হোক না কেন) না থাকে, অথবা, যখন মৃত ব্যক্তির এক ভাই অথবা এক বোন এর বেশী না থাকে।
কিন্তু বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, যদি মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর অথবা স্বামীর সাথে মাতা এবং পিতা থাকে, তবে সেক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর অংশ বাদ দেবার পর যে অংশ বাকি থাকে, মাতা তার ১/৩ অংশ পাবে। প্রকৃত পিতামহী হলেন এমন একজন পূর্বনারী যার এবং মৃত ব্যক্তির মধ্যে মাতৃ সম্পর্কীয় কোন পিতামহ মধ্যবর্তী হন না। যেমন: পিতার মাতা, পিতার মাতার মাতা, পিতার পিতার মাতা, মাতার মাতা মাতার মাতার মাতা।
(৭) কন্যার অধিকার (daughter): মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে মৃত ব্যক্তির ঔরশজাত কন্যার অংশ বন্টনের ক্ষেত্রে তিন অবস্থায় অংশ বন্টন করা হয়। যেমন-
ক) মৃত ব্যক্তির কন্যা একজন থাকলে এবং পুত্র না থাকলে সে ১/২ (অর্ধেক) ভাগ সম্পত্তি পাবে ।
খ) দুই বা ততোধিক কন্যা থাকলে এবং কোন পুত্র না থাকলে তারা ২/৩ (তিন ভাগের দুই) ভাগ সমানভাগ পাবে।
গ) মৃত ব্যক্তির পুত্র থাকলে কন্যা/কন্যারা অংশীদার হিসেবে সম্পত্তি না পেয়ে পুত্রের সাথে ২:১ অনুপাতে অর্থাত্ অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে পুত্র যা পাবে কন্যা তার অর্ধেক পাবে। কন্যা কখনো পিতা/মাতার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয়না ।
(৮) পুত্রের কন্যার (son's daughter) অথবা পুত্রের পুত্রের কন্যা অর্থাত্ পোত্রীর অধিকার: পুত্রের কন্যা বা পুত্রের পুত্রের কন্যা যত নিম্নের হোক এর উত্তরাধিকার আইন, ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ এর ৪ ধারার প্রভাবে পরিবর্তন হয়েছে বিধায় তা মূল মুসলিম হানাফী আইন এবং পরিবর্তিত আইন এই দুই উপ-শিরোনামে আলোচনা করা যায়।
মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ এর ৪ ধারার প্রভাবে এই বঞ্চিত হওয়ার বিধান বাতিল হয়েছে।
উক্ত ধারার মূল মুসলিম হানাফী আইন: মুল মুসলিম হানাফী আইন অনুসারে পুত্রের কন্যার সম্পত্তি লাভের ক্ষেত্রে চারটি অবস্থা লক্ষ্য করা যায়:
ক) মৃত ব্যক্তির পুত্র বা একাধিক কন্যা থাকলে পুত্রের কন্যা সম্পূর্ণরূপে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
খ) মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা না থাকলে পুত্রের কন্যা একা হলে ১/২ অংশ এবং একাধিক হলে ২/৩ অংশ সম্পত্তি পায়।
গ) মৃত ব্যক্তির যদি একমাত্র কন্যা তাকে, তবে পুত্রের কন্যা একা বা একাধিক যাই থাকুক একা বা সবাই শুধুমাত্র ১/৬ অংশ পাবে। একাধিক হলে এই ১/৬ অংশ সবাই সমানভাবে পাবে।
ঘ) মৃত ব্যক্তির পুত্রের পুত্র থাকলে, পুত্রের কন্যা অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে তার বা তার সাথে ২:১ সম্পত্তি লাভ করবে।
পুত্রের পুত্রের কন্যা যত নিম্নের হোক পুত্রের কন্যার মত পুত্রের পুত্রের কন্যার সম্পত্তি লাভের ক্ষেত্রে ও চারটি অবস্থা লক্ষ্য করা যায়।
ক) মৃত ব্যক্তির পুত্র বা একাধিক কন্যা বা নিকটতম পুত্রের পুত্র বা নিকটতম পুত্রের পুত্র বা নিকটতম পুত্রের একাধিক কন্যা থাকলে দুরবর্তী পুত্রের কন্যা উত্তরাধিকার হতে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয়।
খ) মৃত ব্যক্তির পুত্র কন্যা বা নিকটতম পুত্রের পুত্র বা নিকটতম পুত্রের কন্যা না থাকলে দূরবর্তী কন্যা একা হলে ১/২ অংশ এবং একত্রে হলে সবাই ২/৩ অংশ পাবে।
গ) মৃত ব্যক্তির যদি একমাত্র কন্যা বা নিকটতম পুত্রের একমাত্র কন্যা থাকে, তবে দূরবর্তী পুত্রের কন্যা এক বা একাধিক যাই থাকুক, একা বা সবাই একত্রে শুধুমাত্র ১/৬ অংশ পাবে।
ঘ) পুত্রের পুত্রের কন্যার সাথে সমান স্তরে পুত্রের পুত্র থাকলে পুত্রের পুত্রের কন্যা অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে তার বা তাদের সাথে ২:১ হারে সম্পত্তি লাভ করবে।
একই সাথে পুত্রের পুত্র/পুত্রের কন্যা এবং পুত্রের পুত্রের পুত্র/পুত্রের পুত্রের কন্যা অবস্থান করে তখন প্রথম ব্যক্তি শেষোক্ত ব্যাক্তির তুলনায় মৃত ব্যক্তির নিকটতম পুত্রের পুত্র/পুত্রের কন্যা হিসেবে গন্য করা হয়। একই সাথে যখন পুত্রের পুত্রের পুত্র ও পুত্রের পুত্রের কন্যা অবস্থান করে তখন তাদেরকে সমান স্তরের পুত্রের পুত্রের পুত্র এবং পুত্রের পুত্রের কন্যা হিসেবে উল্লেখ করা যায় ।
পরিবর্তিত আইন: পুত্রের কন্যার উত্তরাধিকার আইন আলোচনা করতে গিয়ে এটি লক্ষ্য করা যায় যে, পুত্রের কিংবা একাধিক কন্যার বর্তমানে মৃত পুত্রের কন্যা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি হতে সম্পূর্নরূপে বঞ্চিত এবং শুধুমাত্র এক কন্যার বর্তমানে সে আংশিকভাবে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয়। ১৯৬১ সনের মর্ম মতে বর্তমানে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন করার আগে যার সম্পত্তি ভাগ করা হবে তার মৃত্যুর আগে তার পুত্র বা কন্যার মৃত্যু হলে, উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন করবার সময় ঐ মৃত পুত্র বা কন্যা জীবিত থাকলে, যে পরিমাণ সম্পত্তি লাভ করত, তার সমান অংশ ঐ মৃত পুত্র বা কন্যার সন্তানরা লাভ করবে। নীচের উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিস্কারভাবে বোঝানো হলো:
উদাহরণ- ১: বশিরের দুই পুত্র, বাদল ও জাহেদ এবং এক কন্যা জমিলা।
প্রথম পুত্র বাদল এক কন্যা রেখে মারা যায়। তারপর বশির মারা যায়। মূল মুসলিম হানাফী আইনানুসারে বশিরের ত্যক্ত সমস্ত সম্পত্তি জাহেদ ও কন্যা জমিলা ২:১ হারে পেত। মৃতপুত্র বাদলের কন্যা কোন সম্পত্তি পেতনা। কিন্তু বর্তমান পরিবর্তিত আইনানুযায়ী বশিরের ত্যক্ত সম্পত্তি মোট ৫ ভাগ হবে।
এর ২/৫ অংশ জাহেদ এবং ১/৫ অংশ কন্যা জমিলা পাবে। বাকী ২/৫ অংশ মৃত পুত্রের কন্যা পাবে। কারণ মৃত পুত্র বাদল বশিরের মৃত্যু আগে মারা না গেলে এই ২/৫ অংশই পেত।
উদাহরণ- ২: জালালের দুই পুত্র হাশেম ও কাশেম এবং এক কন্যা সালেহা। ছালেহা এক পুত্র রেখে মারা যায়।
মূল মুসলিম হানাফী আইন অনুসারে জালালের সম্পত্তি তার দুই জীবিত পুত্রের প্রত্যেকে অর্ধেক করে পেত। তার কন্যার এক পুত্র করিম সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হতো। বর্তমানে পরিবর্তিত আইন অনুযায়ী তার মৃত কন্যা ছালেহা বেঁচে থাকলে যে ১/৫ অংশ সম্পত্তি পেত তা মৃত কন্যা ছালেহার পুত্র রাশেদ পাবে ।
(৯) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার আপন বোন বা পূর্ণ বোনের অধিকার (Full Sister): মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে মৃত ব্যক্তির পুর্ণ বোন বা সহোদর বোন থাকলে তারা পাঁচটি অবস্থায় অংশ প্রাপ্ত হয়ে থাকে। যেমন -
ক) মৃত ব্যক্তির যদি একজন আপন বোন থাকে তাহলে সে ঐ ব্যক্তির সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবে ।
খ) যদি দুইবা ততোধিক সহোদর বোন থাকে তাহলে তারা ঐ সম্পত্তির ২/৩ অংশ পাবে ।
গ) আপন ভাইয়ের উপস্থিতিতে আপন বোন অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে ২:১ হারে সম্পত্তি পেতে পারে।
ঘ) আপন বোন মৃত ব্যক্তির সন্তান, পুত্রের সন্তান যত নীচের হোক, বা পুত্রের উপস্থিতিতে ও সে অংশীদার হতে বাদ পড়ে অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে সম্পত্তি পেতে পারে । কিন্তু ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবরিক আইনের বিধান মোতাবেক আপন বোন কোন অংশ পাবেনা। পুত্রের কন্যাই সব অংশ পাবে ।
ঙ) মৃত ব্যক্তির পিতা বা দাদা বর্তমান থাকলে সহোদর বোন বঞ্চিত হবে ।
(১০) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার বৈমাত্রেয় বোনের (যেখানে পিতা একজন কিন্তু মাতা দুইজন তাদের সন্তানগনের) অধিকার (Consanguine Sister): মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে মৃত ব্যক্তির বৈমাত্রেয় বোন থাকলে তার অংশ ছয়টি অবস্থায় বন্টন করা হয়ে থাকে। যেমন -
ক) মৃত ব্যক্তির বৈমাত্রেয় বোন একজন থাকলে সে ১/২ অংশ প্রাপ্ত এবং একাধিক বৈমাত্রেয় বোন একত্রে ২/৩ অংশ সমানভাগে পায়।
খ) মৃত ব্যক্তির বৈমাত্রেয় ভাই বর্তমান থাকলে সেক্ষেত্রে বৈমাত্রেয় বোন তার সাথে অবশিষ্টাংশভোগী বা আসাবা হবে এবং ভাই যত পাবে বোন তার অর্ধেক অংশ পাবে ২:১ হারে সম্পত্তি পায়।
গ) মৃত ব্যক্তির একজন মাত্র আপন বোন থাকলে বৈমাত্রেয় বোন একজন হোক আর একাধিক হোক সবাই একত্রে ১/৬ অংশ পাবে।
ঘ) কিন্তু আপন বোন একাধিক থাকলে বৈমাত্রেয় বোন বঞ্চিত হবে। যেমন:
মৃত ব্যক্তি
বৈমাত্রেয় বোন আপন বোন চাচা
০ ২/৩ ১/৩
ঙ) মৃত ব্যক্তির পুত্র, পুত্রের সন্তান যত নীচের হোক, পিতা অথবা পিতার পিতা অর্থাত্ দাদা, একাধিক আপন ভাই এর উপস্থিতিতে বৈমাত্রেয় বোন উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
চ) মৃত ব্যক্তির কন্যা বা পুত্রের কন্যা বর্তমান থাকলে তার সাথে অবশিষ্টাংশভোগী হবে এবং অবশিষ্ট সম্পত্তি পাবে।
(১১) বৈপিত্রেয় ভাই ও বৈপিত্রেয় বোনের অধিকার: (যেখানে পিতা দুইজন কিন্তু মাতা একজন তাদের সন্তানগণ) (Uterine Brother/Sister): বৈপিত্রেয় ভাই/বোন এর উত্তরাধিকারলাভে দুটি অবস্থা লক্ষ্য করা যায়।
ক) মৃত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, পুত্রের পুত্র বা পুত্রের কন্যা ইত্যাদি কেউই বর্তমান না থাকলে ও একজন বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন থাকলে ও সে ১/৬ অংশ এবং একাধিক বৈপিত্রেয় ভাই/বোন একত্রে ১/৩ অংশ সমানভাবে পাবে।
বৈপিত্রেয় ভাই-বোনেরা সমান অংশ পায়। এক্ষেত্রে ভাই-বোনের অংশের অনুপাত ২:১ না হয়ে ১:১ হবে ।
খ) মৃত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, পৌত্র (পুত্রের পুত্র), পৌত্রী (পুত্রের কন্যা), পিতা বা পিতার পিতা ইত্যাদি কেউ জীবিত থাকলে বৈপিত্রেয় ভাই/ বোন উত্তরাধিকার হতে বাদ পড়ে। দুটি উদাহরণের মাধ্যমে অংশীদারদের মাঝে সম্পত্তি বন্টন প্রক্রিয়াটি পরিস্কার ভাবে বোঝা যায় ।
উদাহরণ -১: একজন সুন্নী মুসলমান তার ক) পিতা খ) মাতা এবং গ) পুত্রের কন্যাকে রেখে মারা গেলেন ।
এই ক্ষেত্রে তার ওয়ারিশদের অংশ বন্টন নীচের প্রক্রিয়া অনুযায়ী হবে:
পিতা -১/৬, মাতা -১/৬, কন্যা -১/২, পুত্রের কন্যা -১/৬
এই উদাহরণে সব ওয়ারিশরাই অংশীদার বা কুরানী ওয়ারিশ। ছেলেমেয়ে যেমন কন্যা এবং পুত্রের কন্যা থাকায় পিতা এবং মাতার প্রাপ্য অংশ ১/৬ হয়েছে। একজন কন্যার অংশ ১/২ অংশ। একজন কন্যা থাকায় পুত্রের কন্যা ১/৬ অংশ পাবেন। তবে মৃত ব্যক্তির দুইজন কন্যা থাকলে মৃত ব্যক্তির পুত্রের একজন কন্যা থাকায় পুত্রের কন্যা এক বা একাধিকই থাকুক, তার অংশ ১/৬ কমে এসেছে।
এভাবে এই উদাহরণে যদিও মৃত ব্যক্তির পুত্রের কন্যা চারজন থাকতো, তবু তারা সবাই যৌথভাবে ঐ ১/৬ অংশই পেত এবং এই ৬/১ অংশই তাদের মাঝে সমানভাবে ১/২৪ অংশ ভাগ করা হতো।
উদাহরণ -২: একজন সুন্নী মুসলমান তার ক) মাতা, খ) তিন জন পূর্ণ বোন গ) একজন বৈমাত্রেয় বোন (যেখানে মাতা দুইজন কিন্তু পিতা একজন তাদের সন্তানগন) এবং একজন বৈপিত্রেয় বোনকে অথবা একজন বৈপিত্রেয় ভাইকে (যেখানে পিতা দুইজন কিন্তু মাতা একজন তাদের সন্তানগন) রেখে মারা গেল। এক্ষেত্রে ঐ মৃত ব্যক্তির বৈধ ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টনের স্ব স্ব অংশ দেখানো হলো:
মাতা - ১/৬ অংশ (কারণ এইক্ষেত্রে একাধিক আপন বোন আছে)
৩ জন আপন বোন - ২/৩ অংশ (প্রত্যেকে ২/৩ অংশের ১/৩ অংশ করে)
১ জন বৈমাত্রেয় বোন - একাধিক আপন বা পূর্ণ বোন দ্বারা উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।
বৈপিত্রেয় বোন বা বৈপিত্রেয় ভাই -১/৬ অংশ।
এইক্ষেত্রে সম্পত্তির মোট অংশ হলো ১/৬+২/৩+১/৬ = ৬/৬ =১ অর্থাত্ এখানেই সম্পত্তি শেষ হওয়ায় সম্পত্তি বন্টন ও শেষ হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।